E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মৌমিতা মেহেরীন’র গল্প

২০১৬ মে ২৬ ১৭:২০:৩২
মৌমিতা মেহেরীন’র গল্প







 

চড়ুইভাতি

হৃদয়পুরের ঝিলের পাশে মাঠের কোণে যে বকুল গাছটা আছে, তার ডালে অনেকগুলো চড়ুইপাখি বসে মিটিং করছে। ওরা অপেক্ষা করছে। ওদের দু'জন চড়ুই খবর আনতে গেছে।
-কী খবর নিয়ে আসে তার অপেক্ষা। ব্যাপারটা হচ্ছে-পাড়ার দুষ্টু ছেলের দল টিংকু-পিন্টুরা আজ নাকি মাঠে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করবে।
-তা করুকগে। তা নিয়ে চড়ুইদের মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু মাথা ব্যাথার কারণ অন্য জায়গায়। একটা চড়ুই কাল বিকেলে এসে এই খবরটা দিয়েছে।
-বিশ্বস্ত সূত্রের খবর। অবিশ্বাস করার কোনও রাস্তা নেই। কাল বিকেলে টিংকু-পিন্টুরা নাকি মাঠে বসে আলোচনা করছিল। আজ তারা মাঠে রান্না করবে, মজা করবে, খাবে।
-কিন্তু তাদের এই আলোচনার মধ্যে নাকি বারবার "চড়ুইভাতি" শব্দটা শোনা গেছে। বার্তাবাহক চড়ুই খুব গুরুত্বের সাথে মনে রেখেছে শব্দটা, "চড়ুইভাতি"।
-ভুল হবার কোনও সম্ভাবনা নেই। আতংকের ব্যাপার হচ্ছে - রান্না আর খাওয়ার মধ্যে চড়ুই এর কী সম্পর্ক থাকতে পারে!
-ওদের রান্না আর খাওয়ার আলোচনায় 'চড়ুই' শব্দটা কেনো এলো! তবেকি যা আশংকা করা হচ্ছে, তা-ই সত্যি! দুষ্টু ছেলের দলের কোনও ভরসা নেই।
-ওরা হয়ত চড়ুইপাখি ধরে কেটে রান্না করে খেয়ে নেবে। তাইতো বারবার বলছিলো "চড়ুইভাতি"।
আজ সকাল থেকেই চড়ুইরা সতর্ক রয়েছে। সকালে দুটো চড়ুই মাঠে ঘুরে এসেছে। তারা দেখে এসেছে টিংকু-পিন্টুরা হাঁড়ি-পাতিল, রান্নার জ্বালানী-কাঠ এসব এনে মাঠে রাখছে।
-এমনকি তখনও তাদের মুখে ঐ শব্দটা শোনা গেছে। কী ভয়ংকর ব্যাপার!
-বকুলগাছে পনেরোটা চড়ুই অপেক্ষা করছে। এদের মধ্যে চারটে চড়ুই বয়স্ক। তারাই আজকের ব্যাপারটায় নেতৃত্ব দিচ্ছে।
-এসব কাজে অভিজ্ঞতা, সতর্কতা আর কৌশলের দরকার আছে। নাহলে ছেলে-ছোকড়া চড়ুইগুলো এতক্ষণে ঘেঁটে 'ঘ' করে দিতো।
-বার্তাবাহক চড়ুই দুটোকে আবার পাঠানো হয়েছে মাঠে।
-এখন তারা কী বার্তা নিয়ে আসবে তার জন্য চলছে শ্বাসরূদ্ধকর অপেক্ষা।-বার্তাবাহক চড়ুই দুটো এলো।
-তারা রাগে, ক্ষোভে, কষ্টে কথা বলতে পারছেনা। অনেক কষ্টে তারা বললো, আমাদের ধারণাই ঠিক। ঐ দুষ্টু ছেলেরা আমাদেরই মত কয়েকজনকে ধরে রেখেছে।
-ওগুলোকে তারা কাটবে। তারপর খাবে। ওগুলো রান্না করার জন্য তারা মশলা রেডি করছে।
-বকুলগাছের চড়ুইগুলো ভয়ে, আতংকে কুঁকড়ে উঠলো। বয়স্ক চড়ুইগুলো লাফিয়ে উঠে বললো,
কী বলছিস! ঠিক বলছিস তো?
-একদম ঠিক বলছি। তবে একটা ব্যাপার, যেগুলোকে ওরা ধরে রেখেছে ওগুলো ঠিক আমাদেরই মত। আমাদেরই মত মুখ, চোখ, নাক, ঠোঁট, মাথা, হাত-পা-ডানা।
কিন্তু ওগুলো আমাদের চাইতে বেশ খানিকটা বড়।
বয়স্ক চড়ুইরা বলল,
-নাহ্ এবারে আর তোদের ওপর ভরসা করা যাচ্ছেনা। এবার আমরা গিয়ে দেখি।
-তখন বকুল গাছের পনেরোটা আর বার্তাবাহক দুটো মোট সতেরোটা চড়ুই মাঠে গিয়ে উপস্থিত হলো।
-তারা টিংকু-পিন্টুদের মাথার ওপর উড়ছে আর তীক্ষ্ণদৃ্ষ্টিতে তাদের গতিবিধি দেখছে।- তখন ঐ প্রাণীগুলোকে কাটা হচ্ছিলো। চড়ুইদের সতর্ক তীক্ষ্ণদৃষ্টি আরও জোরালো হলো।
বয়স্ক চড়ুইগুলো এবারে বার্তাবাহক চড়ুই দুটোকে বললো,
-এগুলোতো মুরগি। বাপের জন্মে মুরগি দেখিসনি? উল্টোপাল্টা খবর দিয়ে মাথাটা তো খারাপ করে দিয়েছিলিস...
বার্তাবাহক চড়ুই দুটো লজ্জিত হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।
হঠাৎ টিংকু-পিন্টুরা ওপরের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আরে! এত্তগুলো চড়ুই এখানে কী করছে! ভারি মজার ব্যাপার তো!
-টিংকু-পিন্টুরা চড়ুইগুলোর জন্য চাল ছিটিয়ে দিলো।
-সবগুলো চড়ুই নেমে এসে চাল খেতে থাকলো।
-বার্তাবাহক চড়ুই দুটো আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো: বয়স্ক চড়ুইগুলো হাপুস হুপুস খাচ্ছে...। বার্তাবাহক চড়ুই -দুটো বয়স্ক চড়ুইগুলোর দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
-খবরটা ভুল ছিলো বটে, কিন্তু দেখুন এর একটা ভালো দিকও রয়েছে...
ওদিকে টিংকু-পিন্টুরা বললো,
-আমাদের চড়ুইভাতিতে চড়ুইরাও শামিল হয়েছে। চড়ুই সমেত চড়ুইভাতি।- টিংকু-পিন্টুরা সবাই হাততালি দিয়ে হেসে উঠলো।
-ওদিকে চাল খেতে খেতে চড়ুইরাও পরস্পরেরর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে হাসতে থাকলো।।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test