E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোনার তরী(শিশু কিশোর সাহিত্য)

২০১৬ জুন ১০ ১১:০০:৪৮
সোনার তরী(শিশু কিশোর সাহিত্য)







 

লুৎফর রহমান রিটন

ফেব্রুয়ারির গান



দোয়েল কোয়েল ময়না কোকিল
সবার আছে গান
পাখির গানে পাখির সুরে
মুগ্ধ সবার প্রাণ।

সাগর নদীর ঊর্মিমালার
মন ভোলানো সুর
নদী হচ্ছে স্রোতস্বিনী
সাগর সমুদ্দুর।


ছড়ায় পাহাড় সুরের বাহার
ঝরনা-প্রকৃতিতে
বাতাস তার প্রতিধ্বনি
গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীতে।

গাছের গানে মুগ্ধ পাতা
মুগ্ধ স্বর্ণলতা
ছন্দ-সুরে ফুলের সাথে
প্রজাপতির কথা।


ফুল পাখি নই, নইকো পাহাড়
ঝরনা সাগর নই
মায়ের মুখের মধুর ভাষায়
মনের কথা কই।

বাংলা আমার মায়ের ভাষা
শহিদ ছেলের দান
আমার ভাইয়ের রক্তে লেখা
ফেব্রুয়ারির গান।


নাসের মাহমুদ
শ্রেষ্ঠা

ঝিলমিল ঝিলমিল
তারা চাঁদ জ্বলছে,
শ্রেষ্ঠার সাথে ওরা
কত কথা বলছে ।


তারাদের, চাঁদেরও
আলোর কী বন্যা,
বাঁধভাঙা এত আলো
ভালো কার মন না !


আলো ঢোকে বাগানে
আলো ঢোকে পুকুরে,
আলোগুলো সাতরং
হয় মনমুকুরে ।


আলো যায় নদি মাঠে
আলো জাগে জাংলায়,
শ্রেষ্ঠারই মুখটির
আলো এই বাংলায় ।


সব তারা আর চাঁদ
শ্রেষ্ঠার সই হয়,
জানালায় ঝুলে থাকে
পড়বার বই হয় ।


ভোর হলে শ্রেষ্ঠাই
কৌটায় ঢুকিয়ে-
তারা চাঁদ রেখে দেয়
একদম লুকিয়ে ।


ভাই বলে-চাঁদমনি
বুবু বলে- তারা তো,
ওর আলো দিয়ে মাখা
সারা বাড়ি, পাড়া তো !


তারা চাঁদ ফুলপাখি
ডাকা হয় যদিও,
ফুপি বলে-তরঙ্গ,
ঢেউফুল,নদী ও ।


শ্রেষ্ঠা কী মিষ্টি
শ্রেষ্ঠা কি পক্ষী ?
বাবা বলে- "মা" আর
মা বলে-লক্ষী ।



রব্বানী চৌধুরী
মৌসুমী ছড়া

জ্যৈষ্ঠমাসে আনারস আর আম-লিচু খান তো?
পরিস্থিতি শান্ত!
কাঁঠাল গাছে পাকা কাঁঠাল মিষ্টি কোষ চান তো ?
পরিস্থিতি শান্ত!
খই-চিড়া ও দইয়ের বাটি জলদি করে আন্ তো!
পরিস্থিতি শান্ত
সরল পথে সরল থেকো কেউ ভেবো না ভ্রান্ত
পরিস্থিতি শান্ত!


