E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

গাজীপুরে ১৯৭১ সালে পাকাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে ছিল আজ

২০১৫ মার্চ ১৯ ১৩:০০:৫৬
গাজীপুরে ১৯৭১ সালে পাকাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে ওঠে ছিল আজ

গাজীপুর প্রতিনিধি:১৯৭১ সালের আজকের এই (১৯ মার্চ) দিনে  পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলন গাজীপুরের বীর জনতা। গর্জে উঠে ছিল বাঙালীর অস্ত্র, যা পরবর্তীকালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরাট অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তখন সারা দেশে শ্লোগান উঠে ‘গাজীপুরের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’।

সে সময় জয়দেবপুরের (পরবর্তীতে গাজীপুর) ভাওয়াল রাজবাড়ীতে ছিল দ্বিতীয় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবস্থান। ২৫/৩০ জন ছাড়া সবাই ছিলেন বাঙালি সেনা। বাঙালিদের প্রায় সবাই মনে প্রাণে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখছিলেন। ৭ মার্চ ভাষনে বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম প্রতিরোধ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলে জয়দেবপুরে গঠিত হয়েছিল ১১ সদস্যের সর্বদলীয় মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ। পরবর্তী উত্তাল দিনগুলোতে বাঙালীরা একদিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলন, অন্যদিকে পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীও বাঙালিদের দমনে নীলনকশা তৈরি করছিলন।

ৎপাকিস্তানিদের এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্যদের নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা নেয় পাকিস্তানিরা। ঢাকার ব্রিগেড সদর দপ্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয় ১৫ মার্চের মধ্যে দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের ৩০৩ রাইফেলগুলো জমা দিতে হবে। কিন্তু বাঙালি সৈন্যরা অস্ত্র জমা দিতে রাজি ছিলেন না। ১৯ মার্চ সকালে ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব এক কোম্পানি সৈন্যসহ জয়দেবপুর সেনানিবাসে আসেন অস্ত্র ও গুলাবারুদ নিয়ে যেতে। জাহানজেবের আসার খবর সংগ্রাম প্রতিরোধ কমিটির মাধ্যমে গোটা গাজীপুরে প্রচার হয়ে যায়। এ সময় বাংলাদেশ মেশিন টুল্স কারকানা ও বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরাদের সাথে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকার বহু জনসাধারন গাজীপুরে এসে জড়ে হয় প্রতিরোধ গড়তে। সেদিন তাঁদের সাথে অস্ত্র ছিল লাঠি, তীর-ধনুক, বল্ল¬ম আর শাবল। জনতা রাজবাড়ী সড়কে তৈরি করে দুর্ভেদ্য অবরোধ। জয়দেবপুর রেল ষ্টেশন থেকে মালগাড়ির একটি ওয়াগন এনে বন্ধ করে দেয় রাস্তা। মিছিল শ্লে¬াগানে জনগণ জঙ্গিরূপ ধারণ করে। কোনক্রমেই তাঁরা অস্ত্র নিয়ে যেতে দিবে না পাক হানাদারদের।

অন্যদিকে নিরস্ত্র করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় দ্বিতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসার, সৈন্যরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। জনতার প্রতিরোধ আঁচ করতে পেরে ব্রিগেডিয়ার জাহানজেব অস্ত্র নেওয়ার আশা পরিত্যাগ করে বিকেল ৩ টার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কিন্তু ব্যারিকেডে বাঁধা পেয়ে জাহানজেব সংগ্রাম প্রতিরোধ কমিটির সাথে আলোচনা করতে চাইলে বেলা ৩টার দিকে তৎকালীণ সেক্টর কমান্ডার মেজর শফিউল্লাহর (পরবর্তীতে সেনা প্রধান) নেতৃত্বে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু পাকিস্তানী সৈন্যদের দাম্ভিকতার কারণে আলোচনা ভেস্তে গেলে বাঙালীরা রেল লাইনের উপর মাল গাড়ির বগি ফেলে শক্ত ব্যারিকেড তৈরী করে। এত ক্ষুদ্ধ হয়ে পাঞ্জাবি সৈন্যরা ব্যাপক গুলিবর্ষণ শুরু করলে জনতাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করতে শুরু করে। পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন মনু খলিফা ও কিশোর নিয়ামত। আহত হন সন্তোষ মলি¬ক, ইউসুফসহ আরো কয়েকজন।

এদিকে জয়দেবপুর বটতলার ব্যারিকেড ভেঙ্গে পাক সৈন্যরা চান্দনা চৌরাস্তায় শক্ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় । এখানেও নির্বিচারে গুলি চলে। ভোগরা গ্রামের সাহসি যুবক ফুটবলার হুরমত আলী এক পাকসৈন্যর রাইফেল ছিনিয়ে নেয়ার জন্য জাপটে ধরেন। এসময় অপর এক সৈন্যর গুলিতে হুরমত শহীদ হন। এখানে কানু মিয়াসহ অনেকে আহত হয়। ২০ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর সেও মারা যায়। ঢাকা যাওয়ার পথে পাক বাহিনীকে গাজীপুরের আরো জায়গায় ব্যারিকেডের মুখে পড়তে হয়। সেসব স্থানেও পাক বাহিনীর গুলিতে কয়েক জন শহীদ হন। জয়দেবপুরে পাকহানাদারদের সঙ্গে এ সম্মুখ যুদ্ধে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সমগ্র বাংলাদেশে শ্লে¬াগান উঠে ‘জয়দেবপুরের পথ ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতি ভবনে ইয়াহিয়ার সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত আলেচনা সভায় যোগদানকালে বঙ্গবন্ধু তাঁর গাড়িতে কালো পতাকা ধারণ করেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম ১৯ মার্চ এর ঘটনা ফলাও করে প্রচার করে।

১৯৭১ সনের ১৯ মার্চের প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের শহীদের স্মরণে চান্দনা চৌরাস্তায় নির্মাণ করা হয়েছে স্মারক ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’। এটি মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের প্রথম ভাস্কর্যও বটে। ভাস্কর্যটির এক হাতে গ্রেনেড অন্য হাতে রাইফেল। প্রতি বছর গাজীপুর বাসী এ দিনটি উদযাপন করেন পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ‘সশস্ত্র পতিরোধ দিবস হিসেবে’। এবছরও সশস্ত্র প্রতিরোধ দিবসে জেলা প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মত লেজার শো, এবং নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেছে। বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করবেন একাধিকবার জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত সংগীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন।

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test