E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হোসাইন মোহাম্মদ মিরাজ’র গল্প

২০১৬ জুলাই ২০ ১৬:০৮:২৬
হোসাইন মোহাম্মদ মিরাজ’র গল্প







 

ভূতের ছাও

শুভ্রু একটি মাদ্রাসায় ২য় শ্রণিতে পড়ে। লেখাপড়ার জন্য মাদ্রাসার আবাসিক হোস্টেলে থাকতে হচ্ছে কয়েক মাস ধরে। হোস্টেলে ফ্লোরিং করে ঘুমাতে ওর ভাল লাগেনা। প্রায়শই মাকে বকতে ইচ্ছে করে কিন্তু বকে ওর কোন লাভ নেই তাও জানে। তারপর আবার হোস্টেলের সুপার হুজুর বলে দিয়েছে রাতে কেহ রুমের বাইরে যাবেনা। কারণ হোস্টেলের পাশের বটগাছটিতে নাকি ভূত আছে। কাউকে একলা পেলে নাকি ঘাড় মটকে দেবে। সে কারণে সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত রুম থেকে বের হতে পারছেনা।

কি আর করা। শুভ্র রাতে খেয়ে দেয়ে ঘুমাতে গেছে। হঠাৎ শুনতে পেল ভূতেরা আলোচনা করছে তাদের ছোট্ট ভূতের ছানা ট্যাটনকে নিয়ে। ট্যাটন এর বয়স ১ বছর পূর্ণ হলো। এখন ওর খাবার ওর নিজেরই যোগাড় করতে হবে। ট্যাটন ওর মাকে বললো আমি ছোট মানুষ আমি কিভাবে খাবার যোগাড় করবো।

মা বললো- দ্যাখ ট্যাটন আমাদের খাবার হলো মানুষকে ভয় দ্যাখানো। তুই যত মানুষকে ভয় দেখাতে পারবি ঠিক ততোই তোর পেট ভরা থাকবে। তাছাড়া ঐ দ্যাখ আমাদের বটগাছটার পাশেই আছে হোস্টেল। ওখানে অনেক বাচ্চা ছেলে আছে তাদের কাছে তুই গেলেই তারা তোকে ভয় পাবে আর তোর খাবারও জুটে যাবে। তাছাড়া ওখানে শুভ্র নামে নতুন একটি ছেলে ভর্তি হয়েছে তাকে ভয় দ্যাখানো কোনো ব্যাপারই না। যা আজ থেকেই শুরু করগে।

ট্যাটনকে যেই বলা সেই কাজ। চলে গেল শুভ্রর রুমে। রুমে গিয়ে শুভ্রকে ডাকছে শুভ্র! এই শুভ্র, শুভ্র? আমি এসে গেছি! হু হু হু। আমার খাবার দে।

শুভ্র চোখ খুলেতেই দেখলো ধবধবে সাদা পোষাক পরা অদ্ভুত কেউ একজন তাকে ডেকে খাবার চাচ্ছে। শুভ্র তাকে দেখে ভূতের কার্টুন এর কথা মনে পড়ে যায়। যা সে আম্মুর মোবাইলে দেখেছিল। সে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। ভয় পেয়ে প্রচন্ড এক চিৎকার দেয়। ট্যাটন তার চিৎকার শুনে নিজেও ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরে।

চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে সুপার হুজুর ছুটে আসতেই তার ঘোর ফিরে আসে এবং ট্যাটন অদৃশ্য হয়ে যায়। শুভ্র ভূত ভূত বলে কাঁদতে থাকে। সবাই ততক্ষণে ঘুম থেকে জেগে ওর চারপাশে ভিড় জমিয়ে ওকে বোঝানোর চেষ্টা করে আসলে ভূত বলে পৃথিবীতে কিচ্ছু নেই। কিন্তু গতকালই তো হুজুর বলেছিল ঐ পাশের বটগাছটিতে ভূত আছে। আরে ওটা তোমাদের মিথ্যা বলেছিলাম এজন্য যে তোমরা যাতে সন্ধ্যার পরে কেউ বাহিরে না বের হও।

শুভ্র এবার নিজেকে সামলে নিয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। এভাবে রাত কাটিয়ে পরের দিনও কাটিয়ে দিল। পরের রাতে সে গভীর ঘুমে যখন আচ্ছন্ন ঠিক তখনই হঠাৎ কিছুর শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সে মনে করলো এটা রুমের মধ্যে কারও হাটার শব্দ। শব্দটি আস্তে আস্তে রুমের এপাশ থেকে ওপাশে। আবার চারপাশে ঘুরছে মনে হয়। শুভ্রর হাত পা শীতল হয়ে যায়, কান প্রচন্ড গরম হয়ে যায়। চোখ খুলতে পারছে না। কেহ আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে আসছে হঠাৎ টের পেল কেহ পা ঘেষে তার মাথার কাছ থেকে চলে গেল রুমের আরেক পাশে। সে আরও ভয় অনুভব করলো। চোখ বন্ধই ছিল মনে মনে ভাবলো গতকালের ভূতের ছাটা আজ আবার আসেনি তো! কিন্তু সুপার হুজুর বলেছিল ভূত বলতে কিছু নেই। তাই নিজেকে আস্বস্ত করে মনে মনে ভাবলো যেহেতু হুজুর বলেছিল ভূত নেই সেহেতু সে যখন আমার পাশ দিয়ে আবার যাবে আমি তখন তাকে ধরে ফেলবো।

ঠিক তখুনি শব্দটি আবার আস্তে আস্তে শুভ্র’র মাথার দিকে আসছে। শুভ্র’র চোখ বন্ধ। হাত কম্বলের ভিতরে। ইচ্ছা করছে চোখ খুলে ফেলবে কিন্তু পারছে না। হাত দুটোও কম্বলের ভিতর থেকে বের করতে পারছে না। কেন যেন অবশ অবশ লাগছে কিন্তু শব্দটি ক্রমশ তার কাছেই আসছে। যখন তার মাথার খুব কাছাকাছি চলে আসলো শুভ্র খপ করে ধরে ফেললো। ধরে দেখলো সেটা ছিল গত বিকালে বন্ধুদের নিয়ে যে ফিট বিস্কুট খেয়ে ছিল তারই খালি প্যাকেট। তার বুঝতে বাকি ররইলো না যে এটা ফ্যানের বাতাসে রুমে এদিক ওদিক ঘুরছিলো।

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test