E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সোনারতরী(শিশু কিশোর সাহিত্য)

২০১৬ আগস্ট ২১ ১৩:৫৮:২৬
সোনারতরী(শিশু কিশোর সাহিত্য)








 


নাসের মাহমুদ
বাচ্চুর কথা


মায়ের কোলে বাচ্চু দোলে বাগানে চোখ তার,
কত পাখি ডাকাডাকি নাচানাচি আর-
দোয়েল দুটো মুখে কুটো নেবু গাছে যায়,
কুটো রাখে ধুলো মাখে কী টপাটপ খায়?
ডালের ফাঁদে বাসা বাঁধে ফুর্তি ভরা বুক,
কী যে ভালো সাদাকালো মিষ্টিপানা মুখ।
এই যে খোকা ঢাকার পোকা উঠোনে চোখ তার-
হলুদ টিয়ে আমটি নিয়ে ঠোকাচ্ছে বারবার।
দুপুর বড়ো নড়োচড়ো উদাস খোকার চোখ,
ঘুড়ি ঠেলে সূর্য হেলে আলো গেলে ঢোক।
গালির বাঁকে চিলটা ডাকে দুপুর ভাঙ্গা ডাক-
বাচ্চু ভাবে- কোথাও যাবে আজকে দুপুর থাক।
আসে বিকেল নিকেল নিকেল খেলতে এসো কয়-
কত্তো হাসি কানামাছি, বুড়ি ছোঁয়াও হয়।
রাতের বুড়ি গুড়িগুড়ি রাত নামিয়ে দেয়,
ঘুমের মাসি আলতো আসি ঘুমপুরীতে নেয়।
পরম সুখে, মায়ের বুকে বাচ্চু দিলো ঘুম,
ফুল ও আলো বেসে ভালো ওর মুখে দেয় চুম।


সুরাজ চৌধুরী


যম

যম নাকি তার গরম তেলে ভাজে পাপী
এ গপ্পতো মরার পরে,আগে নয়
জ্যান্ত মানুষ ভাজার জন্যে নতুন যে যম
দুনিয়া জোড়া কড়াই তাহার নিশ্চয়।

রাজনীতিরও থলের বেড়াল এ যম জাহেল
হাজার কোটি ডলার রাখে তার হাতে
জাল বিছানো পাইক পেয়াদা হর হামেশা
হুকুম তামিল করে যমের দিনে রাতে।

নতুন যমের কাছে গোটা বিশ্ব ভেড়া
জ্যান্ত মেরে সগ্গে দেবার সেই সে চীজ
দুই মুখো সাপ সে চিরকাল শয়তানীতে
জঙ্গি জালেম শিষ্য পোষার রক্তবীজ।


মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক
বৃষ্টি বন্দনা


রিম ঝিম রিম ঝিম বিষ্টির সুর
দৃষ্টিকে কেড়ে নিয়ে ছোটে বহুদূর
আকাশের বুকে করে লুকোচুরি খেলা
মেঘে মেঘে বয়ে যায় বরষার বেলা

নদীর অমিত ধারা বুকে নিয়ে জল
সাগরের দিকে ছোটে হয়ে উচ্ছ্বল
বিলে ঝিলে কথা কয় শাপলা শালুক
মীনারাও ফিরে পায় হারানো তালুক

কৃষকের মুখে হাসি ফোটে অনাবিল
আনন্দে ওড়া ওড়ি করে বক চিল
কলমিলতারা দোলে সতেজ হাওয়ায়
শিশুসব করে রব দখিনা দাওয়ায়

রিম ঝিম রিম ঝিম সুর সু-মধুর
ডেকে বলে মেঘেদের মত করে উড়।


রব্বানী চৌধুরী
রাজার বাড়ির হাতি


রাজার বাড়ির হাতি
জল গিলেছে ফল গিলেছে
মারতে পারে লাথি!
হাতির বড় ছাতি
এই খবরটা ফলাও করে
ছাপল রাতারাতি!
হাতি নয় রে তুচ্ছ
পূজার থালি ভরা আছে
বেলিফুলের গুচ্ছ!
জীবে কর দয়া
পুণ্য পেতে যেতে হয় না
কাশি কিংবা গয়া!











