E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

(সোনার তরী (শিশু কিশোর সাহিত্য)

২০১৬ জুলাই ৩১ ১২:২০:৩৩
(সোনার তরী (শিশু কিশোর সাহিত্য)








 


নাসের মাহমুদ
আষাঢ় শাওন

বিষ্টি পড়ে গাছের পাতায়
বিষ্টি পড়ে বিলে,
গাছ গাছালি দিচ্ছে ধুয়ে
আষাঢ় শাওন মিলে।

ঝম ঝমা ঝম শব্দ বাজে
বিষ্টি টিনের চালে,
ভেজা পালক একা শালিক
ঝিমোয় গাছের ডালে।

জানলা ধরে একটি কিশোর
ইচ্ছে ভরা বুক-
খোলা মাঠে দাড়াঁই গিয়ে
বিষ্টি তাকেও ধুক।

দেখা শালিক একা শালিক
ডাকি যখন শালিককে,
ভিজো নাকো তুমি যেনো,
বলে শালিক-মালিককে।




উত্তম সেন
আজকের ছড়া

কোথায় দেশের দামালরা সব,
ঘুমিয়ে আছিস্ নাকী !
রক্ত চোখে তাকিয়ে আছে,
রাক্ষুসে বাজপাখি!
আর দেরি নয়; শক্ত হাতে
রুখতে হবে ওকে,
নইলে ঠোঁট আর নখের বিষে
করবে আঘাত তোকে !

জগলুল হায়দার
প্রার্থনা

আশাগুলো
ঝরে পড়া বোটা হয়
ভালোবাসা
বাদলেরই ফোঁটা হয়
সন্ত্রাসে
সারাদেশ গোটা হয়-
নিরবধি
এক নদী কান্না;
জিম্মি বা জঙ্গি
ডেমড়া বা টঙ্গী
এ দু' ভাগে
এ ভূভাগে
লাশ কেউ চান না!


রব্বানী চৌধুরী
সত্যকথা

যাদের আছে সালাম রফিক
বাংলা মাতৃভাষা,
যাদের আছে মুক্তিযোদ্ধা
টিক্কা খানকে নাশা,

যাদের আছে বঙ্গবন্ধু
ডাকল খালি হাতে,
তাদের মনে ভয়টা কেন
রাখল দিনে রাতে?
রাখবে না।

এদেশেটাতে সন্ত্রাসীরা
থাকবে না।
জালিম জুলুম টিকবে না,
ইতিহাস দেখে দেখে শিখবে না?
শিখবে।

সত্য কথার বিনাশ নেই
সত্যকথা লিখবে।



মাসুদার রহমান
টাকা সব

টাকা কামা,
ও মামা- টাকা কামা,
টাকা হলে,
'বড়লোক' লোকে বলে,
টাকা সব -
রোসনাই উৎসব।
টাকা উড়ে,
অলি গলি ঢাকা জুড়ে।
টাকায় সুখ,
টাকায় স্মার্ট উজবুক।
টাকা জানে,
জীবনের কি যে মানে।
টাকা কামা,
যদি চাও লাল জামা।
ও মামা-
টাকা কামা, টাকা কামা


জুলফিকার আলী
মেঘের খেলা


খোকন সোনার মন আকাশে
নিত্য মেঘের খেলা,
মেঘমালা দেখতে দেখতে
কাটায় সারাবেলা।

ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি নামে
আকাশ বেজায় কালো,
গর্জন তুলে ডাকে মেঘ
ডোবে বিল-খালও।

পাটক্ষেতে স্বপ্ন আঁকে
নতুন ধানে চাষী,
বর্ষা মানে কাদা ভরা
পুকুর জলে ভাসি।

টাপুরটুপুর বর্ষা মেয়ে
দিচ্ছে গালে চুম,
প্রকৃতিতে সবুজ শোভা
কাড়ে চোখের ঘুম।




সৈয়দ শরীফ
ইঁদুর-ছানা বিড়াল-ছানা

ইঁদুর-ছানা, বিড়াল-ছানা,
আসতে ঘরে করছি মানা!
ঘর কি আমার সরকারি?
ক্যান্ নষ্ট করিস তরকারী?

রাখবো বেঁধে আসলে ঘরে,
বেঁধে তোদের পিটবো জোরে!
যা যা এবার দৌড়ে পালা,
দিবি রে আর কত্তো জ্বালা?

