E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চার দশকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

২০১৮ নভেম্বর ২২ ১৪:২১:২৮
চার দশকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইবি প্রতিনিধি : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ মীর মশাররফ হোসেন, বাউল সম্রাট লালন সাঁইজি, গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙাল হরিনাথের স্মৃতিধন্য দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী কুষ্টিয়া। ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলার সীমান্তে শান্তিডাঙা-দুলারপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীন বাংলার প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় এটিই। বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ ৩৯ পেরিয়ে ৪০ বছরে পা রাখলো।

বিশ্ববিদ্যালয়টির এই ৪০ বছরে যেমন অনেক প্রাপ্তি রয়েছে তেমনি রয়েছে অনেক না পাওয়ার বেদনা। তবে বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জোরে শোরে চলছে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম। ফলে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।

খুলনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের পাশে দৃষ্টিনন্দন ও সুবৃহৎ প্রধান ফটক থেকে প্রবেশ দ্বার দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ম্যুরাল ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’। একটু ডানেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ‘মুক্ত বাংলা’। আর বা দিকে পা বাড়ালেই দেখা যাবে সততার স্মারক ‘সততা ফোয়ারা’। রয়েছে ভাষা শহীদদের স্মৃতিতে তৈরি ক্যাম্পাস ভিত্তিক সবচেয়ে বড় শহীদ মিনার, স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত শহীদদের স্মরণে দৃষ্টিনন্দন ও অনন্য কারুকার্যে তৈরি ‘স্মৃতিসৌধ’। একটু সামনে এগিয়ে গেলে বিস্তৃত সবুজে ঘেরা ডায়না চত্বর যেটি সবসময় শিক্ষার্থীদের আড্ডায় মুখরিত থাকে। এটিই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ দ্বারের রূপ।

বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পেছনে রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। দেশের গণমানুষের চাহিদা পূরণ করতে তৎকালীন সরকার ১৯৭৬ সালে ১ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। পরে ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়ার সীমান্ত শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর নামক স্থানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ইসলামী ও আধুনিক শিক্ষার সমন্বয়ে উচ্চ শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট ১৯৮০(৩৭) পাস হয়। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমানে ১৭৫ একর ভূমির ওপর ৮টি অনুষদ, ৩৩টি বিভাগ, ১টি ইনস্টিটিউট, ১টি স্কুল ও ১২ হাজার ৮১২ জন শিক্ষার্থীসহ ৪১০ জন শিক্ষক নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

এখন পর্যন্ত ১২ জন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়ীত্ব পালন করেছেন। প্রথম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ড. এ.এন.এম.মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী।

তবে অপ্রাপ্তিও রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের। শতভাগ আবাসিকের মাস্টার প্ল্যান নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও ৩৮ বছর পরও সে স্বপ্ন এখনও স্বপ্নই রয়ে গেছে। বর্তমানে মাত্র ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা ভোগ করছেন। বাকি ৭৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী মেস ও ক্যাম্পাস থেকে ২৪ ও ২২ কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া ঝিনাইদহ শহরে অবস্থান করছেন। পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই পরিবহন নির্ভর হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। রয়েছে বিপুল অঙ্কের বাজেট ঘাটতিও।

তবে বর্তমান উপাচার্যের আশ্বাস আশার সঞ্চার করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর অবহেলিত এ প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। সেশনজটে পিষ্ট শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে উদ্যোগ গ্রহণ করে অনেকটা সফলতা অর্জন করেছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম তোহা বলেন, চার দশকে বিশ্ববিদ্যালয়টি নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমানে পূর্ণাঙ্গতা পেয়েছে যা বড়ই সুখের। সম্প্রতি পাস হওয়া মেগা প্রজেক্ট সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘ ২৮ বছরের শিক্ষকতা জীবনে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার ভেতরে যে প্রতিচ্ছবি ছিল তা বাস্তবে রূপ নেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. শাহিনুর রহমান বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম এ বিশ্ববিদ্যালয়টি অতীতের তুলনায় বর্তমান প্রশাসনের আমলে অনেক বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে। অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন শাখার উন্নয়ন ও উন্নত মানের স্নাতক তৈরির লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মদিনে উপাচার্য হিসেবে সকল শিক্ষক -শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে আমার আবেদন বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কতটুকু দিয়েছে সে হিসাব না কষে আমারা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেয়ার জন্য কতটা প্রস্তুত সেদিকে একবার দৃষ্টি দেয়া দরকার।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test