E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গৌরবের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ০৪ ১৪:২৩:৩২
গৌরবের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

বাকৃবি প্রতিনিধি : রাজধানী ঢাকা থেকে ১২০কিলোমিটার উত্তরে ও ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার উচ্চতর কৃষি শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম বিদ্যাপীঠ জাতীয় ও আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত ও গৌরবমন্ডিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ( বাকৃবি )।

১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরেই ১৯৬১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থার উন্নতির মাঝেই নিহিত রয়েছে গোটা জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে হরতাল অবরোধের মধ্যেও পুরোদমে ক্লাস-পরীক্ষা-অ্যাসাইনমেন্ট চলে। এখানকার শিক্ষার্থীদের চাকরীর জন্য রয়েছে অবারিত সুযোগ।

এছাড়া এখান থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী বিসিএস ক্যাডার প্রাপ্ত হয়। এখানকার শিক্ষার্থীরা স্কলারশীপসহ অনেক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে। প্রকৃতিকন্যা খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ আবাসন ব্যবস্থাও করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩টি ইনস্টিউট, ৬টি অনুষদ ও ৪৪টি বিভাগ রয়েছে। বাংলাদেশের তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে বাকৃবির নাম চলে আসে।

ভৌত অবকাঠামো:
ছয়টি অনুষদীয় ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, গ্রাজুয়েট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ছাত্রদের জন্য নয়টি ও ছাত্রীদের জন্য চারটি (নির্মাণাধীন একটি) হল, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী ভবন, কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, দুই হাজার আসন বিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন ভবন, জিমনেসিয়াম, স্টেডিয়াম, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, প্রকৌশল ভবন, অতিথি ভবন, ক্লাব ভবন, ৬৫৭টি আবাসিক ইউনিট, ১২টি ফার্ম, ফিল্ড ল্যাব, ক্লিনিক, ওর্য়াকশপ, বোটানিক্যাল গার্ডেন, জার্মপ্লাজম সেন্টার, শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মরণে নির্মিত বধ্যভূমি, বিজয় ৭১, মরন সাগর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি চত্বর সহ দেশের দুটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিউট (বিনা) এবং বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিউট (বিএফআরআই) এ ক্যাম্পাসে অবস্থিত।

গৌরবের বিষয়সমূহ:

জার্মপ্লাজম সেন্টার: উদ্ভিদের অন্যন্যা সংগ্রহশালা, এটি গবেষনায় বিশ্বের মধ্যে প্রথম এবং আয়তনে দ্বিতীয়। প্রায় ১১হাজার ফলের প্রজাতি নিয়ে গড়ে ওঠেছে জার্মপ্লাজম সেন্টারটি গত ২২বছরে ৬৭টি ফলের নতুন জাত আবিষ্কার করেছে।

কৃষি জাদুঘর: প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত এই মিউজিয়ামটি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র কৃষি মিউজিয়াম।

মৎস্য জাদুঘর: ‘বায়ো-ডাইভারসিটি সেন্টার’ বিচিত্র প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক প্রাণি সংরক্ষণের দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় ফিশ মিউজিয়াম এটি।

কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী: কৃষি বিষয়ক বই সংগ্রহের বিচারে এশিয়ার বৃহত্তম লাইব্রেরী। পুস্তক সংখ্যক প্রায় ২লক্ষ ১২ হাজার। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তিন তলা বিশিষ্ট এই ভবনে একটি সাইবার কক্ষ রয়েছে।

ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর ক্যাম্পাস এটি যা ১২৩০একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। ক্যাম্পাসের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদী। ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে চলে গেছে রেল লাইন।

বোটানিক্যাল গার্ডেন. বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ প্রজাতির সংরক্ষনের দিক থেকে বাংলাদেশের এক নম্বর এটি। দুষ্প্রাপ্য গাছ-গাছালির সংগ্রহ নিয়ে ২৫ একর জায়গা জুড়ে ব্রক্ষপুত্র নদীর পাড়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠেছে সমৃদ্ধ বোটানিক্যাল গার্ডেনটি।

ভেটেনারি ক্লিনিক: প্রশিক্ষণ, পশু চিকিৎসা সেবা প্রদানের দিক থেকে বাংলাদেশের অন্যতম পশু চিকিৎসালয়।

প্লান্ট ডিজিজ ক্লিনিক: উদ্ভিদের রোগ নির্ণয়, গবেষণার কাজে ব্যবহৃত এই ক্লিনিক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম উদ্ভিদ চিকিৎসালয়।

