E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোনার তরী(শিশু কিশোর সাহিত্য)

২০১৬ জুলাই ০১ ১৪:২০:১৩
সোনার তরী(শিশু কিশোর সাহিত্য)








 

আসলাম সানী
বড় হয়ে

কুঁড়ি থেকে চারা হয়
-চারা থেকে গাছ
ডিম থেকে পোনা হয়
-পোনা থেকে মাছ,

কলি থেকে ফুল হয়
-ফুল থেকে ফল
বায়ু থেকে মেঘ হয়
-মেঘ থেকে জল,

শিশুরাই কিশোর হয়
কিশোরই যুবক
বড় হয়ে পৃথিবীকে
-করে ঝকমক।

মুর্শিদ উল আলম
আকাশ কুসুম

তোলারাম কলেজের ঐ ডেলানাথ বাবু
ছুঁতে গিয়ে গগন হয়েছেন কাবু।
জোনাকিরা উড়ে যায় দূরে নিশি বেলা
ডানা মেলে উড়ে পাখি আজব খেলা।
উড়োযান উড্ডয়ন করে মহাকাশে
উনি কেন বসে র'বেন মাটির পাশে?
ছুঁতে হবে আকাশ এ তার অভিলাষ
যেই ভাবা সেই কাজ, নয় কোন হাসফাস।

মাটিতে ঘা মেরে পায়ে উর্ধ্বে উঠে
ক্ষণ পরে পড়ে মাটির উপর লুটে।
হাত পা হাড় ভাঙে মাথা যায় ফেটে
জিভটা কেটে গেল দাঁতে দাঁত এঁটে।


আরিফুন নেছা সুখী
সিন্ধু যাবে দাদা বাড়ি


সিন্ধু যাবে দাদা বাড়ি
সকাল থেকে বায়না
পরেছে সে নতুন জামা
আর যে দেরি সয়না।
সয়না দেরি
কি আর করি,
সিন্ধু যাবে
দাদার বাড়ি।
দাদার বাড়ি অনেক দূরে
যেতে হবে গাড়ি করে,
যাবে সে যে চড়ে গাড়ি
তাই তো করে তাড়াতাড়ি।
দাদার বাড়ি গিয়ে সিন্ধু
করবে অনেক ফুর্তি
গাছ থেকে সে পাড়বে যে ফল
আছে ফল গাছ ভর্তি।

ডাব পাড়বে, আম পাড়বে
পাড়বে সে যে পেয়ারা
ধুলি বালি মাখলে গায়ে
মা বলবে একি চেহারা।


স্বপন দেলওয়ার
রিমঝিমঝিম বৃষ্টি

রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টি এলো
পায়ে সোনার মল-
সুয্যি মামা কোথায় গেল
বাড়ছে নদীর জল।

রুম ঝুম ঝুম নুপুর বাজে
মন বসেনা কোন কাজে
বৃষ্টি নাচে চালে-
ঝর ঝর ঝর ঝরছে ধারা
আজকে বাদল পাগল পারা
গাছের পাতা-ডালে ।

রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টি-
সকাল দুপুর সাঁঝে
দুঃখ সুখের সৃষ্টি-
মন বসে না কাজে।

কল কলা কল জলের মেলা
মনে কত ভয়-
ছল ছলা ছল একোন খেলা
যদি বন্যা হয়!


