E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভারত উপমহাদেশ ও বাংলার চলচিত্রের ইতিহাস

২০১৫ জুন ১১ ১৫:০৯:৫৬
ভারত উপমহাদেশ ও বাংলার চলচিত্রের ইতিহাস

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : বর্তমান অবস্থা অতীতের তুলনায় বর্তমানে ছবির পরিমাণ সংখ্যার দিক থেকে অনেক বৃদ্ধি পেলেও মান এবং গুণগত দিক বৃদ্ধি পায় নি। ১৯৫৬ সালে ১টি ছবি মুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু হয়। বিশ শতকের ষাটের দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবির সংখ্যা বেড়ে গিয়ে গড়ে ২০টিতে দাঁড়ায়, যা ৯০-এর দশকে গড়ে প্রায় ৮০টিতে উন্নীত হয়।

মুক্তি পাওয়া ছবির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। স্যাটেলাইট চ্যানেলে বিশ্বজুরে নেটওয়ার্ক বিস্তার, ভিসিআর, ভিসিডি, হোম স্ক্রিনিং, কম্পিউটার সিডি-র সহজলভ্যতা চলচ্চিত্র দর্শকদেরকে গৃহমুখী করে তুলেছে। ফলে অভিজাত, শিক্ষিত ও ধনী দর্শকরা টিকেট কিনে প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতে যায় না।

স্যাটেলাইট চ্যানেল ও অন্যান্য যন্ত্রনির্ভর বিনোদন মাধ্যমের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং সাধারণ দর্শকদের অধিকতর মনোরঞ্জনের জন্যে নির্মাতারা চলচ্চিত্রে অবাস্তব কাহিনী ও ঘটনা, নগ্নতা, অ্যাকশন, নাচ-গান, ভাঁড়ামোর আশ্রয় নিয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, বিদেশে পাঠানোর মতো মৌলিক কাহিনী ও শিল্পশোভন ছবি এখন আর তেমন খুঁজে পাওয়া যায় না। ২০০৭ সালে সেন্সর বোর্ড, এফডিসি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অশ্লীল ছবির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

বর্তমানে ছায়াছবির নির্মাণ ব্যয়ও আগেকার তুলনায় অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারিগরি কারণে এখন আর সাদাকালো ছবি তৈরি হয় না। সব ছবিই হয়ে থাকে রঙিন। বর্তমানে ১৪ হাজার ফুট দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট একটি রঙিন চলচ্চিত্র নির্মাণের গড় খরচ প্রায় ৬০-৭০ লাখ টাকা। বাংলাদেশে চলচ্চিত্রই অন্যতম সহজলভ্য বিনোদন মাধ্যম। শিক্ষার অভাব, দারিদ্র্য এবং নিম্নরুচির কারণে বেশিরভাগ দর্শকই সস্তা নাচ-গান, মারপিট, কৌতুক, প্রেম-মিলন-বিরহের ছবি পছন্দ করে। নির্মাতারাও এ ধরনের ছবি তৈরি করে।

