E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হামলায় ইন্ধন : অভিযোগের তীর রাব্বানী-সনজিতের দিকে

২০১৯ ডিসেম্বর ২৪ ১৮:২২:৩৮
হামলায় ইন্ধন : অভিযোগের তীর রাব্বানী-সনজিতের দিকে

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর ও তার সহযোগীদের ওপর হামলার ঘটনার ইন্ধনদাতা হিসেবে ঘুরে-ফিরে তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এ ঘটনায় সরাসরি সংশ্লিষ্ট তিনজনকে গ্রেফতার করা হলেও ইন্ধনদাতাদের ব্যাপারে এখনো সরাসরি কিছু বলা হচ্ছে না।

ডাকসু ভিপি নুর তাদের ওপর গত রবিবারের (২২ ডিসেম্বর) ওই হামলার পেছনে তিনজনকে ইন্ধনদাতা বলে চিহ্নিত করেছেন। ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘তখন ডাকসুতে ২০-২৫ জন ছিল। আমরা রুমে ঢুকছিলাম, তখনই পেছন থেকে তারা অতর্কিত হামলা করে। ... সাদ্দাম ও সনজিত (ছাত্রলীগ নেতা) আমার রুমে ঢুকে আমার সঙ্গের নেতাকর্মীদের মারতে মারতে বাইরে বের করে আনে। তিনজনকে ডাকসুর ছাদ থেকে ফেলে দেয়। সনজিত নিজে আমাকে ধাক্কা মারে। সনজিত বলে, ‘জামায়াত-শিবির এখানে আসছিল কেন?’ আমি বলি, ভিপির রুমে কে আসবে, না আসবে আপনি ঠিক করার কে? তখন সনজিত বলে, ‘… আমি কে, কিছুক্ষণ পর টের পাবি।’ এটা বলার পর তারা বের হয়ে যায়। পাঁচ মিনিট পর তারা লাইট বন্ধ করে বাঁশ-রড দিয়ে আমাদের মারতে শুরু করে ‘

ভিপি নুর যে তিনজনকে ইন্ধনদাতা বলে চিহ্নিত করেছেন, একটি গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানেও সেই তিনজনের দিকেই যাচ্ছে অভিযোগের তীর।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডাকসু ভবনে ভিপির কার্যালয়ে নুর ও তার সহযোগীদের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটে তার ইন্ধনদাতা তিনজন। তারা হলেন- চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অপসারিত হওয়া ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী, ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক (ডাকসুর এজিএস) সাদ্দাম হোসেন। এই তিনজনের ইন্ধনেই মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ডাকসু কার্যালয়ে গিয়ে হামলা চালায়।

এতে উল্লেখ করা হয়, ডাকসুর ভিপি সরকারবিরোধী বক্তব্য দেয়ায় এবং ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে কথা বলায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষোভ থেকে নুরুল হক নুরের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাধা দিতেন তারা।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও সমাবেশের অর্থযোগানদাতা ডাকসু জিএস গোলাম রাব্বানী। ছাত্রলীগ থেকে রাব্বানী অপসারিত হওয়ার পর তাকে স্বপদে বহালের দাবিতে টানা আন্দোলন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। সেসময় এই মঞ্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যের পদত্যাগও দাবি করে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে জাবি উপাচার্যের অভিযোগের পরই অপসারিত হতে হয় রাব্বানীকে।

প্রতিবেদনটি সম্পর্কে ওই সংস্থায় যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের প্রতিবেদন তৈরি করে থাকে। এটি সম্পূর্ণ তাদের অভ্যন্তরীণ ও নিজস্ব গবেষণার জন্য। এসব নিয়ে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে বলার কিছু থাকে না।’

অভিযোগের বিষয়ে গোলাম রাব্বানীকে একাধিকবার কল দিলেও তার তিনটি মোবাইল নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে তাকে একটি ক্ষুদেবার্তাও পাঠানো হয়। তবে তিনি কোনো সাড়া দেননি।

বন্ধ পাওয়া যায় ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটি।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা এই ঘটনা থামানোর জন্য চেষ্টা করেছি। আমি আর আমাদের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ডাকসু ভিপির রুমে গিয়েছি যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। কিন্তু এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য সে নিজেই (নুরুল হক নুর) দায়ী।’

এমন অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে সকাল থেকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তারা রিসিভ করেননি।

এদিকে হামলার বিষয়ে ভিপি নুর সাংবাদিকদের বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দামের নেতৃত্বে ডাকসুর ভিপি কার্যালয়ে হামলা হয়েছে। হামলার সময় ঢাবির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার সন্ধ্যায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নুরুল হক নুরের ওপর হামলার বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর গতকালের বক্তব্য দেখলাম। তার সাফ কথা, “নুর আহত নাকি নিহত, ইট ডাজেন্ট ম্যাটার”। বরং যারা এই ন্যক্কারজনক হামলা করেছে তারা ঠিক কাজ করেছে। এই বক্তব্য থেকে কি পরিষ্কার নয় যে গতকাল নুরদের হত্যার উদ্দেশ্যেই এই হামলা করা হয়েছিল এবং এই হামলার মূলহোতা গোলাম রাব্বানী?? এই সন্ত্রাসীকে কি এখনো গ্রেফতার করা হয়েছে?’

গত ২২ ডিসেম্বর দুপুরে ডাকসু ভবনে ভিপি নুর তার সহযোগীদের নিয়ে অবস্থানকালে সেখানে হামলা করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। এতে অন্তত ৩৪ জন আহত হন। আহত ভিপি নুরসহ কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। এমন সময়ই ডাকসুতে আবির্ভূত হন জিএস গোলাম রাব্বানী। করেন সংবাদ সম্মেলনও। সেখানে তিনি বলেন, ‘ভিপি আহত হোক বা নিহত, ইট ডাজন্ট ম্যাটার (কোনো ব্যাপার না)।’

ঘটনার দিন রাতেই ভিপি নুরসহ অন্যদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সেখানে নানক বলেন, ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমানে ঢামেকে মোট পাঁচজন চিকিৎসাধীন। তারা হচ্ছেন- ভিপি নুর, সোহেল, আমিনুল, ফারুক ও ফারাবী। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এ কে এম নাসির উদ্দিন মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) তাদের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, তারা শঙ্কামুক্ত। সবার অবস্থারই উন্নতি হয়েছে।

এই ঘটনায় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আট নেতার নাম উল্লেখ করে মঙ্গলবার শাহবাগ থানায় মামলা করা হয়েছে। এরা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের কেন্দ্রীয় সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাবি শাখার সভাপতি এ এস এম সনেট, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য, এ এফ রহমান হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরকার, কবি জসিম উদ্দিন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আল রিয়াদ (হল থেকে অস্থায়ী বহিষ্কৃত), জিয়া হল শাখার সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম মাহিম এবং মাহবুব হাসান নিলয়। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়।

এ মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন আল মামুন, ইয়াসির আরাফাত তুর্য এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের দফতর সম্পাদক মেহেদী হাসান শান্ত। মঙ্গলবার আদালতের মাধ্যমে তাদের তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয় ।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test