সৈয়দ শরীফ
জোনাক্ জ্বলে

দলে দলে জোনাক্ জ্বলে ওই
ঝোপেরও তলে,
ভূতুমপ্যাঁচা ডাকছে সাথে
ঝিঁঝিঁরা বাদ যায়নি তাতে
এদের সাথে ব্যাঙ-ও ডাকে
কাক-পাখিরা চুপটি থাকে
ঝোপের তলে জোনাক্ শুধু
জ্বলে আলোর ছলে !


আব্দুস সালাম
প্রধান কাজ


ফসল আবাদ করতে কৃষক
ফেলছে মাথার ঘাম রে
জলে ভেজে, রোদে পোড়ে
সেই কৃষকের চাম রে।

তবু কৃষক পায় না তাদের
সেই ফসলের দাম রে।
মধ্যসত্ব ভোগীরা আজ
এখন তাদের যম রে।

কৃষিজাত ফসল মোদের
অর্থনীতির প্রাণ রে
দেশের কৃষক বাঁচানো টাই
এখন প্রধান কাজ রে।



খোন্দকার শাহিদুল হক
বঙ্গবাহাদুর



বঙ্গে এল এক বাহাদুর
অনেক নামি-দামি
ওপার বাংলায় তার রয়েছে
কাবিন করা স্বামী।


কেমন করে হয় বাহাদুর
যতই বসে ভাবি
হস্তিনীর এই খেতাব লাভের
পাই না খুঁজে চাবি।


ভারত থেকে বানের জলে
ভেসে ভেসে এসে
বানভাসীদের কষ্ট দেখে
মরল নাকি শেষে।

মরার আগে বলে গেছে
দেশের দেখে হাল
নদী নিয়ে মোদির খেলা
তার হয়েছে কাল।

এম এ কাইয়ুম
আগস্ট কেঁদে বলে


আগস্ট কেঁদে বলে
নরপিশাচ দলে
কেড়ে নিলি ছলে
পৃথ্বী থেকে একটি মহান নেতা ।
হৃদয় মাঝে সকাল সাঁঝে
ডুকরে কাঁদে ব্যথা ।

কলঙ্ক ভার ঘাড়ে নিয়ে
করছি বসবাস
ক্যালেন্ডারের বুকে কালো
আমি আগস্ট মাস ।



জুলফিকার আলী
খুকির পুতুল


আমার পুতুল খেলতে পারে
গাইতে পারে গানও,
দুষ্টুমি করলে দেই মলে
সেই পুতুলের কানও।

আমার পুতুল পড়তে পারে
অ,আ, ই বর্ণ,
আমার পুতুল শুনতে পারে
তাই পাতে দু'কর্ণ।

আমার পুতুল সত্য বলে
খায় কি তবে খাবার?
পুতুল নিয়ে আছে অনেক
খুকুমণির ভাবার।

তার পুতুলে সকাল উঠে
নিত্য মাজে দাঁত,
কাজ কিংবা টয়লেটের পর
সাবানে ধোয় হাত।

তার পুতুলের অনেক যে গুণ
খেলার সময় খেলে,
পড়ার সময় পড়ে এবং
নাচে সময় পেলে!

মায়ের কথা শোনে পুতুল
দুষ্টুমি তার কম,
খুকির পুতুল খুকির মতই
মনটা নরম।


খুশির খবর
আসলাম প্রধান
খুশির খবর ! খুশির খবর !!
খবরটা খুব খাঁটি-
পিচ্চিটা আজ সকাল থেকে
শিখছে হাঁটা হাঁটি !
দেখতে এলেন পাশের বাড়ির
শমশের আলী নানা -
হাঁটা শেখার চেষ্টা দেখে
খুশিতে আটখানা !
দুপুর বেলা কী করেছে খোকা ?
মেরেছে সে একটা তেলাপোকা !
তারপরে সে রান্নাঘরে-
নিজে নিজে দেয়াল ধরে
দাঁড়িয়েছে- !
টেবিল থেকে বেড়াল ছানা
তাড়িয়েছে !
হাত বাড়িয়ে দুধের বাটি
ছাড়িয়েছে !
তোমরা সবাই অবাক হতে
ওর কারবার দেখে
বাথরুমে যে গোসল করে
সাবান মেখে মেখে !!

