E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোনার তরী(শিশু কিশোর সাহিত্য)

২০১৬ জুলাই ২৩ ১৩:২৫:৩৬
সোনার তরী(শিশু কিশোর সাহিত্য)







 


নাসের মাহমুদ
মা


ঈদ এলেই বাড়ি যাই
ঈদ গেলে আসি,
বাড়ি গেলে ভালো লাগে
বাড়ি ভালোবাসি।

যাতায়তে দূর্ভোগ
তবু বাড়ি যাই,
ফিরে এসে কান ধরি-
আর যাওয়া নাই।


ফের যেই ঈদ আসে
মন বলে- ' যা '
আমি তাই চলে যাই,
বাড়িটা কি ' মা '?

নুরুল ইসলাম খান
কাঠবিড়ালি


কাঠবিড়ালি কাঠবিড়ালি
বলতে তোমায় হবে ,
কাঠবিড়ালি নামটা তোমার
কে দিয়েছে কবে ?

দেখতে তুমি ইঁদুর ইঁদুর
বিড়ালতো নও মোটে ,
এমন কথা শুনে তোমার
নিশ্চয়ই রাগ উঠে !

কাঠবিড়ালি কওতো তুমি
কোন বিড়ালের জাত ?
এত বিড়াল থাকতে কেন
ইঁদুরের উৎপাত !

সবার কথা শুনতে তুমি
চুপ করে কান পাতো ,
আম কাঁঠাল পেয়ারা খাও
ইঁদুর ধরো নাতো !

অনেক ভেবে কাল দুপুরে
ঢোল পিটিয়ে দিছি ,
কাঠবিড়ালি খাবে শুধু
কাঠবাদামের বিচি ।


মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক
অনাথ পৃথিবী


ঈর্ষার আগুনে পোড়া ইচ্ছেগুলো বাষ্পের উদ্ভাসে
উড়ে যায় অসীম আকাশে, যেখানে দাঁড়িয়ে থাকি
তার পাশে শব্দ করে শরাবের সাথে শত সাকি
পুরোনো দিনের প্রাণ উছলে ওঠে ছন্দের উচ্ছ্বাসে।

হাটে হাটে ফেরি করি চৈতন্যের চেতনার কথা-
বাউলের একতারা সুর। ক্রেতার অভাবে ক্লান্ত-
নিস্তেজ শরীর পড়ে থাকে ফুটপাতে। দিগভ্রান্ত
পথের পাথরে আনমনে দোলে না সোনালু লতা।

পুরনো ঈশ্বর এসে উল্লাসের অন্যায্য আসরে
গড়ে তোলে দৈত্যের মন্দির। নিথর আঁচলে বসে
হিসেবের খাতা খুলে যোগ-বিয়োগের অঙ্ক করে
ধুরন্ধর শুভঙ্কর। চমকে উঠি চানক্য জৌলুসে।

অতঃপর দিনকে ডিঙ্গিয়ে নির্বিকার হেঁটে যায়
আগের দিনের গল্প-কথা সূর্যহারা প্রচ্ছায়ায়।


স্বপন দেলওয়ার

হুতোম প্যাঁচা (ছড়াগান/কোরাস)

হুতোম প্যাঁচা 'ভূতোম ভূতোম'
নকল ডাকে সারা
খোকা খুকুর পায়রা-বেড়াল
খুন করেছে কারা
লক্ষী মায়ের ভিষণ অভিমান
মহাকাশে চলছে অভিযান....

দৈত্য-দানো-রাক্ষসেরা
রূপকথাতে ছিলো-
মুক্ত-স্বাধীন পৃথিবীতে
আবার কেন এলো?

ডাইনোসোরাস ডাইনী বুড়ী
হাঁকছে সোনার দেশে
ভূত-পেত্নী হায়নাগুলো
ঘুরছে মানুষ বেশে।

কাঁপছে ভয়ে সোনামণির প্রাণ
মহাকাশে চলছে অভিযান....

