E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোনার তরী( শিশু কিশোর সাহিত্য)

২০১৬ এপ্রিল ২১ ২১:৫৬:৫৮
সোনার তরী( শিশু কিশোর সাহিত্য)







 


আলম তালুকদার
দুই আর চারের ছড়া

১,নববর্ষ আগত
পুরাতন ভাগত ।

২,শুভ নববর্ষ
চাই তব স্পর্শ।

৩,শুভ শুভ শুভত
হবে না আর সু-গত।

৪,নববর্ষের আগমন
জাগোমন জাগোমন ।

৫,নববর্ষ সার্বজনীন
ভিটামিনে আয়োডিন
যতবেশী বায়ুদিন
ততবেশী ¯œায়ুঋণ।



আসলাম সানী
জয় বাঙলার জয়

বাংলাদেশের বাঁশের বাঁশি
বাজে মধুর সুরে
বাঁশির শব্দে হাওয়ায় হাওয়ায়
যায় যে বহুদূরে
মেঘে মেঘে উড়ে-

বাজায় বাঁশি রাখাল চাষী
বাউল ধওে গান
একতারা আর দোতারাতে
কাড়ে সবার প্রাণ-

বাংলাদেশের ঢোলের শব্দে
জগৎ পাগল হয়
এায়ের ভায়ের মাটির কথা
ঢোলের তালে রয়
দশ্যু শকুন শত্রুরা যে
তক্ষনি পায় ভয়
ঢোলৈর সুরে ছড়ায় দূওে
জয় বাংলার জয়-

বাংলাদেশের মন্দিরাতে
বন্দিরা হয় মুক্ত
ঝর্ণা-ঢেউয়ে ছন্দেরা হয়
সম্প্রীতিতে যুক্ত

দ্বন্দ্ব-বিভেদ পুড়ে
ভ্রান্তি নাশে
শান্তি আসে
ক্লান্তি ফেলে ছুঁড়ে

লাল সবুজের প্রশান্তিতে
মুগ্ধ জগৎ ঘুরে
পতপত করে ওড়ে দেখো
হিমালয়ের চূড়ে।



নাসের মাহমুদ
হাশেম খান

বই এর পাতায় উড়ছে পাখি
খেলছে জিনি জুলি
এমন ছবি আঁকতে পারে
হাসেম খানের তুলি ।

মেঘ আঁকলে বৃষ্টি পড়ে
শব্দও যায় শোনা
আঁকলে তিনি টুনি পাখি
এগিয়ে আসে টোনা ।

আঁকলে তিনি শালিক ঘুঘু
সকাল দুপুর ওড়ে
তার আঁকানো প্রজাপতি
ফুলে ফুলে ঘোরে ।

বিকেল আঁকে-বাচ্চাগুলো
সত্যি খেলে মাঠে ।
তাঁর ছবিতে এমন জাদু
বসিয়ে রাখে পাঠে ।

ছবির বিলে মাছ ভেসে যায়
শাপলা ফুটে থাকে,
বঙ্গবন্ধুর হাত উঠে যায়
যখন তিনি আঁকে ।

সুরাজ চৌধুরী
ছড়াক্কু---থাবা

কী লিখতে কি লিখছো বা’জান
ভেতর বাহির আন্ধার?
সময় নাকি অলুক্ষুণে
ভয় ভুতুড়ে ধান্ধার!
আন্ধা যারা মরবে তারা
জানেন কোবিদ কবি
এইতো সময় দুঃসময়ের
পুরাণ দিনের ছবি!
হরহামেশা চতুর্দিকে
হালুম হুলুম গর্জায়
থাবায় ভীষণ আগুন এদের
দেখছি জীবন চর্যায়!


তোফায়েল তফাজ্জল
অনির্বাণ

যে আমাকে বাঁ-হাত দেখায়
চুপটি হাঁটে পুকুর পাড়ে,
পাখি দেখতে নেয় না সাথে
বললে বরং আছাড় মারে।
ফুল কুড়িয়ে আনে একা
সূর্যি সোনা জাগতে বাকি,
বুলবুলিকে জাম দিতে কয়
পড়ার ঘন্টা দিয়ে ফাঁকি!
তুমিই বলো, সে কখনো
হতে পারে আমার সাথী
ঘরে ঘরে জ্বালিয়ে দিতে
অনির্বাণ এক জ্ঞানের বাতি ?