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ শৈলী, কারিগরি উৎকর্ষ, নান্দনিকতা, জীবন ও সমাজ ঘনিষ্ঠতা, গণআন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে বেশকিছু পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র স্মরণীয় হয়ে আছে। এসব চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ফতেহ লোহানীর আসিয়া (১৯৫৭-৬০); জহির রায়হানের কখনো আসেনি (১৯৬১), কাঁচের দেয়াল (১৯৬৩), সংগম (১৯৬৪), আনোয়ারা (১৯৬৬), জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), সালাহউদ্দিনের সূর্যস্নান (১৯৬২), যে নদী মরুপথে (১৯৬১), ধারাপাত (১৯৬৪), খান আতাউর রহমানের অনেক দিনের চেনা (১৯৬৪), নবাব সিরাজদ্দৌল্লা (১৯৬৭), সোয়ে নদীয়া জাগে পানি (১৯৬৭), আবার তোরা মানুষ হ (১৯৭৩), এখনো অনেক রাত (১৯৯৭), বেবী ইসলামের তানহা (১৯৬২) ও চরিত্রহীন (১৯৭৬), সাদেক খানের নদী ও নারী (১৯৬৫), এহতেশামের এদেশ তোমার আমার (১৯৫৯), সুভাষ দত্তের সুতরাং (১৯৬৪), কাগজের নৌকা (১৯৬৬), আয়না ও অবশিষ্ট (১৯৬৭), অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী (১৯৭২), বসুন্ধরা (১৯৭৭), ডুমুরের ফুল (১৯৭৮), ইবনে মিজানের শহীদ তিতুমীর (১৯৬৮), আলমগীর কবিরের ধীরে বহে মেঘনা (১৯৭৩), সূর্যকন্যা (১৯৭৫), সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭), রূপালী সৈকতে (১৯৭৯), মোহনা (১৯৮২), পরিণীতা (১৯৮৬), চাষী নজরুল ইসলামের ওরা এগারো জন (১৯৭২), সংগ্রাম (১৯৭৩), দেবদাস (১৯৮২), চন্দ্রনাথ (১৯৮৪), শুভদা (১৯৮৬), হাঙর নদী গ্রেনেড (১৯৯৮), আমজাদ হোসেনের নয়নমণি (১৯৭৫), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৯), ভাত দে (১৯৮৩), হারুনর রশীদের মেঘের অনেক রং (১৯৭৬), মিতার আলোর মিছিল (১৯৭৪) ও লাঠিয়াল (১৯৭৬), শেখ নিয়ামত আলী ও মসিহউদ্দিন শাকেরের সূর্য-দীঘল বাড়ী (১৯৭৯), শেখ নিয়ামত আলীর দহন (১৯৮৫) আজিজুর রহমানের অশিক্ষিত (১৯৭৮), ছুটির ঘণ্টা (১৯৮৯), শিবলী সাদিকের নোলক (১৯৭৮), ঋত্বিক ঘটকের তিতাস একটি নদীর নাম (১৯৭৩), রাজেন তরফদারের পালঙ্ক (১৯৭৬), সৈয়দ হাসান ইমামের লালন ফকির (১৯৭৩), লাল সবুজের পালা (১৯৮১), আবদুল্লাহ আল মামুনের সারেং বৌ (১৯৭৮), কবীর আনোয়ারের সুপ্রভাত (১৯৭৬), মতিন রহমানের লাল কাজল (১৯৮৩), রফিকুল বারী চৌধুরীর পেনশন (১৯৮৫), মোস্তাফিজুর রহমানের শঙ্খনীল কারাগার (১৯৭৪), হুমায়ূন আহমেদের আগুনের পরশমণি (১৯৯৫), শ্রাবণ মেঘের দিন (২০০০) ও শ্যামল ছায়া (২০০৪), আখতারুজ্জামানের পোকামাকড়ের ঘর বসতি (১৯৯৬), মোরশেদুল ইসলামের দুখাই (১৯৯৭), তানভীর মোকাম্মেলের চিত্রা নদীর পাড়ে (২০০০), লালনশাহ (২০০২), রাবেয়া (২০০৯), সাইদুল আনাম টুটুলের আধিয়ার (২০০৩), মোস্তফা সারোয়ার ফারুকীর থার্ডপারসন সিঙ্গুলার নাম্বার (২০০৯) প্রভৃতি।

অন্যদিকে বাণিজ্যকভাবে সফল উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে এহতেশামের চান্দা (১৯৬২), চাঁদনী (১৯৯১), সালাহউদ্দীনের রূপবান (১৯৯৫), মুস্তাফিজের মালা (১৯৬৫), দিলীপ সোমের সাত ভাই চম্পা (১৯৬৮), খান আতাউর রহমানের অরুণ বরুণ কিরণমালা (১৯৬৮), রহমানের মিলন (১৯৬৪), কাজী জহিরের অবুঝ মন (১৯৭২), ময়নামতি (১৯৬৯), মিতার এতটুকু আশা (১৯৬৮), জহিরুল হকের রংবাজ (১৯৭৩), এ.জে মিন্টুর চ্যালেঞ্জ (১৯৮৩), সোহানুর রহমান সোহানের কেয়ামত থেকে কেয়ামত (১৯৯২), তোজাম্মেল হক বকুলের বেদের মেয়ে জোসনা (১৯৮৯), দেওয়ান নজরুলের দোস্ত দুশমন (১৯৭৭), দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ওমর শরীফ (১৯৮০), এফ কবীর চৌধুরীর সওদাগর (১৯৮১), শিবলী সাদিকের ভেজাচোখ (১৯৮৭), মতিন রহমানের তোমাকে চাই (১৯৯৬), রঙিন নয়নমণি (১৯৯৮), সোহেল রানার গুনাহগার (১৯৭৮), শহীদুল ইসলাম খোকনের বিশ্ব প্রেমিক (১৯৯৬), বাদল খন্দকারের সাগরিকা (১৯৯৮), মোহাম্মদ হোসেনের রাঙ্গা বৌ (১৯৯৮), গিয়াসউদ্দিন সেলিমের মনপুরা (২০০৯) প্রভৃতি।