হচ্ছে নানান বেচাকেনা
বিশ্বজোড়া হাটে
অস্ত্র বোঝাই যুদ্ধ জাহাজ
ভিড়ছে ঘাটে ঘাটে।

রাবণকলে রাজকুমারী
বন্দিনী আজ কাঁদে
রাজার কুমার পড়লো সে কোন
মায়াজাদুর ফাঁদে।

গাইবো এসো লংকা জয়ের গান
মহাকাশে চলছে অভিযান....


রব্বানী চৌধুরী
কালো বলে, ‘আলো ভাই,

কালো বলে, ‘আলো ভাই, তোর কত তেজ !
তোকে দেখে আমি রোজ গুটালাম লেজ!
তোকে দেখে রোদ হাসে ফুল ফোটে গাছে
পাখিগণ গায় গান প্রজাপতি নাচে।
মাঠে মাঠে ধান পাকে মাঝি বায় নাও
তোকে পেয়ে আলোকিত সোনামুখী গাঁও ।
তুই ছাড়া স্বাধীনতা যায় না তো রাখা
আলো ভাই তোর রূপ ভালোবাসা মাখা।
সূর্যতে রস তুই তোকে দেখি চাঁদে
তুই ছাড়া পৃথিবী তো আঁধারেই কাঁদে !’
আলো বলে, ‘কালো ভাই, তুই যেথা যাবে,
ঠিক ঠিক সেখানেই আমাকেও পাবে।
তুই যাকে ঘুম দিবি আমি তাঁকে ডাকি
তোর দেয়া দুঃখও আমি দেই ঢাকি !’


সোহেল রানা
মরছে শিশু


মরলো শিশু ফাহিম এবার
কুকুর খেলো মাংস তাই
কারণ বিনে মরছে শিশু
আজকে অধিকাংশটাই।

মারছে যারা তাদের বিচার
দেরি বলেই থামছে না
নিষ্ঠুরতার প্রতিকারে
কারো মাথা ঘামছে না।

ঘামলে মাথা সঠিকভাবে
রক্ষা পাবে শিশুর দল
একই সুরে তাল মেলালে
বাড়বে শিশুর মনোবল।

আলমগীর কবির
বৃৃষ্টি


সকাল সাঁঝে মধুর সুরে
বৃৃষ্টি ঝরে বৃৃষ্টি,
কদম ফুলে গাঁথলো মালা
মিষ্টি মেয়ে মিষ্টি।

মেঘের ভেলা করছে খেলা
ঐ আকাশের ইষ্টি,
কেয়ার কলি পাপড়ি মেলে
দৃষ্টি কাড়ে দৃষ্টি।

একটা ব্যাঙে আছাড় খেলো
ভীষণ অনাসৃষ্টি,
বৃৃষ্টি ভেজা খুকীর ছড়া
বাড়লো ছড়া লিষ্টি।

কিশোর কবিতা : শাফিকুর রাহী
ফুলফসলের ঘ্রাণে

অজ-পল্লী গাঁয়ের কোলে আম-কাঁঠালের ছায়ায় ঘেরা,
টুনটুনি আর বুলবুলিদের মেঠোপথে ঘরে ফেরা।
ফুলফসলের ঘ্রাণে নাচে দোয়েল ফিঙে প্রজাপতি,
সেই দেশ আমার অহঙ্কারী গর্বিনি মা রূপবতি।
তার মমতা পরম পরশ রূপ-লাবণ্যে ঘেরা বঙ্গে
পারুল-পায়রা-পদ্মদীঘি কী অপরূপ সাজলো রঙে
ধানকাউনের মাঠে মাঠে রাইসরিষা তিলের হাঁটে
কৃষক ভাইয়ের স্বপ্নহাসে ধলেশ্বরী-কুমার ঘাটে
শালপিয়ালের নিঝুম নিবিড় বনের ভেতর মাণিক জ্বলে
যে মাটিতে গুপ্তধনের-হীরকখনি সোনা ফলে।

