E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ডাকসুতে ওরা অন্য রকম তিন প্রার্থী

২০১৯ মার্চ ০৫ ১৪:৫৯:৫০
ডাকসুতে ওরা অন্য রকম তিন প্রার্থী

ঢাবি প্রতিনিধি : চিবল সাংমা, আমজাদ হোসেন ও মো. রুবেল মিয়া –এরা তিনজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) আসন্ন নির্বাচনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে একজন ছাত্রলীগ ও একজন বামজোট থেকে, অপরজন লড়ছেন স্বতন্ত্রভাবে। তবে অন্য সব প্রার্থী থেকে এরা তিনজনই আলাদা। এর মধ্যে চিবল শারীরিক প্রতিবন্ধী, আর আমজাদ ও রুবেল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী।

তাই অন্যান্য প্রার্থীদের থেকে এদের ভিন্নতা রয়েছে। প্রতিনিয়তই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাদের। তবে চোখে স্বপ্ন, মনের জোরে জয় করতে চান শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে। এগিয়ে যেতে চান সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায়। দেখিয়ে দিতে চান শারীরিক অক্ষমতা মানে হেরে যাওয়া নয়, ইচ্ছে শক্তির কাছে সব প্রতিবন্ধকতাই হার মানে। বরং তারা ভিন্নভাবে সফল।

তিনজনই জানিয়েছেন নির্বাচিত হলে বিশেষভাবে কাজ করতে চান প্রতিবন্ধীদের জন্য। একই সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের সব আন্দোলনেও পাশে থাকতে চান। আমজাদের ভাষায়- ‘যতদিন বেঁচে থাকি, চেষ্টা করব মানুষের জন্য কিছু করতে। এটাই আমার চাওয়া।’

আমজাদ বাংলা চতুর্থ বর্ষ, চিবল সংস্কৃত বিভাগে স্নাতকোত্তর, আর রুবেল ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র।

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আমজাদ ও রুবেল স্কুল পর্যায়ে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুদের করে দেয়া রেকর্ড শুনেই পড়ছেন। পরীক্ষার সময় শ্রুতি লেখকের সহযোগিতা নেন। চলার সময়ও অন্যের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে। আর চিবল পড়তে পারেন, তবে শারীরিক অক্ষমতার জন্য সব জায়গায় যেতে পারেন না। হুইল চেয়ারে বন্ধুদের সহযোগিতায় চলেন।

ক্যাম্পাসেও এরা পরিচিত মুখ। চিবল হুইল চেয়ারে করে বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে চষে বেড়ান। গিটারে সুর তুলে গান শোনান বন্ধুদের। নিজেও স্বীকার করলেন ক্যাম্পাসে তার বন্ধুর অভাব নেই। কেউ না কেউ তাকে সাহায্য করেন। তার ভাষায়- ‘অনেক ভালোবাসা নিয়ে ক্যাম্পাসে সময় পার করি আমি।’

অন্যদিকে সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য, ডাকসু ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে যাওয়া এক শিক্ষার্থীর নাম আমজাদ। বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে নয়, নিজের তাড়না থেকেই ছোটবেলা থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করার যে প্রবণতা সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আরও বেড়েছে।’

আর রুবেলও ক্লাসে সবার কাছে প্রিয়মুখ। লেখালেখি করেন নিয়মিত। এবারের বইমেলায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।

বামজোট থেকে সদস্য পদে মনোনয়ন পাওয়া মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের জোট মনে করেছে আমি এ জায়গায় সফল হতে পারি। সেই কারণে তারা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। ভালো লাগছে এই ভেবে যে প্রতিবন্ধী মানুষের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কম হলেও এর মাধ্যমে আমি প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করতে পারব।’

চিবল সাংমা বলেন, ‘ছাত্রলীগ আমাকে মনোনয়ন দিয়ে যুগান্তকারী একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি মনে করি ছাত্রলীগ সব সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করে, আদিবাসী ও অবহেলিতদের নিয়ে কাজ করে এটা তার প্রমাণ।’

অপরদিকে রুবেল মিয়া জানান, সাধারণ শিক্ষার্থী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য কাজ করার একান্ত ইচ্ছা থেকেই তিনি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।

তিনজনই জানিয়েছেন, নির্বাচিত হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে পাশে থাকবেন। প্রশাসনের সঙ্গে ক্যান্টিনের খাবার মান বৃদ্ধি, রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা, রাজউকের বিল্ডিং কোড মেনে প্রতিবন্ধীবান্ধব ভবন নির্মাণ, শিক্ষার মানোন্নয়ন, সব শিক্ষার্থীর জন্য আসন নিশ্চিত করণ, বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত করণ, গেস্টরুম ও গণরুম প্রথা বাতিল, গবেষণায় জোর দেয়া, প্রতিবন্ধীদের জন্য রাস্তায় র‌্যাম্প তৈরি,, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি, ক্লাসরুম সঙ্কট দূর করণ, বাসরুট বাড়ানো, প্রতিটি হল ও বিভাগে ন্যূনতম একজন করে প্রতিবন্ধী কর্মকর্তা নিয়োগ নিশ্চিত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে শ্রুতি লেখকের ব্যবস্থা করা, ভালো ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান, ব্রেইল প্রকাশে চাপ দেয়াসহ নানা কাজ করবেন।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test