খ্যাতিমান চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব বাংলদেশের চলচ্চিত্র অনেক নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীদের মেধা ও অবদানে সমৃদ্ধ। এঁদের মধ্যে খ্যাতিমান নির্মাতা হলেন আবদুল জববার খান, ফতেহ লোহানী, এহতেশাম, মুস্তাফিজ, সালাহউদ্দিন, মহিউদ্দিন, জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, বেবী ইসলাম, সাদেক খান, সুভাষ দত্ত, কামাল আহমেদ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর চলচ্চিত্র নির্মাণে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন আলমগীর কবীর, আমজাদ হোসেন, চাষী নজরুল ইসলাম, আবদুল সামাদ, শেখ নিয়ামত আলী, বাদল রহমান, শিবলী সাদিক, কাজী হায়াৎ, মতিন রহমান, ছটকু আহমেদ, মোরশেদুল ইসলাম, তারেক মাসুদ, নার্গিস আখতার, তানভীর মোকাম্মেল প্রমুখ।

খ্যাতিমান অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের মধ্যে রয়েছেন ফতেহ লোহানী, খান আতা, পূর্ণিমা সেন, সুমিতা, ইনাম আহমেদ, কাজী খালেক, দাগুবর্ধন, বিনয় বিশ্বাস, নারায়ণ চক্রবর্তী, মেহফুজ, আনোয়ার হোসেন, সাইফুদ্দিন, নাসিমা খান, রহমান, শবনম, রোজী, সুজাতা, আজিম, রওশন আরা, রাজ্জাক, কবরী, শওকত আকবর, আনোয়ারা, শাবানা, সুচন্দা, ববিতা, রোজিনা, খলিল, আশীষ কুমার লোহ, সুচরিতা, শাবনুর, মৌসুমি, রিয়াজ, ফেরদাউস, শাকিব খান প্রমুখ।

চলচ্চিত্র পুরস্কার সৃজনশীলতা, নান্দনিকতা, জীবন ও সমাজের প্রতিফলন, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি কারণে বেশকিছু চলচ্চিত্র দেশ বিদেশের পুরস্কার এবং সম্মান পেয়েছে। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছবি হচ্ছে জাগো হুয়া সাভেরা (উর্দু)। এ.জে কারদার পরিচালিত জেলেদের নিয়ে চিত্রায়িত এ ছবি ১৯৫৯ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে দ্বিতীয় পুরস্কার পায়। ছবিটি ১৯৫৯ সালে লন্ডনের হোমার থিয়েটার ও ফিল্ম ইনস্টিটিউট, যুক্তরাস্ট্রের ফ্লাহার্টি ফাউন্ডেশন ও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারেও প্রদর্শিত হয়। ওই বছরে অনুষ্ঠিত অস্কার প্রতিযোগিতায় বিদেশি ভাষা বিভাগেও এ ছবি অংশ গ্রহণের আমন্ত্রণ পায়। জাগো হুয়া সাভেরা সর্বমোট ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়। ১৯৬২ সালে বৈরুত চলচ্চিত্র উৎসবে বেবী ইসলাম পরিচালিত তানহা ছবিটি পুরস্কার লাভ করে। ১৯৬৫ সালে ছিল পূর্ব পাকিস্তানি ছবির জন্যে গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছর ফ্রাঙ্কফুর্ট এশীয় চলচ্চিত্রের উৎসবে সুভাষ দত্ত পরিচালিত সুতরাং দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে পুরস্কার পায়।

১৯৬৭ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে সুভাষ দত্তের আয়না ও অবশিষ্ট বেসরকারিভাবে পুরস্কৃত হয়। ১৯৬৮ সালে নমপেনে অনুষ্ঠিত চলচ্চিত্র উৎসবে সুভাষ দত্তের আবির্ভাব কম্বোডিয়ার রানীর পুরস্কার লাভ করে। ১৯৭৯ সালে মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সুভাষ দত্তের ডুমুরের ফুল শিশু বিভাগে বিশেষ পুরস্কার পায়।

১৯৮০ সালে পশ্চিম জার্মানির মেনহেইমে অনুষ্ঠিত ২৯তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে মসিহউদ্দিন শাকের ও শেখ নিয়ামত আলী পরিচালিত সূর্য-দীঘল বাড়ী তৃতীয় পুরস্কার অর্জন করে। মেনহেইমের ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট জুরি কমিটি মানবিক আবেদনের জন্যে ছবিটিকে পুরস্কৃত করে। পর্তুগালের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র সংসদ ফেডারেশনও সুর্য-দীঘল বাড়ী– কে পুরস্কৃত করে। শেখ নিয়ামত আলী পরিচালিত দহন ১৯৮৬ সালে কার্লোভেরি চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার অর্জন করে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রথম চলচ্চিত্র পুরস্কার চালু হয় বেসরকারি উদ্যোগে ১৯৫৯ সালে ঢাকার সাপ্তাহিক চিত্রাকাশ পত্রিকার উদ্যোগে। সরকারি উদ্যোগে প্রেসিডেন্ট পদক চালু হয় ১৯৬০ সালে। ওই বছর শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার পায় ফতেহ লোহানী পরিচালিত আসিয়া। এ পুরস্কার মাত্র একবারই প্রদান করা হয়েছিল।