দাদুর গপ্প
‪নারায়ণ‬ দত্ত
দাদু নাকি নস্যি দিয়ে
স্বাধীনতার যুদ্ধে----
গন্ডা বিশেক সাহেব মারেন
এক নিমেষের মধ্যে !
ভগত্ সিং তার বন্ধু ছিল
বিনয়-বাদল নাতি----
গান্ধী আর নেহেরু তার
নিত্যি দিনের সাথী !
সূর্য সেনের সংগে নাকি
আন্দামানের জেলে
মোহন ভোগ খেতে খেতে
দুঃখ যেতেন ভুলে !
তাই তো দাদুর জগত্ জোড়া
খ্যাতির সীমা নাই------
"সুভাষ " নাকি ছিলেন দাদুর
আপন ভায়রা ভাই ।
হঠাৎ দাদু গেলেন মরে
হাজার হাঁচি হেঁচে....
রইলো দাদুর গপ্প গুলো
স্মৃতির মাঝে বেঁচে ।।

তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী

ঘোর বরিষায়


রিম্ ঝিম্ ঝিম্ বৃষ্টি ঝরে
ঝরে মেঘের জল,
ফুটো আকাশ শুধু ঝরায়
কান্না ছল ছল।
বৃষ্টির জলে ভিজে পাখি
ভিজে বাড়ি ঘর ,
ঘোর বরিষার ভেজা হাওয়ায়
কাঁপায় থর থর।
ডাক গুড় গুড় মেঘ গর্জন
বিজলী বাতির খেলা,
ঘোর বরিষায় মন আনচান
ভাবতে যায়রে বেলা।


রিফাত নিগার শাপলা
তুমি স্মরণীয়

টুঙ্গিপাড়ার ধুলির আদরে
শান্তিতে আছো শুয়ে
দখিনা বাতাস আবেশ ছড়ায়
তোমার সমাধি ছুঁয়ে ।।
তোমাকে ঘিরে মুক্ত ডানার
পাখি ওরে সারাবেলা
মেঘ ছায়া দেয়, রংধনু ওঠে
ষড়ঋতূ করে খেলা ।
ফসলের মাঠে,বন্দরে,ঘাটে
জনতার কোলাহলে
তোমার বজ্রকণ্ঠ-সুধার
বন্দনা আজও চলে ।
স্বাধীনতা আর বিজয় দিবস
শ্রদ্ধায় পড়ে নুয়ে ।।
বাংলাদেশের পথে,প্রান্তরে
তোমারই স্বপ্ন দোলে
বর্ণমালার ছন্দ,সুরে
হৃদয় দুয়ার খোলে ।
তুমি স্মরণীয়,চির বরণীয়
বঙ্গবন্ধু প্রিয়
আমার অনেক শুভেচ্ছা আর
ভালবাসা,প্রীতি নিও ।
তোমার স্মৃতির শোকে ঝরে পড়ে
বৃষ্টির ফোঁটা চুঁয়ে ।।


চন্দনকৃষ্ণ পাল
বৃষ্টি ভেজা সকাল

চারটা বাচ্চা নিয়ে বেড়াল ঘুমে
ঘুমে এখন জিমি কুকুর ছানা,
বাইরে অঝোর বৃষ্টি ধারা ঝরে
খুকুর এখন বাইরে যেতে মানা।
কৃষ্ণচূড়ার গাছটা জড়সড়
পাতায় পাতায় বৃষ্টি পড়ছে ঝরে,
রাস্তার জল নামছে পুকুর পানে
সে জল নিয়ে পুকুর যাচ্ছে ভরে।
উঠোন থেকে ঘোলা পানির স্রোত
যায় এগিয়ে পাশের নালার দিকে
মেঘ চাদরে গাঢ় আকাশ খানি
বৃষ্টি ঝরার পরও হয়নি ফিকে।
গাছের ডালে ভিজছে একটা কাক
সকাল বেলা হয়নি তো তার ডাকা
ডাকাডাকি ছাড়াই সকাল হলো
ডাকেনি তাই বকবে তার কাকা!
না পড়লে খুকুর কাকাও বকে
আরও বলে, মানুষ হবিনারে,
পড়তে তার ইচ্ছে করে না তো
না পড়লেও সবই তো সে পারে।
উতল হাওয়া ঝড়ো মেঘের দল
দেখতে দেখতে খুকুর চোখটা ভারী,
নীলচে রঙের পর্দাটা দেয় ফেলে
আমরাও এবার ঘুমিয়ে যেতে পারি।

