E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোনার তরী(শিশু কিশোর সাহিত্য)

২০১৬ জুন ২৪ ১২:০২:৪৯
সোনার তরী(শিশু কিশোর সাহিত্য)











 


ভুতের লন্ডন সফর
রব্বানী চৌধুরী

বাংলাদেশের ভূত এসেছে খবর পেলাম ফোনে
শীতের জ্বালায় ভূতটা নাকি মরণ-প্রমাদ গোনে
লন্ডনীভূত মারে ঘুষি
মনটা তার রয়না খুশি
ইংরেজিতে শিক্ষা নেই, তার কথা কে শোনে!
ফাই ফু ফান ফাই ফু ফান- ফরেন ভূতের গান
সে গান শুনে বাংলাদেশের ভূতের কাঁপে প্রাণ
ওদের ভাষার সুর নরম
বলছে কথা গরম গরম
তবুও ভূতের মনে হয়-এতে হয়নি অপমান!
ইংরেজিটা শিখতে ভূত গেলো বাংলাটাউন
আলতাব আলী পার্কে পেলো স্বদেশিদের খুন
বর্ণবাদী মানুষ নয়
সত্যি ভূতের বাবা হয়
শহীদমিনার দেখে ভূত গায় ব্রিটিশের গুণ।
ভূতের ভীষণ শখ হয়েছে খাবে বোয়ালমাছ
সুপারস্টোরে ঢুকে ভূতের সেকি দারুণ নাচ
ফ্রিজার ভরা বিরাট বোয়াল
তাকিয়ে আছে উঁচিয়ে চোয়াল
ফাইভ-নাইন্টি কিলো শুনে চক্ষু চড়কগাছ!
টপম্যানে গিয়ে ভূত কিনবে ওভারকোট
একশ’ টাকায় এক পণ হয়-এ তো হরিলুট
নব্বই পাউন্ড কোটের দাম
শীতের দিনে ঝরবে ঘাম
কাজ-কর্ম নেই ভূতের কোথায় পাবে নোট?
শীতের কাপড় সস্তা মেলে দিলে সামার সেল
একটা কিনলে একটা ফ্রি -এ তো আজব খেল
ত্রিশ পাউন্ডে পাবে কোট
বিশ পাউন্ডে আছে বুট
নিউ-ইয়ার্স সেলটা কিন্তু কেউ করে না ফেল।
ভূত গিয়েছে প্লে¬জার আয়ল্যান্ড চড়তে রোলারকোষ্ট
হয়তো প্রাণে শান্তি পাবে, মনে পাওয়ার-বোস্ট
কিন্তু তাতে গুঁড়েবালি
বার্ড শো-তে পকেট খালি
তোতাপাখির বন্দিজীবন কষ্ট লাগে মোস্ট।
রানী দেখতে ভূতমশাই গেলো বাকিংহাম
রয়েলভূতের ঠেলা খেয়ে জপে হরির নাম
রানীরবাড়ির কোঠায় কোঠায়
শ্যান্ডেলিয়ার আলো ফোটায়
রানী দেখা সহজ নয়- এ অসাধারণ কাম।
ভূত গেলো মিউজিয়ামে দেখতে কোহিনূর
ব্রিটিশ রাজের কাটা যে নয়তো সুমধুর
হাজার হাজার দর্শনার্থী
দেখছে ও-টা নিয়ে আর্তি
লুণ্ঠিতমাল ফেরত পাওয়া- সে তো বহুদূর।
মন্দির তো পায়নি ভূত ঢুকলো একটা চ্যাপেলে
আস্তে আস্তে এগোয় সেথা সন্তর্পণে পা ফেলে
পাদ্রি তারে দেখায় ক্রস
শুকিয়ে যায় মুখের রস
