E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

দুধে সহনীয় অ্যান্টিবায়োটিক থাকলে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই

২০১৯ জুলাই ২২ ১৭:৫৫:২০
দুধে সহনীয় অ্যান্টিবায়োটিক থাকলে স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই

বাকৃবি প্রতিনিধি : দুধে স্বভাবতই কিছু ব্যাকটেরিয়া বা নানা কারণে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি থাকতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা বিভিন্ন ধাতুর উপস্থিতির একটি নির্দিষ্ট মাত্রা রয়েছে। ফলে দুধে ব্যাকটেরিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিক সহনীয় মাত্রায় থাকলেও ক্ষতি কিংবা স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি থাকা স্বাভাবিক।

দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে দেশে উদ্ভূত সংকটের নেপথ্যে থাকা মৌলিক বিষয় ও করণীয় সম্পর্কে এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু পালন অনুষদের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক।

দেশে উৎপাদিত তরল দুধের গুণগত মানের ওপর সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন, এতে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি ও দুধের দাম পড়ে যাওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক ও দুগ্ধশিল্পের জন্য মারাত্মক হুমকি বলে জানান গবেষকরা।

গবেষকদের দাবি, দুধে স্বভাবতই কিছু ব্যাকটেরিয়া বা নানা কারণে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি থাকতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ও সহনীয় মাত্রার বেশি না হলে তা মানবদেহের ক্ষতির কারণ হবে না। অর্থাৎ সহনীয় মাত্রায় ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক থাকলে তা ক্ষতিকর নয়।

গবেষকরা বলছেন, দুধের ক্ষেত্রে ভারী ধাতুর সহনীয় মাত্রা লেড .০১ পিপিএম, ক্যাডমিয়াম .০০৩ পিপিএম, মার্কারি .০০১ পিপিএম, আর্সেনিক .০১ পিপিএম। দুধ ও দুগ্ধজাতসহ যেকোনো খাদ্যদ্রব্যে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ

ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও ভারী ধাতুর উপস্থিতি থাকলেই তা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলা যাবে। সহনীয় মাত্রার বেশি না হলে তা মানবদেহের ক্ষতির কারণ হবে না।

তারা বলেন, অঞ্চল ও পরিবেশভেদে এবং গবাদিপশুর খাদ্যাভ্যাসের ওপর দুধে কী পরিমাণ জীবাণুর উপস্থিতি থাকবে, তা নির্ভর করে। দুধের এ বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে ও আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তুলনা করে গবেষণার ফল প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায় জনমনে বিভ্রান্তি ও শঙ্কার সৃষ্টি হবে, যা মধ্যম আয়ের দেশে দুগ্ধশিল্পের মতো ক্রমবিকাশমান একটি শিল্পের জন্য মোটেই সুখকর নয়। মানুষ ফল-সবজিতে ফরমালিনের উপস্থিতির মতো অযথা আতঙ্কিত হবে, পুষ্টিকর দুধ খাওয়া কমিয়ে দেবে এবং দুগ্ধশিল্প হুমকির মুখে পড়বে।

দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে দেশে উদ্ভূত সংকটের প্রেক্ষাপট নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আয়োজিত এক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন গবেষক দলের প্রধান বাকৃবির পশু পালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নূরুল ইসলাম।

সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জসিমউদ্দিন খান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. মো. নূরুল ইসলাম বলেন, দুগ্ধজাত পণ্যে মানব স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। দইয়ে থাকে উপকারী ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া। দই ও ফার্মেন্টেড (গাঁজন) দুগ্ধজাতীয় দ্রব্যে ব্যবস্থাপনার ত্রুটির জন্য সেখানেও ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া চলে আসতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত না করে মোট ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে দইকে ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করা যাবে না। কাঁচা তরল দুধে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকা খুবই স্বাভাবিক। পাস্তুরায়ণের মূল উদ্দেশ্য হলো, প্যাথজেনিক (রোগ সৃষ্টিকারী) ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণভাবে মেরে ফেলা। গবেষকদের দেখা উচিত প্যাথজেনিক ব্যাকটেরিয়া পাস্তুরিত দুধে আছে কি না? তবে পাস্তুরিত দুধে ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেশি হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে গুদামে কিংবা দোকানে কোল্ডচেইন বজায় না রাখা। পরীক্ষার সময় মাথায় রাখতে হবে সমস্যাটি কোথা থেকে আসছে। কৃষক পর্যায়ে, প্রক্রিয়াজাতকরণে নাকি বিপণন ব্যবস্থায়।

চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক সম্পর্কে তিনি বলেন, গবাদিপশুর চিকিৎসা কিংবা রোগ প্রতিরোধে কয়েক দশক ধরে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে গাভির শরীর পুরোপুরি মাত্রায় তা শোষণ করতে পারে না। এ কারণে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক মলমূত্রের সঙ্গে এবং কিছু দুধের মধ্যে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে গাভিকে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে বিশেষ সতর্কতা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেবল সহনীয় মাত্রার বেশি পাওয়া গেলেই তা খাবার অনুপযোগী বলে গণ্য হবে।

ড. মো. নূরুল ইসলাম আরও বলেন, ইতোমধ্যে গত ১৯ জুলাই দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারী দেশের বিভিন্ন খামার, প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন স্থান থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে এর গুণগত মান নির্ণয় করা, দ্রুত গবেষণালব্ধ ফলাফল সংবলিত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করা এবং প্রাসঙ্গিক একটি সুপারিশ প্রদান করার লক্ষ্যে বাকৃবিতে জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের আওতায় একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। বিষয়গুলো মাথায় রেখে টাস্কফোর্সকে কাজ করার কথা বলা হয়েছে।

(ওএস/এসপি/জুলাই ২২, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test