কোন দেশেতে আছে মাগো অমন রূপের স্বর্গশোভায়;
যে দেশেতে শোল-মাগুরে নৃত্য করে প্রবাল ডোবায়।
সাত আকাশের তারায় তারায় পূর্ণিমা রাত চন্দ্রকলায়
খর-স্রোতা ওই সন্ধ্যা-ঘাটে রূপালী মাছ রুই ও কাতলায়
এই অপরূপ রূপের মোহে প্রাণহারালো কোন উদাসী
বসন্তেরই শীতল হাওয়ায় মনের বীণায় বাজলো বাঁশি।
চাঁদনি পসর রাতের জোনাক নীল যমুনার ঢেউয়ের তালে
মিষ্টিমধুর ছড়িয়ে আলো লাগলো দোলা নায়ের পারে।

বর্ষা কাল
আবু ইউছুফ সুমন

ভোরটা হতেই চমকে উঠি
পিক-পাপিয়ার ডাকে
সূর্য মামা উঠলো না আজ
কদম পাতার ফাকেঁ।

সবুজ রঙের তরুলতা
নজর টানা দৃষ্টি
রিমঝিমিয়ে ঝরছে শুধু
সকাল থেকেই বৃষ্টি।

পুকুর নদী হাওড়-বাঁওড়
কানায় কানায় ভরা
ছোট্ট খোকা পড়ছে বসে
খেক শিয়ালের ছড়া।

ঘরের কোণে জুইঁ ফুটেছে
ভাসছে মেঘের পাল
এসব দেখে ঠিক বুঝেছি
এলো বর্ষা কাল।


নাজির হুসেন
বাবু যায় নানাবাড়ি


০১.
আমার বাবু এখন তার আট মাস চলে
সে শুধু তার মায়ের পেটের ভেতরে নড়চড়া করে
বাবু আমার বড় হয়ে অ আ পড়বে
আমার বাবু ভালো বাবু সে তার মায়ের কথা ধরবে
বাবু আমার বড় হয়ে টম এ্যান্ড জেরিকে দেখবে
ভারি মজা সে পাবে
বাবু আমার বড় হয়ে রোজ স্কুলে চলবে
আমার বাবু প্রথমবার নানা-নানিকে দেখবে
বাবু তার নানির বাড়ি এসে
খালা ও মামাদের সাথে খেলবে
বাবু খুব ভারি মজা করবে
আমার বাবু তারিনের সাথে হাতি-ঘোড়া চড়বে
খুব ভারি মজা সে পাবে।

০২.
আমার মায়ের দুই মাস চলে
সে শুধু হাত নাড়াচাড়া করে খেলে
কেউ কিছু কথা বললে ওকে সে হুঙ্কার দিয়ে ফেলে
আমার মায়ের ক্ষুধা পেলে সে কান্না শুর“ করে।
তার মায়ের দুধ খেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে
আমি দেখেছি তাকে কখনো হাসে আনন্দে
কখনো কাঁদে বিধাতার এই তো খেলা।
আমি গিয়েছি গত পরশু রাত বারোটা বাজে
তখন আমি ডাকলাম মুমু মাকে
চোখ খুলে তাকালে সে আমার দিকে
মনে হলো এই তো শান্তি এই তো আনন্দের মেলা।


আহাদ আলী মোল্লা
উঠবে ফুটে দেশটা


আঁকলো খুকু শাপলা কুমুদ
নৌকা নদীর চর,
খোকা আঁকে খড়ের ছাওয়া
মাটির কুঁড়ে ঘর।

কেউ থাকে না বাড়ি যখন
ভরা দুপুর বেলা,
ওরা তখন বসে বসে
করে রঙের খেলা।

শাবাশ শাবাশ উৎসাহ দেন
সকাল বিকেল মা,
বলেন তোদের এসব ছবির
তুলনা হয় না।

ছবির মাঝে আরও অনেক
স্বপ্ন তুলে আন,
যেমনি আঁকেন আবেশ দিয়ে
শিল্পী হাশেম খান।

তেমনি করে আঁকতে হবে
কর সাধনা চেষ্টা,
খাতার পাতায় তোদের হাতেই
উঠবে ফুটে দেশটা।




জুলফিকার আলী
পাকছে আম


আম পেকেছে গাছে গাছে
থোকা থোকায় ঝুলে আছে।
হাটবাজারে আমের মেলা
জষ্ঠ্যি মাসে সারাবেলা।