(গল্প)
হুতুম পেঁচারছানা
-ফয়সাল শাহ

বোশেখ মাস পেঁচানীর ডিম পাড়ার সময় হয়েছে তালগাছে, খেজুরগাছে, .... কোথাও সুবিধামত ডিমপাড়ার জায়গা পেল না। উড়তে উড়তে হঠাৎ দেখল একটি কাকের বাসা, সেখানে কাকনী বসে ডিমে তা দিচ্ছে। পেঁচানী কাকনীকে কাঁকুতি –মিনতি করে বলতে লাগল দেখ ভাই আমি ডিম পাড়ার মত কোন জায়গা পাচ্ছি না। তোমার বাসায় আমাকে ডিম পড়তে দেবে। কাকনী বলল ঠিক আছে আগামীকাল দুপুরে তুমি এসো। পরদিন যথারীতি পেঁচানী কাকনীর বাসায় গিয়ে হাজির, কাকনী তার বাসায় বসে তিনটি ডিমে তা দিচ্ছে। কাকনী বললো দেখ ভাই পেঁচানী তোমাকে ডিম পাড়তে দিচ্ছি কিন্তু আমার কোন ডিম ভাংতে পারবে না। সাবধানে তুমি ডিম পাড়তে থাক, আমি একটু আকাশে উড়ে আসি গত সাতদিন ধরে কিছু খেতে পাচ্ছি না, আবার আকাশে পাখা মেলতে পারিনি। পেঁচানী বললো ঠিক আছে ভাই তুমি ঘুরে আস, আমি সাবধানে ডিম পাড়ছি, তোমার একটি ডিমও নষ্ট করব না। কাকনী পেঁচানীকে বাসায় বসিয়ে দিয়ে এক উড়াল দিয়ে ডাস্টবিনে গিয়ে হাজির, সেখান থেকে পেট ভরে খাবার খেয়ে আকাশে উড়তে লাগল। সারা দুপুর ও বিকেল আকাশে ঘুরে সন্ধায় কাকনী বাসায় ফিরল। বাসায় ফিরে দেখে পেঁচানী ডিমে তা দিচ্ছে, কাকনী পেঁচানীকে জিজ্ঞেস করল তুমি কয়টি পেড়েছ, পেঁচানী বলল দুটি ডিম পেড়েছি।

কাকনী বলল ঠিক আছে ভাই তুমি আজকে রাত্রি ও আগামী কাল সারাদিন ডিমে তা দেবে, তোমার ডিমগুলোতে দু’দিন তোমাকে তা দিতে হবে। একদিন পর আবার কাকনী ও পেঁচানী ডিমে তা দিতে লাগল। তা দেয়ার সময় একদিন সকালে কাকনী দেখে ডিম ফুটে একটি পেঁচারছানা ও একটি কাকেরছানা বেরিয়ে এসেছে। ছানা দু’টি দেখে কাকনীর মহাখুশী, ছানাদু’টি নাদুস-নুদুস তুলতুলে, পেঁচানীকে ডেকে ছানা দু’টি দেখাল, পেঁচানীও ছানাদু’টি দেখে মহাখুশী। দু’দিন পর সবগুলে ডিম ফুটে তিনটি কাকেরছানা ও দুটি পেঁচারছানা কাকের বাসা ভরে গেল। ছানাগুলো সারাদিন ঠোঁট দু’টি ফাক করে হা করে থাকে আর চিউ চিউ করে খাবার চায়। কাকনী ও পেঁচানী তাদের জন্যে ঠোটে করে খাবার এনে মুখে পুরে খাইয়ে দেয়। এভাবে খেতে খেতে ছানাগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল। বড় হতে হতে কাকেরছানা ও পেঁচারছানাগুলোর মধ্যে গভীর বন্ধুত্ত্ব হতে লাগল। একসময় তারা উড়তে শিখল। আকাশে মুক্তভাবে কাকেরছানা ও পেঁচারছানারা ঘুরে বেড়ায়। ধীরে ধীরে তারা বড় হয়ে গেল। তারা পাঁচ বন্ধু এখন থেকে একসাথেই থাকে। একটি বড় বাসা তৈরী করে সেখানে বসবাস করে। দিনের বেলায় পেঁচা দু’টি ঘুমায় আর কাক তিনটি এদিক সেদিক ঘুরা-ফেরা করে খাবার খায়, আবার কিছু খাবার বন্ধু পেঁচা দু’টির জন্যে রেখে দেয়, একইভাবে রাতের বেলায় কাক তিনটি ঘুমায় আর পেঁচা দু’টি অন্ধকারে ঘুরা-ফেরা করে খাবার খায় এবং কিছু খাবার কাক তিনটির জন্যে রেখে দেয়। এভাবে তাদের দিন চলতে লাগল।


