E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজকন্যা ফুলমালা

২০১৬ এপ্রিল ১৯ ১৮:০৩:০৮
রাজকন্যা ফুলমালা

নাজিয়া ফেরদৌস : ফুলপরিদের দেশে তখন যুদ্ধ চলছিল। দুই দলে ভীষণ যুদ্ধ! একদল ফুলের গাছ বাঁচাতে চায় আর অন্যদল চায় গাছ কেটে বিশাল প্রাসাদ বানাতে। যারা গাছ বাঁচাতে চায় তারা সংখ্যায় খুব কম ছিল বলে অপর দলের দুষ্টু লোকগুলো যুদ্ধে জয়লাভ করলো। তারা সব ফুলের গাছ কেটে বানালো প্রাসাদ।

কয়েক বছর পরে গাছ আর ফুলের অভাবে ওই রাজ্য আর সবুজ রইলো না। পাখিরা চলে গেলো, নদীর পানি শুকিয়ে গেলো আর দেশজুড়ে শুরু হলো হাহাকার। সবুজ ফুলের দেশ হয়ে গেলো মরুভূমি। দুষ্টু লোকগুলো তাদের ভুল বুঝতে পারলো, কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ধীরে ধীরে তারা ভুলেই গেলো যে তারা ফুলপরি। তাদের সৌন্দর্যও নষ্ট হয়ে গেলো।

একদিন সেই রাজ্যে একটি ফুটফুটে মেয়ের জন্ম হলো। সে এই রাজ্যের রাজকন্যা। নামটি তার ফুলমালা। তাকে দেখলে সবার ফুলপরিদের কথা মনে হতো। রুক্ষ পরিবেশেই সে বেড়ে উঠতে লাগলো। গল্প শুনতে সেই রাজকন্যা খুব ভালোবাসত। একদিন তার বৃদ্ধা দাদি তাকে ফুলের গল্প বললেন। কিন্তু ফুল কেমন হয় তা রাজকন্যা বুঝলো না। দাদি তার গোপন সিন্দুক খুলে সেই ফুলে ভরা সবুজ দেশটির ছবি দেখালেন। রাজকন্যা যত না অবাক হলো তার চেয়ে বেশি মুগ্ধ হলো। এতো সুন্দর দেশ হতে পারে!

সে বায়না ধরলো তার ফুল চাই। লাল, নীল, বেগুনি ফুল। কিন্তু দেশে তো ফুল নেই। কে দেবে তাকে ফুল এনে? যারা ফুল চায়নি সেই দুষ্টু লোকেরা কবেই মরে গেছে কিন্তু সেই দেশটি আর ফিরে আসেনি। দাদি বললেন দেশকে যদি আবার ফুলের রাজ্যে পরিণত করতে চাও তবে মাত্র একটি উপায় আছে। রাজকন্যা খুব আগ্রহী হয়ে বললো- বল দাদি বলো কি সে উপায়? তা যত কঠিনই হোক না কেন আমি তা করবো। আমার ফুলের রাজ্য আমি আবার ফিরিয়ে আনবো। দাদি তাকে একটা বড় আয়না লাগানো বাক্সের কাছে নিয়ে গেলেন।

বাক্সের গায়ে লেখা-
পারলে যেতে সাত সমুদ্র তেরো নদীর পাড়
পেতে পারো হাজার রকম ফুলে গড়া হার!
দুষ্টু লোকের আস্তানা ওই কালো পাহাড় চূড়ো;
বন্দি আছে হাজার বছর বয়সী এক বুড়ো।
তার আছে এক জাদুর চাবি আনতে পারো যদি,
ফুলে ফুলে ভরবে এ দেশ বইবে আবার নদী!

দাদি বললেন- এই বাক্সের মধ্যে জাদু ফুলের বীজ আছে, যা ছড়িয়ে দিলে দেশ আবার আগের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু এর চাবি আছে জাদু বুড়োর কাছে। তাকে দুষ্টু লোকেরা কালো পাহাড়ের উপর বন্দি করে রেখেছে। সেখান থেকে চাবি আনা বড়ই ভয়ংকর কাজ। ভয়ানক একচোখা দৈত্যরা থাকে সেখানে। এটা শুনেও রাজকন্যা ভয় পেলো না। সে সবার অনুমতি নিয়ে তার হংসরাজে চড়ে উড়ে চললো কালো পাহাড়ের দিকে। সাথে নিলো জাদুর গুঁড়ো যা ছিটিয়ে দিলে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে।

তিন দিন তিন রাত পরে সে ভয়ংকর পাহাড়টার কাছে চলে এলো। যেই না সে পাহাড়ে পা দিল পাহাড়টার কালো রং নিমিষেই মিলিয়ে গেলো। কে যেন বলে উঠলো, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ রাজকন্যা ফুলমালা। তুমি আমাকে কালোর রাজ্য থেকে মুক্তি দিলে।’

রাজকন্যা একটু হেসে হংসরাজ থেকে নেমে গুহার ভেতরে যেতে লাগলো। কেউ কোথাও নেই কিন্তু অন্ধকারে সবকিছু কেমন ভয়ংকর হয়ে উঠলো। মাঝে মাঝে বিচিত্র শব্দে বুক কেঁপে উঠলো। সে দেখতে পেলো কয়েকটা কালো পোশাক পরা দৈত্য। রাজকন্যাকে দেখেই ওরা তেড়ে এলো আর সঙ্গে সঙ্গেই সে জাদুগুঁড়া ছিটিয়ে দিলো। পুরো পাহাড় তখন ঘুমে ঢুলে পড়লো। এই সুযোগে সে খুঁজে বের করে ফেললো জাদু বুড়োকে। জাদু বুড়ো বড় অদ্ভুত! তার এমন বড় বড় চুল আর দাড়ি যে মুখই দেখা যায় না। রাজকন্যা ভয় না পেয়ে তার কাছে চাবি চাইলো, বললো তোমার চাবিটা আমাকে দেবে দাদু? আমি আমার দেশকে বাঁচাবো। বুড়ো বললো দেব যদি একটা ছন্দ মিলিয়ে দিতে পারো।

আমি এক হাজার বছর ধরে এই ছন্দটা মেলাতে চেষ্টা করছি কিন্তু কেউ আমার মনের মতো মেলাতে পারেনি। বল দেখি তুমি-
পৃথিবীতে রাজ্য আছে শত শত শত........
রাজকন্যা চট করে বললো-
এমন কোথাও পাবে নাতো ফুলের দেশের মতো।

বুড়ো আনন্দে চেঁচিয়ে উঠলো। বাহ্ বাহ্ খুব সুন্দর হয়েছে। এই নাও তোমার চাবি। যাও মেধকে ফুলে ফুলে ভরিয়ে তোলো। তুমিই হবে ফুলের দেশের রানী। ধন্যবাদ জানিয়ে রাজকন্যা বিদায় নিলো। দেশে গিয়ে বাক্স খুলে বের করলো জাদু বীজ। ছিটিয়ে দিলো সারা দেশে আর মুহূর্তেই মরুভূমির দেশ আবার ফুলের রাজ্যে পরিণত হল। ফুলের রানী ফুলমালার সে কী জয়জয়কার!

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test