E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

খুকৃবি’র উপাচার্য নিয়োগের দৌড়ে এগিয়ে শিবিরপন্থী সিদ্দিকুর 

২০২২ নভেম্বর ০২ ১৪:৩৬:৫২
খুকৃবি’র উপাচার্য নিয়োগের দৌড়ে এগিয়ে শিবিরপন্থী সিদ্দিকুর 

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ছাত্রজীবনে সরাসরি ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এমনকি শিবির নেতা হিসেবে ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্যে বাকৃবি’র হল সংসদ নির্বাচনে তিনি ছাত্র শিবির থেকে অংশ নিয়ে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে পরাজিত  হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব মেডিসিনের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৬ সালের ২৮ মে শিক্ষক পদে যোগদান করেন। যার কথা বলা হচ্ছিল তিনি হলেন সাবেক শিবির নেতা প্রফেসর ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান। প্রফেসর ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১১ সেপ্টম্বর। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধক্ষ্য অধ্যাপক সারোয়ার আকরাম আজিজ উপাচার্যের সাময়িক দায়িত্ব পালন করছেন।

তবে এরই মধ্যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে খুকৃবি’র নতুন ভিসি নিয়োগের পক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই পদে নিয়োগ পেতে কয়েকজন আলোচনায় রয়েছেন। সবার থেকে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক শিবির নেতা ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব মেডিসিনের অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার কাশিয়ানী ইউনিয়নের বরাশুর গ্রামের মৃত সবেত বিশ্বাসের ছেলে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষের বাকসু হল সংসদের নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা থেকে দেখা গেছে, সেই নির্বাচনে বাংলাদেশ ছাত্রদল এবং ইসলামী ছাত্র শিবির প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। কিন্তু ছাত্রলীগ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। সেখানে বাকৃবির ঈশা খাঁ হল সংসদ নির্বাচনে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন (ভোটার নম্বর ১৪৮) বতর্মানে অধ্যাপক ড. মো. সিদ্দিকুর রহমান। ওই নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী হিসেবে বিজযী হয়ে ছিলেন ছাত্র দলের নাজমুল হক স্বপন। বর্তমানে নাজমুল হক স্বপন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা বিভাগের পরিচালক পদে কর্মরত আছেন। তিনি বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন (স্বপনের মোবাইলে ০১৭১১৯৩১৮৪৭ ফোন দিলে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন তারা এক স্বজন)।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী সোনালী দলের নেতা অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামে তদবিরে ১৯৯৬ সালের ২৮ মে শিক্ষক হিসাবেও নিয়োগ পেয়ে যান শিবির নেতা সিদ্দিকুর রহমান। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে তিনি কিছুটা নিরব ভূমিকা পালন করেন। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াতের ক্ষমতায় এলে এই শিক্ষক বিএনপিপন্থী সোনালী দলের হয়ে সরব ভূমিকা পালন করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তার একাধিক সহকর্মী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার সহকর্মীরা জানান, অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি নন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী পক্ষের মানুষ। তার শ্বশুর প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ফ্যকাল্টির ডীন ছিলেন। তিনি বিএনপি সমর্থিত সোনালী দলের কট্টোর নেতা ছিলেন। বিএনপির সময়ে অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমানের শ্যালক কামাল ছাত্রদলের কামাল-চঞ্চল পরিষদ থেকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি নির্বাচিত হন । অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান এখনো গোপনে জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তিতে বিশ্বাসী, ছাত্রজীবনে শিবিরের নির্বাচিত নেতা এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষক রাজনীতিতে সক্রিয় অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমানকে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুষ্টিমেয় কয়েকজনসহ একটি মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে বাকৃবি’র ওই সূত্র জানিয়েছে।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব মেডিসিনের অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান খুকৃবি’র উপাচার্য পদে নিয়োগ পওয়ার চেষ্টা করছেন জানিয়ে বলেন, আমি ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঈশা খাঁ ছাত্র সংসদের নির্বাচনে শিবির প্যানেলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করিনি। বিষয়টি একেবারেই মিথ্যা ও বানোয়াট। কারণ আমি ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জামাল হোসেন হলের আবসিক ছাত্র ছিলাম। এছাড়াও ১৯৯৭-৯৮ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আনিস-দীনু প্যানেলের হল ছাত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছি। এছাড়াও বাকৃবিতে শিক্ষক হবার পর আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন বাকৃবি গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরামের অনুষদীয় কমিটির ৩ বারের সদস্য (২০১৬,২০১৭ ও ২০২১) ছিলাম। এখনও আওয়ামীপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছি।

আমি ২০০১ সালের পর বিএনপিপন্থী সোনালী দলের হয়ে ভূমিকা পালন করিনি। আমি ১৯৯৯ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত উচ্চশিক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়াতে ছিলাম।

প্রফেসর ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি বাকৃবি থেকে সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি এবং সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম শ্রেণিতে ২য় স্থান অধিকার করে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন ডিগ্রি অর্জন করি। ছাত্রজীবনের এ সময়টুকু আমি পুরোপুরি পড়াশোনায় সময় দিয়েছি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জামায়াতের প্রত্যক্ষ মদদে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বরাশুর গ্রামের আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে বাস্তুচ্যুত করে। সুতরাং জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত হবার কোনো প্রশ্নই আসে না।

৯৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ পাওয়ার পর কিভাবে ১৯৯৭-৯৮ সালে ছাত্রলীগের প্যানেলে নির্বাচন করেছেন এমন প্রশ্নের জবাব তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।

উল্লেখ্য প্রফেসর ড. মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সততা, মানবিকতা ও উন্নয়নের প্রতীক’ শিরনামে দুইটি বই রচনা করেছেন। সেখানে তিনি ১৯৯৬ সালে বাকৃবি’র শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন বলে উল্লেখ করেছেন। ১৯৯৮,২০০৪ ও ২০০৮ সালে তিনি যথাক্রমে সহকারি অধ্যাপক, সহযোগি অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ লাভ করেন বলেও বই দুটিতে উল্লেখ করেছেন।

(টিকেবি/এএস/নভেম্বর ০২, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test