জুলফিকার আলী

বৈশাখী মেলা

বাজে ঢাক বাজে ঢোল
মনে এসে দেয় দোল।
বৈশাখী ঔই মেলা
হইচই সারাবেলা।

পুতুল নাচ,নাগরদোলায়
ছোট খুকির মন ভোলায়।

বৈশাখী দিন


বৈশাখ এলে মনে আসে
বাংলা কবিতা,গান,
নতুন বর্ষে মন ভরে যায়
নাচে বাঙালির প্রাণ।

পড়ে গরম দিনটা চরম
লাগে বুঝি ভয়রে,
বৈশাখ ঝড়ে চালটা নড়ে
কি জানি হয়রে।

পুকুর শুকায় মাঠ চৌচির
কাঠফাটা রোদ সীন,
বড় কঠিন আর ভয়ানক

বৈশাখ মাসের দিন।



ইমরান পরশ
ফুলে ফুলে ভরে দাও


দানবিক হুংকারে কাঁপে যেই বিশ্ব
মানবতা হতে থাকে ক্রমে ক্রমে নিঃস্ব।
শিশু ও নারীরাই ভোগে নিরাপত্তায়
কে করে আঘাত আজ এই জাতিসত্তায়।
সুখপাখি উড়ে যায় মুছে দিয়ে চিহ্ন
কত জাতি বিশ্বে রক্ত অভিন্ন।
ধর্মের বেড়াজালে মানবতা বন্দি!
কার সাথে দানবতা করবে যে সন্ধি।
শান্তির বৃষ্টিতে ধুয়ে দাও বিশ্ব
ফুলে ফুলে ভরে থাক, হাসিখুশি দৃশ্য।

আমগীর কবির
স্বাধীনতায়


ওই যে ফুল বনে ফুটছে স্বাধীনতায়,
ওই যে পাখি উড়ছে,
পাখনা মেলে ঘুরছে;
পেয়ে আলোর পাখা সে,
আকাশ থেকে আকাশে।
ওই যে নদী দূরে ছুটছে স্বাধীনতায়।

ওই যে প্রজাপতি ভাসছে স্বাধীনতায়,
ফুলের সাথে দুলছে,
রঙের ঝাঁপি খুলছে।
আলোর খেলা চলছে,
হাজার তারা জ্বলছে;
ওই যে বাঁকা চাঁদ হাসছে স্বাধীনতায়।


মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক
স্বপ্নময়ী

স্বপ্নময়ীর ইচ্ছে হলে স্বপ্ন কিছু দিও
ইচ্ছে হলে আমার থেকেও স্বপ্ন চেয়ে নিও
স্বপ্ন দিও স্বপ্ন নিও স্বপ্নতে নিঃশ্বাস
জানো-ইতো স্বপ্নে আমার—তোমার বসবাস
স্বপ্ন দেওয়ার স্বপ্ন নেওয়ার এই যে অভিলাষ
কেমন করে করবে তুমি তাকেই উপহাস
স্বপ্ন গড়ার জন্য আজই ভাঙো অবিশ্বাস
মিথ্যে মিথের সব কিছুকে দাও করে দাও নাশ
স্বপ্ন ধরো স্বপ্ন গড়ো স্বপ্নে খোঁজ সুখ
স্বপ্ন দিয়ে স্বপ্ন নিয়ে নাও সাজিয়ে বুক।

ইউসুফ রেজা
মুজিব নগর দিবস

মুজিব নগর দিবস মানে
বৈদ্যনাথের তলায়
একাত্তরে সব বাঙালি
মিললো গলায় গলায় ।

রাজনীতিবিদ মুক্তিযোদ্ধা
বুঝলো তাদের দরকার
স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা শেষ
এখন লাগবে সরকার ।

তাইতো সবাই মেহেরপুরের
আম্রকানন এসে
সেই সরকার বানিয়ে নিলো
দেশকে ভালবেসে।

রব্বানী চৌধুরী
ইষ্টিশনের মিষ্টি দিমু

ইষ্টিশনের মিষ্টি দিমু
বৃষ্টি নিয়ে আয় না !