রব্বানী চৌধুরী
করতে হবে খেয়াল


নানা বলে নাতিকে-
‘বলো দেখি হাতি কে?’
নাতি বলে, ‘আরে নানা!
ভাবো তুমি কারে কানা?
তোমার পিঠে আমি!
তুমি আমার হাতিভাই
সবচে’ বড় দামি!’
নানা বলে, ‘ওরে নাতি!
জ্বলে দেখো সাঁঝে বাতি;
আকাশ ভরা চাঁদ,
বড় যারা হয় রে, তাঁরা
দেয় না অপবাদ!
হাতি থাকে বনজঙ্গলে
হাতি গিলে ধান,
হাতির শরীর মোটা আর
বড় বড় কান!
আমার দেশে হাতি আছে
আরও আছে শেয়াল,
লেখাপড়া শিখতে হলে
করতে হবে খেয়াল।


জাহাঙ্গীর আলম জাহান
পুণ্য


দুষ্টু গরুর চাইতে নাকি
শূন্য গোয়াল ভালো
সত্যবাদীর জীবনযাপন
হয় নাতো জমকালো।
গোয়াল যতই শূন্য থাকুক
পুণ্য যদি থাকে
আটকাবে না কারো জীবন
হাজার দুর্বিপাকে।

আসলাম প্রধান
অর্থাভাব


নানা রকম চিন্তাা এলে
কারো মাথায় টাক পড়ে,
চিন্তাতে কেউ সময় সময়
সামান্যতেই রাগ করে !
রাত্রে কারো ঘুম আসে না
পয়সাকড়ির ভাবনাতে-
টেনশনে তাই পাগল হয়ে
নিজেই চলে পাবনাতে !
পকেট যখন শূন্য থাকে
মেজাজটা হয় ঝগড়াটে-
অবৈধতার হুঁশ থাকে না,
সবখানে কয় 'বখরা দে' !
যার ঘরে রোজ অর্থ অভাব-
অশান্তিতার নিত্য দিন,
যে যাই বলো- দৈন্যদশায়
সব মানুষের চিত্ত ক্ষীণ্
কল কলা কল জলের মেলা
মনে কত ভয়-
ছল ছলা ছল একোন খেলা
যদি বন্যা হয়!

আলমগীর কবির
ঈদ মানে কি

ঈদ মানে কি?ঈদ মানে কি?
জানতে ইচ্ছে করে,
ছোট ভায়ের চাওয়া সব
মানতে ইচ্ছে করে।
মলিন মুখে চাঁদের হাসি
আনতে ইচ্ছে করে,
সবাই যাবো খুশির দূর
প্রান্তে ইচ্ছে করে।
কাজের ছেলে ছোটন বুকে
টানতে ইচ্ছে করে।


আব্দুস সালাম
লিচু


আমার দেশে যায় রে পাওয়া নানান জাতের লিচু
লিচুর জাতের গল্প বলি- এখন শোন কিছু।
বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না, তিনটি জাতের বারি
বেদানা ও মঙ্গলবাড়ি আর মোজাফফরপুরী।

চায়না জাত খুব মজাদার হয় যদি তা তিন
বোম্বাই হয় টকটকে লাল কোনোটার রং ক্ষীণ।
বীজ এবং কলম থেকে হয় যে লিচুর চারা
লিচুর ফলন হয় যে ভাল পাইলে বারিধারা।

এতে আছে ভিটামিন বি এবং সি-তে ভরা
নানান রোগে গাছের পাতা হয় ব্যবহার করা।
গ্রীষ্মকালে সবখানেতে লিচুর দেখা পাই
দেশের সকল মানুষ লিচু মজা করে খায়।

আবু ইউছুফ সুমন'র ঈদের দুটি ছড়া।

১.ঈদ মানে


ঈদ মনে যে সেমাই লুচি
হাসি খুশি কদম বুচি;
ঈদ মানে বাড়ি বাড়ি যাওয়া
ঈদ মানে কোলাকুলি
শোক দুঃখ ভোলাভুলি
ঈদ মানে সেলামিটা পাওয়া।

ঈদের খুশি


চাঁদ হেসেছে
ঈদ এসেছে
মুসলমানের তরে
কদম বুচি
সেমাই লুচি
সবার ঘরে ঘরে।
ঈদ মানে তাই


-আহাদ আলী মোল্লা

ঈদের খুশি


ঈদের খুশি সবার ঘরে ছড়িয়ে যাক

দু’ হাত দিয়ে দাও সরিয়ে দুর্বিপাক
হটিয়ে নাও দুঃখ জ্বালা মনের খেদ
ভাগাড়ে থাক চতুর্পানের দ্বন্দ্ব-জেদ।

