E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিশ্বজিৎ বসু’র গল্প

২০১৬ নভেম্বর ২৯ ১৫:৫২:৪৮
বিশ্বজিৎ বসু’র গল্প







 

রিণোর কম্পিউটার শেখা

রিণো। একটি সুন্দর হরিণ ছানা। লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরে বেড়ায় সুন্দর বনের ভিতর । এদিক থেকে সেদিক। একোণ থেকে সে কোণ।
একদিন বনে ঢুকল দুজন পর্যটক । হাতে সুন্দর ক্যামরা। পিঠে ব্যাগ। রিণোকে দেখে মহাখুশি। তারা রিণোর ছবি তুলতে লাগল একটার পর একটা ।
রিণো শুনতে পেল পাশ থেকে হচ্ছে শব্দ ক্লিক ক্লিক, ক্লিক ক্লিক । আড়চোখে তাকিয়ে রিণো দেখল শব্দটা আসছে ঐ কালো রঙের যন্ত্রটা থেকে। দুটি লোক মিট মিট করে হাসছে আর ওর দিকে তাকিয়ে আছে। রিণোর মনে হলো ওরা আর যাই হোক শিকারি না।
লোক দুটোর দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল রিণো। তারা রিণোকে কাছে পেয়ে মহাখুশি। একজন ওকে কোলে তুলে আদর করতে লাগল। অন্যজন পিঠের ব্যাগ থেকে বের করল আরো একটা যন্ত্র।
রিণো জিজ্ঞেস করল এগুলো কি? একজন উত্তর দিল এটা কম্পিউটার। আর ওটা কী ? অন্য জন উত্তর দিল এটা ক্যামেরা। রিণোর আবার প্রশ্ন এগুলো দিয়ে কী করে। একজন উত্তর দিল কম্পিউটার দিয়ে অনেক কিছু করা যায়। যেমন ছবি আাঁকা যায়, গান শোনা যায়, গেম খেলা যায়, চিঠি লেখা যায় । আর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলা যায় ।
রিণো জিজ্ঞস করল তোমরা কম্পিউটার দিয়ে এখন কি করবে?
একজন উত্তর দিল, আমরা তোমার যে ছবিগুলো তুলেছি সেগুলো এখন কম্পিউটারে দেখবো।
রিণো তো মহাখুশি। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে কম্পিউটার আর ক্যামরার দিকে। একটু পরে কম্পিউটারের ভিতরে দেখতে পায় তার কতগুলো সুন্দর ছবি। নিজের ছবি কম্পউটারে দেখতে পেয়ে আনন্দে নাচতে নাচতে বনের মধ্যে মিলিয়ে গেল রিণো ।
রাতে মায়ের কোলের মধ্যে ঘুমিয়ে ছিল রিণো। সে হঠাৎ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে, সে কম্পিউটারে নিজের ছবি দেখছে। আনন্দে সে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠল। চিৎকার শুনে রিণোর মায়ের ঘুম ভেঙে গেল। মা রিণোকে ডেকে জিজ্ঞেস করল– কি স্বপ্ন দেখেছে। রিণো বলল আামি কম্পিউটারের স্বপ্ন দেখেছি। মা আমি কম্পিউটার শিখতে চাই।
মা হরিণ উত্তর দিল কম্পিউটার কি তাতো আামি জানিনা। খুঁজে দেখ কাউকে পাও কিনা যে কম্পিউটার ব্যবহার করতে জানে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে রিণো বেরিয়ে পড়ল কে কম্পিউটার জানে তাকে খুঁজে বের করতে ।
তখন ভোর। প্রথমেই চোখে পড়ল একটা বন মোরগ। বাগ দিচ্ছে। ককক্ কক। ককক্ কক। রিণো জিজ্ঞেস করল “মোরগ ভাইয়া মোরগ ভাইয়া তুমিতো ভোরে সকলের ঘুম ভাঙাও। তুমি কি কম্পিউটার জান। আমাকে কম্পিউটার শেখাবে। বন মোরগ উত্তর দিল “আমিতো কম্পিউটার জানিনা। তুমি অন্য কাউকে পাও কিনা দেখ।”