স্টেশনবাবু ঘুমায় বসে
চোখ তুলে সে চায় না !

যাত্রী করে হইচই
গোয়াল ডাকে, ‘দই দই !’

ডাবের পানি কে খাবে রে
ট্রেন তো দেখা যায় না !

ন’টার গাড়ি ক’টায় আসে
ফেরিওয়ালা ছটায় হাসে !

যাত্রী বোঝাই ট্রেন এলো যেই
সিট খালি কেউ পায় না !

সৈয়দ শিশির
বাংলাদেশে

নদীমাতৃক বাংলাদেশে
ফলে সোনার ধান
নদীর বুকে নৌকা বেয়ে
মাঝি করে গান।

বাউল গানের বাংলাদেশে
যাত্রাপালা হয়
পুতুল নাচের তামশা দেখে
দুঃখ করি জয়।

দিনে রাতে বাংলাদেশে
পাখির মেলা বসে
আঁধার রাতে জোনাক পোকা
দিঘির জলে ভাসে।

শিশুতোষ গল্প

রুবেলের ময়না পাখি
ফয়সাল শাহ

পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রুবেল প্রতিদিন স্কুলে যায়। বাড়ীর পাশেই তার স্কুল, একেবারেই হাটতে হয় না। অন্যান্য গ্রামের ছাত্রদের অনেক দূর পথ হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। রুবেলের গ্রামের পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং দক্ষিণে নরুসুন্দা নদী। গ্রামের নাম সখিচর। রুবেল খুবই দুষ্টু-দূরন্ত প্রকৃতির চঞ্চল ছেলে। স্কুলের ক্লাশের সময়টুকু বাদে সারাদিন চলে তার দুরন্তপনা। বাড়ীর পেছনে বিরাট জঙ্গঁল নানা ধরনের গাছ, পাখি আর বন্যপ্রাণী। সখীপুর গ্রামেই রয়েছে খাল, বিল, আর অনেকগুলো পুকুর।

রুবেল স্কুল কখনো কামাই করে না, যদিও তার লেখাপড়ায় একেবারেই মন বসতো না। কিন্তু কখনো ক্লসে শিক্ষকের শাস্তি পেতে হতো না কারণ যতটুকু না পড়লেই নয় ততটুকু পড়া ও বাড়ীর কাজ সে করতো। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের বকুনি ও পিটুনী সে একেবারেই সহ্য করতে পারত না। রুবেল দুষ্টু হলেও অন্যান্য ছাত্রদের তুলনায় একটু মুখচোরা ও লাজুক প্রকৃতির ছিল। কখনো শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের বকুনি বা পিটুনী খেলে লজ্জায় সে লাল হয়ে যেত। সারাদিন তার মন খুবই খারাপ থাকত, সেদিন আর ঠিকমত খেলাধূলায় মন বসতো না। মন ভাল করার জন্য একা একা নরুসুন্দা নদীর তীরে বসে বসে পানির ঢেউ দেখতো। জেলের মাছ ধরা আর পালতোলা বড় নৌকা দেখে দেখে মন ভাল করে নিত। কাজল, নজরুল, অজিত, মামুন তার কাছের বন্ধু ছিল। খেলাধূলা, মারামারি, দুষ্টুমিতে এরাই তার সর্বক্ষণের সাথী ছিল, সকলেই রুবেলের পরশী।