এসো না ভাই এক কাতারে শামিল হই
ধনী গরিব সমান হবো নিতান্তই
তোমার কাঁধে দিই মিলিয়ে আমার কাঁধ
ছিঁড়ে ফেলি উঁচু নিচুর মরণ ফাঁদ।

ছুড়ে ফ্যালো যার যেখানে স্বার্থ সব
হয়ে উঠুক সার্বজনীন এ উৎসব
সমান সমান আজকে ছোট-বড়োর মান
বিদায় নিলো পাপ কালিমা অকল্যাণ।

আমরা মানুষ নেই ভেদাভেদ আপন পর
মানুষ জাতি মানবতায় স্বয়ম্ভর
হয়ে গেল কালো-ধলার বিভেদ দূর,
ঈদ মানে তাই মিলনমেলার সমুদ্দুর।


রুবেলের বনবিড়াল নিধন
ফয়সাল শাহ

পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রুবেল প্রতিদিন স্কুলে যায়। বাড়ীর পাশেই তার স্কুল, একেবারেই হাটতে হয় না। অন্যান্য গ্রামের ছাত্রদের অনেক দূর পথ হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। রুবেলের গ্রামের পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং দক্ষিণে নরুসুন্দা নদী। গ্রামের নাম সখিচর। রুবেল খুবই দুষ্টু-দূরন্ত প্রকৃতির চঞ্চল ছেলে। স্কুলের ক্লাশের সময়টুকু বাদে সারাদিন চলে তার দুরন্তপনা। বাড়ীর পেছনে বিরাট জঙ্গঁল নানা ধরনের গাছ, পাখি আর বন্যপ্রাণী। সখীপুর গ্রামেই রয়েছে খাল, বিল, আর অনেকগুলো পুকুর।

রুবেল স্কুল কখনো কামাই করে না, যদিও তার লেখাপড়ায় একেবারেই মন বসতো না। কিন্তু কখনো ক্লসে শিক্ষকের শাস্তিপেতে হতো না কারণ যতটুকু না পড়লেই নয় ততটুকু পড়া ও বাড়ীর কাজ সে করতো। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের বকুনি ও পিটুনী সে একেবারেই সহ্য করতে পারত না। রুবেল দুষ্টু হলেও অন্যান্য ছাত্রদের তুলনায় একটু মুখচোরা ও লাজুক প্রকৃতির ছিল। কখনো শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকের বকুনি বা পিটুনী খেলে লজ্জায় সে লাল হয়ে যেত। সারাদিন তার মন খুবই খারাপ থাকত, সেদিন আর ঠিকমত খেলাধূলায় মন বসতো না। মন ভাল করার জন্য একা একা নরুসুন্দা নদীর তীরে বসে বসে পানির ঢেউ দেখতো। জেলের মাছ ধরা আর পালতোলা বড় নৌকা দেখে দেখে মন ভাল করে নিত। কাজল, নজরুল, অজিত, মামুন তার কাছের বন্ধু ছিল। খেলাধূলা, মারামারি, দুষ্টুমিতে এরাই তার সর্বক্ষণের সাথী ছিল, সকলেই রুবেলের পরশী।