বৃষ্টি বন্দনা
মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক

রিম ঝিম রিম ঝিম বিষ্টির সুর
দৃষ্টিকে কেড়ে নিয়ে ছোটে বহুদূর
আকাশের বুকে করে লুকোচুরি খেলা
মেঘে মেঘে বয়ে যায় বরষার বেলা
নদীর অমিত ধারা বুকে নিয়ে জল
সাগরের দিকে ছোটে হয়ে উচ্ছ্বল
বিলে ঝিলে কথা কয় শাপলা শালুক
মীনারাও ফিরে পায় হারানো তালুক
কৃষকের মুখে হাসি ফোটে অনাবিল
আনন্দে ওড়া ওড়ি করে বক চিল
কলমিলতারা দোলে সতেজ হাওয়ায়
শিশুসব করে রব দখিনা দাওয়ায়
রিম ঝিম রিম ঝিম সুর সু-মধুর
ডেকে বলে মেঘেদের মত করে উড়।


সোহেল মল্লিক
কারণ


সে দেখেনি শুকনো খড়ের গাদা
বাঁওড়ে বক পালক সাদা সাদা।

সে দেখেনি ঝিঙেলতার মাচা
পুকুরপাড়ে কাচতে কাপড়কাচা।

সে দেখেনি পদ্মবিলের মাছ
সাঁকোর পাশে ঝাঁকড়া চুলের গাছ।

সে দেখেনি মিষ্টিআলুর চাষ
পুষ্কুনীতে নামতে পাতিহাঁস।

সে দেখেনি খলসে মাছের ঝাঁক
তেঁতুল গাছে মৌমাছি-মৌচাক।

সে দেখেনি নাচতে দোয়েল পাখি
জলের তলে চাঁদের মাখামাখি।

সে দেখেনি সকাল বেলার নদী
পালতোলা নাও চলছে নিরবধি।

সে দেখেনি রঙিন প্রজাপতি
উঠোনকোণায় কচু, কচুরলতি।

সে দেখেনি ছনে ছাওয়া ছাদ
খালের পানি, সেই পানিতে বাঁধ।

সে দেখেনি শিশিরভেজা ঘাস
কারণ খোকার এপার্টমেন্টে বাস।



জগলুল হায়দার
বারোভাজা


তুমি এতো সুন্দর যায় না তো লিখা
সোনা রঙ ধান যেন আগুনের শিখা;
রোদ দ্যাখে উঁকি মেরে পাতাদের ফাঁকে
আমিও দেখেছি তাই সবুজের বাঁকে!



পৃথিবীর পথে জাগে জামানার বেলাভূমি
সততায় পা ফেলো পেয়ে যাবে মেলা ভূমি,
ভয় কি হে, ভাই সব এক হলে কাংখিত লক্ষ্যে
থাকবে না বাঁধা তবে মোটে প্রতিপক্ষে।



নাই পাবলিক টয়লেট তাই
এইটাও নয় কেচ্ছা বে!
দেয়ালজুড়ে বৃষ্টি নামে
শহর ভাসে পেচ্ছাবে!



নামের জন্য পাগল কেনো
নামে এমন কি আসে যায়;
গন্ধ দিয়াই গোলাপ কুঁড়ি

পুরাপুরি যায় চেনা যায়!



বুকে পিঠে প্রতিরোধের
যুগল মহাকাব্য;
তোমার খুনে গণতন্ত্র
হইছিলো ফের নাব্য!




শান্তি চেয়ে আজ লোকালয়
টেনশনে খুব পুড়তেছে;
ঠান্ডা দিনেও অফিসপাড়ায়
ফ্যানগুলা তাই ঘুরতেছে!


জুলফিকার আলীর তিনটি ছড়া:-


১।এই শহরের

এই শহরের ধুলো বালি
বাড়ে দেহে এলার্জি,
রোগ-বালাইয়ে ধরে ঠেসে
কারে দিবি দে আরজি!

দুঃখ আছে শহর জুড়ে
আছে ডানে বাঁয়ে,
অনাহারে,ছেঁড়া পোশাক
ব্যাথার শিকল পায়ে।

দালানকোঠায় ধনী থাকে
আমরা থাকি নিচে,
সারাদিন সইছি গরম
রোদ্রজ্বলা পিচে।

এই শহরের দুর্নীতি আর
অমানবিকতার দরুণ,
এই আমাদের অবস্থা ঠিক
হচ্ছে বুঝি করুণ!