একদিন স্কুল ছুটির পর বাড়ী ফেরার পথে রাস্তার পাশে একটি বড় কাঠাল গাছের খোড়লে ময়না পাখির ছানাদের শব্দ পেল। রুবেল কাজলকে বললো ময়না পাখির ছানাগুলো মনে হয় একবারে ছোট, পাখনা গজালে আরেকটু বড় হলে বাড়ীতে নিয়ে খাঁচায় রেখে পুষবো। ময়না পাখি পোষ মানলে কথা বলতে পারে শিষ দিতে পারে। দশ পনেরদিন পর দু’জনে মিলে বাজার থেকে দুটি পাখির খাচা কিনে নিয়ে এলো। পরের দিন রুবেল মই দিয়ে কাঠাল গাছে উঠে তিনটি বড় ছানা ধরে দুটি সে নিল একটি কাজলকে দিল। প্রতিদিন সকাল দুপুর ও বিকেলে এদের খাবার দিতে হয়। তাই রুবেল ও কাজল ধানের ক্ষেত থেকে ঘাসফড়িং, ফালফড়িং ধরে ছানাদের খাওয়াতে লাগল। রুবেলের এখন সারাদিন কাটে পাখি দুটি নিয়ে। খেলাধূলা ও দুষ্টুমী কমিয়ে দিয়েছে। সুযোগ পেলেই পাখির সামনে বসে শিষ দেয় এবং কথা বলে। দিন দিন এভাবে ছানা দুটি বড় হতে লাগল। রুবেলের দিন ভালই যা”িছল, তার বন্ধুরা মাঝে মাঝে ছানা দুটিকে দেখতে আসত। ছানা দুটি যখন বড় হয়ে গেল, একটু একটু করে তারা শিষ দিতো ও কথা বলা শিখতে লাগল। বাড়ীতে কোন মেহমান আসলে বলতো, টোমার নাম কি? কোঠা ঠেকে এসেছো। আবার পাখি দুটো এখন কলাও দুধভাত খায়। রুবেলের এখন আর কষ্ট করে মাঠে মাঠে ঘুরে ধান ক্ষেত থেকে ঘাসফড়িং ধরতে হয় না। দুমাসে রুবেল গ্রামের এমন কোন ধানক্ষেত নেই যেখানে সে চষে না বেড়িয়েছে। মাঝে মাঝে ধানক্ষেতে অন্যান্য পোকার কামড় খেতে হয়েছে। একদিন একটি গান্ধী পোকা উড়ে এসে রুবেলের গেঞ্জীর ভিতর ঢোকে গেল, তাড়াতাড়ি করে রুবেল গেঞ্জীখোলে ফেললো, কিন্তু ইতোমধ্যে গান্ধীপোকা তার পিঠে একটি কামড় বসিয়ে দিয়েছে, সে কি জ্বালাতন, তাড়াতাড়ি করে বাড়ীতে এসে ডেটল পানি দিয়ে ধূয়ে ফেলল এবং একটু ব্যাথার বাম লাগিয়ে নিল।