একদিন স্কুল ছুটির পর বাড়ী ফেরার পথে রাস্তার পাশে একটি বড় কাঠাল গাছের খোড়লে ময়না পাখির ছানাদের শব্দ পেল। রুবেল কাজলকে বললো ময়না পাখির ছানাগুলো মনে হয় একবারে ছোট, পাখনা গজালে আরেকটু বড় হলে বাড়ীতে নিয়ে খাঁচায় রেখে পুষবো। ময়না পাখি পোষ মানলে কথা বলতে পারে শিষ দিতে পারে। দশ পনেরদিন পর দু’জনে মিলে বাজার থেকে দুটি পাখির খাচা কিনে নিয়ে এলো। পরের দিন রুবেল মই দিয়ে কাঠাল গাছে উঠে তিনটি বড় ছানা ধরে দুটি সে নিল একটি কাজলকে দিল। প্রতিদিন সকাল দুপুর ও বিকেলে এদের খাবার দিতে হয়। তাই রুবেল ও কাজল ধানের ক্ষেত থেকে ঘাসফড়িং, ফালফড়িং ধরে ছানাদের খাওয়াতে লাগল। রুবেলের এখন সারাদিন কাটে পাখি দুটি নিয়ে। খেলাধূলা ও দুষ্টুমী কমিয়ে দিয়েছে। সুযোগ পেলেই পাখির সামনে বসে শিষ দেয় এবং কথা বলে। দিন দিন এভাবে ছানা দুটি বড় হতে লাগল। রুবেলের দিন ভালই যাচ্ছিল, তার বন্ধুরা মাঝে মাঝে ছানা দুটিকে দেখতে আসত। ছানা দুটি যখন বড় হয়ে গেল, একটু একটু করে তারা শিষ দিতো ও কথা বলা শিখতে লাগল। বাড়ীতে কোন মেহমান আসলে বলতো, টোমার নাম কি? কোঠা ঠেকে এসেছো। আবার পাখি দুটো এখন কলাও দুধভাত খায়। রুবেলের এখন আর কষ্ট করে মাঠে মাঠে ঘুরে ধান ক্ষেত থেকে ঘাসফড়িং ধরতে হয় না। দুমাসে রুবেল গ্রামের এমন কোন ধানক্ষেত নেই যেখানে সে চষে না বেড়িয়েছে। মাঝে মাঝে ধানক্ষেতে অন্যান্য পোকার কামড় খেতে হয়েছে। একদিন একটি গান্ধী পোকা উড়ে এসে রুবেলের গেঞ্জীর ভিতর ঢোকে গেল, তাড়াতাড়ি করে রুবেল গেঞ্জীখোলে ফেললো, কিন্তু ইতোমধ্যে গান্ধীপোকা তার পিঠে একটি কামড় বসিয়ে দিয়েছে, সে কি জ্বালাতন, তাড়াতাড়ি করে বাড়ীতে এসে ডেটল পানি দিয়ে ধূয়ে ফেলল এবং একটু ব্যাথার বাম লাগিয়ে নিল।

একদিন রুবেলের বড়মামা তাদের বাড়ীতে বেড়াতে এলো, খাচাঁতে ময়না পাখি দেখে রুবেলকে বকা দিয়ে বলল তুই জানিস না বনের পাখিদের খাচাঁয় বন্দী করতে নেই, এরা প্রকৃতির সৌন্দর্য মুক্ত আকাশে এদের বিচরণ। এ কথা বলে খাচাঁর দরজা খোলে পাখি দুটিকে ছেড়ে দিল। ভয়ে রুবেল বড়মামাকে কিছুই বলতে পারল না। কিন্তু মনে মনে মামার উপর খুবই রাগ হলেও নিজেকে সামলে নিল। সারাদিন রুবেলের মন খারাপ গেল, কিছুই ভাল লাগছিল না, একা একা বাড়ীর সামনে পুকুর পাড়ের জাম গাছে উঠে বসে রইল, আর আকাশের দিকে তাকিয়ে পাখি দুটিকে খুজছিল। সে দিন সারারাত রুবেল ঠিকমত ঘুমুতে পারল না শুধু পাখি দুটির জন্য তার মায়া হতে লাগল। নিজেকে একা একা মনে হচ্ছিল, তার কে যেন হারিয়ে গেছে। পরের দিন সকালে মন খারাপ করে স্কুলে চলে গেল, ক্লাসেও মন বসে না। কাজলের কাছে মনখুলে সব কথা বলল। কাজল তার ময়না পাখিটা রুবেলকে দিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু রুবেল যে দুটি ময়নাছানা পালন করে বড় করেছে, তাদের কথা ভুলতে পারছে না। স্কুল থেকে ক্লাস শেষে বাড়ীতে রুবেল ফিরে এলো, গোসল করে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিল। পুকুর পাড়ে বসে একধ্যানে পানিতে হাঁসপোকাদের দৌড়াদৌড়ি ও তেলাপিয়া মাছদের সাঁতার দেখতে লাগল। হঠাৎ রুবেলের কাধে ও মাথায় ময়না পাখি দুটি এসে বসেছে এবং শিষ দিচ্ছে। প্রথমে রুবেল ভয় পেয়ে গিয়েছিল, বুকে একটু থু-থু করে নিল। সত্যি সত্যিই দেখা যাচ্ছে তার ময়না দুটি ফিরে এসেছে। রুবেল দুহাতের আঙ্গুলে পাখি দুটিকে বসিয়ে নিল, তারপর ধীরে ধীরে বাড়ীতে নিয়ে এসে তাদের কলা খেতে দিল, খাচার উপরে বসে বসেই তার কলা খাচ্ছে। এখন থেকে ময়না দুটি রাত্রে খাচার উপরই বসে ঘুমায় আর দিনের বেলা এদিক সেদিক ঘুরা ঘুরি করে। আর রুবেলের বাড়ীত ছেড়ে চলে যায় না। একদিন রাতে রুবেল ঘুমুচ্ছে মাঝরাতে ময়না পাখির ক্রে-ক্রে শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিছানা থেকে একলাফে উঠে বারান্দায় খাচার কাছে গিয়ে দেখে নীচের মেঝেতে কয়েকটি পাখনা পড়ে আছে। ময়না পাখি দুটি নেই। হারিকেন জালিয়ে চারদিকে খোঁজাখোজি করতে লাগল, এদিকে রুবেলের আম্মু ঘুম থেকে উঠে রুবেলকে বকা দিতে লাগল, এত রাত্রে তুমি বিছানা ছেড়ে বারান্দায় কি করছিস। রুবেল কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল আম্মু আমার ময়না পাখি দুটিকে বনবিড়ালে ধরে নিয়ে গেছে। সারারাত রুবেল আর ঘুমুতে পারল না। আম্মু তাকে বুঝাতে লাগল বনের পাখিদের এভাবে পালতে নেই, তারা গৃহপালিত পশুপাখির মতো আমাদের পরিবেশে থাকতে পারে না। নিরাপত্তাহীনতা, রোগ-শোক এদের আক্রান্ত করে। তোর বড় মামাও ছোট থাকতে দুটি ঘুঘু পাখির ছানা পালত, কিন্তু একদিন সে পাখি দুটি হঠাৎ করে মারা যায়। তারপর থেকে সে আর কোন দিন পাখি পালেনি এবং অন্যদের পাখি পালতে দেয় না। আর তোর বড় মামা একবার হুন্ডা এক্সিডেন্ট করে ডান পায় ভেঙ্গেঁ ফেলেছিল, এখনো তার ধারনা ঘুঘু পাখি দুটির অভিশাপে তার এক্সিডেন্ট হয়েছিল।