আনরেসিডেণ্ট ভূত হলে তো ঢুকতে হবে জেলে!
হোম অফিসে যাবে ভূত থাকার ভিসা চাই
ইল্লিগ্যাল এন্ট্রি হলে সে-সুযোগও নাই
নো পাসপোর্ট নো ভিসা
চতুর্দিকে অমানিশা
ট্রাভেল ভিসায় লন্ডনে থাকার সুযোগ নাই।
আন্ডারগ্রাউন্ড চড়তে ভূত মনে পায় না ভয়
চলাফেরার জন্য ওটা খুবই সহজ হয়
এতো মানুষ ট্রেনে চড়ে
তবু কারো মুখ না নড়ে
ট্রেনে বসে পড়ছে বই এ দারুণ বিস্ময়!
ভূত চড়েছে মেগাবাসে করবে ব্রিটেন ট্যুর
স্কানথর্পের ব্রিটিশ স্টিল আড়াইশ’ মাইল দূর
ব্রিটিশ ষ্টিলে বেরোয় ধোঁয়া
শান্তিমতো যায় না শোয়া
তারচেয়ে তো ভালো হয় গেলে বডমিন ম্যুর।
বডমিন ম্যুরে মুক্ত হাওয়া- টামারনদী পাশে
গরমকাপড় না থাকলে তো মরবে সর্দি-কাশে
ঔক-ট্রিতে শকুন আছে
রাতেরবেলা পেতিœ নাচে
রুগ্নভূত দেখলে ওরা বিকট সুরে হাসে।
ষ্টোনহেঞ্জে পাথর দেখে ঠোকায় ভূতে মাথা
মুষলধারে বৃষ্টি এলো সঙ্গে নেই তার ছাতা
একপাউন্ডে ছাতা মেলে
অনেকে যায় বাসে ফেলে
বৃষ্টি ভিজে জ্বরে ভূত বকছে এখন যা-তা।
ভিজিটারদের ডাক্তার নেই হাসপাতালও মানা
রোগ দেখাতে গেলে আনবে ইমিগ্রেশন-থানা
কেমিষ্ট গেলে লাগবে টাকা
বিদেশে তো নেই যে কাকা
অষুধছাড়া ভূতের এখন যাচ্ছে জীবনখানা।
ঘরবাড়িতে অভারক্রাউড সিমেট্রিও ফুল
হাসপাতালের মর্গে ভূত খুঁজে গোলাপফুল
গোলাপফুলে গন্ধ নেই
মরণ হলে দ্বন্দ্ব নেই
ভূতটা এখন হোমলেস হয়ে ছিঁড়ছে মাথার চুল!
ভূত ভাবে, আজ ফিরে যাবে নিজের জন্মস্থান
কিন্তু সেথায় পাহাড়-পর্বত সবই তো খানখান
বৃক্ষ নিধন চলছে রোজ
কেউ রাখেনা এসব খোঁজ
কোথায় পাবে থাকার জন্য বিরাট ফুলের বাগান?
দেশে যখন ছিল ভূত থাকতো রাজার হালে
মনের সুখে নিদ্রা যেতো ছাতিমগাছের ডালে
নিদ্রাভঙ্গ করলে তার
ভেঙে দিতো বুকের হাড়
লন্ডনে আজ ফরেন-ভূত চড় দেয় তার গালে!
লন্ডনে তাই কাঁদে ভূত দুঃখভরা বুকে
ভিনদেশিদের গুঁতো খেয়ে মরছে ধুকে ধুকে
ভাষাবিভ্রাট-বর্ণবাদে
পথ্যবিহিন মরণফাঁদে
বিদেশেতে সবাই কি আর থাকে স্বর্গসুখে?
স্বর্গ হচ্ছে জন্মভূমি স্বর্গ মায়ের কোল
শান্তি হচ্ছে মাতৃভাষার মিঠে মিঠে বোল
বিদেশ থাকা শান্তি নয়
এই কথাতে ভ্রান্তি নয়
জন্মভূমির জয়গানে পেটাও সবে ঢোল।