ভদ্র হতে শেখ রে তোরা,
অভদ্রদের পেটাই মোরা!
কারো ঘরে যাবি না,
তরকারীও খাবি না!

আবার যদি খাস,
কাঁদলে তখন লাভ হবে না
মার খাবি ঠাস্ ঠাস্।



আলমগীর কবির
মনটা ছুটে

মনটা ছুটে সকাল সাঁঝে
গাঁয়ের মেঠো পথের বাঁকে,
খুঁটে খাওয়া পাখির ঝাঁকে;
ফিঙে দোেয়ল টিয়ের ডাকে।

মনটা ছুটে সকাল সাঁঝে
ঢেউ ছড়ানো মাঠের কাছে,
নদীর পিছু ঘাটের কাছে;
সবুজ-নীল হাটের কাছে।

মনটা ছুটে সকাল সাঁঝে
বাবার স্নেহ চাদর পেতে,
মায়ের বকা বাদর পেতে;
মধুর কথা আদর পেতে।


সোহেল রানা
ঐ দেখা যায় কাঠবিড়ালি

ঐ দেখা যায় কাঠবিড়ালি
ঐ সে গাছের ডালে
ঐ গাছেরই ফলটা পেড়ে
খায় সে ঘরের চালে।

ঐ দেখা যায় কাঠবিড়ালি
ঐ গাছেতে থাকে
ঐখানেতেই করে খেলা
খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে।


আহাদ আলী মোল্লা
বর্ষাকালের অনুভূতি

ঢাকলো আকাশ মেঘে মেঘে
নামলো হঠাৎ বিষ্টি-
টিনের চালে নূপুর বাজায়
আহা বেজায় মিষ্টি।

আগান বাগান ভিজে ভিজে
টাপুর টুপুর ছন্দ কী যে
তোলে;
আনন্দে তাই গাছগাছালি দোলে।

রিমঝিমিয়ে বিষ্টি পড়ে
বিষ্টি গুঁড়ি গুঁড়ি,
বর্ষাকালের অনুভূতির
কার সাথে হয় জুড়ি?

ইউসুফ রেজা
জাঁদরেল সমালোচক

সদ্য লেখা কাব্য হাতে
পুরান ঢাকার গলিতে
ইতস্তত হাঁটতে ছিলাম
লজ্জা কি আর বলিতে,
আমার হাতের কাগজ নিয়ে
গেন্ডারিয়ার বান্দরে
অশিক্ষিত নয় সে মোটেও
এই রকমই ভান ধরে।
খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ে
আমার হাতের লেখা
অসম্ভব এ কান্ড আমার
নিজের চোখেই দেখা
খুঁটে খুঁটে দেখতে থাকে
প্রত্যেকটা শব্দ
তাও ভাবিনি বাঁদর আমায়
করবে এমন জব্দ।
যেই দেখেছে ঐ কবিতায়
নাই ছন্দ মিল
ছড়েু ফেলে মারতে আসে
আমার পিঠে কিল।
লম্বা নখের আঁচড় কাটে
মুখের মধ্যে খামচায়
বললো তোকে কবি বলে
এই দেশে কোন চামচায়?
সাক্ষী ছিলাম আমি এবং
সেই বাঁদরের ছানা
সবার জন্য পোস্ট করলাম
ওদের সেলফি খানা।

নাজির হুসেন
বাবু যায় নানাবাড়ি

০২.
আমার মায়ের দুই মাস চলে
সে শুধু হাত নাড়াচাড়া করে খেলে
কেউ কিছু কথা বললে ওকে সে হুঙ্কার দিয়ে ফেলে
আমার মায়ের ক্ষুধা পেলে সে কান্না শুর“ করে।
তার মায়ের দুধ খেয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে
আমি দেখেছি তাকে কখনো হাসে আনন্দে
কখনো কাঁদে বিধাতার এই তো খেলা।
আমি গিয়েছি গত পরশু রাত বারোটা বাজে
তখন আমি ডাকলাম মুমু মাকে
চোখ খুলে তাকালে সে আমার দিকে
মনে হলো এই তো শান্তি এই তো আনন্দের মেলা।

ঈষিকা গুহ
বৃষ্টি


বর্ষা এলো বর্ষা এলো
নতুন ছোঁয়ায় মাতিয়ে গেলো
জানলা গলে বৃষ্টিছটায়
কালো মেঘের ঘনঘটায়
হোকনা আকাশ কালো
বর্ষা তোমায় বাসবো আমি ভালো।

