E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

অতলান্ত পিতৃস্মৃতি দ্বিতীয় অধ্যায়, পর্ব ২০

২০১৪ জুলাই ৩১ ১২:১২:৫৬
অতলান্ত পিতৃস্মৃতি দ্বিতীয় অধ্যায়, পর্ব ২০

প্রবীর বিকাশ সরকার : [ভূমিকা : আমার ৫৫ বছরের জীবনে বাবার সঙ্গে কেটেছে মাত্র ২৪-২৫টি বছর! জ্ঞান হওয়ার পর থেকে যেভাবে বাবাকে দেখেছি, চিনেছি, জেনেছি এবং বুঝেছি তার মূল্যায়নই হচ্ছে এই আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস বা স্মৃতিকথা ‘অতলান্ত পিতৃস্মৃতি’---এমন করে খোলামেলা খুঁটিনাটি কোনো স্মৃতিকথা আর কোনো বাঙালি লিখেছেন তার জন্মদাতা পিতৃদেবকে নিয়ে আমার অন্তত জানা নেই।]

কোনো কোনো বন্ধু বলে, ‘তুই নিজের বোকামির জন্য ‘স’কে হারিয়েছিস।’ আসলে এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। তাকে হারিয়ে ফেলার জন্য আমি যেমন দায়ী নই, তেমনি কাউকেই দায়ী করা যাবে না। মানুষ এক রহস্যময় জীব। মানুষের ভেতরে এমন একটি অনিয়ন্ত্রিত খেয়ালী প্রকৃতি থাকে যে কখন কীভাবে মানুষকে কোন দিকে নিয়ে যাবে, মানব সম্পর্ককে ধ্বংস করে দেবে কেউ বলতে পারে না। আমি এই প্রকