E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আরিফুন নেছা সুখী’র গল্প

২০১৬ জুলাই ১১ ২২:৫৮:২৪
আরিফুন নেছা সুখী’র গল্প







 

সিআইডি শিং সাহেব ও বজলু গোয়েন্দা

সকাল সকাল বাড়িতে সে এক হুলুস্থুল কাণ্ড। মা ঘুম থেকে উঠে বাবাকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি ওঠো, দেখো কী হয়েছে!’ বাবা তড়িঘড়ি উঠে বললেন, ‘কী হয়েছে? কী হয়েছে?’
মা-বাবার কথার ঝড়ে আমি মামাকে ডাকি, মামা ডাকে আমাকে। শেষমেশ দু’জনেই উঠে মা-বাবার ঘরে গিয়ে দেখি, বাবা খাটের ওপর দাঁড়িয়ে, মা চেয়ারে জড়সড় হয়ে বসা।
কী হয়েছে, জানতে চাইলে মা মেঝেয় পড়ে থাকা কী যেন একটা দেখালেন। ভালো করে দেখতেই বুঝি, একটা শিং মাছ এবং মাছটা জ্যান্ত।
মামা বললেন, ‘সামান্য এই মৎস্য দেখিয়া ভীত হইয়া সকাল সকাল বাড়ি মাথায় তুলেছ, আপা।’ মা বললেন, ‘একদম ফাজলামো করবি না, বজলু। সামান্য মৎস্য! জানিস, সে রীতিমতো কলিংবেল টিপে বাসায় ঢুকেছে।’
মামা এবার তাঁর গোল কাচের চশমাটা শার্টের কোনা দিয়ে মুছে আবার চোখে দিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ভাগনে, রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।’ মামার কথা শোনামাত্র আমি বাধ্য ভাগনের মতো দৌড় দিয়ে মামার আতশি কাঁচ মানে ম্যাগনিফাইং গ্লাস নিয়ে এলাম। ও, বজলু মামা সম্পর্কে তো কিছু বলাই হয়নি। তিনি আমার মা’র একমাত্র ভাই, এমএ পাস। কোনো কাজ করেন না, তাঁর ইচ্ছা, তিনি ফেলুদার মতো একজন বিখ্যাত গোয়েন্দা হবেন।
আমার সেই বজলু মামা আতশি কাঁচ নিয়ে মাছটি পরীক্ষা করে বললেন, ‘হ্যাঁ, ঠিক যা ভেবেছি, তা-ই। মাছটা পুলিশের লোক। এটা হলো ছদ্মবেশী সিআইডি।’ মামার কথা শুনে তো আমাদের চক্ষু ছানাবড়া!
সেদিকে তিনি ভ্রুক্ষেপ না করে বললেন, ‘তা না হলে কলিংবেল দেবে কীভাবে? মাছ তো আর কলিংবেল চাপতে পারে না। কলিংবেল চেপেই ফুসমন্তরে শিং মাছ হয়ে গেছে। আপা বল তো, ঠিক কী হয়েছিল তখন?’
মাঝখান থেকে বাবা বললেন, ‘তার আগে মাছটা পানির মধ্যে দেওয়া দরকার।’ মা বললেন, ‘এ জিনিস ধরবে কে?’
বাবা বললেন, ‘আমাদের মিস্টার বজলু গোয়েন্দা থাকতে তুমি ভাবছো কেন! সেই এই কাজটা করবে।’
মামা ঢোঁক গিলে বললেন, ‘না মানে আমি!’
মামার বিপদে এগিয়ে গেলাম আমি। বললাম, ‘মামা, মাছটা পানির মধ্যে না রেখে এখানে থাকাই ভালো। তাতে আমরা এর গতিবিধি লক্ষ রাখতে পারব।’
মামা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘শাব্বাশ ভাগনে, গোয়েন্দার সংস্পর্শে তুইও দেখছি বেশ গোয়েন্দাগিরি শিখে নিয়েছিস। আপা, এবার বলো তো, সকালে ঠিক কী হয়েছিল।’ বাবা এতক্ষণে খাটে বসলেন, তাও দেয়ালঘেঁষে। মা বলা শুরু করলেন। ‘কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙল। ভাবলাম বুয়া এসেছে। তাই লুকিং গ্লাসে না দেখেই দরজা খুলে দিই। দরজা খুলতেই এক লাফ দিয়ে মাছটা ভেতরে চলে এল। তখন আশপাশে, নিচে-ওপরে কেউ ছিল না। তারপরের কাহিনি তো জানিস।’