ঘুম ভেঙে দেয় বৃষ্টি নুপুর
রিমঝিম ঝিম বৃষ্টির সুর
মনটা সবার উঠলো হেসে
বর্ষা এলো বাংলা দেশে।

আলমগীর খোরশেদ
খুব ভালোবাসি

যার জন্য দেখা এই
পৃথিবীর মুখ,
দশ মাস দশদিন
সয়েছেন দু:খ।
যার বুকের দুধ চুষে
আজকের আমি
বুকেতে আগলে রাখি
যায়নি থামি।
বলেনা আজ কেউ
’এতদিন পর এলে’
কেমন ছিলে বাবা
শুকিয়ে হয়েছিস ঢিলে।
বড় হয়ে মিটাতে পারিনি
কোন আশা,দু:খ রাশি,
জড়িয়ে ধরে কভু হয়নি বলা
মাগো,তোমায় খুব ভালোবাসি।

আব্দুস সালাম
শিশু নির্যাতন


প্রায় প্রতিদিন শিশুরা হয়
নির্যাতনের শিকার
হত্যা, গুম যাচ্ছে বেড়ে
নেই যেন কেউ দেখার।

অপহরণ হচ্ছে করা
কিংবা শুনি নিখোঁজ
আরও খবর পড়ছে ঢাকা
কেউ রাখে না খোঁজ।

হেথায় সেথায় যায় রে পাওয়া
বস্তাবন্দী লাশ
শিশুরা কি করছে গৃহে
নিরাপদে বাস?

আজ মানবিক বিপর্যয়ের
চরমতম রূপ
শিশুর প্রতি নির্যাতনে
থাকবো না কেউ চুপ।


(শিশুতোষ গল্প)

