E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ছাত্রলীগের মিছিলে গুলি, নির্দেশদাতা নিয়ে ক্যাম্পাসে তোলপাড়

২০১৭ সেপ্টেম্বর ২৩ ১৩:৫১:৪২
ছাত্রলীগের মিছিলে গুলি, নির্দেশদাতা নিয়ে ক্যাম্পাসে তোলপাড়

ইবি প্রতিনিধি : ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট ছাত্রলীগের মিছিলে গুলির নির্দেশদাতা কে ছিলেন এ নিয়ে ক্যাম্পাসে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেন তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান। তার কমেন্ট নিয়েই নতুন করে আলোচনায় আসে সেদিনের বিভীষিকাময় সেই দিনটি। আর এ ঘটনা নিয়েই নতুন করে ক্ষোভে ফুঁসছেন ছাত্রলীগসহ প্রগতিশীল শিক্ষকরা। তাদের দাবি সেদিন ছাত্রলীগের মিছিলে গুলির নির্দেশ দাতাকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।

সেদিনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে মূল ষড়যন্ত্রকারীকে খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান কুষ্টিয়া সদর থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজু।

সেদিনের ঘটনায় আহত এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শিশির ইসলাম বলেন, সেদিন পুলিশ ছাত্রলীগের উপর নির্বিচারে গুলি করে। ওই দিনের ঘটনা ছিল খুবই ন্যাক্কারজনক। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সেদিনের মূল ষড়যন্ত্রকারীকে খুঁজে বের করা সময়ের দাবি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন এবং বর্তমান প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, মিমাংসিত একটি বিষয় নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি ও সিন্ডিকেট সদস্য আলতাফ হোসেন শুক্রবার সকাল ১০টা ১৮ মিনিটে তার ফেসবুক ওয়ালে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি মোবাইলে অটো রেকর্ড চালু রেখে অন্যকে ঘায়েল করাকে অসভ্যতা বলে উল্লেখ করেন। তার এ স্ট্যাটাসেই রেকর্ডের পক্ষে কমেন্ট করেন এসআই মাহফুজ।

তিনি লিখেছেন, ‘আমি আপনার কথা মানি না। কারণ আমাকে বলা হলো মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে প্রয়োজনে গুলি করবে এটা আমার নির্দেশ। গুলি করার পরিস্থিতি থেকে মানুষ মেরে ফেলার পরিস্থিতি তৈরি হলো। যথারীতি মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে গুলি করলাম। পরবর্তীতে বলা হলো তোমাকে গুলি করতে কে বলেছে? আমি বললাম আপনি স্যার। সে বলল আমি বলিনি। আমি তখন রেকর্ডিংটা শুনালাম। আমার সেলফ ডিফেন্স দরকার। পলটিবাজ লোকের অভাব নেই। তাছাড়া ভয় কোথায়?’

এ কমেন্ট নিয়েই নতুন করে আলোচনায় এসেছে ২৪ আগস্টের সেই ঘটনা। ছাত্রলীগসহ সকলের দাবি সেদিনের মিছিলে গুলির নির্দেশদাতা ও মূল ষড়যন্ত্রকারীকে খুঁজে বের করা।

দলীয় ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৪ আগস্ট পৌনে ১২টায় ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবির। এরই প্রেক্ষিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। কিন্তু পুলিশ শিবিরের মিছিলে হামলা না করে উল্টো ছাত্রলীগের মিছিলে নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে। এতে ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি শাহিনুর রহমানসহ ২৫ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধও হয়ে যায়।

পুলিশ ছাত্রলীগের উপর গুলি করায় তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের দাবি ছিল, প্রক্টর শিবিরের সাথে আঁতাত করে ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস ছাড়া করতে গুলির নির্দেশ দিয়েছেন। ছাত্রলীগের ১৬ দিন আন্দোলনে দাবির মুখে ৯ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্রক্টর।

কিন্তু কয়েকজন প্রগতিশীল শিক্ষক নেতা বলছেন সেদিনের ঘটনা ছিল একটি সাজানো নাটক। তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো এক কর্তাব্যক্তি আরও বড় পদে যাওয়ার জন্য তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের টোপ দিয়ে ছাত্রলীগের উপর গুলি চালিয়ে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করেছেন। পরে তিনি প্রক্টরকে ফাঁসিয়ে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন।

এখন বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্যাম্পাসে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। সেদিনের গুলির প্রকৃত নির্দেশদাতা কে? তা নিয়ে ধুম্রজালও সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠন শাপলা ফোরাম ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের একাধিক নেতা।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

০৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test