মামা বললেন, ‘মাছটা ঢুকে কি তোমাকে সালাম দিয়েছে, নাকি গুড মর্নিং বলেছে?’
মা রেগে বললেন, ‘বজলু, মার খাবি কিন্তু।’
মামা বললেন, ‘না মানে সিআইডিরা তো বেশ ভদ্র হয়। তাই সালাম দেওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। তোমাকে যা প্রশ্ন করছি উত্তর দাও।’
মা বললেন, ‘না, সালাম দেয়নি, গুড মর্নিংও বলেনি।’ ‘মাছটা কি এদিক-ওদিক তাকিয়েছে? মানে কোনো কিছু খোঁজার চেষ্টা করেছে?’
মা বললেন, ‘না, তেমন কিছু করেনি।’
মামা বললেন, ‘আচ্ছা, মাছটার শরীর থেকে কোনো আলো এসেছে কি না দেখেছ?’ ‘না, আলো আসেনি’ বলেই মা বললেন, ‘আরে, মাছটা কই গেল।’ সারা বাড়ি খুঁজে শেষে মিস্টার সিআইডি শিং সাহেবকে দেখা গেল রান্নাঘরের সিংকের নিচে পানি খেতে। এবার আবার জেরা শুরু...
মা বললেন, ‘আমি আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না।’
মামা বললেন, ‘আরে বাবা, এত অধৈর্য হচ্ছ কেন, আপা।’
মা বললেন, ‘তাড়াতাড়ি ওই মাছ বিদায় কর।’
মামা বললেন, ‘আপা, আরেকটা প্রশ্ন, এরপর আমি আর কোনো কথা বলব না।’ মা কোনো কথা না শুনে তাঁর রুমে চলে গেলেন। ‘মাছটার পেট থেকে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছিল কি না, জানা হলো না, ভাগনে।’
আমি বললাম, ‘বুয়াকে ডাকি, সে মাছটা ধরুক, আমরা পরীক্ষা করি।’ বুয়া বুয়া করে কয়েকটা ডাক দিয়েও তার সাড়া পাওয়া গেল না।
মামা বললেন, ‘ভাগনে, মাছটাকে একটু নাড়ানোর ব্যবস্থা কর তো, যাতে শব্দ হয় কি না বোঝা যায়।’ রান্নাঘরের সেলফ থেকে বড় একটা চামচ নিয়ে মাছটার দিকে এগোতেই এটা সরে গেল।
মামা বললেন, ‘বুঝতে পেরেছি, ভাগনে, এই মাছের পেটে সিসি ক্যামেরা বসানো আছে। দেখলি তো, আমরা এগোতেই সরে গেল। নিশ্চয় কোনো তথ্য নেওয়ার জন্য এই শিং সাহেবকে পাঠানো হয়েছে।’
মা রান্নাঘরে এসে বললেন, ‘কী হয়েছে?’ মামা বললেন, ‘আপা, এই মাছের পেটে সিসি ক্যামেরা বসানো আছে।’ মা বললেন, ‘তুই কী করে বুঝলি।’ মামা বললেন, ‘বুঝতে হয় আপা, গোয়েন্দাদের কত কিছু বুঝতে হয়। এখন দেখো, তোমার বুয়াকে ডেকে মাছটা কাটার ব্যবস্থা করতে পারো কি না!’
মা বললেন, ‘বুয়া’ তো আসেনি। এমন সময় কলিংবেল বাজল।
মা বললেন, ‘বুয়া এল মনে হয়। আমি আর দরজা খুলতে পারব না। তোরা দেখ, কে এল।’ আমি মামার দিকে তাকাই, মামা আমার দিকে। শেষমেশ দু’জনে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি, ওপর তলার আন্টি। হাতে একটা শিং মাছের পলিথিন...।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test