মাছরাঙা ও বাঘ
ফয়সাল শাহ

গ্রীস্মের তাপদাহে সুন্দরবনের উজানে পানি কমে যায়, এতে করে খালে পানি কম থাকাতে মাছের আনাগোনা কম। ঘন্টার পর ঘন্টা মাছরাঙা পাখিটা নীচু গাছের ডালে বসে এক ধ্যানে পানির দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ দু’একটা ছোট মাছ সামনে আসলে নিশানা করে খপ করে ঠোট দিয়ে ধরে খায়। এভাবে মাছরাঙার গ্রীষ্মকালটা যাচ্ছিল।
একদিন মাছরাঙা পাখিটা ভর দুপুরে প্রচন্ড তাপ সহ্য করে এক ধ্যানে পানির দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ পায়, মাছরাঙার ধ্যানে বিগ্ন ঘটে। পাশে তাকিয়ে দেখে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার হাটু পানিতে দাঁড়িয়ে আছে আর চিন্তা করছে পানিতে নামবে কিনা। এদিকে গরমে বাঘের শরীর ঘামছে।
মাছরাঙা বাঘকে বলল কিহে হালুম মামা দেখছি গরমে ঘেমে যাচ্ছ পানিতে গা-ভেজচ্ছনা কেন। বাঘ একটা ধমক দিয়ে বলে বেশি কথা বলিস না, দিখছিস না হাটু পানিতে দাড়িয়ে শরীরটা আস্তে আস্তে ঠান্ডা করছি। হঠাৎ পানিতে গা-ভেজালে শরীরে ঠান্ডা লেগে যায়, তুইত পাখি তোর শরীরে পাখনা আছে, তোরত ঠান্ডা লাগেনা, তাইত সারাদিন পানিতে ডুব দিস, আর খপ খপ করে মাছ ধরিস। বাঘ দাঁত কটমট করে মাছরাঙাকে বললো তুই এখানে মাতাব্বরি করিস, দাঁড়া তোর নাগাল পেলে তোর হাড্ডি-গুড্ডিসহ চিবিয়ে খাবো। একথা শুনে মাছরাঙার খুব রাগ এসে গেল, সে মনে মনে চিন্তা করতে লাগল বাঘকে কিভাবে জন্মের শিক্ষা দেয়া যায় এবং এই অপমানের প্রতিশোধ নেয়া যায়। মনে মনে একথা চিন্তা করে গলার সুর পাল্টিয়ে বাঘকে উদ্দেশ্য করে বললো ঠিক আছে তোমার যেহেতু ঠান্ডা লাগে তখন ইচ্ছেমতো পানিতে গোসল করো। এই বলে সে উড়াল দিয়ে চলে গেল। দূরে গিয়ে সে আকাশে উড়তে লাগল, হঠাৎ দেখে কাছেই একটি কুমির খালের তীরে গা-এলিয়ে শুয়ে আছে। মাছরাঙা কতক্ষন পর দেখল বাঘটি আস্তে আস্তে পানিতে নামছে এবং কয়েকটা ডুব দিচ্ছে, তারপর ধীরে ধীরে পানিতে সাঁতার কাঁটছে।
মাছরাঙা সাথে সাথে এক উড়াল দিয়ে কুমিরের ঘাড়ে বসল এবং কানে কানে বলতে লাগল আরে কুমির ভাই তুমিত আজ সাতদিন ধরে না খেয়ে আছ, খালে পানি নেমে যাওয়াতে কোন খাবার পাচ্ছ না। ঐ দেখ বাঘটি পানিতে সাঁতার কাঁটছে তার ঘাড় মটকিয়ে তুমি সহজে পেটপুরে খেতে পার, আগামী সাত দিন তোমার খাবারের চিন্তা করতে হবে না। তুমি আস্তে আস্তে পানিতে ডুব দিয়ে বাঘের কাছে যেতে থাক আমি তোমাকে সাহায্য করছি।
এই বলে মাছরাঙা পাখিটা উড়াল দিয়ে বাঘের কাছে গিয়ে বললো আরে হালুম মামা আজকে যে গরম পরেছে চল আমরা দুজনে সারা দিন পানিতে গোসল করবো। এই বলে বাঘের সাথে পানিতে সাঁতরাতে লাগলো। কতক্ষন পর বাঘ বললো পানিতে ভালই লাগছে, চল আজকে সারা দিন পানিতে থাকবো। এদিকে মাছরাঙা দেখলো কুমিরটা ধীরে ধীরে শুধু পানির উপরে চোখ দুটি ভাসিয়ে তাদের দিকে আসছে।
মাছরাঙা দেখছে কুমিরটা একেবারে তাদের কাছে চলে এসেছে, তখন বাঘকে বললো হালুম মামা চল আমরা দুজনে পানিতে ডুব দেই, দেখবো কে বেশীক্ষণ পানিতে ডুব দিয়ে থাকতে পারে, বাঘ মাছরাঙার কথায় রাজি হয়ে গেল। রেডী ওয়ান-টু-থ্রী বলে দু’জনেই পানিতে ডুব দিল। বাঘ এক ডুবে দমবন্ধ করে পানির নীচে, খালের তলদেশে বসে রইল। এদিকে মাছরাঙা দ্রুত কুমীরের কাছে গিয়ে বললো ঐ দেখ বাঘ পানির নীচে বসে আছে, এখনই তাকে আক্রমণ করে ঘাড় মটকে দাও। কুমির ধীরে ধীরে বাঘের দিকে যাচ্ছে, বাঘ টেরপেয়ে সাতড়িয়ে ডাঙ্গার দিকে যেতে লাগল , কুমীরও পিছু পিছু বাঘকে ধাওয়া করে লেজে কামড়ে ধড়ল বাঘও কুমিরকে নাকেমুখে খামচিও কামড়াতে লাগল । পানিতে বাঘ আর কুমির মল্লযুদ্ধে লিপ্ত । এদিকে মাছরাঙ্গা পাশেই গাছের ডালে বসে সবকিছু দেখছে । বাঘের করু“ন পরিনতির কথা চিনÍ করে তার মায়া হলো, মনে মনে ভাবতে লাগল বাঘ আমাকে একটু বকা দিয়েছে বলে তাকে এভাবে কুমিরের পেটে দেয়া যায় না, সাথে সাথেই মাছরাঙ্গা উড়াল দিয়ে সোজা কুমিরের চোখে তার শক্ত ঠোঁট দিয়ে ত্রকটা আঘাত করল, প্রচন্ড আঘাতে কুমির চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলো এবং কুমির পানিতে কাতরাতে লাগল আর ত্রই ফাঁকে বাঘ ত্রকলাফে ডাঙ্গায় উঠে সুন্দরবনে পালিয়ে গেল । এরপর থেকে বাঘ আর কোনদিন পানিতে ডোব দেয় না, পানিতে নামার প্রয়োজন হলে অথবা খাল পার হতে হলে সোজা নাক বরাবর সাঁতড়িয়ে দ্রুত ডাঙ্গায় উঠে যায়।
এদিকে মাছরাঙা মনে মনে বলতে লাগলো বাঘ মামা এখন বোঝ ছোট বলে আমাকে অপমান করাতে তোমায় কি শিক্ষা দিলাম। সুতরাং ছোট বলে কাউকে অপমান করতে নেই।
.............


