E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার খবর কেন ছাপে না পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম?

২০১৭ জুলাই ১০ ১৩:৫২:২৮
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার খবর কেন ছাপে না পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম?

নিউজ ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গে, সাধারণভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা দাঙ্গার খবর গণমাধ্যমে ছাপা হত না। বাবরি দাঙ্গা বা গোধরা দাঙ্গার পরে কোনও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রায় আসেই নি।

কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সেখানে যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা চলছিল, তার খবর বিস্তারিত ভাবে ছেপেছে বা দেখিয়েছে সব গণমাধ্যমই। সকলেরই চোখে পড়েছে গণমাধ্যমের এই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনটা।

প্রতিটি সংবাদপত্রেই গত কয়েকদিনের প্রথম পাতার শীর্ষ শিরোনাম থেকেছে ওই সাম্প্রদায়িক অশান্তি। একদিকে যেমন ছাপা হয়েছে অশান্তি - পুলিশী পদক্ষেপের সংবাদ, তেমনই থেকেছে হিন্দু আর মুসলমান - দুই সম্প্রদায়ের সম্প্রীতিরও নানা খবর।

সাম্প্রদায়িক অশান্তির সময়ে সেই সংক্রান্ত খবরই যে সংবাদমাধ্যমে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু এতদিন পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমে তা কেন থাকত না?

কেন সাম্প্রদায়িক হানাহানির খবর সম্পূর্ণভাবে চেপে যেত স্থানীয় সংবাদমাধ্যম? জানতে চেয়েছিলাম প্রায় চল্লিশ বছর ধরে কলকাতা এবং দিল্লিতে সাংবাদিকতা করছেন এমন একজন, আশিস ঘোষের কাছে।

তিনি বলছিলেন, "এতদিন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বা দাঙ্গার খবরের ব্যাপারে আমাদের একটা স্বনিয়ন্ত্রিত নিষেধ ছিল। আমরা কেউ দাঙ্গার খবর করতাম না। তবে এই নিয়ে একটা বিতর্ক সবসময়েই ছিল। একদল মনে করত দাঙ্গার খবর ছাপলে সেগুলো সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়াতে উস্কানি দেবে অন্যান্য জায়গায়। আবার পাল্টা মত ছিল খবর না ছাপলে মিথ্যা খবর, গুজব এসব ছড়াবে, তাই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সঠিক খবর ছাপাই উচিত।"

আরেক বর্ষীয়ান সাংবাদিক শুভাশীষ মৈত্র, যিনি প্রিন্ট, টিভি এবং ওয়েব - তিনটি মাধ্যমেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলিয়েছেন, তিনি বলছিলেন কিছুদিন ধরেই গণমাধ্যমের মধ্যে একটা প্রশ্ন উঠছিল যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার খবর সম্পূর্ণভাবে চেপে যাওয়াটা যথার্থ হচ্ছে কী না, তা নিয়ে।

দীর্ঘদিনের বিতর্ক আর সম্প্রতি বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করলেও পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যে যেসব ছোটখাটো সাম্প্রদায়িক অশান্তি হয়েছে, তার প্রতিবেদন প্রকাশ করে নি।বসিরহাট-বাদুরিয়ার ঘটনাও প্রথম দুদিন দেখানো হয় নি কোনও গণমাধ্যমেও। গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে প্রথমে টিভি চ্যানেলগুলিতে, এবং পরের দিন সকালে খবরের কাগজে বড় খবর হিসাবে সামনে উঠে আসে বিষয়টা।

গণমাধ্যমের এই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের একটা কারণ সামাজিক মাধ্যম।

ইদানিং মাঝে মাঝেই সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক ছবি বা পোস্ট সামাজিক মাধ্যমে ছড়ায়। এবারেও অশান্তির শুরু হয়েছে মুসলমানদের কাছে পবিত্র কাবাঘরের একটি ফটোশপ করা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করাকে কেন্দ্র করে। আর তারপরে গত কয়েকদিন সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভুয়ো খবর, ফটোশপ করা ছবি, অন্য দেশ বা অন্য রাজ্যের কোনও ঘটনার ছবি শেয়ার করা হয়েছে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে। যা থেকে আরও উত্তেজনা ছড়িয়েছে।

দীর্ঘদিনের টি ভি সাংবাদিক ও ইটিভি নিউজ বাংলার প্রধান বিশ্ব মজুমদারের কথায়, "আমরা এতদিন এরকম খবরগুলো করতাম না কারণ মনে হত যে একজায়গায় অশান্তি হচ্ছে এরকম খবর করলে অন্য জায়গাতেও অশান্তি ছড়াতে পারে। কিন্তু এখন সামাজিক মাধ্যম এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, অনেক সময়ে বিকৃত করে বা মিথ্যাভাবেও এমন কিছু তথ্য ছড়াচ্ছে, যেন মনে হচ্ছে বিরাট কিছু একটা হয়ে গেছে। সামাজিক মাধ্যমের এই চাপটা আটকাতে গেলে সত্যিটা জানাতে হবে, বাস্তবে কী হচ্ছে, সেটা দেখাতে হবে।"

গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমের ওপরে নিয়মিত নজর রাখেন কলকাতার কলামিস্ট গর্গ চ্যাটার্জি। তিনি বলছিলেন যে সামাজিক মাধ্যমের গুজবের সমান্তরালে বিশ্বাসযোগ্য গণমাধ্যমগুলির দায়িত্বশীল ভাবে সংবাদ পরিবেশ করাটা সময়ের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

"চারিদিকে এখন মিথ্যা খবরের ওয়েবসাইট - কয়েকটা মুসলমানদের, বেশীরভাগই হিন্দুত্ববাদীদের ভুয়ো খবরের ওয়েবসাইট। নানারকম ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্ট সেগুলোতে দেওয়া হতে থাকে। এটা খুব দরকার ছিল যে প্রাতিষ্ঠানিক যে মাধ্যম, সেগুলোর থেকে বিশ্বাসযোগ্য খবর পরিবেশন। যাতে ওই মিথ্যা খবরগুলোকে কাউন্টার করা যায়। এতদিন এটা হত না, এবারই দেখছি গণমাধ্যম এগিয়ে এসে নিজেদের দায়িত্বটা পালন করেছে ভাল ভাবে," বলছিলেন মি. চ্যাটার্জি।

সাংবাদিক শুভাশিষ মৈত্র সহ অনেকেই মনে করছেন যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নিজেই যেহেতু সংবাদ সম্মেলন ডেকে এবারের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার প্রসঙ্গ প্রকাশ করে দিয়েছিলেন, তাই গণমাধ্যমও সেটা দেখাতে বা লিখতে শুরু করে।

এমনটা মনে করছেন আরও বেশ কিছু সিনিয়র সাংবাদিক-সম্পাদকও।

তবে আজ মমতা ব্যানার্জী একটি সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম অশান্তির সঠিক রিপোর্টিং করলেও দুটি জাতীয় চ্যানেল তা করে নি। তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন মমতা ব্যানার্জী।

(ওএস/এসপি/জুলাই ১০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test