E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ঢাকার প্রথম বাংলা পত্রিকা 'ঢাকা প্রকাশ'

২০১৫ জুন ০৯ ১৪:৫২:২৮
ঢাকার প্রথম বাংলা পত্রিকা 'ঢাকা প্রকাশ'

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : ঢাকায় প্রকাশিত প্রথম বাংলা পত্রিকা 'ঢাকা প্রকাশ'। ১৮৬১ সালের ৭ মার্চ বাবুবাজারের ‘বাঙ্গালা যন্ত্র’ থেকে এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। পত্রিকার মোটো ছিল সংস্কৃতি ভাষায় 'সিদ্ধিঃ সাধ্যে সমামস্ত্ত'। যার অর্থ সাধ্য অনুযায়ী সিদ্ধি লাভ হোক। এটি ছিল সাপ্তাহিক পত্রিকা। প্রতি বৃহস্পতিবার এটি প্রকাশিত হত। ডাকমাশুলসহ এর বার্ষিক মূল্য ছিল পাঁচ টাকা।

পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার বাঁদিকে থাকত বিজ্ঞাপন, ডানদিকে সম্পাদকীয় বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো খবর বা বিশেষ কোনো বিষয়ের ওপর পত্রিকার নিজস্ব মতামত। পরে থাকত 'সম্বাদাবলী'। এ বিভাগে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকে সংগৃহীত বা নিজেদের সংগৃহীত সংবাদ ছাপা হতো। পত্রিকার তৃতীয় পৃষ্ঠায় কখনও বা শেষ পৃষ্ঠায় ছাপা হতো পাঠকদের চিঠিপত্র বা মতামত।

ঢাকা প্রকাশের প্রথম সম্পাদক ছিলেন কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার। পরিচালকগণের মধ্যে প্রধান ছিলেন ব্রজসুন্দর মিত্র, দীনবন্ধু মৌলিক, ঈশ্বরচন্দ্র বসু, চন্দ্রকান্ত বসু প্রমুখ। কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের পর দীননাথ সেনের পরিচালনায় পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এ সময় বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শুক্রবারে পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে। দীননাথ চতুর্থ বর্ষের ২৩ থেকে ৩৬ সংখ্যা পর্যন্ত পরিচালনা করেন। পরে সে ভার অর্পিত হয় জগন্নাথ অগ্নিহোত্রী ও গোবিন্দপ্রসাদ রায়ের ওপর। পঞ্চম বর্ষ থেকে শুক্রবারের বদলে ঢাকা প্রকাশ রোববারে প্রকাশিত হতে শুরু করে।

ঢাকা প্রকাশ প্রথম প্রকাশিত হয় ব্রাহ্মদের মুখপত্র হিসেবে; কিন্তু বিভিন্ন সময়ে মালিকানা বদলের সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকার দৃষ্টিভঙ্গিও বদলে যায়। তাই দেখা যায় পত্রিকাটি কখনও ব্রাহ্মদের, কখনওবা রক্ষণশীল হিন্দুদের সমর্থন করেছে। রাজনৈতিক বিষয়ে পত্রিকাটি সব সময় মধ্যপন্থা অবলম্বন করত এবং শাসক ও শাসিতের মধ্যে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা করত। এর ফলে বঙ্গভঙ্গ এবং স্বদেশী আন্দোলনের সময় পত্রিকাটিকে অনেক বিপদের সম্মুখীন হতে হয়।

ঢাকা প্রকাশ একটি প্রভাবশালী পত্রিকা ছিল, যার মতামতকে সরকার গুরুত্ব দিত। এ সময় ঢাকা থেকে প্রকাশিত অন্যান্য পত্রিকার মধ্যে ছিল ঢাকা নিউজ, হিন্দু হিতৈষিণী, পল্লী বিজ্ঞান ইত্যাদি। উনিশ শতকে পূর্ববঙ্গ থেকে যেসব সংবাদপত্র ও সাময়িকী প্রকাশিত হতো সেসবের মধ্যে প্রায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঢাকা প্রকাশের সংবাদ এবং মতামতকেই রিপোর্ট অন দ্য নেটিভ পেপারস হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে প্রণিধান হিসেবে উল্লেখ করত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে ঢাকাপ্রকাশ-এর বেশ কিছু সংখ্যা সংরক্ষিত আছে। সেখানে রাখা সর্বশেষ প্রকাশিত সংখ্যাটি হলো ১২-০৪-১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের। তখন সম্পাদক ছিলেন আবদুর রশীদ খান। প্রকাশিত হতো ৫৯/৩ কিতাব মঞ্জিল, ইসলামপুর থেকে। অবশ্য বাবুবাজার থেকে ঢাকাপ্রকাশ ইসলামপুরের ১৬ নম্বর বাড়িতে এসেছিল ১২৯১ সনের দিকে। তখন মাসিক ৫০ টাকা বেতনে এর সম্পাদক ছিলেন তখনকার স্বনামখ্যাত কবি দীনেশচরণ বসু। ওই বছর যাদবচন্দ্র সেনের কাছ থেকে বাঙ্গালা মুদ্রণযন্ত্রসহ পত্রিকাটির মালিকানা কিনে নিয়েছিলেন মানিকগঞ্জের হিন্দু তালুকদার গুরুগঙ্গা আইচ চৌধুরী।

মুনতাসীর মামুন তাঁর ঢাকাপ্রকাশ নিয়ে গবেষণাগ্রন্থ ‘ঢাকাপ্রকাশ ও পূর্ববঙ্গের সমাজ ১৮৬৩-৬৪’তে উল্লেখ করেছেন, মফস্বল বলে বিবেচিত হলেও ঢাকাকে কেন্দ্র করে উনিশ শতকের ষাট ও সত্তর দশকে একটি সামাজিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড গড়ে উঠেছিল। ঢাকা সে সময় আবার পুনরুজ্জীবিত হয় এবং কলকাতার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। ঢাকার সেই পুনরুজ্জীবনের সমাজচিত্রই রয়েছে ঢাকাপ্রকাশ-এ। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত মুক্তচিন্তার অধিকারী ও সংস্কারবাদী ব্রাহ্মসমাজের নেতাদের হাতে পত্রিকাটির আত্মপ্রকাশ ঘটায় এটি শিক্ষা বিশেষত স্ত্রীশিক্ষা, যোগাযোগ, কৃষি—এসব ক্ষেত্রের সংবাদে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে এবং এ-সংক্রান্ত মতামত প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া নীল বিদ্রোহের সময় বিদ্রোহীদের পক্ষাবলম্বন করেছিল পত্রিকাটি। সব মিলিয়ে ঢাকাপ্রকাশ ঢাকার গৌরবেরই উজ্জ্বল অংশ হয়ে আছে।

প্রথম প্রকাশের সময় পত্রিকার প্রচারসংখ্যা ছিল ২৫০; উনিশ শতকের নববইয়ের দশকে হিন্দু পুনরুত্থানবাদীদের আন্দোলনের সময় এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৫০০০। এ থেকে তৎকালে পত্রিকাটির জনপ্রিয়তা প্রমাণিত হয়। ঢাকা প্রকাশ প্রায় ১০০ বছর টিকে ছিল; পূর্ববঙ্গের আর কোনো পত্রিকার আয়ুষ্কাল এত দীর্ঘ ছিল না। ঢাকাসহ পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস ঢাকা প্রকাশ ছাড়া রচনা করা সম্ভব নয়। ঢাকাপ্রকাশ-সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য রয়েছে মুনতাসীর মামুনের ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী বইয়ে।

গ্রন্থনা : পরিতোষ বড়ুয়া তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test