ভোর সকালে ঘর থেকে বের হয়ে রুবেল আবার সারা বাড়ি ও পেছনের জঙ্গঁলে পাখি দুটিকে খুঁজতে থাকে। হঠাৎ দেখতে পেল জঙ্গঁলে গাব গাছের নিচে ময়না পাখির একটি ঠোট, হলুদ দুটি পা ও কিছু পাখনা পড়ে আছে। রুবেল নিশ্বিত হলো বনবিড়াল তার পাখিদের খেয়ে ফেলেছে, কারণ মাঝে মাঝেই বনবিড়ালগুলো বাড়ীর মুরগী ধরে খেয়ে ফেলে। খুব সাবধানে মুরগী পালতে হয়। রুবেল স্কুলে গিয়ে কাজল, অজিত, মামুন ও নজরুলকে সবঘটনা খুলে বলল। সকলেই রাগে কটমট করতে লাগল কারন বনবিড়ালগুলো সকলকেই খুব অতিষ্ট করে তুলেছে। জঙ্গলের আশে পাশে এমন কোন ঘর নেই, যাদের একটা না একটা মুরগী বনবিড়ালের পেটে গেছে। রুবেল বন্ধুদের নিয়ে বুদ্ধি করে বনবিড়ালগুলিকে কিভাবে শায়েস্তা করা যায়। কাজল বলে উঠল আমরা পাড়ার সকল ছেলেরা আগামী শুক্রবারে জোম্মার নামায পরে লাঠি-সোটা শাবল নিয়ে সারা জঙ্গল আক্রমন করে এদের যেকানেই পাব মেরে ফেলব। কাজলে কথায় সবাই সায় দিল। যথারীতি পাড়ার সকল ছেলেদের জানিয়ে দেয়া হলো বনবিড়াল নিধনের জন্যে আগামী শুক্রবার জুম্মার নামায পর সকলেই রুবেলের বাড়ীর সামনে জমায়েত হবে।

কথামত পাড়ার সকল ছেলে লাঠি-সোটা নিয়ে রুবেলের বাড়ীর সামনে জমায়েত হয়। ইতোমধ্যে রুবেলের বড় মামা আবার তাদের বাড়ীতে সময়মত হাজির। রুবেলসহ সকলের হাতে লাঠি-সোটা দেখে বড় মামা অবাক হয়ে গেলেন। রুবেলকে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে তোরা আবার লাঠি-সোটা নিয়ে কোথায় মারামারি করতে যাচ্ছিস। রুবেল বনবিড়াল নিধনের কথা বিস্তারিত বর্ণনা করল। বড় মামা ছোট থেকেই প্রকৃতপ্রেমী ছিলেন, পন্ডিত মশাই তাকে প্রকৃতির সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রতি সদয় হবার শিক্ষা দিয়ে ছিলেন। এবার বড় মামা সকলের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, দেখ এ পৃথিবীতে আমাদের যেমন খেয়ে পরে বসবাস করার অধিকার রয়েছে তেমনি সৃষ্ট জীব হিসাবে সকল প্রাণীরও এ পৃথিবীতে নিরাপদে বসবাস করার অধিকার আছে। তাছাড়া সকল বন্য পশু পাখি মানুষের কোন না কোন ভাবে উপকার করে থাকে। তোমরা সকলে মিলে আজকে বনবিড়াল নিধনের জন্যে প্রস্তুত নিচ্ছ তা কিন্তু ঠিক না। তোমাদের জঙ্গলে শিয়াল, বনবিড়াল, বেজী, সাপ, সজারুসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী রয়েছে। তারা কিন্তু প্রকৃতির সন্তান হিসেবেই জঙ্গলে বসবাস করে। আমরা দিন দিন তাদের বসতি জঙ্গল কেটে ফেলাতে তারা লোকালয়ে চলে এসে আমাদের গৃহপালিত পশু-পাখি খেয়ে ফেলে। এটা তাদের দোষ নয় আমাদেরই দোষ। না বুঝে অতীতে আমরা পরিবেশের অনেক ক্ষতি করেছি। আজকে সারা-পৃথিবীতে বন্যা, খরা, ঘূর্ণীঝড়, ভূমিকম্পসহ অন্যান্য যে ধরনের প্রাকৃতিক দূযোর্গ দেখা দিচ্ছে তার জন্য আমরাই দায়ী।

