E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সকলের দাবি বাকসু

২০১৭ সেপ্টেম্বর ২৮ ১০:৪০:২৮
সকলের দাবি বাকসু

বাকৃবি প্রতিনিধি : দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (বাকসু) নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। ১৯৬১ সালে বাকৃবি প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচন মোটামুটি নিয়মিত হতো।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষক ও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলে থাকেন, তারা বাকসুর নির্বাচন চান। এছাড়া বাম সংগঠনগুলোকে এ দাবিতে মিছিল করতেও দেখা যায়। কারণ এর ভেতর দিয়ে একদিকে যেমন নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হয়।

জানা যায়, ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাকসু নির্বাচনসংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাকসু নির্বাচনের পরিবেশ তদারক ও সব ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়। ওই কমিটির প্রধান ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর ড. একেএম জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, তখন আমরা নির্বাচন সংক্রান্ত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে পরে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি। ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এগিয়ে আসলে মাত্র ২ মাসেই এ নির্বাচন সম্ভব।

বাকসুর সর্বশেষ নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আরিফ জাহাঙ্গীর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে কাউকে কথা বলতে শোনা যায় না। ফলে শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘ ২৮ বছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হয়েছে মাত্র দুইবার। বাকৃবির সাধারণ শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক-সামাজিক প্রতিটি সংগঠনের প্রাণের দাবি ছাত্রসংসদ নির্বাচন। বিভিন্ন সময় বাকসু নির্বাচনের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হওয়ার পরও তা না হওয়াটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য লজ্জার।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. মো. নাজমুল হক স্বপন বলেন, আমাদের সময়ে সাংস্কৃতিক দল এক সময় খুবই সংগঠিত ছিল। বাকসুর বার্ষিকী প্রকাশনাও ছিল অনেক উঁচু। আজ সে সব স্মৃতির অংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল যেকোনো ছাত্র সংগঠনেরই ছাত্র অধিকার এবং শিক্ষা-অধিকার নিয়ে ভূমিকা থাকবে এটা সবাই আশা করে। অথচ ছাত্রদের বসবাস এবং শিক্ষার দুর্বল অবকাঠামো উন্নয়ন, ভুল শিক্ষানীতি, এ সবের বিরুদ্ধে ছাত্রদের সংগঠিত অবস্থান চোখে পড়ে খুবই কম।

আবার বর্তমানে নবাগত শিক্ষার্থীর অনেকে জানেই না বাকসু কী? শিক্ষার্থীদের বাকসু সম্পর্কে জানতে চাইলে তাদের অনেকেই এখন জানেই না ছাত্র সংসদ কী? আবার অনেকেই বললেন, তারা শুনেছেন ছাত্র সংসদের নির্বাচন মানে একটি উৎসব। ক্যাম্পাসের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের বাকসু অফিসে কী হয়, কার স্বার্থে অফিসটি? সরজমিনে দেখা গেছে, বাকসুর জন্য বরাদ্দকৃত ১৬টি কক্ষ এখন অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ক্যাম্পাসের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে এই ছাত্র সংসদের নির্বাচন না হওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে তাদের। আন্দোলনের মাধ্যমে এই নির্বাচন আদায়ের কথা ভাবছেন তারা। বাকসুর নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা। বিভিন্ন সময় প্রশাসনকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও তিনি বিষয়টির প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করছেন না বলে অভিযোগ ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের।

বাকৃবি ছাত্রলীগের সভাপতি সবুজ কাজী ও সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ রুবেল বলেন, গণতান্ত্রিক উপায়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। দেশের জাতীয় রাজনীতিতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের অনেকেই ছাত্রসংসদের নেতা ছিলেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া চর্চা মৌলিক চাহিদার মধ্যে পড়ে। কিন্তু বাকসু না থাকায় শিক্ষার্থীরা এসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে অবিলম্বে বাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ইয়ার মাহমুদ বলেন, আমরা বাকসু নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি। শুধু বাকসুর মাধ্যমে নির্বাচিত নেতারাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বলতে পারেন। ক্যাম্পাসে সব ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করে বাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি তানভীর আহমেদ রিয়াদ বলেন, বাকসুর নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীদের অধিকার দৃঢ় এবং শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রশাসনের কাল বিলম্ব করে আমাদের সঙ্গে বার বার প্রতারণা করা হয়েছে। বাকসু নির্বাচনের দাবিতে আমরা আন্দোলনের কথা চিন্তা করছি। আর তা না করলে বাকসু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি রাফিকুজ্জামান ফরিদ বলেন, বাকসুর নির্বাচনের জন্য আমরা সব সময়ই সোচ্চার ছিলাম, এখনও আছি। নির্বাচনের জন্য আমরা প্রশাসনকে বার বার বলেছি। আমাদের চলমান ৬ দফা দাবির অন্যতম একটি হচ্ছে বাকসু নির্বাচন। অবিলম্বে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করে বাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

দীর্ঘদিন বাকসু নির্বাচন না হওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হচ্ছে প্রতি সেমিস্টারে। নির্বাচিত ভিপি-জিএসের স্বাক্ষর ছাড়া এ টাকা উত্তোলনের এখতিয়ার নেই সেহেতু এ টাকাগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়া বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরী বলেন, বাকসু নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা আন্তরিক। যদি সবাই চায় তবে বাকসু নির্বাচন হবে। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।

বাকৃবির উপাচার্য ড. মো. আলী আকবর বলেন, বাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আমি আন্তরিক। বাকসু না থাকায় প্রশাসন চালাতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তবে বাকসু গঠনের ক্ষেত্র তৈরি করতে ছাত্রদের এগিয়ে আসতে হবে।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test