E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অনুপ বিশ্বাসকে ইয়াবা দিয়ে আটক করার পরিকল্পনা উদঘাটন

২০১৮ মে ১১ ১৬:২১:০৮
অনুপ বিশ্বাসকে ইয়াবা দিয়ে আটক করার পরিকল্পনা উদঘাটন

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : দৈনিক প্রজন্মের ভাবনা পত্রিকার দেবহাটা প্রতিনিধি অনুপ বিশ্বাসের মোটর সাইকেলের সিটের পাশে ইয়াবা রেখে ডিবি পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার নেপথ্য কাহিনী বেরিয়ে পড়েছে। অবিলম্বে নেপথ্যে থাকা নাটের গুরুদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানিয়েছে সাতক্ষীরার কর্মরত সাংবাদিকরা।

দৈনিক প্রজন্মের ভাবনা পত্রিকার দেবহাটা প্রতিনিধি অনুপ কুমার বিশ্বাস জানান, কুখ্যাত চোরাচালানি নুর আমিন গাজীসহ ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা কর্মী তাদের গুদাম ঘর জবরদখলে রাখার জন্য বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে।

মামলায় অভিযোগপত্র দাখিলের কারণে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গনি সাময়িক বরখাস্ত হন। সেখানে তারই স্থলে নুর আমিনের শালিকার ছেলে মাহাবুবর রহমান খোকন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান। এরপর থেকে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কু’নজরে ছিলেন। নুর আমিন ও তার স্বজনদের দারা যে কোন মুহুর্তে বিপদে পড়ার আশঙ্কায় ছিলেন তারা।

তিনি আরো বলেন, গত মঙ্গলবার বিকেলে তিনি খেজুরবাড়িয়া গ্রামে খেলা দেখতে যাওয়ার সময় একই এলাকার আজিবর রহমানের ছেলে সিরাজুল ইসলাম তাকে মোটর সাইকেলে নেওয়ার অনুরোধ করে। তাকে নিয়ে গাছতলায় গাড়ি রেখে খেলে দেখেন তিনি। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ির সামনে এসে মোটর সাইকেল রাখা মাত্রই ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তার শরীর সার্চ করা হয়। কিছু না পেয়ে তাকে পারুলিয়া বাজারের বিসমিল্লা গার্মেন্টেসে হাতকড়া পরিয়ে রেখে রাস্তায় রাখা মোটর সাইকেলের সিটের নীচে এক পাতা ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে তাকে জানানো হয়।

মোটর সাইকেলসহ তাকে সাতক্ষীরার নিয়ে যাওয়ার কথা বলায় তার পরিবারের সদস্যদের সাথে ডিবি পুলিশের বচসা হয়। এ সময় তাদের প্রতিপক্ষ সুজন ঘোষ তার ছবি তুললে ডিবি পুলিশ তাকেও সাতক্ষীরায় নিয়ে আসেন। এরপরপরই প্রজন্মের ভাবনার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রঘুনাথ খাঁ, প্রথম আলোর কল্যাণ ব্যানাজী, যুগান্তরের সুভাষ চৌধুরী, দৈনিক পত্রদূতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক অ্যাড. আবুল কালাম আজাদসহ সাতক্ষীরার কর্মরত বেশ কয়েকজন সংবাদ কর্মী বিষয়টি নিয়ে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন।

সাংবাাদিকদের পক্ষ থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রজন্মের ভাবনা সম্পাদক মহোদয়কে অবহিত করা হয়। ডিবি পুলিশ টিমের প্রধান রবিন মণ্ডল ও পরিদর্শক আলী আহম্মদ হাশমীর সঙ্গে পুলিশ সুপার অনুপ এর আটক সম্পর্কে কথা বলার পর ষড়যন্ত্রের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে রাত ১১টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগে ছেড়ে দেওয়া হয় সাংবাদিক সুজন ঘোষকে। একই দিনের মাহরিবের পর জনৈক ছাত্রলীগ নেতা সোহাগকে পুলিশ ৩০ পিচ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে হাফিজুর রহমানের কাছ থেকে তিনি সংগ্রহ করেছেন বলে জানান।

এরপর হাফিজুর রহমানকে বাঁচাতে ‘আস্থা’ নামক একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানে বসে কয়েকজন আওয়ামীগ নেতা পুলিশের সঙ্গে দফা রফা করেন। এ সময় হাফিজুরের মাধ্যমে সিরাজুলকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর পরিকল্পনাটি প্রকাশ পায়। পরিকল্পনাকারি হিসেবে প্রভাবশালী মাহাবুবর রহমান খোকনের নামটি উঠে আসে। তবে এ ধরণের পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাংবাদিকরা।

এদিকে ঘটনার তথ্য অনুসন্ধানে নেমে স্থানীয় সাংবাদিকরা নিশ্চিত হন যে, মাহাবুবর রহমান খোকনের নাম ভাঙিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিন পারুলিয়ার আনারুল ইসলামের ছেলে হাফিজুর রহমান (৩০)ইয়াবাসহ মাদকের ব্যবসা করে আসছে। অনুপকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষ নুর আমিন গাজী রাজু নামের এক সোর্সকে ৩০ হাজার টাকা দিতে চান। তিনি রাজী না হলেও অনুপকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয় রাজু। একপর্যায়ে হাফিজুর রহমানের পরিকল্পনা মাফিক সিরাজুলকে দিয়ে গাড়ির সীটের পাশে ইয়াবার পাতা রেখে ডিবি পুলিশ দিয়ে আটক করানো হয়। তাকে মামলায় চালান দেওয়ার জন্য ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তাকে মোটা অংকের টাকা অফার করা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে অনুপ বিশ্বাসকে টেকনাফের একটি ভুয়া ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করিয়ে ১৮ দিন জেল খাটানোর অভিযোগ ওঠে চোরাচালানি ও অন্যের জমি জবরদখলকারি নুর আমিন গাজীর বিরুদ্ধে। যা’ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়।

প্রথম আলোর স্টাফ রিপোর্টার কল্যাণ ব্যানার্জীসহ কয়েকজন জানান, সংবাদিকতে ইয়াবা দিয়ে আটক করিয়ে তাকে বিপদে ফেলার যে ষড়যন্ত্র করা হয় তার সঙ্গে জড়িতদের পুলিশ খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে প্রয়োজনে আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া পথ থাকবে না।

(আরকে/এসপি/মে ১১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test