২।বিষাক্ত ফল

অনেক লোকই নেশাতে
চায় যে ভেজাল মেশাতে,
অসাধু ফল ব্যবসায়ীরা
নষ্ট এমন পেশাতে।

যে ফল খেলে আমজনতা
দেহে পায়না টনিক,
সে ফল পাকে ফরমালিনে
বিষ সে রাসায়নিক।

ফল বাজারে ঢুকলে তুমি
টাটকা ফলই পাবে,
পটকায় কিনে সে ফল খেলে
যমের বাড়ি যাবে।

বাজারে ফল কেনার আগে
বিষাক্ত ফল চিনুন,
তা ফরমালিনমুক্ত কিনা
যাচাই করে কিনুন।

৩।গ্রীষ্মকালে রোদের তাপে

গ্রীষ্মকালে রোদের তাপে
উষ্ণতায় হারায় খেই,
কিন্তু এমন রোদ্রের ভিতর
দেখি খোকা ঘরে নেই।

খেলতে গেছে খোকা মাঠে
করছে লাফালাফি,
বোঝে না সে রোগ-বালাইয়ে
করবে কাঁপাকাঁপি?

বলি খোকা,সাবধানে রও!
রোদ ছুঁইও না তুমি,
এই গরমের কঠিন দিনে
তপ্ত ভুবন ভূমি।

ছায়ায় থাকো,পান করো আর
বেশি বেশি পানি,
সুস্থ দেহে দূর হবে যে
সকল পেরেশানি।

(শিশুতোষ গল্প)

অরণী নীলপরীর বান্ধবী
ফয়সাল শাহ

অরণী একরাতে স্বপ্ন দেখে এমন দেশে সে বসবাস করছে যেখানে স্কুল নেই, শুধু খাওয়া দাওয়া, ঘুমানো আর খেলা করা। ইচ্ছে হলেই পাখির মতো আকাশে ঘুরে বেড়ানো, গাছে গাছে পাখিদের সাথে কথা বলা। আবার ইচ্ছেমতো পানির উপর দিয়ে হেঁটে চলা, বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো, কোনো বন্য পশু তাকে আক্রমণ করে না, বাঘ, বানর, হরিণ, শিয়াল, বনবিড়াল সকলে তার সাথে ভাল ব্যবহার করে। ইচ্ছে করলেই বাঘের পিঠে চড়তে পারে, আবার হরিণের শিং ধরে ঝুলতে পারে। ইচ্ছেমতো পানির নিচে গিয়ে মাছদের সাথে কথা বলতে পারে। পানির নিচে রুই কাতল, মৃগল, শিং, মাগুর, পুটি, কৈ কত যে মাছ সকলেই তার বন্ধু। আর এই স্বপ্নদেশে নিয়ে যায় ফুটফুটে এক নীলপরী।

স্বপ্ন দেখছে অরণী পড়ার রুমে বসে গল্প বই পড়ছে, জানালা দিয়ে সূর্যের রশ্মি ঘরে প্রবেশ করছে। জানালার পাশ দিয়েই একটি নীলপরী উড়ে যাচ্ছিল, পাশে তকিয়ে অরণীকে দেখতে পেল ফুটফুটে সুন্দর মেয়ে। পরীর ইচ্ছে হলো অরণীকে বান্দবী বানাবে। একটু পরেই উড়ে এসে অরণীর সামনে দাঁড়ালো, অরণী নীলপরীকে দেখে ভয় পাচ্ছে চোখ-মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে, কাঁপতে লাগল, নীলপরী অরণীকে বলল তোমার ভয় নেই আমি তোমার বান্ধবী এই বলে অরণীর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল, ধীরে ধীরে অরণীর ভয় কেটে গেল। নীলপরীর সাথে অরণী কথা বলছে কোনো ভয় পাচ্ছে না পরীর মাথার চুল পাখনা ও হাত ধরে অরণী দেখল নীলপরী বলল চলো আমরা বৃষ্টিতে ভিজব, অরণী দেখল এই রৌদ্রে কোনো মেঘ নেই কিভাবে বৃষ্টিতে ভিজবো অরণী নীলপরীর পিঠে চড়ে বসল, তাকে নিয়ে পরী অকাশে উড়তে লাগল কতক্ষণ পর আকাশে মেঘ জমে অন্ধকার হয়ে গেল নীলপরী অরণীকে নিয়ে একটি পুকুরের ঘাটে বসল। পুকুরে সচ্ছ পানি শাপলা ফুটে আছে, দুটি রাজহাঁস সাঁতড়াচ্ছে।