১৯৬৫ সালের আগস্ট মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় পাকিস্তান চলচ্চিত্র উৎসব। এ উৎসবে শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা, পরিচালনা, কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ, সঙ্গীত, আলোকচিত্র, অভিনয়, সম্পাদনা, গান রচনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পুরস্কার দেওয়া হয়। ওই বছর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে জহির রায়হান রচিত, প্রযোজিত ও পরিচালিত কাঁচের দেয়াল পুরস্কার পায়। এ ছাড়াও ছবিটি সংলাপ (জহির রায়হান), সম্পাদনা (এনামুল হক), শব্দ গ্রহণ (এম.এ জহুর), সঙ্গীত পরিচালনা (খান আতাউর রহমান), প্রধান মহিলা চরিত্রে অভিনয় (সুমিতা) ও বিশেষ মহিলা চরিত্রে অভিনয়ের জন্য (আসিয়া আলী) পুরস্কৃত হয়। অন্যান্য পুরস্কার হলো: গীতিকার খান আতাউর রহমান (সূর্যস্নান), চিত্রনাট্যকার সালাহউদ্দীন (সূর্যস্নান), অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম (অনেক দিনের চেনা), সহঅভিনেতা সুভাষ দত্ত (তালাশ ও মিলন), বিশেষ সম্মাননা সনদ রহমান (মিলন)।

বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম পুরস্কার প্রবর্তন করে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস)। ‘সামাজিক অঙ্গীকার ‘সৃজনশীল চলচ্চিত্রের মাধ্যমে’ এ শ্নোগানভিত্তিক পুরস্কারের প্রতীক রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ১৯৭২ ও ১৯৭৩ এ দুবছরকে একক ধরে প্রথম পুরস্কার প্রদান করা হয়। শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা, পরিচালনা, কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ, গান, অভিনয় (প্রধান পুরুষ ও মহিলা চরিত্র), অভিনয় (পার্শ্ব পুরুষ ও মহিলা চরিত্র), চিত্রগ্রহণ, সঙ্গীত, নেপথ্য কণ্ঠ (পুরুষ ও মহিলা), সম্পাদনা, শব্দগ্রহণ, প্রামাণ্য বা বিকল্প চলচ্চিত্র ও বিশেষ ক্ষেত্রে কৃতিত্বের জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। বাচসাস পুরস্কার ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত নিয়মিতভাবে প্রদান করা হয়। মাঝখানে বিরতির পর ১৯৯৫ সালে আবার তা চালু হয়। কিন্তু পরে আবার তাও অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ১৯৭৮ সাল থেকে চিত্রালী সম্পাদক ও বাচসাস এবং অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ মোহাম্মদ পারভেজ স্মরণে অন্য একটি পুরস্কার চালু করা হয়। চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

সরকারিভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান শুরু হয় ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র থেকে। চলচ্চিত্রের মান ও গুণগত উন্নয়ন, ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহ দান এবং সৃজনশীল ক্ষেত্রে অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্যে এ পুরস্কার চালু হয়। পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে নগদ অর্থ, প্রশংসাপত্র ও ধাতব পদার্থে নির্মিত ভাস্কর্য ‘কলসি কাঁখে রমণী’। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯টি শাখায় কৃতিত্বের জন্যে পুরস্কার প্রদান করা হতো। ১৯৯২ সালে তা বাড়িয়ে ২১টি করা হয়। শ্রেষ্ঠত্বের জন্যে পুরস্কার দেওয়া হয় চলচ্চিত্র, পরিচালনা, কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ, গান, প্রধান অভিনেতা, প্রধান অভিনেত্রী, পার্শ্ব অভিনেতা, পার্শ্ব অভিনেত্রী, সঙ্গীত পরিচালক, গায়ক, গায়িকা, সাদাকালো চিত্রগ্রাহক, রঙিন চিত্রগ্রাহক, সম্পাদক, শব্দগ্রাহক, শিল্প নির্দেশক, শিশু শিল্পী, বিশেষ শিশু শিল্পী ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চিত্র।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি ১৯৯১ সাল থেকে চলচ্চিত্র পুরস্কার চালু করেছে। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন, সমিতি-সংস্থা চলচ্চিত্রের বিভিন্ন শাখায় পুরস্কার প্রদান করে থাকে।

গ্রন্থনা : পরিতোষ বড়ুয়া, তথ্যসূত্র : বাংলাপিডিয়া এবং আমরা ঢাকা

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test