সুকুমার বড়ুয়া(জীবনী)

সুকুমার বড়ুয়া -(জন্ম:১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি) বাংলাদেশের প্রখ্যাত ছড়াকার। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছড়া রচনায় ব্যাপৃত রয়েছেন। বিষয়-বৈচিত্র্য, সরস উপস্থাপনা, ছন্দ ও অন্তমিলের অপূর্ব সমন্বয় তাঁর ছড়াকে করেছে স্বতন্ত্র। প্রাঞ্জল ভাষায় আটপৌরে বিষয়কেও তিনি ছড়ায় ভিন্নমাত্রা দেন। তাঁর ছড়া একাধারে বুদ্ধিদীপ্ত, তীক্ষ্ণ , শাণিত আবার কোমলও বটে।জন্ম এবং পরিবার: সুকুমার বড়ুয়ার জন্ম ১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার মধ্যম বিনাজুরি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম সর্বানন্দ বড়ুয়া এবং মা কিরণ বালা বড়ুয়া। চট্টগ্রামের গহিরা গ্রামের শিক্ষক প্রতাপ চন্দ্র বড়ুয়ার মেয়ে ননী বালার সাথে ১৯৬৪ সালের ২১ এপ্রিল তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। ব্যক্তিগত জীবনে সুকুমার বড়ুয়া তিন মেয়ে এবং এক ছেলের জনক। পড়াশুনা: বর্ণজ্ঞান থেকে প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি মামা বাড়ির স্কুলে পড়াশোনা করেছেন৷ এরপর বড় দিদির বাড়িতে এসে তিনি ডাবুয়া খালের পাশে 'ডাবুয়া স্কুল' এ ভর্তি হন৷ কিন্তু সেই স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর তাঁর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। কর্মজীবন: অল্প বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন সময় মেসে কাজ করেছেন। জীবিকা নির্বাহের জন্য একটা সময় তিনি ফলমূল, আইসক্রিম, বুট বাদাম ইত্যাদি ফেরী করে বিক্রি করেছেন৷ ১৯৬২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে চৌষট্টি টাকা বেতনের চাকুরী হয় তাঁর৷ ১৯৭৪ সালে পদোন্নতি হয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৯৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টোর কিপার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।

সাহিত্য কর্ম: পাগলা ঘোড়া (১৯৭০, বাংলা একাডেমী) ভিজে বেড়াল (১৯৭৬, মুক্তধারা)চন্দনা রঞ্জনার ছড়া (১৯৭৯, মুক্তধারা) এলোপাতাড়ি (১৯৮০, বাংলা একাডেমী) নানা রঙের দিন (১৯৮১, শিশু একাডেমী) সুকুমার বড়ুয়ার ১০১টি ছড়া (১৯৯১, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র) চিচিং ফাঁক (১৯৯২, ওলট পালট প্রকাশনী) কিছু না কিছু (১৯৯৫, বিশাখা প্রকাশনী) প্রিয়ছড়া শতক (১৯৯৭, মিডিয়া) বুদ্ধ চর্চা বিষয়ক ছড়া (১৯৯৭, সৌগতঃ ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় ঠুস্ঠাস্ (১৯৯৮, প্রজাপতি প্রকাশন) নদীর খেলা (১৯৯৯, শিশু একাডেমী) আরো আছে (২০০৩, আরো প্রকাশন) ছড়া সমগ্র (২০০৩, সাহিত্যিকা) ঠিক আছে ঠিক আছে (২০০৬, প্রবাস প্রকাশনী, লন্ডন) কোয়াল খাইয়ে (২০০৬, বলাকা, চট্টগ্রাম) ছোটদের হাট - (২০০৯, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী) লেজ আবিষ্কার - (২০১০, প্রথমা প্রকাশন) ছড়াসাহিত্যিক সুকুমার বড়ুয়া সম্মাননা গ্রন্থ (২০১১)

