E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রকাশিত সংবাদকে মিথ্যে দাবি

নবীনগরে সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

২০২৩ জুলাই ০৯ ১৪:১৪:৫৬
নবীনগরে সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা

বিশেষ প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : পত্রিকা ও ফেসবুকে প্রকাশিত সংবাদকে 'মিথ্যে ও মানহানিকর' দাবি করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে। নবীনগর পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নীলুফার ইয়াসমিন বাদী হয়ে চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি মামলাটি দায়ের করেন (মামলা নং-১৫/২০২৩ ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ধারা- ২৫/২৬/২৯/৩১/৩৫)।

মামলার সাত আসামি হলেন (এজাহার অনুযায়ি নামসমূহ) পুতুল বেগম (পত্রিকার নাম নেই), মাহাবুব আলম লিটন (পত্রিকার নাম নেই) মো. বাবুল (পত্রিকার নাম নেই), জ, ই বুলবুল (বিডি মেট্রো নিউজ), মো. সফর মিয়া (সকালের খবর), দৈনিক সত্যের সন্ধ্যানে (নবীনগর প্রতিনিধি) এবং মমিনুল হক রুবেল (ঢাকা নিউজ)।

চট্টগ্রাম সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগকে মামলাটি তদন্ত করে 'তদন্ত রিপোর্ট' আদালতে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজমের (সিএমপি) এস আই জুয়েল চৌধুরী গত শুক্রবার আসামীদের নাম ও ঠিকানা যাচাই বাছাই করে এসসিডি'র মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জানানোর জন্য নবীনগর থানা পুলিশকে একটি চিঠি দেন। আর তখনই সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল আইনে করা এই আলোচিত মামলার খবরটি নবীনগরের সর্বত্র নিমিষেই ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই মামলাটি নিয়ে সর্বত্র আলোচনার ঝড় ওঠে।

এদিকে নবীনগর থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আনোয়ার চিঠি প্রাপ্তির প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে থানার এএসআই মাহমুদুল হককে ইতিমধ্যে নির্দেশও দিয়েছেন।

মামলার এজাহার ও বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, নবীনগর পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নীলুফা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে উল্লেখতি সাত আসামি 'শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার ভূয়া সন্তান সেজে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা উত্তোলন' এবং ভূয়া সন্তান মহিলা কাউন্সিলরের ভাতা স্থগিত' শিরোনামে তাদের স্ব স্ব ফেসবুক ও বিভিন্ন মিডিয়ায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ করেন।

পত্রিকায় প্রকাশিত ওইসব রিপোর্টকে 'সম্পূর্ণ মিথ্যা ও মানহানীকর' দাবী করে কাউন্সিলর নীলুফার ইয়াসমিন ওই সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি করেন।

এ বিষয়ে মামলার এক নস্বর আসামি পুতুল বেগম বলেন,'কাউন্সিলর নীলুফার শহীদ মুক্তিযোদ্ধার একজন ভূয়া সন্তান। যার সব প্রমাণপত্রসহ আমি গত বছরের নভেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। এরপর আমিসহ বিভিন্ন সাংবাদিকেরা পত্রিকায় রিপোর্ট করার পর নীলুফারের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত হয়ে যায়। সুতরাং আমাদের রিপোর্টে কোন মিথ্যে তথ্য নেই।'
এক প্রশ্নের জবাবে পুতুল বেগম বলেন, নীলুফারের করা ডিজিটাল মামলাটি আমরা সবাই আইনগতভাবেই মোকাবেলা করবো ইনশাআল্লাহ।'

তবে মামলার বাদী কাউন্সিলর নীলুফার ইয়াসমিন ভাতা স্থগিতের কথা অস্বীকার করে বলেন,'পত্রিকায় মিথ্যা রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর, তদন্তের স্বার্থে সাময়িকভাবে চলতি বছরের গোড়ার দিকে ভাতা স্থগিত ছিলো। কিন্তু আমার সমস্ত কাগজপত্র দেখে, বিষয়টি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন দপ্তরে শুনানীর পর, পত্রিকার রিপোর্ট মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায়, ভাতা পুনরায় চালু হয়।'

এক প্রশ্নের জবাবে নীলুফার ইয়াছমিন বলেন,'ফেসবুক ও পত্রিকায় মিথ্যে সংবাদ প্রকাশ করে আমার পারিবারিক মান সম্মান ও সুনাম ক্ষুন্ন করায় আমি প্রতিকার চেয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি ও এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মানহানীর আরেকটি মামলা করেছি। আমিও আইনগতভাবেই বিষয়টির মোকাবেলা করবো ইনশাল্লাহ।'

এদিকে আলোচিত এ মামলাটি নিয়ে সাংবাদিক সমাজসহ স্থানীয় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ফেসবুকে গত দুদিন ধরে এ মামলাটি নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হচ্ছে। ফলে এলাকার সচেতন মহল মামলাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে নবীনগর প্রেসক্লাবের বর্তমান সভাপতি শ্যামা প্রসাদ চক্রবর্তী শ্যামল বলেন,'শুনেছি, মামলায় নবীনগর প্রেসক্লাবের দু'জনকেও আসামি করা হয়েছে। সেজন্য আমরা মামলাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জোর দাবি করছি। তবে কোন সাংবাদিক মিথ্যে রিপোর্ট করে কারও মানহানি করলে, প্রেসক্লাব যেমন তার পক্ষে দাঁড়াবে না। তেমনি যত শক্তিশালীই হোক, কেউ যদি মিথ্যে মামলা দিয়ে কোন সাংবাদিককে 'হয়রাণী' করে তাহলে আমরা প্রেসক্লাব চুপ করে বসেও থাকবোনা। আমরা সাংবাদিকেরা সম্মিলিতভাবে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করে সেটি মোকাবেলাও করবো।'

তবে নবীনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিন মনির ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি বাতিলের দাবি ও এ আইনে সাত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন,'আমার জানামতে, সাংবাদিকরা তথ্য প্রমাণ রেখেই রিপোর্ট করে থাকেন। তাই কারও বিরুদ্ধে সত্য রিপোর্ট প্রকাশ হলেই আজকাল যে কেউ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করছেন। এটি কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। তাই আমি মনে করি, কোন সংবাদে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সরাসরি এ ধরণের মামলায় না গিয়ে প্রেস কাউন্সিলে এর প্রতিকার চাইতে পারেন। আর সেটিই হওয়া উচিৎ ও বাঞ্ছনীয়।'

(জিডিএ/এএস/জুলাই ০৯, ২০২৩)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test