লেখক জীবনী


ছড়াকার রফিকুল হক দাদুভাই

রফিকুল হক বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত ছড়াকার। তিনি শিশু সংগঠন চাদেঁর হাটের প্রতিষ্ঠাতা।তিনি দাদু ভাই নামে সমধিক পরিচিত। পেশাগতভাবে তিনি একজন সাংবাদিক।
জন্ম,শিক্ষা পরিবার:-তাঁর জন্ম ১৯৩৭ খৃস্টাব্দে রংপুরে। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯৬৩ খৃস্টাব্দে বি, এ পাস করেন।
তাঁর ছন্দজ্ঞান অসাধারণ, বিষয় বৈচিত্র তুলনারহিত এবং শব্দের কারিগরি অভিনব ও দৃষ্টান্ত মূলক। তাঁর ছড়া সমাজ সচেতন। ১২ নভেম্বর ১৯৭০ খৃস্টাব্দে প্রবল সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে মাত্র এক রাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে সমুদ্রের উপকূলবর্তী স্থানের কয়েক লক্ষ মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ঘরবাড়ি, গবাদি পশু কিছুই রক্ষা পায়নি। দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকায় তিনি ছড়া লিখলেন-

ছেলে ঘুমলো বুড়ো ঘুমলো ভোলাদ্বীপের চরে

জেগে থাকা মানুষগুলো মাতম শুধু করে

ঘুমো বাছা ঘুমো রে

সাগর দিলো চুমো রে

খিদে ফুরোলো জ্বালা জুড়লো কান্না কেন ছি

বাংলাদেশের মানুষ বুকে পাষাণ বেঁধেছি।

সাংবাদিকতা:-তিনি বহু বাংলা সংবাদপত্রে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৪ খৃস্টাব্দ থেকে তিনি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় কর্মরত। ১৯৭৫ পর্যন্ত তিনি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার ফিচার এডিটরের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত তিনি কিশোর বাংলা পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর তিনি দৈনিক রূপালী পত্রিকার কার্যনির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৭৬ খৃস্টাব্দে প্রকাশিত সাপ্তাহিক কিশোর বাংলা পত্রিকার কার্যনর্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকা শিশুদের পাতা চাঁদের হাট সম্পাদনা করতেন। তারই সূত্রে তিনি ১৯৭৪ খৃস্টাব্দে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠান চাদেঁর হাট প্রতিষ্ঠা করেন।
তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭টি। বাংলা একাডেমী পুরস্কার - ২০০৯


(ছড়া প্রসঙ্গে)