একদিন রুবেলের বড়মামা তাদের বাড়ীতে বেড়াতে এলো, খাচাঁতে ময়না পাখি দেখে রুবেলকে বকা দিয়ে বলল তুই জানিস না বনের পাখিদের খাচাঁয় বন্দী করতে নেই, এরা প্রকৃতির সৌন্দর্য মুক্ত আকাশে এদের বিচরণ। এ কথা বলে খাচাঁর দরজা খোলে পাখি দুটিকে ছেড়ে দিল। ভয়ে রুবেল বড়মামাকে কিছুই বলতে পারল না। কিন্তু মনে মনে মামার উপর খুবই রাগ হলেও নিজেকে সামলে নিল। সারাদিন রুবেলের মন খারাপ গেল, কিছুই ভাল লাগছিল না, একা একা বাড়ীর সামনে পুকুর পাড়ের জাম গাছে উঠে বসে রইল, আর আকাশের দিকে তাকিয়ে পাখি দুটিকে খুজছিল। সে দিন সারারাত রুবেল ঠিকমত ঘুমুতে পারল না শুধু পাখি দুটির জন্য তার মায়া হতে লাগল। নিজেকে একা একা মনে হ”িছল, তার কে যেন হারিয়ে গেছে। পরের দিন সকালে মন খারাপ করে স্কুলে চলে গেল, ক্লাসেও মন বসে না। কাজলের কাছে মনখুলে সব কথা বলল। কাজল তার ময়না পাখিটা রুবেলকে দিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু রুবেল যে দুটি ময়নাছানা পালন করে বড় করেছে, তাদের কথা ভুলতে পারছে না। স্কুল থেকে ক্লাস শেষে বাড়ীতে রুবেল ফিরে এলো, গোসল করে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিল। পুকুর পাড়ে বসে একধ্যানে পানিতে হাঁসপোকাদের দৌড়াদৌড়ি ও তেলাপিয়া মাছদের সাঁতার দেখতে লাগল। হঠাৎ রুবেলের কাধে ও মাথায় ময়না পাখি দুটি এসে বসেছে এবং শিষ দি”েছ। প্রথমে রুবেল ভয় পেয়ে গিয়েছিল, বুকে একটু থু-থু করে নিল। সত্যি সত্যিই দেখা যা”েছ তার ময়না দুটি ফিরে এসেছে। রুবেল দুহাতের আঙ্গুলে পাখি দুটিকে বসিয়ে নিল, তারপর ধীরে ধীরে বাড়ীতে নিয়ে এসে তাদের কলা খেতে দিল, খাচার উপরে বসে বসেই তার কলা খা”েছ। এখন থেকে ময়না দুটি রাত্রে খাচার উপরই বসে ঘুমায় আর দিনের বেলা এদিক সেদিক ঘুরা ঘুরি করে। আর রুবেলের বাড়ীত ছেড়ে চলে যায় না। একদিন রাতে রুবেল ঘুমু”েছ মাঝরাতে ময়না পাখির ক্রে-ক্রে শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিছানা থেকে একলাফে উঠে বারান্দায় খাচার কাছে গিয়ে দেখে নীচের মেঝেতে কয়েকটি পাখনা পড়ে আছে। ময়না পাখি দুটি নেই। হারিকেন জালিয়ে চারদিকে খোঁজাখোজি করতে লাগল, এদিকে রুবেলের আম্মু ঘুম থেকে উঠে রুবেলকে বকা দিতে লাগল, এত রাত্রে তুমি বিছানা ছেড়ে বারান্দায় কি করছিস। রুবেল কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল আম্মু আমার ময়না পাখি দুটিকে বনবিড়ালে ধরে নিয়ে গেছে। সারারাত রুবেল আর ঘুমুতে পারল না। আম্মু তাকে বুঝাতে লাগল বনের পাখিদের এভাবে পালতে নেই, তারা গৃহপালিত পশুপাখির মতো আমাদের পরিবেশে থাকতে পারে না। নিরাপত্তাহীনতা, রোগ-শোক এদের আক্রান্ত করে। তোর বড় মামাও ছোট থাকতে দুটি ঘুঘু পাখির ছানা পালত, কিন্তু একদিন সে পাখি দুটি হঠাৎ করে মারা যায়। তারপর থেকে সে আর কোন দিন পাখি পালেনি এবং অন্যদের পাখি পালতে দেয় না। আর তোর বড় মামা একবার হুন্ডা এক্সিডেন্ট করে ডান পায় ভেঙ্গেঁ ফেলেছিল, এখনো তার ধারনা ঘুঘু পাখি দুটির অভিশাপে তার এক্সিডেন্ট হয়েছিল।

