E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বর্তমান কার্যালয়ে তাণ্ডব

২০১৪ সেপ্টেম্বর ২৪ ১০:৫৯:৩৭
বর্তমান কার্যালয়ে তাণ্ডব

স্টাফ রিপোর্টার : উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে মতিঝিলের দিলকুশায় নির্মাণাধীন সানমুন স্টার টাওয়ারের ৫টি ফ্লোর দখল নেয়ার নামে মঙ্গলবার দৈনিক বর্তমান কার্যালয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। নোটিস ছাড়াই সকালে হঠাত্ করেই ৩৭, দিলকুশা সানমুন স্টার টাওয়ারে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে প্রকৌশলী, উচ্ছেদ শ্রমিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এ ধ্বংসযজ্ঞে অংশ নেন।

এতে হুমকির মুখে পড়ে খুব দ্রুতই পাঠকের মনে স্থান করে নেয়া বহুল প্রচারিত দৈনিক বর্তমান। তাদের অব্যাহত চাপে মালামাল সরিয়ে নেয়ায় নষ্ট হয়েছে পত্রিকা প্রকাশ করার কাজে সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র ও আসবাবপত্র। তবে সাংবাদিক ও কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় নির্মাণাধীন একটি ফ্লোরে মঙ্গলবার মধ্যরাত অবধি কয়েকটি কম্পিউটার ও অন্য সরঞ্জামাদি দিয়ে বুধবার সীমিত কলেবরে প্রকাশ হয় দৈনিক বর্তমান। অথচ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরই তাদের অংশ বুঝে নেয়ার কথা রয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নুরুল আমিন বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে প্রথমে বর্তমান কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। ভবনের স্বত্বাধিকারী কর্তৃপক্ষের কারো সঙ্গে কোনো কথা না বলেই তিনি তার সঙ্গে যাওয়া উচ্ছেদ শ্রমিকদের নির্দেশ দেন ‘সবকিছু ভেঙে নিয়ে যেতে’। এ সময় উপস্থিত থাকা বর্তমান পত্রিকার সাংবাদিকরা অফিস স্থানান্তরের সময় চাইলে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন প্রকৌশলী নুরুল আমিন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘৫ মিনিটের মধ্যে মালামাল সরিয়ে না নিলে সবকিছু গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত উচ্ছেদ শ্রমিকরা।’ সাংবাদিকরা কম্পিউটারসহ মালপত্র নষ্ট না করতে অনুরোধ করলে নুরুল আমিন সাংবাদিকদের পিটুনি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দিতে তার সঙ্গে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। এ সময় মারমুখো হয়ে ওঠেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ডিএসসিসির ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার এ ব্যবহারে হতবাক হয়ে যান উপস্থিত সাংবাদিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। নিজেদের পত্রিকা অফিসে এ ধরনের তাণ্ডবের সংবাদ পেয়ে উপস্থিত হওয়া অন্য সাংবাদিকরা নিজেদের জরুরি কাগজপত্র সরিয়ে নিতে ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলে প্রকৌশলী নুরুল আমিন নানা ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করেন। ভবন দখলের সময় প্রকৌশলী নুরুল আমিন দৈনিক বর্তমান পত্রিকার সম্পাদক সম্পর্কে ঢালাও মিথ্যাচার করেন; যা কোনোভাবেই তার কাজের পরিধির মধ্যে ছিল না। সাংবাদিক-কর্মচারীরা অফিসের আসবাবপত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য সাতদিনের সময় চাইলেও তা দেয়া হয়নি। এক পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট অতুল মণ্ডল যত দ্রুত সম্ভব সব মালামাল যেভাবেই হোক বাইরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তখন থেকেই শুরু হয় মালপত্র স্থানান্তরের কাজ।
স্থানান্তরের কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও বিকাল চারটায় পত্রিকার সাংবাদিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বের করে দিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে সিলগালা করে দেন। তাড়াহুড়া করে দেড়শতাধিক কম্পিউটারসহ অন্য মালপত্র নামাতে গিয়ে অনেক মালপত্র নষ্ট হয়েছে। সব মালামাল নামানোও সম্ভব হয়নি। বিকাল চারটার দিকে অফিস সিলগালা করার সময় অফিসের ভিতর অনেক মালপত্র ছিল। এরপর থেকে ভবনের দ্বিতীয় তলার বর্তমান কার্যালয়ের অংশে আনসার সদস্যরা পাহারা দিতে থাকেন। ভবনের বাইরের অংশে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের সাইনবোর্ডও ভেঙে ফেলেছেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা।