এদিকে বৃষ্টি অরম্ভ হয়ে গেল নীলপরী অরণীকে বলল চল আমরা পুকুরে গোসল করি। দুজনে মিলে পুকুরে সাঁতার কাটতে লাগল রাজহাঁস দুটিও তাদের সাথে সাথে সাঁতরালো গোসল শেষে নীলপরী অরণীকে একটি শাপলা ফুল ছিড়ে দিল, আর বলে দিল বাসায় গিয়ে তুমি এই শাপলাটি পানি ভর্তি বোতলে রেখে দেবে। অরণীর ভেজা জামায় নীলপরী তার পাখনা দিয়ে বাতাস দেওয়ার সাথে সাথেই জামা শুকিয়ে গেল। আবার অরণীকে নিয়ে নীলপরী আকাশে উড়াল দিল অনেক উচুতে একেবারের মেঘের কূল ঘেষে তারা উড়ে যাচ্ছে নিচে পৃথিবীটাতে নদীগুলোকে আকাবাকা সাপের মতো আর গাছগুলোকে সবুজ কার্পেটের মতো দেখা যাচ্ছে। অরণীর খুবই ভাল লাগছিল, কতক্ষণ পর দেখতে পেল নীলপরীটা আস্তে আস্তে একটি সমুদ্র দ্বীপের মধ্যে নামছে। কতক্ষণ পর দুজনে দ্বীপের ভিতর একটি বিরাট রাজপ্রাসাদের ছাদের মধ্যে দাড়াল। দুজনে প্রাসাদের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে কতক্ষণ পর দেখতে পেল প্রাসাদের ভিতরে বাহিরে অনেক অনেক পরী ঘোরাফেরা করছে।

নীলপরী প্রাসাদের একটি কক্ষে নিয়ে গেল, সেখানে অরণীকে সুদাতে বসতে দিল এবং অনেক ধরনের ফল আংঙুর, আপেল কমলা বেদানা নাসপাতি খেতে দিল, নীলপরী অরণীকে বলল এটা পরীদের রাজ্য আমার মা এ রাজ্যের রাণী আর আমি রাজকন্যা; তুমি আমার বান্ধবী তোমার এখানে কোনো ভয় নেই, যতদিন তোমার ভাল লাগবে ততদিন এখানে থাকতে পারবে বেড়াতে পারবে মজার মজার খেতে পারবে, ইচ্ছেমতো খেলা করতে পারবে। একথা শুনে অরণীত মহাখুশি। নীলপরী অরণীকে নিয়ে পরীরানীর কাছে নিয়ে গেল। অরণীকে দেখে রাণী মহাখুশি তাকে রানীর সিংহাসনের পাশে বসিয়ে আদর করতে লাগল অর নীলপরীকে জিজ্ঞেস করছে এত ফুটফুটে সুন্দর লক্ষ্মী মেয়েকে কোন দেশ থেকে নিয়ে এসেছ, নীলপরী উত্তর দিল ওর নাম অরণী আমার বান্ধবী তাকে বাংলাদেশের ঢাকা শহর থেকে নিয়ে এসেছি পরীরানীতো অবাক সে বলে উঠল আমিত ঢাকা শহর চিনি অনেক অনেক আগে ঢাকার এক বান্ধবী আমাকে দাওয়াত দিয়েছিল আমি তখন গিয়েছিলাম, ঢাকার পাশে বুড়িগঙ্গা নদী কাওরান বাজার খালে আমরা নৌভ্রমণ করেছিলাম।