সুতরাং তোমরা এখনো শিশু, আগামী দিনের পৃথিবীতে তোমাদেরই বসবাস করতে হবে, সে জন্যে তোমাদের দায়িত্ব রয়েছে। প্রকৃতির সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ রক্ষা করা। বড় মামার কথা শুনে রুবেলসহ সকলেই বুঝতে পারল বনবিড়াল নিধন করা উচিত নয়। তাই সকলে লাঠি ফেলে বাড়ীতে চলে গেল। এরপর থেকে তারা আর কোনদিন প্রকৃতির কোন পশু-পাখির ক্ষতি করেনি, বরঞ্চ যারা ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে তাদেরকে বুঝিয়ে দিলো।



আমার কতিপয় বন্ধু ও তাদের ছড়া প্রসংগ-৩
মতিন বৈরাগী

এটা নিশ্চিত যে সাহিত্য নানা রকম হতে পারে। সাহিত্যিক তার পছন্দ মতো মত পথ বেঁচে নিতে পারেন। তার বিবেক বুদ্ধি ও চেতনাগত মাত্রায় তার সৃষ্টিকে নিবেদিত করতে পারেন। এসব নিয়ে তর্কও হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে একটি মতামত্ই যে প্রধান্য পাবে তেমন নিশ্চয়তা নেই। বাস্তব জীবনে মানুষ নানা ভাবে চিন্তা করে কেউ পথ যত দূর্গম হোক অতিক্রম করার প্রতিজ্ঞা বুকে রাখে আবার কেউ সহজ সরল পথটির জন্য অপেক্ষায় থাকে। কেউ মনে করে সাহিত্যেও কোন উদ্দেশ্য নেই, উদ্দেশ্য সৃষ্টির আনন্দ আবার কেউ ভাবেন জীবনের কোন কাজই উদ্দেশ্যহীন হওয়া উচিৎ নয়। কারণ মানুষ যে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করছে তারও একটা উদ্দেশ্য আছে। সুতরাং সাহিত্য উদ্দেশ্যহীন হবে কেন? সে যেমনই হোক সাহিত্য কে সাহিত্য হয়ে উঠতে হবে এই হলো শেষ কথা। আর তা হতে হলে সচেতনতা দরকার। সে ক্ষেত্রে ছড়া সম্ভবত সবচেয়ে চেতনবাহি সাহিত্য যা কাব্যেরও পুরাতন। বলা যেতে পারে কবিতার আদি গৃহ । ভালো ছড়াগুলো বা জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান রত ছড়াগুলোয় আমরা কবির সেই চেতনার প্রতিফলন দেখে আসছি সব সময়। যারা বলেন যে চেতনা ফেতনার ধার ধারি না, ছড়া লিখি ছড়ার নিয়মে তারা লিখবেন সেটাও তাদের স্বাধীনতা কিন্তু ছড়ার স্বাদ কিংবা মনে দাগ কেটে দিয়ে সে কখনও দাঁড়িয়ে থাকবে না। সুতরাং চেতনার মাপকাঠিতে সর্বোচ্চে সেই ছড়াটা দাঁড়িয়ে যায় যা সমাজ চিন্তার বান্ধব এবং সমাজ প্রগতির সংগে সংশ্লিষ্ট