জাতীয় কবি
জুলফিকার আলী

চুরুলিয়া দুখু মিয়া
নামটি সবার চেনা,
রুটির দোকান লেটোতে গান
কিংবা সে দল সেনা।

এই বাংলা সাহিত্যে আজ
তার অবদান নানা,
কবিতা গানে সবার প্রাণে
বাজায় সে সুর টানা।

তার কাব্যে বিদ্রোহ আর
কাব্যে প্রেমের ফুল,
দ্রোহের কবি বিদ্রোহী সে
কবি কাজী নজরুল।

মানবতার গজল দিয়ে
ডাকেন আল্লা নবী,
হাজার বছর সবার মনে
বাঁচুক জাতীয় কবি।



ঈদের ছড়া
আলমগীর কবির

এবার ঈদে সাগর পেলো
নতুন জুতো জামা,
পাচঁ হাজার ঈদ সেলামী
দিয়েছে তার মামা।

মেহেদী রঙে হাত সাজালো
রুমি নামের মেয়ে,
ঈদের চাঁদ হাসছে দেখো
তাদের পানে চেয়ে!

আবুল বাবু দুই ভায়ের
নতুন জামা নেই,
হাসির ভিড়ে খুশির ভিড়ে
হারিয়ে ফেলে খেই!



ব্যাঙের জ্বর
-আহাদ আলী মোল্লা

বৃষ্টিমুখর আষাঢ় মাসে
ব্যাঙের হলো জ্বর,
সর্দিতে তার কাহিল দশা
তাই কাঁপে থরথর।

বদ্যিরা কয় ভিজতে বারণ
জল দিয়ো না গায়,
বর্ষা কালে গর্ত ছেড়ে
ডাঙাতে নাও ঠাঁই।

খবর পেয়ে সাথে সাথে
ব্যাঙের আপন নাতি
বাজার থেকে কিনে দিলো
একটা নতুন ছাতি।

লোকটা
ইউসুফ রেজা


লোকটা নাকি কাব্য লেখেন মুখ ভরা তাঁর দাঁড়ি
ঢাকায় তিনি ঘোরেন ফেরেন নেত্রকোণায় বাড়ি ।
পাগলাটে আর মুখচলা তাই মুখের ছবি আঁকতেন
বুকপকেটে বঙ্গবন্ধুর একটা ছবি রাখতেন
হৃদপিন্ডে পুষে রাখেন শেখ মুজিবের তেজ
সাহস আছে মাড়িয়ে দিতে গোখরো সাপের লেজ
উল্কি কেটে লিখে রাখেন সাতই মার্চের ভাষণ
ভয় পায় না সামরিক আইন কিংবা অপশাসন ।

কুটুম পাখি
ইমরান পরশ

কুটুম পাখি-কুটুম পাখি
হলদে পাখির ছা
ডাকিসনে আর বাড়ির ঘাটায়
যা দূরে তুই যা।
তোর জ্বালাতন ভাল্লাগে না
করিস ডাকাডাকি
অভাব আমার খেলার সাথি
নিত্য উপোষ থাকি।
কুটুম এলো কুটুম এলো
ডাকিসনে তুই আর
আমার ঘরে সইবে না তো
ওই কুটুমের ভার।
কুটুম এসো কুটুম এসো
গাইবি সুখের গান
আমার ঘরে ছাদ হবে যেই
সুখের ও আসমান।

ঈদ হোক সবার
লুৎফুর রহমান

ওই গরিবের মুখে হাসি
ইতল বিতল চোখে হাসি
আমরা সবে আনতে পারি
আমরা পারি বাঁধ তাড়াতে
কিনে খুশি চাঁদ পাড়াতে
দুখটা যদি জানতে পারি।

ঈদটা হবে হাসলে সবে
সুখের নদে ভাসলে সবে
সবার পাশে দাঁড়াই যদি
হাতটি সবার বাড়াই যদি
মানুষ-মানুষ সবাই সমান
এটা যদি মানতে পারি
ঈদটা তখন সবার হবে
বুকে যদি টানতে পারি।