কোনো ধরনের নোটিস না পেয়ে ভবনের দখল বুঝে নিতে আসার খবর পেয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নগর ভবনে যান দৈনিক বর্তমানের সাংবাদিকরা। প্রশাসক ইব্রাহীম হোসেন খান বর্তমান সাংবাদিকদের সাক্ষাত্ দেননি। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনছার আলী খান সাক্ষাত্ দিলেও কোনো ‘সহায়তা’ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। উপরন্তু অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নুরুল আমিন দৈনিক বর্তমানের সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। প্রাসঙ্গিক না হলেও দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সেরা করদাতা ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ী সানমুন গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং দৈনিক বর্তমান পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অরুচিকর নানা মন্তব্য করেন। অথচ এ ভবন নিয়ে মামলায় মঙ্গলবারই বর্তমান সম্পাদক ও মুন গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিজানুর রহমানকে অব্যাহতি দিয়ে অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
অন্যান্য দিনের মতো মঙ্গলবার সকালে অফিসে আসেন দৈনিক বর্তমানের সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীরা। হঠাত্ করে সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে দৈনিক বর্তমানের অফিস দখলে নেয়ার হুমকি দেয়ায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন উপস্থিত সংবাদকর্মীরা। পুলিশের পাশাপাশি দখলের জন্য আসা সিটি করপোরেশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছিলেন বিপুল আনসার সদস্য। বাইরে দিলকুশা এলাকায় তারা যানবাহন চলাচলও বন্ধ করে দেন। মূল সড়কে দাঁড়িয়ে থাকে কয়েকটি ট্রাক ও বুলডোজার। পুরো এলাকায় তৈরি হয় একটি ভীতিকর পরিবেশ।
এদিকে দৈনিক বর্তমান কার্যালয় দখল করে নেয়ার সংবাদ পেয়ে অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীরা বর্তমান কার্যালয়ে এসে ভিড় করেন। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সম্পত্তি আমরা দখলে নিয়েছি, সেখানে পত্রিকার অফিস ছিল, না অন্য কিছুর অফিস ছিল সেটি দেখার বিষয় নয়। নোটিস ছাড়া গণমাধ্যমকর্মীদের রাস্তায় নামিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে নোটিস দেয়ার কোনো বিষয় নেই। কারণ নিজস্ব সম্পত্তি আমরা যে কোনো সময় বুঝে নিতে পারি।’ আনসার আলী এ কথা বললেও নির্মাণাধীন ভবনের এই অংশটি অফিসের কাজে ব্যবহারের জন্য ২০০৯ সালেই সিটি করপোরেশন লিখিত অনুমোদন দেয়।
জানা গেছে, ৩৭ দিলকুশাস্থ বর্তমানের কার্যালয়ের ভবনটি সিটি করপোরেশনের জমিতে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে নির্মিত হচ্ছে। বহুতল ভবন নির্মাণ করতে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সানমুন স্টার গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘এম আর ট্রেডিং’-এর সঙ্গে একটি চুক্তি হয়। সে অনুযায়ী সানমুন স্টার টাওয়ার নামে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরই সিটি করপোরেশন তাদের অংশ বুঝে পাবে। এর আগেও অবশ্য সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সময় চুক্তিবহির্ভূতভাবে দখলের চেষ্টা করায় এমআর ট্রেডিং এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়। উচ্চ আদালত থেকে কাজ শেষ হওয়ার আগে ভবন বুঝে না নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন উচ্চ আদালতের এইসব নির্দেশনার কোনো তোয়াক্কা না করেই মঙ্গলবার হঠাত্ করে দখল করে নেয় ভবনটির নিচ থেকে ওপরের ৫টি ফ্লোর।

(ওএস/এইচআর/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test