কিনতে ক্রেতা ভিড় জমছে
হাজার জাতের আম
ল্যাংড়া,সিঁদুর নাম
হিমসাগর আর গোপালভোগের
ভীষণ চড়া দাম।

গরমকালে আমের বাগানে
ছেলে বুড়োর ভিড়
আম পড়বে তখন যখন
বাতাসে ঝির ঝির।

সে আমে দুধ মাখিয়ে মা
খোকাকে কয় যা খেয়ে যা।
আম যেন খাও সবে,
শহর থেকে গ্রামে আসি
আম খেতে তবে।

ঈষিকা গুহ
বৃষ্টি


বর্ষা এলো বর্ষা এলো
নতুন ছোঁয়ায় মাতিয়ে গেলো
জানলা গলে বৃষ্টিছটায়
কালো মেঘের ঘনঘটায়
হোকনা আকাশ কালো
বর্ষা তোমায় বাসবো আমি ভালো।

ঘুম ভেঙে দেয় বৃষ্টি নুপুর
রিমঝিম ঝিম বৃষ্টির সুর
মনটা সবার উঠলো হেসে
বর্ষা এলো বাংলা দেশে।

নাহার ফরিদ খান
স্মৃতির পাতা ওড়ে

ঘুম আসেনা ,রাতের মধ্যপ্রহর গড়ায়
লুকোচুরি প্রেমে চাঁদটা হঠাৎ গড়ায়
চুপিচুপি এসে আঁধার হাত বাড়ায়।

হৃদয় মাঝে উঠলো উথাল পাতাল ঢেউ
মনের নোঙর ফেলা,কোথাও নেই ভয়
নেড়ী কুকুর সংগী হয়ে করে ঘেউ ঘেউ।

গহীন রাতে তোমার কথা বড্ড মনে পড়ে
প্রতীক্ষাতে রাখতে দুচোখ পেতে ঘরে
জলপড়ে,পাতানড়ে স্মৃতির পাতা ওড়ে।

আলমগীর খোরশেদ
খুব ভালোবাসি

যার জন্য দেখা এই
পৃথিবীর মুখ,
দশ মাস দশদিন
সয়েছেন দু:খ।
যার বুকের দুধ চুষে
আজকের আমি
বুকেতে আগলে রাখি
যায়নি থামি।
বলেনা আজ কেউ
’এতদিন পর এলে’
কেমন ছিলে বাবা
শুকিয়ে হয়েছিস ঢিলে।
বড় হয়ে মিটাতে পারিনি
কোন আশা,দু:খ রাশি,
জড়িয়ে ধরে কভু হয়নি বলা
মাগো,তোমায় খুব ভালোবাসি।

