E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

৮ জানুয়ারি, ১৯৭১

'ভাসানী লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান'

২০২২ জানুয়ারি ০৮ ০৯:১৩:১৫
'ভাসানী লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান'

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ পাকিস্তানে দুইদিনব্যাপী সরকারী সফর উপলক্ষে বিমানযোগে রাজধানী নগরী ইসলামাবাদে পৌঁছলে শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। পরে তিনি পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান এবং সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রতিনিধিদেরকে মি. হীথের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এই সফরে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে আগতদের মধ্যে রয়েছেন: বৃটিশ মন্ত্রীসভা সচিব স্যার বার্কট্রেড, পার্লামেন্টারি প্রাইভেট সেক্রেটারি টি পি জে কিটসন এবং বৈদেশিক ও কমনওয়েলথ দফতরের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান আই জে এম সুদারল্যান্ড।

খুলনা নিউজপ্রিন্টের মূল্যবৃদ্ধির একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে সংবাদপত্র শিল্পে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করানোর জন্য পূর্ব পাকিস্তানের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর একটি দলতাঁর সাথে দেখা করেছেন। বঙ্গবন্ধু ধৈর্য্যরে সাথে প্রতিনিধিদলের বক্তব্য শোনেন এবং তাঁদেরকে আশ্বাস দেন যে, জাতীয় সংবাদপত্রকে এই সমস্যা হতে রক্ষা করার জন্য তিনি চেষ্টা করবেন। আরো জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু ইতিমধ্যেই এ ব্যঅপারে হস্তক্ষেপ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও গভর্ণর ভাইস এডমিরাল এস এম আহসানের কাছে বার্তা প্রেরণ করেছেন।

পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রাদেশিক শাখার যুগ্ম-সম্পাদক কামাল হাসান রিজভী ব্যাংক, বীমা ও পাট ব্যবসায় জাতীয়করণের ব্যাপারে শেখ মুজিব একটি বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় তাঁর দলের পক্ষে তাঁকে অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, শেখ মুজিবের এ ঘোষণার ফলে কোটি কোটি নির্যাতিত জনগণের মধ্যে এক নয়া জীবনের সূচনা হয়েছে। তিনি বলেন যে, তার দলের চরম লক্ষ্য দেশে একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটানো এবং মূলত এই উদ্দেশ্যেই গত নির্বাচনে পিপলস পার্টি পশ্চিম পাকিস্তানে সাম্রাজ্যবাদী তথা প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে।

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তাঁর টাঙ্গাইলের সন্তোষস্থিত বাসভবনের সামনে অনুষ্ঠিত “জাতীয় সম্মেলন”-এ ভাষণদানকালে ১৯৪০ সনের লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি কৃষক শ্রমিকের চূড়ান্ত মুক্তির জন্য সমাজতন্ত্র কায়েমের ওপর জোর দেন। লাহোর প্রস্তাব সম্পর্কে বলেন, লাহোর প্রস্তাব না হলে বাংলার মুসলমানরা পাকিস্তানে শরীক হতো না, কলকাতাসহ ১৪টি জেলা হারাতো। তিনি বলেন, কায়েদে আজম বোকা ছিলেন না। তাই তিনি নিজেই লাহোর প্রস্তাবের খসড়া প্রণয়নের সময় ইংরেজী ‘স্টেটস’ (রাষ্ট্রসমূহ) কথাটি প্রস্তাবের মধ্যে রাখেন। অর্থাৎ লাহোর প্রস্তাবে পরিস্কারভাবে দুইটি রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুসলিম লীগ বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। অথচ সেদিন দওলতানা, খালেকুজ্জামান, রাজামাহমুদাবাদ প্রমুখ পাঞ্জাবি, সিন্ধি, বেলুচ,পাঠান নির্বিশেষে কোন নেতাই আপত্তি করেনি। মওলানা আবারও ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ দাবীর কথা উল্লেখ করেন। তবে তিনি এও বলেণ যে, পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে এখানে কোন রাজনীতি চলবে না –এতে খুব সংকট রয়েছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ও পররাষ্ট্র দফতরে পূর্ব পাকিস্তানি নেই বললেই চলে। অগাত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও কুটির শিল্প ও ভারী শিল্প হয়নি। এ প্রসঙ্গে তিনি আত্মনির্ভরশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এদেশে কয়লা, তেল, পেট্রোল ইত্যাদি সম্পদ এতো রয়েছে যে, আত্মনির্ভরশীল না হয়ে যায় না। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের শোষিত জনতার বিরুদ্ধে নই।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুড চারদিনের পাকিস্তান সফর শেষে আজ করাচি থেকে নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওয়ানা হন। পাকিস্তান ত্যাগের প্রাক্কালে কানাডীয় প্রধানমন্ত্রীকে সিন্ধুর গভর্নর লে. জেনারেল রাখমান গুল করাচী বিমানবন্দরে আন্তরিক বিদায় জানান।

পূর্ব বাংলার শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি মাহফুজ ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক হায়দার আকবর খান রনো ২০ জানুয়ারি প্রদেশের সকল স্কুল-কলেজ, দোকানপাট, অফিস-আদালতে পূর্ণ হরতালের মাধ্যমে “আসাদ দিবস” পালনের জন্য আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন যে, ১৯৬৯ সালের এই দিনের বুকের রক্ত দিয়ে আসাদুজ্জামান সেদিনের আন্দোলনে এক নতুন বিপ্লবী উপাদান সংযোজন করেন। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, সেদিন সেই আন্দোলন স্বৈরাচারী আইয়ুব শাহীর পতনের মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। বিবৃতিতে তাঁরা আশা প্রকাশ করে বলেন যে, পূর্ব বাংলার জাগ্রত জনতা আসাদকে ভোলেনি।

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ০৮, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test