E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১১ এপ্রিল, ১৯৭১

‘দুনিয়ার কোন শক্তিই আমাদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখতে পারবে না’

২০২০ এপ্রিল ১১ ০০:১৪:৪৩
‘দুনিয়ার কোন শক্তিই আমাদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখতে পারবে না’

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : তাজউদ্দিন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ আর তার সাড়ে সাত কোটি সন্তান আজ চূড়ান্ত সংগ্রামে নিয়োজিত। আমাদের এ সংগ্রামে জয়লাভ করতেই হবে এবং আমরা যে জয়ী হবো তা অবধারিত।

তিনি আরো বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে শত্রুর কবল থেকে মুক্ত করা। মনে রাখবেন, আমরা আজ শত্রুর ওপর পাল্টা হামলায় নিয়োজিত আছি। আমাদের এই মুক্তিসংগ্রামে ধর্ম, মত, শ্রেণী বা দল নেই। আমাদের একমাত্র পরিচয় আমরা বাঙালি, আমাদের শত্রুপক্ষ আমাদের বাঙালি হিসেবেই হত্যা করছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার সকল রকমের অত্যাচার, অবিচার, অন্যায় ও শোষণের অবসান ঘটিয়ে এক সুখী, সমৃদ্ধ, সমাজতান্ত্রিক শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমাদের ঐক্য বজায় থাকলে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কেন দুনিয়ার কোন শক্তিই আমাদের পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ রাখতে পারবে না।

চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে প্রেরিত এক পত্রে বলেন, চীন সরকার মনে করে বর্তমানে পাকিস্তানে যা ঘটছে তা পাকিস্তানের ঘরোয়া ব্যাপার। চীনা নেতা পাকিস্তানকে আশ্বাস দেন, ভারত পাকিস্তানের হামলা চালালে চীনা সরকার ও জনগণ সবসময় পাকিস্তান সরকার ও জনগণকে তাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য ন্যায্য সংগ্রামে সমর্থন দেবে।

পাকসেনারা স্থানীয় দালালের সহায়তায় প্রথমে গোপালগঞ্জ প্রবেশ করে। পরে তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি মানিকহার আক্রমণ করে। পাসেনাদের আধুনিক অস্ত্রের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়লে তারা মানিকহার গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি বহর কালিগঞ্জের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, এ সংবাদ পেয়ে কালামিয়া আশেপাশের গ্রাম থেকে দশজন মুজাহিদকে নিয়ে কালিগঞ্জের এক মাইল দূরে এ্যামবুশ করে। উক্ত এ্যামবুশে তিনটি গাড়ি সম্পূর্ণ নষ্ট হয় এবং দশজন পাকসেনা নিহত হয়। পাকবাহিনী একটি গাড়ির পিছু গ্রেনেড নিয়ে ধাওয়া করলে কালামিয়া বুলেট বিদ্ধ হন এবং সঙ্গে সঙ্গে শহীদ হন।

ফুলবাড়িতে পাকবাহিনীর সাথে তৃতীয় বেঙ্গল ব্যালিয়নের তীব্র যুদ্ধ হয়। পাকবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে ব্যাটালিয়ন চরখাই চলে আসে এবং সেখানে প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলে। পাকবাহিনী যাতে চরখাই আক্রমণ করতে না পারে সেজন্য ক্যাপ্টেন আশরাফের কোম্পানি ফুলবাড়ি চরখাই রোডে, মেজর মো.আনোয়ার হোসেনের কোম্পানি ঘোড়াঘাট-চরখাই রোডে ডিফেন্স নেয় এবং লে.মোখলেসের কোম্পানি ডেপথ্ কোম্পানি হিসেবে রাখা হয়।

সকালে পাকসেনারা এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে ঈশ্বরদী প্রবেশ করে। পাকসেনাদের গুলিতে রেলগেটে মজিদ নামের একজন কুলি শহীদ হন।

ঈশ্বরদীতে পাকসেনাদের প্রবেশের পর পরই অবাঙালিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। তারা ধারালো অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে বাঙালি নিধন অভিযানে নামে। নূর মহলা ও ফতে-মোহাম্মদপুর এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মিলে অবাঙালিরা হত্যাকা- ও লুটতরাজে অংশ নেয়। রাতে এ-দুটি মহলায় তারা ৩২ জন বাঙালির প্রাণ হনন করে।

বেনাপোল সড়কে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কিছু সৈন্য হতাহত হয়।

কালুরঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আর্টিলারী, মর্টার, ট্যাংক এবং অন্যান্য আধুনিক মারণাস্ত্রের সাহায্যে আঘাত হানে। উভয় পক্ষে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষে ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয় ও অনেকে আহত হয় এবং বেশ কিছু পাকসেনা নিহত হয়। লে. শমসের মুবিন গুরুতররূপে আহত অবস্থায় পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি হন। সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবস্থান ত্যাগ করে পেছনে সরে আসে।

ঝিকরগাছায় মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। এ যুদ্ধে পাকসেনাদের প্রচুর ক্ষতি সাধিত হয়।

লে. জেনারেল আমির আবদুলাহ খান নিয়াজী পূর্ব পাকিস্তান কমান্ডের অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত হন।

তাজউদ্দিন আহমদ নিম্নোক্তভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের অবকাঠামো গঠনের কথা উল্লেখ করেন, ১. সিলেট ও কুমিল্লা অঞ্চলে বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর খালেদ মোশাররফ, ২. চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলে মেজর জিয়াউর রহমান, ৩. ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল অঞ্চলে মেজর সফিউলাহ, ৪. কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চলে ইপিআর-এর মেজর আবু ওসমান।

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

(ওএস/এএস/এপ্রিল ১২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test