ফয়সাল শাহ
মায়ের আদর

মায়ের মুখে চাঁদের হাসি
সদ্যফোটা পদ্মফুল,

মায়ের বুকে স্বর্গভূমি
মাতৃভূমি আমার মূল।

মায়ের মনে অনেক আশা
মিষ্টি মধুর ভালোবাসা,

মায়ের ভাষায় জুড়ায় পরান
মিটাই মনের সকল আশা।

মায়ের আদর সবুজ চাদর
চৈতী রোদে শীতল ছায়া,

মায়ের স্নেহে শ্যামল মাটি
মুগ্ধ মুখোর দেশের মায়া।

রহমান জীবন
নদীটাকে কাঁদতে দেখি


রাজেশ্বরীর দু’পাড় জুড়ে
ঢেউ খেলে না জল,
জলে ভাসা ফুলেরা নেই
মাছের কোলাহল।

গয়না, ডিঙি, ট্রলার এবং
পালতোলা নাও,
রাজেশ্বরীর বুকে এখন
চলে না তাও।

ছোট্ট নদী রাজেশ্বরী
আজ হয়েছে খাল,
নদীটাকে কাঁদতে দেখি
এলেও বর্ষাকাল।





সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জীবনী


ছদ্মনাম -নবকুমার, কবিরতœ, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর। জীবিকা -কবি ,সময়কাল-বাংলা সাহিত্যের তত্ত্ববোধিনী যুগ।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (জন্ম: ফেব্রুয়ারি ১১, ১৮৮২ - মৃত্যু: জুন ২৫, ১৯২২) একজন বাঙালি কবি ও ছড়াকার। তাঁর কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষা যথোপযুক্ত ব্যবহারের কৃতিত্বের জন্য তাঁকে ছন্দের যাদুকর নামে আখ্যায়িত করা হয়। মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৌরাণিক প্রভৃতি বুদ্ধি-বৃত্তিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্তের অধিকারী।

প্রারম্ভিক জীবন
সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিকটবর্তী নিমতা গ্রামে। তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমানের চুপী গ্রামে। পিতা রজনীনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং পিতামহ অক্ষয় কুমার দত্ত ছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক। সত্যেন্দ্রনাথের কবিতায় নানা ভাষার শব্দ নিপুণ ছন্দে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদকর্মও করেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৯) এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফএ (১৯০১) পাস করেন। কিন্তু পরে বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন।

কর্মজীবন
কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করার আগে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পিতার ব্যবসায় যোগ দিিেছলেন। তিনি ছিলেন ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম কবি। প্রথম জীবনে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, অক্ষয় কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে রবীন্দ্র অনুসারী হলেও তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই। অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান। নবকুমার, কবিরতœ, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে তিনি কবিতা লিখতেন। দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু। ১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ছন্দ সম্পর্কিত তার প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দ-সরস্বতী’ প্রকাশিত হয়। তাঁর অপর কৃতিত্ব বিদেশী কবিতার সফল অনুবাদ। আরবি-ফার্সি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে বাংলাসাহিত্যের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন। মেথরদের মতো অস্পৃশ্য ও অবহেলিত সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন। তিনি একাধিক ছদ্মনামে কবিতা চর্চা করতেন।

দেহাবসান
মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ জুন তারিখে কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পরলোকগমন করেন।

সাহিত্যকর্ম
কাব্যগ্রন্থ-
সবিতা (১৯০০),সন্ধিক্ষণ (১৯০ ,বেণু ও বীণা (১৯০৯),হোমশিখা (১৯০৭)
ফুলের ফসল (১৯১১) কূহ ও কেকা (১৯১২)তুলির লিখন (১৯১৪) মনিমঞ্জুষা (১৯১৫)
অভ্র-আবীর (১৯১৬)হসন্তিকা (১৯১৯)বেলা শেষের গান (১৯২৩) বিদায় আরতি (১৯২৪)

(শিশু কিশোর গল্প)

ঈদ উপহার
--আব্দুস সালাম

রায়হান বাবা-মার একমাত্র সন্তান। সে ঢাকাতে বড় একটি কোম্পনিতে চাকরি করে। ঢাকাতে নিজস্ব বাড়িতে বাবা-মার সাথে বসবাস করে। তারা বেশ টাকা-পয়সার মালিক। ঢাকাতে তাদের তেমন কোন আত্মীয়-স্বজন নেই বললেই চলে। সব আত্মীয়-স্বজন গ্রামেই বসবাস করে। তাই প্রতিবছর ঈদ-বকরিদ ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে তারা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। এছাড়া সারাবছর তাদের ঢাকাতেই থাকা হয়। বাবা এখনও চাকরি করে। মাও একসময় চাকরি করতো। বেশ কয়েকবছর হলো তার মা চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। এখন সে সংসারেই সময় দেয়।