আমার কতিপয় বন্ধু ও তাদের ছড়া প্রসংগ
০৫ মতিন বৈরাগী

ছড়া,গান, কবিতা কে কার আগে এই নিয়ে তথ্য উপাত্ত আমার সংগ্রহে নেই। তবে আমি মনে কবি প্রথমি দুটির অবস্থানই প্রথম এবং কবিতার পূর্ব শরীর দেখে তাই বলা অযৌক্তি হবে না। যদি ছড়া প্রাচীন তো আজকে সে নিশ্চয়ই অনেক খানি পথ হেঁটে একটা নতুন শরীর নিতে চেষ্ট রয়েছে। একারণে আমার মনে হয় এখন যাদের ছড়া পড়ি তা ছন্দবদ্ধ কবিতার রূপ পাচ্ছে। ভয়ের কিছু আছে তা নয়, আবার আছেও এ কারণে যে মৌলিক অনেক কিছু হয়তো হারিয়ে যাবে। যেমন মধ্যযুগীয় তাজমহল, কেউ কেউ এমন করে বলেছেন: এ পৃথিবীতে দুই ভাগ মানুষ রয়েছে যার একভাগ তাজমহল দেখেছে আর একভাগ দেখেনি। কিন্তু আজকের স্থাপত্য শিল্প যার সাথে যুক্ত হয়েছে নানা বৈজ্ঞানিক চিন্তা, দর্শন এবং মনস্তত্ব তারপরও সেগুলো কেবল সেগুলো আর তাজমহল তাজমহলই। তাজমহল দেখতে দেখতে ভাবছিলাম ওই যুগের দর্শন ভোগ এবং নান্দনিকতা তা তাজমহলে আছে, আর ইতিহাসের দিকে দিক ফেরালে উঠে আসে এক হৃদয় চেরা আর্তনাদ। সম্রাটের খেয়াল নির্মাণ করেছে লক্ষ মানুষের দুঃখ দুর্দশাকে উপেক্ষা করে। কতো মানুষ অত্যাচারিত হয়েছে, উৎপাদিত শস্য পাইক পেয়াদার হাতে তুলে দিয়ে না খেয়ে মরেছে কত মানুষের অশ্রু রয়েছে এই নির্মাণ সৌন্দর্যে কিন্তু তবু সে দাঁড়িয়ে আছে। ছড়া শিল্পীরা তাদের ছড়া শিল্পের গতি খানিকটা পাল্টে কাব্য করে তুললেও তারা সরে আসেনি সামাজিক.রাষ্ট্রিক এবং নৈতিকতা থেকে। তারা তাকেই উপজীব্য করছেন এবং যে সমস্ত ঘটমান ঘটনাবলী সাক্ষ্য হয়ে আছে সমাজে এবং যা একজন সামাজিক ব্যক্তির চেতনায় ক্রমাগত আঘাত করছে তা উঠে আসছে ছড়ায়। ছড়াতো আর কিছু নয় অসংগতিগুলো ছোট্ট করে সংগবদ্ধভাবে বলা এবং পাঠককে তার দুঃখগুলো চিনিয়ে দেয়া।

৫ পান্ডবের পরে আমি বিচ্ছিন্ন আর এক পান্ডবের কথা বলব বলে ৪ পর্বে উল্লেখ করেছিলাম। ৫ পান্ডব তিনখন্ডে একত্রে রয়েছেন কিন্তু এই কবি ও ছড়াকার মানিক মোহাম্দ রাজ্জাক কর্ণের মতোই একা রয়েছেন তার ছড়া কবিতা গ্রন্থে । কিন্তু তার ‘আমার শত ছড়া কবিতা’ বইটি আমার হাতে এসেছিল বছর খানিক আগে। বন্ধু হিসেবে তিনি ভাল বন্ধু সংগত কারণে তার দেয়া উপহার কেবল মাত্র সংগ্রহে এতোদিন পড়ে থাকা এবং কোনো কিছু না বলাটা মনে হয় ভব্যতার মধ্যে পড়ে না। কারণ একটাই একজন সৃষ্টিশীল মানুষ তার সৃষ্টিকে এ বিষয়ে আগ্রহী কাউর হাতে তুলে দেন কেন? সম্ভবত প্রাপক পড়বেন, বুঝবেন অনুধাবন করবেন এবং কখনও পছন্দ অপছন্দের বিষয় নিয়ে বলবেন। আমাদের এখনকার চর্চা তেমন নয যেটা ৩০ দশকে বা তার পরবর্তি সময়ে ছিল। এখন যার যার গৌরব তার কেবল অপরের মুখে শুনতে চায় কিন্তু নিজে কিছু বলতে চায় না। অনেকেই খ্যাতি পেয়েছেন প্রাপ্তিও হয়েছে কিন্তু তারা তাদের সৃষ্টিকে সৃষ্টির প্রেরণাকে ব্যক্তিগত উপলবদ্ধির শ্রেষ্ঠত্বে নিয়েছেন, সমাজ. মানুষ যে এর প্রেরণা তা তারা স্বীকার করেন খুব কমই। অবশ্য প্রাপ্তি তাদের জুটেছে আর সেটা নিতান্ত কম নয়, কিন্তু সৃষ্টির আন্দোলন তৈরি করে সমাজ মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোটা বোধ হয় আর তাদের হলনা।