উল্লেখযোগ্য সাফল্য:
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শস্যের জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর মধ্যে বাউ-৬৩, বাউকুল, বাউধান-২, নামে উফশী ধান জাত- সম্পদ ও সম্বল, বাউ-এম/৩৯৫, বাউ-এম/৩৯৬ নামে ৪টি উফসি সরিষা জাত, ডেভিস, ব্র্যাগ, সোহাগ, জি-২ ও বিএস-৪ নামে ৫টি সয়াবিন জাত, কমলা সুন্দরী ও তৃপ্তি নামে আলুর জাত, লতিরাজ, বিলাসী ও দৌলতপুরী নামে তিনটি মুখীকচুর জাত, কলা ও আনারস উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি, রাইজোবিযাম জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি, সয়েল টেস্টিং কিট, পেয়ারা গাছের মড়ক নিবারণ পদ্ধতি, বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহজ পদ্ধতি, অ্যারোবিক পদ্ধতিতে ধান চাষ প্রযুক্তি, শুকানো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ, পশু খাদ্য হিসেবে ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির কলাকৌশল। আফ্রিকান ধৈঞ্চার অঙ্গজ প্রজনন, এলামনডা ট্যাবলেট, আইপিএম ল্যাব বায়োপেস্টিসাইড, বিলুপ্তপ্রায় শাকসবজি ও ফলের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ ও মলিকুলার বৈশিষ্ট সনাক্তকরণ কলাকৌশল, মোরগ-মুরগির রাণীক্ষেত রোগ ও ফাউলপক্সের প্রতিষেধক টিকা উৎপাদন, হাঁসের প্লেগ ভ্যাকসিন ও হাঁস-মুরগির ফাউল কলেরার ভ্যাকসিন তৈরি, রাণীক্ষেত রোগ সহজেই সনাক্তকরণে মলিকুলার পদ্ধতির উদ্ভাবন, মুরগির স্যালমোনোসিস রোগ নির্ণয় প্রযুক্তি; হাওর এলাকায় হাঁস পালনের কলাকৌশল, কমিউনিটি ভিত্তিক উৎপাদনমুখী ভেটেরিনারি সেবা, গবাদিপশুর ভ্রুণ প্রতিস্থাপন, ছাগল ও মহিষের কৃত্রিম প্রজনন, কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত ষাঁড়ের আগাম ফার্টিলিটি নির্ণয়, গাভীর উলানফোলা রোগ প্রতিরোধ কৌশল, হরমোন পরীক্ষার মাধ্যমে গরু ও মহিষের গর্ভ নির্ণয়, সুষম পোল্ট্রি খাদ্য, গো-খাদ্য হিসেবে খড়ের সঙ্গে ইউরিয়া-মোলাসেস ব্লক ব্যবহার, হাঁস-মুরগির উন্নত জাত উৎপাদন, কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানী গবেষণা তৎপরতার মাধ্যমে টেকসই শস্যবীমা কার্যক্রম, ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রমের উন্নয়ন, পশুসম্পদ উপখাত ও ডেয়রি উৎপাদনের উন্নয়ন, স্বল্প ব্যয়ে সেচনালা তৈরি, উন্নত ধরনের লাঙ্গল ও স্প্রে মেশিন, বাকৃবি জিয়া সার-বীজ ছিটানো যন্ত্র, সোলার ড্রায়ার, উন্নত ধরনের হস্তচালিত টিউবয়েল পাম্প, জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নতমানের দেশি চুলা, মাগুর ও শিং মাছের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল, ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, খাচায় পাঙ্গাস চাষ, পেরিফাইটন বেজড মৎস্যচাষ, দেশি পাঙ্গাসের কৃত্রিম প্রজনন, ডাকউইড দিয়ে মিশ্র মৎস্যচাষ, মাছের জীবšত খাদ্য হিসেবে টিউবিফিসিড উৎপাদনের কলাকৌশল, পুকুরে মাগুর চাষের উপযোগী সহজলভ্য মৎস্যখাদ্য তৈরি, শুক্রাণু ক্রয়োপ্রিজারভেশন প্রযুক্তি, স্বল্প ব্যয়-মিডিয়ামে ক্লোরেলার চাষ, মাছের পোনা পালনের জন্য রটিফারের চাষ, মাছের রোগ প্রতিরোধকল্পে ঔষধি গাছের ব্যবহার এবং মলিকুলার পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছের বংশ পরিক্রম নির্ণয়, তারাবাইম, গুচিবাইম ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন, ধানক্ষেতে মাছ ও চিংড়ি চাষ, পুকুরে মাছ চাষ, সহজলভ্য মাছের খাদ্য তৈরি, একোয়াপনিক্সের মাধ্যমে মাছ এবং সবজি উৎপাদন, মাছের বিকল্প খাদ্যের জন্য ব্লাক সোলজার ফ্লাই চাষ এবং কচি গমের পাউডার উৎপাদন।

(এমএসএস/এএস/ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test