E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পাওনা পরিশোধের দাবিতে বাংলানিউজের সাংবাদিকদের মানববন্ধন

২০১৮ জুন ০৩ ১৬:২৫:৫২
পাওনা পরিশোধের দাবিতে বাংলানিউজের সাংবাদিকদের মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার : ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ অনুসারে টার্মিনেশন অথবা পদত্যাগজনিত চাকরিকালীন পাওনা এবং বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে বসুন্ধরা গ্রুপের অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের চাকরিচ্যুত ও চাকরি ছেড়ে আসা সাংবাদিকরা মানববন্ধন করেছেন।

রবিবার (০৩ জুন) বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন হয়। এতে সম্প্রতি বাংলানিউজ থেকে চাকরিচ্যুত ও চাকরি ছেড়ে আসা পাওনা বঞ্চিত সাংবাদিকরা তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন।

বাংলানিউজের পাওনা বঞ্চিত সাংবাদিকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ এমন প্রতিষ্ঠান নয় যে, তারা সাংবাদিকদের টাকা দিতে পারবে না। টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য তাদের আছে। সুতরাং, সাংবাদিকদের পাওনা টাকা অবশ্যই দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি বসুন্ধরা গ্রুপ সাংবাদিকবান্ধব একটা শিল্পগ্রুপ। সাংবাদিকদের কল্যাণে তারা বিভিন্ন সময় নানা ধরনের কর্মকাণ্ড করেছেন। অনেক সাংবাদিককে তারা সহযোগিতা করেছেন। আমাদের মনে হচ্ছে, বাংলানিউজের সাংবাদিকদের ব্যাপারে তাদেরকে কেউ মিসগাইড করেছে। আমরা প্রত্যাশা করব, আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাংলানিউজ সাংবাদিকদের সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে দেবে বসুন্ধরা গ্রুপ। অন্যথায় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’

সিনিয়র সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল্লাহ রানা বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ কোনো ছোট গ্রুপ নয়। সাংবাদিকদের টাকা দেওয়ার মতো আর্থিক সঙ্গতি তাদের আছে। সুতরাং, অবিলম্বে বাংলানিউজের পাওনা বঞ্চিত সাংবাদিকদের সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।’

সাংবাদিক আমান উদ দৌলা আমান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করতে চাই, বসুন্ধরা গ্রুপ সাংবাদিকদের পাওনা নিয়ে কোনো ছিনিমিনি খেলবে না। যথা সময়, যথা নিয়মে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেবে। অন্যথায় পাওনা বঞ্চিত সাংবাদিকরা যখন যে কর্মসূচি দেবেন, তার সঙ্গে সমগ্র সাংবাদিক সমাজ একাত্মতা ঘোষণা করবে।’

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতির কোষাধ্যক্ষ মফিজুর রহমান বাবু বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ যদি মিডিয়া হাউস চালাতে না পারে, তাহলে সাংবাদিকদের পাওনাদি বুঝিয়ে দিয়ে বন্ধ করে দিক। একদিকে তারা মিডিয়া হাউস চালাবে, অন্যদিকে সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা দেবে না, তা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘তাদের মিডিয়া হাউস যদি ঠিকমতো চলে, তাহলে এই ২০/৩০ জন সাংবাদিকের পাওনা বুঝিয়ে দিতে সমস্যা কোথায়? অনতিবিলম্বে সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে না দিলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।’

পাওনা বঞ্চিত সাংবাদিকদের এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন বাংলানিউজের সাবেক চিফ অব করেসপন্ডেন্ট আহমেদ রাজু। মানববন্ধন পরিচালনা করেন বাংলানিউজের সাবেক সিনিয়র স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মান্নান মারুফ।

পাওনা বঞ্চিত সাংবাদিকরা বলেন, ‘দীর্ঘদিন কাজ করার পরে আমাদের কাউকে কাউকে লিখিত চিঠির মাধ্যমে চাকরি থেকে বরখাস্ত (টার্মিনেট) করা হয় অথবা কাউকে কাউকে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। কিন্তু আমরা ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ অনুসারে নিয়োগপ্রাপ্ত সাংবাদিক/সংবাদ সংস্থার শ্রমিক-কর্মচারী হওয়া সত্তেও কেউই আমাদের টার্মিনেশন অথবা পদত্যাগজনিত চাকরিকালীন পাওনা এবং বকেয়া বেতন-ভাতাদি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি।’

তারা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে অনেকেই পাওনাদি চেয়ে চাকরিচ্যুতি/পদত্যাগের দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান ও ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের মাননীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম-এর মাননীয় এডিটর ইন চিফকে আলাদা আলাদাভাবে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তারা আমাদের আবেদনে সাড়া দেননি, আমাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধের কোনো উদ্যোগ নেননি এবং এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসে কোনো সুরাহা করেননি। পরে বাধ্য হয়ে আমাদের সর্বোচ্চ অভিভাবক ও মাতৃসম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে চিঠি দিয়েছি।

একই আবেদন সম্বলিত চিঠি ও অনুলিপি দিয়েছি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী, মাননীয় তথ্য প্রতিমন্ত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ও মাননীয় তথ্য সচিব, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের মাননীয় চেয়ারম্যান, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সম্মানিত সভাপতি ও সম্পাদক, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) উভয় অংশের সম্মানিত সভাপতি ও মহাসচিব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) উভয় অংশের সম্মানিত সভাপতি ও সম্পাদক এবং বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান, ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের মাননীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় উপদেষ্টাকেও (প্রেস ও মিডিয়া)।’

‘কিন্তু এতদসত্তেও ন্যায্য পাওনা বঞ্চিত হয়ে আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে যেতে বাধ্য হই। এর অংশ হিসেবে গত ১০ মে, ২০১৮ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলাম। কিন্তু মানববন্ধনের আগ মুহূর্তে বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের কর্তৃপক্ষের দাবি মেনে নেওয়া ও পাওনা পরিশোধের আশ্বাসে আমরা আন্দোলন স্থগিত করে গ্রুপের মনোনীত প্রতিনিধি বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় উপদেষ্টার (প্রেস ও মিডিয়া) সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনায় বসি। গত ১০ মে’র প্রথম সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ১৩ মে দ্বিতীয় সভায় আমরা আমাদের সমূদয় পাওনার বিবরণ এবং পাওনার সপক্ষে প্রয়োজনীয় সকল কাগজ ও প্রমাণপত্র হস্তান্তর করেছিলাম।

আলোচনায় ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের কর্মকর্তারা আমাদের পাওনাদির বিষয়ে তাদের হিসাব-নিকাশ সম্পূর্ণ করার পরে উভয়পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে দ্রুতই পাওনাদি পরিশোধ করা হবে। কিন্তু স্বয়ং গ্রুপ প্রতিনিধির ভাষ্যমতে- সমস্ত প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে আসার পর তিনি আমাদেরকে গত ৩০ মে জানিয়ে দিয়েছেন যে, বসুন্ধরা গ্রুপের ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ আমাদের কাউকে কোনো পাওনাদিই দিতে পারবেন না বা দেবেন না। এ অবস্থায় আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধের দাবিতে স্থগিত করা আন্দোলন ফের শুরু করতে বাধ্য হয়েছি।’

আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ০৫ জুন, ২০১৮ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন পাওনা বঞ্চিত সাংবাদিকরা।

(বিজ্ঞপ্তি/এসপি/জুন ০৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test