পাঁচ কবি পঞ্চপান্ডব মানে আহসান মালেক. নাসের মাহমুদ. বিলু কবীর. শফিক ইমতিয়াজ আর আলী হাবিব-এর পঞ্চপান্ডব নামে যে যৌথ প্রকাশনা তা তিন খন্ডের। এরা প্রত্যেকেই ছড়া শিল্পী কেবল এই অভিধায় তাদের কে সীমাবদ্ধ করতে আমার মন চায় না। যদিও যে ছন্দ তাল লয় যা কবিতাতেও ব্যবহৃত হয়, ছড়াতেও তাই ছড়ার জন্য নতুন কোনো ছন্দ নেই আবার কবিতার জন্যও না, তা হলে প্রকরণগত দিক থেকে ছড়া শিল্পী আর কবি একই গোত্রের তো বটেই বরং বলা যায় কবিতা ছন্দকে কাঠামোগত বৃত্তে না রেখে কবিতা রচনা সম্ভব, একজন কবি ছন্দমুক্ত কবিতা রচনা করতে পারেন. এবং একটা বিশেষে শেষতক পৌঁছাতে পারেন, কিন্তু ছড়ায় তা সম্ভব নয়- কবিতার আদিরূপটি ধারণ করে । সে কারণে একজন ছড়া শিল্পী কে ছন্দমাত্রায় যত সচেতন থাকতে হয়, কবিতার পথটি তার চেয়ে সরল। ছড়া শিল্পী আহসান মালেক আমার পরিচিত নন, পরিচিত নন শফিক ইমতিয়াজ, কিম্বা এমনও হতে পারে দুজন-ই আমাকে বেশ জানে কিন্তু আমি মনে রাখতে পারিনি। তাতে কীই বা যায় আসে, তারা তো এখন আমার সামনেই। পাঁচ পান্ডবের ছড়া এবং কবিতা এক সংগে পড়লে মনে হবে একই চেতনার ভিন্ন ভিন্ন রূপ আমরা দেখছি যেমন:-
০১. আহসান মালেক ঃ মাছ,তরকারি, মাংস ও ডিম/দুচোখ রাঙায় লাল
বাজার এখন রাজার বশে/প্রজার ওঠে ছাল
[রাজার বশে বাজার ]

০২. নাসের মাহমুদঃ দিনের রাজাও যদি আবার/রাজ্য চালায় রাত্রে/চিনির ভেতর লবণ রাখে/
তৈল পানির পাত্রে,/তার মানেও তাই-/প্রজার ভাগে ছাই [রাজা]

০৩. বিলু কবীরঃ যার আছে সে তারই সাথে/হাতিয়ে আরো যোগ করে/
বেশী মানুষ বঞ্চিত হয়/অল্প ক’জন ভোগ কওে [সাক্ষরেরা]

০৪. শফিক ইমতিয়াজঃ একদিন ঠান্ডু/বাম ডু বাদ দিয়ে হয়ে যান ডানডু/
নীতিবোধ সবকিছু কওে দেন আন ডু/আঙ্গুল ফুলে তার/
কলাগাছ হলো. আর বড় এক পদ পেয়ে যান কাঠমান্ডু/
কী মজার কান্ডু [ মিষ্টার ঠান্ডু]
০৫. আলী হাবিবঃ কারো চোখে দেখি লোভের আভাস/কারো চোখ খোঁজে ত্রুুটি/নড়বড়ে যারা
তাদেও দুচোখ/খুঁজছে শক্ত খঁটি
কতোজন কতো চোখে যে তাকান/বুঝতে কি কেউ পান-/সবার দৃষ্টি ক্ষমতার

দিকে/ হবেন ক্ষমতা বান! [ যে দিকে দৃষ্টি]

পঞ্চ পান্ডব-দের ছড়া ৫টির অংশ বিশেষ থেকে সংবাদটি নিশ্চিত করে পাওয়া গেলো তাদের সকলের চেতনাগত দিকটির কেন্দ্র সমাজ এবং রাজনীতি। কিন্তু বিবৃত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। কেউ অলক্ষেও এমন একটি বাক্য রচনা করেন নি যার কোন বিষয় নেই এবং বিষযের প্রেক্ষিতে কোনো উদ্দেশ্য নেই। মেনে নিতেই হবে কবিতায় আগড়ম বাগড়ম করলেও ছড়া কাউকে ছেড়ে কথা বলে না। এখানেই তার শ্রেষ্ঠত্ব।

(চলবে)


সম্পাদনা:বদরুল হায়দার

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test