E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বন্ধ হয়ে গেল ঢাবির তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

২০১৭ অক্টোবর ১০ ২৩:২৮:০৭
বন্ধ হয়ে গেল ঢাবির তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

নিউজ ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অন্তর্ভুক্ত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স প্রোগ্রামে ভর্তি এই বছর থেকে স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে মাস্টার্স প্রোগ্রাম আগের মতই চলবে।

জানা যায়, যে অনার্স প্রোগ্রাম স্থগিতের জন্য দুইজন শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকটে একটি আবেদন দাখিল করে। অবকাঠামোগত সুবিধা, শিক্ষক ও উপযুক্ত ল্যাবরেটরির অভাবে বিভাগের অনার্সের কার্যক্রম স্থগিত করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। স্থগিতাদেশের একটি চিঠি বিভাগে পাঠানো হয় তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। যেসব কারণে নতুন করে অনার্স প্রোগ্রামে ভর্তি স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে, সেসব কারণের যুক্তিসম্মত বিরোধিতা করে চিঠি পাঠানো হয়েছে বিভাগের পক্ষ থেকে।

অনার্স প্রোগ্রামের গুরুত্ব জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গোলাম মোহাম্মদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আগে এই বিভাগে শুধু মাস্টার্স প্রোগ্রামে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানো হতো। পদার্থবিজ্ঞান, গণিত কিংবা ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করে অনেকেই তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্সে ভর্তি হয়। কিন্তু তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান পড়ার জন্য পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিতের উপর যেসব কনসেপ্ট থাকা দরকার, সেটা অনেকের মধ্যেই থাকে না। সেজন্য তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান পড়ানোর মূল উদ্দেশ্য পুরোপুরিভাবে পূরণ করা যাচ্ছিলো না। সেজন্য অনার্স প্রোগ্রাম চালু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যেন এই বিষয়ে ভালোভাবে পড়ার যোগ্যতা অর্জনে তারা সেভাবে গড়ে উঠতে পারে।

তাই তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান পড়ানোর মূল উদ্দেশ্য পূরণ করতে হলে, মাস্টার্সের সাথে অবশ্যই অনার্স প্রোগ্রাম থাকা বাঞ্ছনীয়।’ প্রশাসন যে অবকাঠামোগত, শিক্ষক ও উপযুক্ত ল্যাবের অভাবের কারণের কথা বলেছে, সেটার প্রেক্ষিতে তিনি জানান, ‘এসব মিথ্যা যুক্তি। আমাদের বিভাগে একই সাথে মাস্টার্সসহ ১ম বর্ষ থেকে ৩য় বর্ষ পর্যন্ত ক্লাস নেয়ার সুযোগ রয়েছে। আর ১ম বর্ষের জন্য যে ল্যাব আছে, সেটা অনেক মানসম্মত। ২য় বর্ষে কোন ছাত্র-ছাত্রী নেই বলে ২য় বর্ষের ল্যাব নাই। তবে সেটাও করা যাবে। আর নতুন বিভাগ খোলার পর এমনি শিক্ষক কম থাকে, আস্তে আস্তে শিক্ষক বাড়ানো যায়। আমরা চাইলেই আরও ৪ জন নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারি।’

বর্তমানে ২০১৬-১৭ সেশনের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন বলেছে চলমান ব্যাচ স্বাভাবিকভাবে তাদের অনার্স প্রোগ্রাম শেষ করবে। শুধু নতুন করে কাউকে ভর্তি করানো হবে না। কিন্তু এটার একটা বিরূপ প্রভাব পড়বে তাদের উপর। ওরা এখান থেকে পাশ করে যদি দেশের বাইরে কোথাও এপ্লাই করে, সেক্ষেত্রে তারা নিগৃহীত হবে।’

বিভাগে বর্তমানে ৪ জন শিক্ষক এবং ২৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে, যারা ২০১৬-১৭ সেশনে অনার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছিলো। বিভাগের ১ম বর্ষের একজন শিক্ষার্থীকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা আসলে এই ব্যাপারে কিছুই জানি না। তবে এটা যদি সত্য হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কই যাবে? আশা করি আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করবে।’

অন্য আরেক শিক্ষার্থী জানান, ‘আমরা এমন এক বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করবো, যেটা কেউ জানবে না যে অনার্সে এই বিভাগে পড়ানো হয়। আমাদের ক্যারিয়ারের জন্য এটা হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’

বিভাগের সাবেক ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, এই বিভাগ থেকে পাশ করার পর সবাই পৃথিবীর কোন না কোন ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য স্কলারশিপ পেয়ে যায়। সেখানে এমন একটি স্বনামধন্য বিভাগ নিয়ে কেনো এমন ষড়যন্ত্র হবে? কারা বিভাগের বিরুদ্ধে কাজ করছে, সেটাই ভাববার বিষয়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিলে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। শোনা যায় যে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে অনার্স প্রোগ্রাম স্থগিতের আবেদন করেছে, তারা বিভাগের প্রতি আন্তরিক নয়। অনার্স প্রোগ্রাম চালু থাকলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়া সহ তাদের অন্যান্য ব্যক্তিগত কার্যক্রম পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটবে। এমনকি তারা বিভাগে সপ্তাহে একবার এসে শুধুমাত্র শনিবার ক্লাস করিয়েই দায়িত্ব শেষ করে। অন্যদিকে অনার্স প্রোগ্রাম চালু থাকলে নিয়মিত বিভাগে সময় দিতে হবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে যে, ফ্যাকাল্টির ডিনও প্রথমে এই স্থগিতাদেশের আবেদন সম্পর্কে জানতেন না। সাধারণত যে কোন বিভাগ বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত সুপারিশ করে ডিনস কমিটি এবং সেটা এক্সিকিউট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল। সেখানে কাউকে না জানিয়ে এমন একটি সিদ্ধান্ত কেনো নেয়া হলো, সেটা খতিয়ে দেখার বিষয়।

উল্লেখ্য যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে খুব সফল হলেও, প্রয়োজনীয় ফ্যাকাল্টি এবং অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণে মাত্র তিন বছর পর বিভাগটি বন্ধ হয়ে যায়। অধ্যাপক এ.এম. হারুন-অর-রশিদ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। ড. গোলাম মোহাম্মদ ভুঁইয়া, ডঃ আব্দুল মোমেন এবং ড. মোঃ কামরুল হাসান বিভাগটির পুনরুজ্জীবনের প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২১ শতকের মৌলিক বিজ্ঞান অধ্যয়নের গুরুত্ব উপলব্ধি করে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভাগ পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। অবশেষে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আন্তরিক ইচ্ছার সঙ্গে এটি ২০০৭ সালে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়।

জীববিজ্ঞান শুধুমাত্র জীবন ও জীবন্ত প্রাণীর সাথেই কাজ করে; রসায়ন সমস্ত উপাদান, যৌগিক এবং সেইসাথে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার সময় সঞ্চালিত পরিবর্তন নিয়ে কাজ করে, কিন্তু তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে অন্য সব সবকিছু সঙ্গে কাজ করে সমগ্র মহাবিশ্ব বুঝতে চেষ্টা করা হয়। এটি বোঝায় এবং ব্যাখ্যা করে যে, একটি জীবের মধ্যে ডিএনএ থেকে নক্ষত্র এবং ছায়াপথসমূহের সবকিছু কীভাবে একই মৌলিক উপাদানগুলি থেকে গঠিত হয়।

তথ্যসূত্র : বিডিমর্নিংডটকম

(ওএস/অ/অক্টোবর ১০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test