E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভারত উপমহাদেশ ও বাংলার চলচ্চিত্রের ইতিহাস

২০১৫ জুন ১০ ১৩:৫০:০১
ভারত উপমহাদেশ ও বাংলার চলচ্চিত্রের ইতিহাস

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা ভাষা আন্দোলন ও কয়েকজন শহীদের রক্তদান এ অঞ্চলের সচেতন বাঙালিদের স্বাধিকার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। পশ্চিম পাকিস্তানিদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক শোষণের সঙ্গে চলছিল সাংস্কৃতিক শোষণও।

ভাষা আন্দোলনের বছর দুয়েকের মধ্যেই চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য শহীদুল আলম, আব্দুল জববার খান, কাজী নূরুজ্জামান প্রমুখের নেতৃত্বে ইকবাল ফিল্মস এবং ড. আব্দুস সাদেক, দলিল আহমদ (বুলবুল আহমদের পিতা), আজিজুল হক, দুদু মিয়া (আলমগীরের পিতা), কবি জসীমউদ্দীন, কাজী খালেক, সারওয়ার হোসেন প্রমুখকে নিয়ে গঠিত হয় কো-অপারেটিভ ফিল্ম মেকার্স লিমিটেড।

সরকারি উদ্যোগে জনসংযোগ বিভাগের অধীনে প্রচারচিত্র নির্মাণের জন্য চলচ্চিত্র ইউনিট (১৯৫৩) গঠিত হয়। এজন্য ঢাকার তেজগাঁও স্টুডিও এবং ল্যাবরেটরি স্থাপনের চেষ্টা চলে। এ ইউনিট থেকে নাজীর আহমদের পরিচালনায় নির্মিত হয় প্রামাণ্য চিত্র সালামত (১৯৫৪)। ১৯৫৪ সালে ইকবাল ফিল্মসের প্রথম ছবি মুখ ও মুখোশ-এর কাজ শুরু হয় আব্দুল জববার খানের পরিচালনায়। কো-অপারেটিভ ফিল্ম মেকার্সের উদ্যোগে সারোয়ার হোসেনের পরিচালনায় শুরু হয় আপ্যায়ন নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চিত্রের কাজ। ১৯৫৫ সালে জুন মাসে তেজগাঁওয়ে সরকারি ফিল্ম স্টুডিও চালু হয়।

পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সবাক বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য চিত্র মুখ ও মুখোশ মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট। এর প্রযোজনায় ছিলেন নুরুজ্জামান, শহীদুল আলম, কলিমউদ্দিন আহমেদ, এম.এ হাসান ও আব্দুল জববার খান। পরিচালকের নিজের লেখা নাটক ডাকাত অবলম্বনে এ ছবির কাহিনী তৈরি হয়। তিনি নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন। অন্যান্য পাত্র-পাত্রী ছিলেন ইনাম আহমেদ, পূর্ণিমা সেন, নাজমা (পিয়ারী), জহরত আরা, আলী মনসুর, রফিক, নুরুল আনাম খান, সাইফুদ্দীন, বিলকিস বারী প্রমুখ। কিউ. এম জামান ছবির চিত্রগ্রহণ এবং সমর দাস সংগীত পরিচালনা করেন। ছবির গানে কণ্ঠ দেন আবদুল আলীম ও মাহবুবা হাসানাত। ছবিটি পরিবেশনা করেন পাকিস্তান ফিল্ম ট্রাস্টের পক্ষে মোশাররফ হোসেন চৌধুরী ও পাকিস্তান ফিল্ম সার্ভিসের পক্ষে এম এ আউয়াল।

১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদে বিল পাসের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (ইপিএফডিসি) প্রতিষ্ঠত হয়। এফডিসি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পের ভিত্তি স্থাপিত হয়। এখানকার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ১৯৫৯ সালে থেকে নিয়মিতভাবে প্রতিবছর চলচ্চিত্র মুক্তি পেতে থাকে। এর আগে পর্যন্ত এ অঞ্চলের হলগুলিতে কেবল ভারত, পশ্চিম পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ইতালি ও অন্যান্য দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হতো। এফডিসির পর বেসরকারি পর্যায়েও কয়েকটি স্টুডিও যেমন, পপুলার স্টুডিও (পাগলা), বারী স্টুডিও (তেজতুরী বাজার), বেঙ্গল স্টুডিও (টিকাটুলী) স্থাপিত হয়।

এফডিসি প্রতিষ্ঠার চল্লিশ বছরের মধ্যে (১৯৫৭-১৯৯৭) বাংলাদেশের চলচিত্রের ইতিহাসে বিভিন্ন ধারা লক্ষ্য করা যায়। বিশ শতকের পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের প্রারম্ভে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলিতে জীবনবোধ, শিল্পশোভনতা ও পরিচ্ছন্নতার ছাপ ছিল। নির্মাতারা পরে বাণিজ্যিক কারণে উর্দু ভাষা ও লোককাহিনী-ভিত্তিক ছবি নির্মাণ শুরু করে। এক্ষেত্রে এহতেশামের উর্দু ভাষায় নির্মিত চান্দা (১৯৬২) ও সালাহউদ্দিনের লোকগাথা-ভিত্তিক রূপবান (১৯৬৫) দুটি ধারা সৃষ্টিকারী চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত।

ঐ শতকের ষাটের দশকের মধ্যভাগে দেশের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খান আতাউর রহমান-এর ইতিহাসভিত্তিক নবাব সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৭) ও জহির রায়হান-এর গণআন্দোলন ভিত্তিক জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০) নির্মিত হয়। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নির্মাতাদের নতুন চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে। এ চেতনায় প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণের কৃতিত্ব জহির রায়হানের। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্টপ জেনোসাইড ও কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং প্রযোজনা করেন। আলমগীর কবির নির্মাণ করেন লিবারেশন ফাইটার্স নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। চাষী নজরূল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চিত্রায়ন করেন প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন (১৯৭২)।

সত্তরের দশকের শুরুতে বাণিজ্যিক কারণে চলচ্চিত্রে যোগ হয় মারপিট, সংঘাত, অতি আবেগ, সস্তা রোমান্স, নাচ-গান, যৌনতা, ভাঁড়ামি, কৌতুক এবং বিদেশি ভাবধারা ও কাহিনীর নকল। এ ধারা অব্যাহত থাকে ২০১০ সাল পর্যন্ত। এ সময়ের চলচ্চিত্রকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় স্যাটেলাইট প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বব্যাপী টিভি নেটওয়ার্কের সঙ্গে।

চলচ্চিত্র চর্চার সংগঠন হিসেবে আছে বেসরকারি পর্যায়ে ১৯৬৩ সালে স্থাপিত পাকিস্তান চলচ্চিত্র সংসদ (বর্তমানে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ), ১৯৬৯ সালে স্থাপিত ঢাকা ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও সরকারি পর্যায়ে ১৯৭৮ সালে স্থাপিত বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট ও আর্কাইভ, ১৯৭৫ সালে চালুকৃত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও অনুদান তহবিল। এসব উদ্যোগ বাংলাদেশে সুস্থ, শোভন ও উন্নতমানের চলচ্চিত্র নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

গ্রন্থনা : পরিতোষ বড়ুয়া, তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া এবং আমরা ঢাকা

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test