অরণীকে রানী বিভিন্ন প্রকার সরবত, পায়ে মন্ড-মিঠাই খাওয়াল, গভীর রাত পর্যন্ত তারা গল্প করলো, তারপর রাতে ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে ঘুম থেকে উঠে খাওয়া -দাওয়া শেষে নীল পরীকে নিয়ে জলে গেল, সেখানে বাঘ, বানর হরিণ শিয়াল, বনবিড়াল, হাতি, গন্ডার জিরাফ, গরিলা সহ অনেক বন্যপ্রাণী ঘুরাঘুরি করছে। অরণী আর নীলপরী হেঁটে হেঁটে জঙ্গলের ভিতর যাচ্ছে, কোনো প্রাণী তাদের আক্রমণ করে না পোষা প্রাণীর মতো আচরণ করছে। দুজনে হেটে সামনে এগুচ্ছে একটি বাঘ তাদের সামনে এসে কথা বলতে লাগল, তোমরা কোথা থেকে এসেছ, কোথায় যাবে। আমাদের সাথে ঘুরবে কিনা, নীলপরী বলল, আমরা দুজনে তোমার পিঠে চড়ে এ জঙ্গলে ঘুরে বেড়াব তুমি নেবে কিনা। বাঘ রাজি হয়ে গেল। অরণী ও নীলপরী বাঘের পিঠে উঠে বসল দুজনকে নিয়ে বাঘ গহীণ জঙ্গলের দিকে হেটে চলল কতক্ষণ পর জঙ্গলের ভিতর বিরাট এক দীঘির পাড়ে গিয়ে বাঘ তাদের পিঠ থেকে নামিয়ে বলল, এই পুকুরে অনেক মাছ আছে, ইচ্ছে হলে তোমরা পানিতে নেমে মাছের সাথে খেলা করতে পারবে। পুকুরের পানি একেবারে স্বচ্ছ কোন ময়লা নেই, অরণী স্বচ্ছ পানিতে দেখতে পাচ্ছে বড় বড় রুই, কাতলা মৃগেল আইর, পুঁটি কৈ, মাগুর শিং, তেলাপিয়া, মলা ঢেলা মাছ পুকুরে কিলবিল করছে।

অরণী ও নীলপরী দুজনে পুকুরের পানির উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে মাঝ পুকুরে গেল, কতক্ষণ পর একটি বোয়াল মাছ এসে তাদেরকে বলল তোমরা এখানে প্রথম এসেছ বুঝি, আগেত কখনো তোমাদের এখানে দেখিনি। অরণী বলল, এই প্রথম এখানে এসেছি। বোয়াল মাছ বলল তোমরা দুজনে আমার পিঠে চড়ে পুকুরের নিচে পাতালপুরীতে যাবে, সেখানে অনেক মজার মজার খাবার ও সুন্দর সুন্দর আরো অনেক মাছ আছে। অরণী প্রথামে একটু ভয় পাচ্ছিল, পাতালপুরীতে যদি কোনো রাক্ষস থাকে তবে তাদের খেয়ে ফেলবে। নীলপরী অরণীকে অভয় দিয়ে বলল, কোন চিন্তা নেই, আমি এই রাজ্যের রাজকন্যা আমি যা বলব তাই এখানে হবে। চলো আমরা দুজনে বোয়াল মাছের পিঠে চড়ে পাতালপুরী থেকে ঘুরে আসি।

এবার দুজনে বোয়াল মাছের পিঠে চড়ে বসল, বোয়াল মাছ রকেটের বেগে দুজনেকে নিয়ে পুকুরের গভীরে যেতে যেতে এক সময় পাতালপুরীর অজানা রাজ্যে গিয়ে হাজির হলো। সেখানে গিয়ে দেখে পাথরের তৈরি সুন্দর সুন্দর অনেক রাজপ্রাসাদ। সেখানে মাছের রাজত্ব, শিং মাছ তাদের রাজা আর অন্য মাছগুলো তাদের প্রজা। সেখানে কোনো মারামারি, কাটাকাটি ঝগড়া-ঝাটি নেই। সকলেই যার যার দায়িত্ব পালন করে, কাজে কোনো ফাকিবাজি করে না। বোয়াল মাছ অরণী ও নীলপরীকে সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। রাতে শিং রাজার বাড়িতে তাদের দুজনকে নিয়ে বোয়াল মাছ শিং রাজার প্রাসাদে গিয়ে হাজির হলো।