উপদেশ
মোঃ রাজু সোনার


সত্য ভাল ন্যায়ের পথে গড়তে সবার জীবন,
ভালকরে তোমরা দেবে লেখা পড়াই মন।

শিক্ষা নিয়ে তোমরা সবাই জীবন সাজাও ফুলে,
তোমরা আসবে প্রতিদিন তোমাদের স্কুলে।

তোমরা কখনো ভুলেও দেবেনা কেউ স্কুল ফাঁকি,
তোমরা সবাই রোজ পড়বে রাখবেনা বাঁকি।

তোমরা সবাই সত্য কথায় বলবে সারাক্ষণ,
অলসতা ছেরে দেবে লেখা পড়াই মন।

সময়ের প্রতি কভু করবেনা হেলা,
পাঠের সময় হলে তোমরা করবেনা খেলা।

খেলার সময় হলে তোমরা ছুটে যেও মাঠে,
পড়ার সময় হলে তোমরা মন দেবে পাঠে।

তোমরা সবাই ক্লাসের পড়া গুলো ঠিক করবে,
উত্তর দেবে ঠিক তোমরা শিক্ষক যা ধরবে।

দিনে রাতে বেছে নেবে সময় আট ঘন্টা,
খেলা ধুলা নয় শুধু পড়াই দেবে মনটা।

বড়দের শ্রদ্ধা করবে ছোটদের স্নেহ,
তোমরা সবাই হবে ভাল খারাপ হবেনা কেহ।

কোন দিন কিছু নিয়ে করবেনা বড়াই,
সাথি দের সাথে কেউ করবেনা লড়াই।

কখনো মাথা পেতে নেবেনা অন্যায় অবিচার,
তোমরা সবাই দেশও জাতির শ্রেষ্ঠ কর্ণধার।

তোমাদের মাও বাবার মনে স্বপ্ন আশা,
তোমাদের দিচ্ছে আদর মমতা ভালবাসা।

তোমাদের মানুষের মত করে গড়তে,
পারবেকি ভালকরে লেখা পড়া করতে।

লেখা পড়া করবে সবাই অজনা সব জানতে,
পারবেকি তোমরা সবাই কথা গুলো মানতে।

তোমরা সবাই রাখবে মনে আমার উপদেশ,
তোমরা সবাই গড়তে পার সোনার বাংলাদেশ।



ছড়াঃ নদী কাহন
সৈয়দ রোকন উদ্দিন

সুরমা আমার কেমন আছে সিলেটে?
গোমতী-টা কুমিল্লায় ভাল-তো?
ইছামতি পাবনায়, উত্তরে তিস্তা,
কেমন আছে ঠিক-তুমি জানোতো?

কেমন আছে কপোতাক্ষ,
মাইকেলের বাড়িতে?
নদী? নাকি মরা খাল,
তাঁর-সাগরদারিতে?

বুড়িগঙ্গা ঢাকাতে
ইচ্ছে হয়না তাকাতে
জল-তো নয়, আলকাতরা, বুকে নিয়ে কাঁদে-না?
তুরাগ-বালু-শিতোলক্ষ্যা রাক্ষসের ফাঁদে-না?!

সজারু মজারু
শাহ আলম বাদশা

দেখবি কে সজারু
কীযে ভাই মজারু
গায়ে তার লম্বাকাঁটা;
কাঁটা যদি খাঁড়া হয়
ভয়ে কামসারা হয়
ঠিক যেন লম্বাঝাঁটা!

কাঁটা খুব শক্ত
গলগলে রক্ত
লাগলে তো বের হয়ে যায়;
মাটিরই ভেতরে
বাস করে সেতো রে
ঘা'টা হয় কাঁটারই ঘায়।

সজারু সজারু
কীযে ভাই মজারু।
কলাগাছ, নয় বাঁশ
ফেলো গা'য় ধপ্পাস
কাঁটাবিঁধে হবে আলুদম।
কলাগাছ সজারুর যম।

হারিয়ে যাচ্ছে
পান্নালাল বিশ্বাস

হারিয়ে গেছে শরৎকাল
আর হেমন্তেরই পরশ
হারিয়ে ফেলছে বসন্ত তার
রূপের বাহার সরস ।
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীতের দাপট
সারা বছর জুড়ে
তিনটি ঋতুই আসে এখন
বছর বছর ঘুরে ।
কালো ধোঁয়ায় হারিয়ে গেছে
নানান জাতের পশু
হারিয়ে যাচ্ছে দোয়েল, কোয়েল,
ছাতার, চড়ুই কিছু ।
শুনতে পাইনা ঘুঘুর ডাক আর
চিল, শকুন ও বাজ
কালো ধোঁয়ায় নিচ্ছে গিলে
সব মানুষেরই কাজ ।
সুমেরু-কুমেরু হারিয়ে ফেলছে
বরফের মহাস্তুপ
হারিয়ে যাচ্ছে ভারসাম্য
মানুষেরা নিশ্চুপ ।

সম্পাদনা: বদরুল হায়দার

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test