রায়হানের জন্মের পূর্বে নিজ জেলার একটি গ্রাম থেকে রায়হানের বাবা-মা গৃহকর্মে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য বয়স্ক এক মহিলাকে নিয়ে আসে। মহিলার দুই ছেলেমেয়ে। বড় মেয়ের নাম ময়না। আর ছোট ছেলের নাম আবুল। বড় মেয়ের নামেই সে বেশি পরিচিত। সকলে তাকে ময়নার মা বলেই চিনতো। ময়নার বিবাহের কিছুদিন পর ময়নার বাবা এক দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। বাবা রিকশা চালাতো। ময়নারা খুব দরিদ্র। তাদের দেখাশোনা করার মত কেউ ছিল না। ময়নার স্বামীও খুব দরিদ্র। কোনরকমে জীবন যাপন করে। সে কারণে ময়নার মাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়। খুব কষ্ট করে তাকে সংসার চালাতে হতো। রায়হানের বাবা ময়নার মাকে ঢাকাতে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে ময়নার মা এক কথায় রাজী হয়ে যায়। সে ছোট ছেলেকে ময়নাদের বাড়িতে রেখে রায়হানের বাবা-মার সাথে ঢাকাতে চলে আসে। রায়হানের বাবা-মা খুব ভাল মানুষ। গৃহকর্মীকে তারা উপর্যুক্ত পারিশ্রমিক দেয়। ময়নার মা রায়হানদের বাড়িতে কাজ করে যে টাকা পেত তা সে মেয়ের কাছে পাঠিয়ে দিত। ময়নার মা ছিল খুব বিশ্বস্ত গৃহকর্মী। রায়হানের বাবা-মা তাকে খুব ভালবাসতো।

রায়হানের জন্মের পর থেকে প্রায় পনের বছর পর্যন্ত ময়নার মা রায়হানদের বাড়িতে ছিল। রায়হানের বাবা-মা তাদের চাকরি নিয়ে এতটাই ব্যস্ত ছিল যে ছেলেকে সময় দেওয়ার যথেষ্ট সময় তাদের ছিল না। ময়নার মা-ই তাকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছে। ছোটবেলায় রায়হান বাবা-মার চেয়ে ময়নার মাকেই বেশি অনুভব করতো। রায়হান যখন হাইস্কুলে পড়ে তখন ময়নার ছোট ভাই একটা সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। ছেলের শোকে ময়নার মা ভেঙে পড়ে। কিছুদিন পর তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। ঠিকমত কাজকর্ম করতে পারতো না। তার পক্ষে সম্ভব হয়নি ঢাকাতে থাকা। সে গ্রামে মেয়ের কাছে ফিরে যায়। এরপর বাবা-মা একাধিক গৃহকর্মীকে নিয়োগ দেয় রায়হানকে দেখাশুনা করার জন্য। কোন গৃহকর্মীকে তারা বেশি দিন রাখতে পারেনি। অবশেষে রায়হানের মা চাকরি ছেড়ে দেয়। রায়হানকে মানুষ করার পিছনে বাবা-মার পাশাপাশি ময়নার মা’র গুরুত্ব অনস্বীকার্য।