রাজপ্রাসাদের প্রত্যেক কক্ষের সামনে প্রহরী হিসেবে কোথাও টেংরা মাছ। কোথাও মাগুর মাছ, আবার কোথাও কৈ মাছ পাহারা দিচ্ছে। অরণী ও নীলপরী হেঁটে হেঁটে রাজপ্রসাদের শিং রাজার দরবারের দিকে এগুচ্ছে। কতক্ষণ পর দুজনে শিং রাজার দরবারে গিয়ে হাজির। শিং রাজা দুজনকে অভ্যর্থনা জানিয়ে সোফাতে বসতে দিল। রাজা তাদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করল। কতক্ষণ পর মাছদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়ে গেল। টেংরা মাছ গান শুর করল, পুঁটি মাছ তবলা বাজাচ্ছে, ভেদা মাছ হারমোনিয়াম বাজাচ্ছে, মাগুর মাছ গিটার বাজাচ্ছে। টেংরা মাছ ভৈরবী রাগে তবলার তালে গান গাইতে লাগল “আমরা টেংরা, ভেদা, পুটি, টাকি; পাতালপুরীর স্বর্গে থাকি; শিং আমাদের মহারাজা; খাই আমরা ব্যাঙ ভাজা”। এবাবে টেংরা, ভেদা, পুঁটি, মাগুর মাছেরা অরণী ও নীলপরীকে গান শুনাতে লাগল।

গান শেষ হতে অনেক দেরি হচ্ছে। অরণী ও লীলপরীর খিদে লেগে যাচ্ছে। ক্ষুধায় পেট চূ-চূ করছে। যথারীতি অরণী ও নীলপরীকে নিয়ে বোয়াল মাছ ও শিং রাজা খাবার টেবিলে গিয়ে বসল। অনেক মজার মজার খাবার অরণীর জিহ্বায় পানি এসে গেল। দুজনে খেতে শুরু করল, প্রথমে পিঠা খেল। তারপর ফল এবং শেষের দিকে বিভিন্ন মাছের ফ্রাই খেতে শুরু করল। চিতল, রুই, মৃগেল মাছের ফ্রাই খুব মজা করে অরণী খেল, শেষে দেখতে পেল একটি বড় কৈ মাছের ফ্রাই। অরণী প্লেটে নিয়ে খেতে লাগল। প্রথমে মাংসটুকু খেল তারপর কৈ মাছ কাঁটাসুদ্ধ মুখে দিয়ে চিবুচ্ছে। হঠাৎ করে একটি কাঁটা অরণীর গলায় আটকে গেল। কিছুতেই পেটেও যাচ্ছে না আবার বের হচ্ছে না।

অরণীর দম আটকে আসছে, কথা বলতে পারছে না, খুব কষ্ট হচ্ছে। এমন সময় তার আম্মুর কথা মনে পড়ে গেল। জোরে আম্মু বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে তাকিয়ে দেখে সে বিছানার উপর বসে আছে। পাশেই আম্মু ঘুমুচ্ছে। অরণী হাফ ছেড়ে বাচঁল আর বুঝতে পারল এতক্ষণ নীলপরীকে নিয়ে সে যেখানে সেখানে ঘুরেছে সবই স্বপ্ন। তার গলায় কোনো কাঁটা আটকায় নাই। তাড়াতাড়ি আম্মুকে ডেকে স্বপ্নের বিস্তারিত কাহিনী শোনাল। আম্মু বলল কোনো ভয় নেই, স্বপ্ন স্বপ্নই, বাস্তবর সাথে এর কোনো মিল নেই।


(এবি/বিএইচ১০জুন২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test