একটু এগিয়ে যেতে চোখে পড়ল দোয়েল পাখি। শীস্ দিচ্ছে। রিণো জিজ্ঞেস করল “দোয়েল পাখি দোয়েল পাখি তুমিতো জাতীয় পাখি। তুমি আমাকে কম্পিউটার শেখাবে। দোয়ের উত্তর দিল “সেটা আবার কি! আমিতো তোমার কাছে প্রথম এই শব্দটা শুনলাম।
এরপর রিণো গেল বানরের কাছে, বানরকে জিজ্ঞেস করল বানর ভাইয়া, বানর ভাইয়া তুমিতো এখান থেকে ওখানে লাফিয়ে বেড়াও। উপর থেকে সব কিছু দেখতে পাও। তুমি কি জান কে কম্পিউটার জানো?। আমি কম্পিউটার চালানো শিখতে চাই। বানর বলল আমি এর কিছুই জানিনা।
এরপর রিণো গেল কুমিরের কাছে, অজগরের কাছে, বন বিড়ালের কাছে । একে একে সবাইকে জিজ্ঞেস করল তারা কেউ কম্পিউটার শেখাতে পারবে কিনা। সবাই বলল “এরা কেউ কম্পিউটার জানে না।”
রিণো মন খারাপ করে মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছিল এমন সময় দেখে শিয়াল কাকড়া খাচ্ছে। রিণো শেয়ালকে জিজ্ঞেস করল, “পন্ডিত মশাই, পন্ডিত মশাই তুমি কি কম্পিউটার জান।” শেয়াল মনে মনে ভাবল ও নিশ্চয় আমার সাথে মস্করা করছে। দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা। তোকে বাঘের কাছে পাঠিয়ে দেব।
শেয়াল মিষ্টি মিষ্টি হেসে বলল “আমি কম্পিউটার জানিনা, বাঘ কম্পিউটার জানে। তুমি বাঘের কাছে যাও, বাঘ তোমাকে কম্পিউটার শিখিয়ে দেবে”।
রিণো গভীর জঙ্গলে ঢুকে দেখল একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। রিণো ওর কাছে গিয়ে কাতু কাতু দিতে লাগল। বাঘতো কাতু কুতু খেয়ে হেসেই অস্থির। কিছুতেই হাসি থামাতে পারে না। হাসি থামার পর রিণো বলল “বাঘ মামা, বাঘ মামা তুমিতো সুন্দরবনের রাজা। বাংলাদেশের জাতীয় প্রাণী। তুমি কী আমাকে কম্পিউটার শেখাতে পারবে। শেয়াল পন্ডিত বলল তুমি কম্পিউটার জান।”
বাঘ মামা বলল শেয়াল পন্ডিত তোমাকে বিপদে ফেলতে চেয়েছিল। ভেবেছিল তুমি আমার কাছে জানতে আসলে আমি তোমাকে খেয়ে ফেলব। তুমি এক কাজ কর। ঘুরে ঘুরে দেখ কোন পর্যটক পাও কিনা। যদি কোন পর্যটক পাও তাকে জিজ্ঞেস করো ওরা তোমাকে সাহায্য করতে পারে।
রিণো পর্যটক খুঁজতে বেরিয়ে গেল। এমন সময় দেখে সেই লোকদুটো। ছবি তুলে বেড়াচ্ছে। রিণো ওদের কাছে গিয়ে বলল পর্যটক ভাই, পর্যটক ভাই তোমরা কী আমাকে কম্পিউটার শেখাবে। লোকদেুটো ভীষণ চিন্তুায় পড়ে গেল। হরিণ ছানাকে কিভাবে কম্পিউটার শেখাবে। অবশেষে তাদের মাথায় বুদ্ধি চলে এলো। বলল এসো আমাদের তাবুতে।
রিণো ভীষণ খুশি। সে এখন কম্পিউটার শিখতে পারবে।
রিণো এখন সারাদিন পর্যটকদের সংগে ঘুরে বেড়াতে লাগল আর রাতে ওদের কাছে কম্পিউটার শিখতে লাগল।

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test