E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সহিংস উগ্রবাদ রোধে তরুণ-তরুণীদের দীপ্ত শপথ গ্রহণ

২০১৯ জুলাই ০৬ ১৬:৩১:১৩
সহিংস উগ্রবাদ রোধে তরুণ-তরুণীদের দীপ্ত শপথ গ্রহণ

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : এসডিজি অর্জনে সফলতা অর্জন করার জন্য সমাজের কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণগত কারণে কারো প্রতি বৈষম্য করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি। 

শনিবার (৬ জুলাই) সকালে ইনিস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-এ সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধে তরুণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি বলেন, তরুণদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬৬ তে ছয়দফা আন্দোলন, ৬৯ গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০-এর নির্বাচনে যদি আওয়ামী লীগ না জিততো, তাহলে কি আমরা স্বাধীন হতে পারতাম? পারতাম না। সে সময় যদি তরুণরা দেশ ও সমাজের কল্যাণে ভূমিকা পালন করতে পারে, ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে এখনকার তরুণরা কেন দেশের কল্যাণে ব্যবহার হবে না, কেন তারা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সম্প্রীতির বার্তা কেন ছড়িয়ে দিতে পারবে না। আমি মনে করি, অবশ্যই পারবে।

তিনি বলেন, আমাদের আজ শপথ নিতে হবে জঙ্গিবাদ, সহিংসতা, মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আন্দোলন করার। আমাদেরকে সমাজের মানুষের মাঝে সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। আমরা এমডিজি অর্জনে সফলতা অর্জন করতে পেরেছি। একইভাবে এসডিজি অর্জনেও আমাদেরকে সফলতা অর্জন করতে হবে। এজন্য সমাজের কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না। জাতি-ধর্ম-বর্ণগত কারণে কারো প্রতি বৈষম্য করা যাবে না।

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তরুণরা দুঃসাহসী, সৃজনশীল, কর্মক্ষম, উদ্যমী, তারা ঝুঁকি নিতে পারে। তরুণরা সমস্যা নয়, সমাধান। সুশিক্ষা ও মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে মানবস¤পদে পরিণত করা সম্ভব। তরুণরা যাতে মানবম্পদে পরিণত হতে পারে সেজন্য রাষ্ট্রকে প্রধানত দায়িত্ব নিতে হবে। এর পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্ব হবে সন্তানদের যথাযথ খোঁজ-খবর রাখা।

তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ অবশ্যই নির্মূল করতে হবে। তবে শুধুমাত্র বলপ্রয়োগ করেই এর সমাধান হতে পারে না, একইসঙ্গে দরকার একটি বিকল্প ন্যারেটিভ উপস্থাপন। আমরা দেখেছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে আধুনিক বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তালেবানকে পুরোপুরি নির্মূল করতে পারেনি, বরং বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। তাই আমরা মনে করি, জঙ্গিবাদ নির্মূলের জন্য জঙ্গিবাদের মূল কারণ চিহ্নিত করতে হবে এবং গণতন্ত্রহীনতা, বিচারহীনতা এবং সামাজিক বঞ্চনা-বৈষম্যের সমস্যার সমাধান করতে হবে।

শাহীন আনাম বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের তরুণরা দেশকে ভালোবাসে, তারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তাই তারা সহিংসতা কিংবা জঙ্গিবাদের সাথে যুক্ত হতে পারে না। কতিপয় মুষ্টিমেয় পথভ্রষ্ট তরুণের দায় তো সব তরুণরা নিতে পারে না।

তিনি বলেন, আগে মনে করতাম শুধু মাদরাসা ছাত্ররাই জঙ্গিবাদের সাথে যুক্ত। কিন্তু সম্প্রীতি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমরা দেখলাম, শুধু মাদরাসা ছাত্ররাই জড়িত নয়। আমি মনে করি, তরুণদেরকে শুধু অনুপ্রাণিত করলেই হবে না, তাদেরকে বোঝাতে হবে কোন পথ ভালো, কোন পথ মন্দ। একইসঙ্গে পরিপূর্ণভাবে তাদের বিকশিত হওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। জঙ্গিবাদ আমাদের তরুণদের মধ্যে বহুত্ববাদ ও ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন শিক্ষা দিতে হবে।

আরমা দত্ত এমপি বলেন, আমাদের তরুণরা আমাদের জন্য ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড। আমাদের তরুণরাই অতীতের সকল আন্দোলন-সংগ্রাম ও উন্নয়নে অপরিসীম ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু বর্তমানে একটি গোষ্ঠী তরুণদেরকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। আমি মনে করি, তরুণদেরকে যেন কেউ যেন বিপথে নিয়ে যেতে না পারে সেজন্য আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে দায়িত্ব হলো পরিবারের। কারণ আমাদের পরিবার হলো আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান। তাই আমাদের সন্তানদের পারস্পারিক সহমর্মিতা, শ্রদ্ধার শিক্ষা দিতে হবে।

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, প্রত্যেকটি মানুষই একটা বোমা, যদি না আমরা তাদেরকে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করি। আমি মনে করি, সহিংসতা রোধের জন্য প্রথমত নিজের ভেতরকার কুপ্রবৃত্তিগুলো দমন করতে হবে। এর পাশাপাশি সমাজের প্রত্যেক মানুষকে সম্মান করা শিখতে হবে। উন্নয়ন করতে হলে সবাইকে একসাথে নিয়ে চলতে হবে, সবাইকে নিয়েই দেশ বদলাতে হবে। অপ্রাপ্তি-বঞ্চনা এবং ধর্মীয় ও সামাজিক কারণে জঙ্গিবাদের সৃষ্টি হয়। তাই সেদিকেও নজর দিতে হবে।

উল্লেখ্য, তরুণদের সম্পৃক্ত করে সহিংস উগ্রবাদ প্রতিরোধের লক্ষ্যে ‘জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম’ ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর সহায়তায় ‘সম্প্রীতি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। উক্ত প্রকল্পের শিক্ষণ বিনিময়ের লক্ষ্যেই উক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব আরমা দত্ত এমপি, কো-চেয়ারম্যান, পার্লামেন্টারিয়ান ককাস অন চাইল্ড রাইটস ও ভাইস চেয়ারম্যান, প্রিপ ট্রাস্ট, জনাব শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন এবং ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। সভাপতিত্ব করেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, কান্ট্রি ডিরেক্টর, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট ও সভাপতি, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের সম্পাদক জনাব নাছিমা আক্তার জলি। অনুষ্ঠানে সম্প্রীতি প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেশ কয়েক তরুণ তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।

(পিআর/এসপি/জুলাই ০৬, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test