পুরস্কার: বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭৭) ঢালী মনোয়ার স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯২) বৌদ্ধ একাডেমী পুরস্কার (১৯৯৪)সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৭) বৌদ্ধ ছাত্র সংসদ সম্মাননা (১৯৯৭) অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য সম্মাননা (১৯৯৭) জনকণ্ঠ প্রতিভা সম্মাননা (১৯৯৮) আলাওল শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৯) চোখ সাহিত্য পুরস্কার, ভারত (১৯৯৯) নন্দিনী শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব (শিশু সাহিত্য) (২০০০) আইরিন আফসানা ছড়া পদক (২০০২) স্বরকল্পন কবি সম্মাননা পদক (২০০৪) শিরি এ্যাওয়ার্ড (২০০৫) শব্দপাঠ পদক (২০০৬) বৌদ্ধ সমিতি যুব সম্মাননা (২০০৬) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সম্মাননা (২০০৬) অবসর সাহিত্য পুরস্কার (২০০৬)মোহাম্মদ মোদাব্বের হোসেন আরা স্মৃতি পুরস্কার (২০০৭)লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক (২০০৭) রকিবুল ইসলাম ছড়া পদক (২০০৮) লিমেরিক সোসাইটি পুরস্কার (২০০৯) রাউজান ক্লাব সম্মাননা (২০০৯) কবীর চৌধুরী শিশু সাহিত্য পুরস্কার (২০১০)