আলোচিত ছড়া কবিতার কবিদের মধ্যে নাসের মাহমুদের ছড়া কবিতা যেমন অন্য ৪ পান্ডব থেকে একটু বেশী বৈচিত্রময় ভাষায়নে, বুননে বিস্তারে তেমনি মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাকের সৃষ্টিতেও রয়েছে, একটু রয়ে সয়ে। তার ‘দেশ ’ ছড়া কবিতাটি এ রকম ‘দেশটা নাকি আমার তোমার /কৃষক শ্রমিক কুমারের/দেশটা নাকি বীর জনতার/দীন-দুখি আর ছতারের/টিটিকিটা বলছে ডেকে/ঠিক্ ঠিক্ ঠিক্ ঠিক্’ আর তারপর ‘ওরাই রড়ে ওরাই মরে/ওদের স্বরে দীপ্তি ঝরে/জীবনটাকে তুচ্ছ করে/ওরাই দেশের স্বপ্ন গড়ে’ তখনও টিকটিকিটা বলে ঠিক্ ঠিক্ এবং তার পর পায়না কৃষক শস্য দাম/শ্রমিক ঝরায় দুঃখ ঘাম/দীন দুঃখী আর পায় না খৃঁজে/স্বপ্ন সাধের অঙ্গীকার’ তারপর ‘দেশটা তখন আর বল না/দেশটা কৃষক কামারের/দেশটা তখন যায় হয়ে যায়/ধান্দাবাজ আর চামারের’ টিকটিকি আর নেই।এই টিকটিকে আত্মরূপের অর্ন্তগত সত্তা যা অসংগতির সংগে যুক্ত নয়। রাজ্জাকের ভাষা এবং নাসেরের পাখি ছড়ার ভাষায় কিম্বা ‘কবি পুড়ে হয় কবিতার বই’ এরকম বলার ভঙ্গি মৌলিক বিষয়কে হাল্কা করে না এবং বিষয়কে চিনে নেয়াতেও অন্তরায় নয়। যেমন মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক বলেন ‘মানুষ যখন নষ্ট হলো/ধরলো কাপড় পরা/তখন থেকেই এই বিশ^/নগ্নতাতে ভরা’ পঙক্তি কটি শুনলে পড়লে এমনতো বলা যায় যে কাপড় পড়ে নষ্ট হবে কেনো, বরং সভ্য হলো মানুষ কিন্তু ব্যঙ্গটা সেখানে যেখানে রয়েছে সভ্যতার আবরনে অসভ্যতা ধারাবাহিকতায় মানুষ যখন যুথবদ্ধ জীবন যাপন করেছে, কিম্বা অরণ্যচারী তখনও মানুষের মধ্যে স্বার্থপরতা, আধিপত্যবাদিতা, হিংসা হিংস্রতার নানা রূপ ছিলনা যা আজকের মানুষের মধ্যে বিরাজমান। তার আড়াল করবার নানা কৌশল রাষ্ট্র তার আইন তার আধিপত্যবাদীতা, ক্ষমতা ইত্যাদির নানা পোষাকে মানুষ নগ্ন হয়ে পড়েছে। এখন তাদের পোষাকের নীচে কুষ্ঠের দগদগে ঘা। ঠিক নাসের মাহমুদ তার বাসের বিবরণ-এ দুর্দশার কথা বাস এবং বাসভ্রমণের আবরণে বলছেন‘ আমি সেদিন যাচ্ছি বাসে/ঢাকা থেকে টুঙ্গি/নেমেই দেখি আধা উদোম নেই পরনে লুঙ্গী’ এই যে নানা কিছুর মধ্যদিয়ে উদোম হয়ে পড়ছে সেই সত্য যা প্রত্যাশিত সমাজজীবনের বৈপরীত।
মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক তার একশত ছড়া কবিতায় জীবন যাপনের নানা দর্শন অভিজ্ঞতা তিত বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, কিন্তু ছড়া কবিতায়, নয় সেই ছড়া যা খুব তাড়াতাড়ি আমাদের মতো ভোঁতা বুদ্ধির মানুষকে নাড়ায়, তবে এও সত্য যে অসুদ দ্রুত লাফিয়ে ওঠে শিরায় তা ফাইনাল চিকিৎসা নয়, শিল্প সত্তার প্রভাব অনুভবের মধ্য দিয়ে বড় হয়। মনে হয় মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক একটু রাখঢাক করেই বলতে চান, নয় এমন যে তিনি তেমন বলে না।

(চলবে)

সোনার তরী সম্পাদক:-বদরুল হায়দার

লেখা পাঠান:

[email protected]


পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test