E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পারভীন আক্তার’র গল্প

২০১৭ জানুয়ারি ০৭ ১৭:৫৪:১১
পারভীন আক্তার’র গল্প







 

জাদুর জামা

মা-মণি আমার কইরে? কখন থেকে ডেকেই যাচ্ছি, কত বেলা হলো আর কত ঘুমাবি? এবার উঠ মা, দেখ তোর জন্য আমি নুডলস রান্না করেছি, তোর না অনেক প্রিয়, তোর জন্য খেজুরের গুড়ের পায়স রান্না করব, চুলায় দুধ দিয়ে আসছি। উঠ না মা, আমার হয়েছে যত জ্বালা, তোর বাবা থাকলে হয়তো এত কষ্ট হতো না, সেই তোর শত বায়না শুনত, এ ডাকটাও সেই তোকে দিত... কিরে মা উঠিস না কেন? আজ কি ঘুমের রাজ্যেশ্বরী হইছিস নাকি?

মায়ের ডাক শুনে কুহু আধো আধো চোখ খুলল। কিন্তু মাকে দেখতে পাচ্ছে না কোথাও? তাই কোনো কথা না বলে সোজা আলমারির কাছে গিয়ে কান্না জুড়ে দিল। কুহুর কান্নার আওয়াজে কুহুর নানু রহিমা বেগম রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এসে কোলে তুলে নিলেন পাঁচ বছর বয়সী কুহুকে, বললেন কী ব্যাপার? আমার আপুটার কী হয়েছে? কান্না করছ কেন? কুহুর কান্না এবার আরও বেড়ে গেল, কান্না করছে তো করছেই, থামার নাম নেই, তবে কান্নার ভেতরে সে যেন কী বলছে।

অনেক চেষ্টা করে রহিমা বেগম বুঝতে পারলেন কুহু তার মায়ের দেয়া সাদা পরী জামা চাইছে, জামাটা পরলে একদম পরীর মতো মনে হয়, এমনিতেও কুহু অনেক সুন্দর, তার মায়াবী চোখ দেখলে যে কেউ বলবে এ বুঝি কুহু তাকে ডাকছে, কুহুর নানু আলমারি খুলে জামাটা বের করে দিলেন। জামা দেখেই কান্না বন্ধ কুহুর। তার নানু জামা পরিয়ে দিলেন, এখন এ জামা পরে সারা বাড়ি ঘুরবে, খাবে, ঘুমাবে, আজও মনে হয় এর ব্যতিক্রম হবে না। তবে মাঝে মাঝে মনে হয়, কুহু জামার সঙ্গে কথা বলে দূর থেকে তিনি তা অনেকবার দেখেছেন। রহিমা বেগম আনমনে এসব কথা ভেবে চলে গেলেন রান্না ঘরে। কুহু দৌড়ে তার রুমে চলে গেল। তার বলতে এ রুমে সে আর তার নানু ঘুমায়। কিছু দিন আগেই নানু তার রুমের দেয়ালগুলোতে হাঁস, পাখি, পঙ্খীরাজ, ঘোড়া, গাছ, লতা-পাতা নকশা করে দিয়েছেন। মনে হয় এ যেন এক স্বপ্নপুরী।

কুহু এবার ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়াল, আর অমনি জামা থেকে কথা ভেসে এলো, মা-মণি উঠেছিস, আয় তোকে খাইয়ে পরীর দেশে আজ ঘুরতে নিয়ে যাব, লাল পরী, নীল পরী, হলুদ পরী, সাতরঙা পরী, আর তুই তো আছিস আমার চোখের মণি, আমার সাদা পরী, কুহু হাসে আর মা মা ডাকতে ডাকতে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কুহুর হাসির আওয়াজে রহিমা বেগম রুমে আসেন; কিন্তু এসে দেখেন কুহু জামা পরে আবার ঘুমাচ্ছে। নিজে নিজে বলতে থাকেন এইমাত্র ঘুম থেকে উঠে আবার ঘুমাল।

মন খারাপ করে দরজা দিয়ে বের হতে হতে ভাবেন এ জামাটা আনতে গিয়ে কুহুর মা বকুল মারা গেছে রোড অ্যাক্সিডেন্টে। যারা দেখেছিল তারা বলেছিল জামাটা নাকি বুকে জড়িয়ে ছিল আর মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে কালো পিচের পথ লাল হয়ে গেল। তাই প্রথম দিন থেকেই এ জামাটা পরলে কুহু মা-মা বলে ডাকে আর খলখলিয়ে হাসে। কিছু জিজ্ঞেস করেলেই কুহু বলে মা আমাকে আদর করছে, আমাকে গল্প শুনিয়েছে। নাতনির এ কথা শুনে নানি বলেন নাতনি আমার কী যে বলে?

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test