গল্প-২
হুমায়ুন কবির



এক রাজার এক কন্যা ছিল খুবই সুন্দরী। এই সুন্দরী রাজকন্যার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যে-ই আসত তাকেই মহাবিপদে পড়তে হতো। একদিন এক ন্যাড়া-মানে মাথায় চুলবিহীন লোক-ভাবল রাজকন্যাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে কেমন হয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। ন্যাড়া তার পুঁটলিতে পাঁচটি রুটি পুরে রওনা দিল রাজকন্যাকে বিয়ে করতে। পথে পড়ল একটা বন। বনের ভেতর বসে ছিল একটা দৈত্য। দৈত্য এমনভাবে দাঁতে দাঁত পিষাচ্ছিল যে মনে হলো অনেক দিনের ক্ষুধার্ত সে। ন্যাড়া তার পুঁটলি থেকে রুটিগুলো বের করে দিয়ে দিল দৈত্যকে। তারপর যখন রওনা দিল, তখন দৈত্য বলল: এই ন্যাড়া! আমার একটা চুল নিয়ে যা, কাজে লাগবে। ন্যাড়া একটা চুল নিয়ে যাত্রা শুরু করল। যেতে যেতে গিয়ে দেখল আরেকটি দৈত্য ঝরনার উৎসের পাশে বসে শীতে কাঁপছে। ন্যাড়া তার কোর্টটা খুলে দৈত্যের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আবার রওনা দিল। এমন সময় দৈত্য বলল আমার একটা চুল নিয়ে যা কাজে আসবে। ন্যাড়া একটা চুল নিয়ে রওনা হলো। যেতে যেতে পৌঁছল এক নদীর তীরে। সেখানে গিয়ে দেখল একদল পিঁপড়া চাচ্ছে পানি পার হতে কিন্তু পারছে না। ন্যাড়া একটা কাঠের টুকরো পানিতে ফেলে সেতু নির্মাণ করে দিল আর পিঁপড়ারা নিশ্চিন্তে পার হয়ে গেল। যাবার সময় পিঁপড়ার রাজা ন্যাড়াকে তার একটা চুল দিল। ন্যাড়া এই চুলটিও রুমালে যতœ করে রেখে তার পথে পা বাড়াল। যেতে যেতে গিয়ে পৌঁছল রাজপ্রাসাদে।
ন্যাড়া শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গেল প্রাসাদে। দরজায় নক করতেই একজন এসে জিজ্ঞেস করল: কী চাও?
ন্যাড়া বলল: এসেছি রাজকন্যার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
দারোয়ান: কার জন্যে?
ন্যাড়া: কেন আমার জন্যে!
লোকটা ভেতরে গিয়ে বাদশাকে ঘটনাটা জানাল। বাদশা বলল হাম্মাম রেডি করো। ন্যাড়াকে ওই হাম্মামে ফেলে দাও। শ্রোতাবন্ধুরা! এই হাম্মামটিকে সাত দিন সাত রাত ধরে গরম করা হয়। যারা রাজকন্যার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে তাদের এখানে ফেলা হয়। আর এখানে ফেলা মানেই হলো নিশ্চিত মৃত্যু। বাদশার লোকটা ন্যাড়াকে হাম্মামটা দেখিয়ে বলল যারা রাজকন্যার প্রার্থী হয় তাদের এই হাম্মামে গোসল করে আসতে হয়। ন্যাড়া হাম্মামের কাছে যেতেই বুঝতে পারল এটা মরণফাঁদ। হাম্মামের দেয়ালগুলো তাপে লাল হয়ে গেছে। ফুটন্ত পানির কলধ্বনিও তার কানে এলো। ন্যাড়ার মনে পড়ল দ্বিতীয় দৈত্যের কথা। তার দেয়া চুলটাতে আগুন লাগাতেই সে এসে হাজির। ন্যাড়া তাকে বিপদের কথা বলতেই দৈত্য বলল: চিন্তা করো না। এই বলে দীর্ঘ এক শ্বাস নিল আর হাম্মামের সকল তাপ তার বুকে গিয়ে জমা হলো। হাম্মাম ঠান্ডা হয়ে গেল। পরদিন সকালে বাদশার লোক এসে দেখল ন্যাড়া সুন্দরমতো গোসল করে বসে আছে। হাম্মামও ঠান্ডা। বাদশাকে গিয়ে বলতেই বাদশা দ্বিতীয় ফাঁদ পাতল। বলল ওকে তিনশ’ কিলো চালের ভাত আর তিনশ’ কিলো মাংসের খাবার দিয়ে বল: পুরোটা না খেতে পারলে গর্দান যাবে। ন্যাড়া এবার মাথায় হাত বুলিয়ে প্রথম দৈত্যের চুলটি পুড়ল। দৈত্য তো এসে হাজির হয়ে গেল। ঘটনাটা দৈত্যকে বলতেই দৈত্য সব খাবার ঠিকঠাকমতো খেয়ে নিল। এবারো ন্যাড়াকে আটকানো গেল না। বাদশা এবার ন্যাড়াকে মারার নতুন ফন্দি আঁটল। একটি গাধা টানতে পারে সেই পরিমাণের তিনগুণ গম, যব আর ডাল একসঙ্গে মিশ্রিত করে দিয়ে বলল এগুলোকে আলাদা করতে হবে সকাল হবার আগে। সকাল পর্যন্ত যদি শেষ না হয় গর্দান যাবে। ন্যাড়া এবার মুসিবতেই পড়ে গেল। হঠাৎ তার মনে পড়ল পিঁপড়াদের রাজার কথা। চুল পুড়তেই পিঁপড়ারা এসে হাজির। পিপড়াদের শস্যপণ্যের স্তুপ দেখিয়ে সমস্যার কথা বলল। পিঁপড়েরা বলল: এটা তোমার কাজ না। তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও। ন্যাড়া সত্যিই ঘুমিয়ে পড়ল। শেষরাতে ঘুম ভাঙতেই দেখল, পিঁপড়েরা চলে গেছে। আর তিন স্তূপ শস্যদানা আলাদা আলাদাভাবে সাজানো। সকালে এই ঘটনা দেখে বাদশা ভাবল এতো কঠিন কঠিন শর্ত যে সহজেই উত্তীর্ণ করে গেল, তাকে আর নতুন শর্ত দিয়ে লাভ নেই। রাজকন্যা তারই প্রাপ্য। বাদশা এরপর রাজকন্যার বিয়ের আয়োজন করল। ব্যাপক ধুমধামের সঙ্গে এক সপ্তাহ ধরে বিয়ের অনুষ্ঠান হলো। জাঁকজমকপূর্ণ এই আয়োজনের কথা শুনতে পেয়েছিল অপর এক দৈত্য। সে রাজকন্যাকে ভালোবাসত। রাজকন্যাকে নিয়ে যখন ন্যাড়া নিজবাড়ির দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ওই দৈত্য এসে ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল রাজকন্যাকে। ন্যাড়া সেখানেও বিপদে পড়েছিল। অবশেষে রাজকন্যার সহযোগিতায় ওই দৈত্যের হাত থেকেও রেহাই পেল। দৈত্য মারা গেল আর ন্যাড়া রাজকন্যাকে নিয়ে সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাতে লাগল।

সোনারতরী(শিশু কিশোর সাহিত্য)

সম্পাদনা:বদরুল হায়দার

পাঠকের মতামত:

১৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test