ভোর সকালে ঘর থেকে বের হয়ে রুবেল আবার সারা বাড়ি ও পেছনের জঙ্গঁলে পাখি দুটিকে খুঁজতে থাকে। হঠাৎ দেখতে পেল জঙ্গঁলে গাব গাছের নিচে ময়না পাখির একটি ঠোট, হলুদ দুটি পা ও কিছু পাখনা পড়ে আছে। রুবেল নিশ্বিত হলো বনবিড়াল তার পাখিদের খেয়ে ফেলেছে, কারণ মাঝে মাঝেই বনবিড়ালগুলো বাড়ীর মুরগী ধরে খেয়ে ফেলে। খুব সাবধানে মুরগী পালতে হয়। রুবেল স্কুলে গিয়ে কাজল, অজিত, মামুন ও নজরুলকে সবঘটনা খুলে বলল। সকলেই রাগে কটমট করতে লাগল কারন বনবিড়ালগুলো সকলকেই খুব অতিষ্ট করে তুলেছে। জঙ্গলের আশে পাশে এমন কোন ঘর নেই, যাদের একটা না একটা মুরগী বনবিড়ালের পেটে গেছে। রুবেল বন্ধুদের নিয়ে বুদ্ধি করে বনবিড়ালগুলিকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়। কাজল বলে উঠল আমরা পাড়ার সকল ছেলেরা আগামী শুক্রবারে জোম্মার নামায পরে লাঠি-সোটা শাবল নিয়ে সারা জঙ্গল আক্রমন করে এদের যেকানেই পাব মেরে ফেলব। কাজলে কথায় সবাই সায় দিল। যথারীতি পাড়ার সকল ছেলেদের জানিয়ে দেয়া হলো বনবিড়াল নিধনের জন্যে আগামী শুক্রবার জুম্মার নামায পর সকলেই রুবেলের বাড়ীর সামনে জমায়েত হবে।

কথামত পাড়ার সকল ছেলে লাঠি-সোটা নিয়ে রুবেলের বাড়ীর সামনে জমায়েত হয়। ইতোমধ্যে রুবেলের বড় মামা আবার তাদের বাড়ীতে সময়মত হাজির। রুবেলসহ সকলের হাতে লাঠি-সোটা দেখে বড় মামা অবাক হয়ে গেলেন। রুবেলকে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে তোরা আবার লাঠি-সোটা নিয়ে কোথায় মারামারি করতে যা”িছস। রুবেল বনবিড়াল নিধনের কথা বিস্তারিত বর্ণনা করল। বড় মামা ছোট থেকেই প্রকৃতপ্রেমী ছিলেন, পন্ডিত মশাই তাকে প্রকৃতির সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রতি সদয় হবার শিক্ষা দিয়ে ছিলেন। এবার বড় মামা সকলের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, দেখ এ পৃথিবীতে আমাদের যেমন খেয়ে পরে বসবাস করার অধিকার রয়েছে তেমনি সৃষ্ট জীব হিসাবে সকল প্রাণীরও এ পৃথিবীতে নিরাপদে বসবাস করার অধিকার আছে। তাছাড়া সকল বন্য পশু পাখি মানুষের কোন না কোন ভাবে উপকার করে থাকে। তোমরা সকলে মিলে আজকে বনবিড়াল নিধনের জন্যে প্র¯‘ত নি”ছ তা কিন্তু ঠিক না। তোমাদের জঙ্গলে শিয়াল, বনবিড়াল, বেজী, সাপ, সজারুসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী রয়েছে। তারা কিন্তু প্রকৃতির সন্তান হিসেবেই জঙ্গলে বসবাস করে। আমরা দিন দিন তাদের বসতি জঙ্গল কেটে ফেলাতে তারা লোকালয়ে চলে এসে আমাদের গৃহপালিত পশু-পাখি খেয়ে ফেলে। এটা তাদের দোষ নয় আমাদেরই দোষ। না বুঝে অতীতে আমরা পরিবেশের অনেক ক্ষতি করেছি। আজকে সারা-পৃথিবীতে বন্যা, খরা, ঘূর্ণীঝড়, ভূমিকম্পসহ অন্যান্য যে ধরনের প্রাকৃতিক দূযোর্গ দেখা দি”েছ তার জন্য আমরাই দায়ী।

সুতরাং তোমরা এখনো শিশু, আগামী দিনের পৃথিবীতে তোমাদেরই বসবাস করতে হবে, সে জন্যে তোমাদের দায়িত্ব রয়েছে। প্রকৃতির সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ রক্ষা করা। বড় মামার কথা শুনে রুবেলসহ সকলেই বুঝতে পারল বনবিড়াল নিধন করা উচিত নয়। তাই সকলে লাঠি ফেলে বাড়ীতে চলে গেল। এরপর থেকে তারা আর কোনদিন প্রকৃতির কোন পশু-পাখির ক্ষতি করেনি, বরঞ্চ যারা ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে তাদেরকে বুঝিয়ে বিরত রেখেছে।

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test