রায়হান এখন অনেক বড় হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে ভাল একটি কোম্পানীতে চাকরি করছে। সে আর দশটা ছেলের মত না। সে আত্মীয়-স্বজন এবং তার পরিচিতদের সুযোগ পেলেই খোঁজ-খবর রাখে। বাবা-মার কাছ থেকে যখন ময়নার মার গল্প শুনেছে তখন থেকে সে নিয়মিত তার খোঁজ-খবর নেয়। সে ময়নার মার প্রতি কৃতজ্ঞ। সে তাকে মায়ের মত শ্রদ্ধা করে। রায়হানের শ্রদ্ধাবোধকে তার বাবা-মাও শ্রদ্ধা করে। ময়নার মা বেশ কয়েক বছর যাবৎ অসুস্থ। রায়হান তার চিকিৎসার জন্য মাঝেমাঝে টাকা-পয়সা পাঠায়। এতে তাদের খুব উপকার হয়। কারণ তার একমাত্র মেয়ে ময়না ছাড়া তাকে দেখাশুনা করার মত কেউ নেই। রায়হান যখন তাদের খোঁজ-খবর নেয়, তাদের সাথে কথা বলে তখন তারা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। রায়হান প্রতিবছর রোজার ঈদ এবং কোরবানীর ঈদে ময়নার মাকে ঈদখরচ বাবদ কিছু টাকা-পয়সা পাঠায়। কাপড়-চোপড় কিনে দেয়। ঈদের সময় ওগুলো পেলে ময়নাদের খুব উপকার হয়। তাই ঈদ-বকরিদের সময় ময়নার মাও প্রতীক্ষায় থাকে রায়হানের ঈদ উপহারের জন্য।

দেখতে দেখতে আবার রমজান মাস শুরু হয়ে যায়। এবার রমজান মাসে রায়হানের অফিসে অনেক কাজ। তার দম ফেলার সময় নেই। বাবা-মা আগেই গ্রামে চলে গেছে ঈদ উদযাপন করার জন্য। ঈদের আগেরদিন ছাড়া রায়হানের গ্রামে যাওয়ার সময় নেই। রায়হান অনেকের জন্য কেনা-কাটা করেছে। ময়নার মার জন্য সে কিছু কাপড়-চোপড় কিনেছে। কিন্তু ব্যসÍতার কারণে সে ওগুলো পাঠাতে পারিনি। গ্রামে যাওয়ার সময় সে সাথে করেই ওগুলো নিয়ে যাবে। নিজ হাতেই ময়নার মাকে দিয়ে আসবে। এদিকে ময়নার মা প্রতীক্ষা করছে রায়হানের ঈদ উপহারের জন্য। আর করবেই না কেন। প্রতিবার সে ঈদে ময়নাদের জন্য কিছু না কিছু খরচ-খরচা করে। রায়হানের দেওয়া ঈদ উপহার পেলে তাদের বেশ উপকার হয়। কিন্তু এবারই ব্যতিক্রম রায়হান কিছুই পাঠায়নি। আর পাঠানো সময়ও তো নেই। দু’দিন পরেই যে ঈদ। ময়নার মা বেশ কিছুদিন ধরে ভীষণ অসুস্থ। বিছানা থেকে উঠতে পারে না। তার আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মেয়ের জামাই খুব গরীব মানুষ। শাশুড়ির চিকিৎসা করানোর মত সামর্থ তার নেই।


রায়হান ঈদের আগের দিন ছুটি পেয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। রাতেই সে নিজ গ্রামে পৌঁছে গেল। পরেরদিন সকালে ঈদের নামাজ পড়ে বাসাতে ফিরে আসলো। কয়েকজনের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে নিজের গাড়ি নিয়ে ময়নার মার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কিছুক্ষণ পর রায়হান ময়নাদের গ্রামে পৌঁছে গেল। তাদের বাড়ির কাছাকাছি একটু দূরে রায়হান গাড়ি থামালো। গলির রাস্তা হওয়ায় গাড়িটা আর বেশি দূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সে দূর থেকে লক্ষ্য করলো যে, গ্রামের অনেক লোকজনকে ময়নাদের বাড়ির সামনে দেখা যাচ্ছে। সে গাড়ি থেকে নামলো। হাতে কাপড়-চোপড়ের ব্যগ। ময়নাদের কুঁড়েঘরের কাছাকাছি যেতে না যেতেই রায়হানের কানে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো। সে একজনকে জিজ্ঞাসা করলো, “ওখানে কী হয়েছে?” লোকটি উত্তরে বললো, ময়নার মা আজ সকালে ইন্তেকাল করেছে।.................।

সোনার তরী সম্পাদক-বদরুল হায়দার

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test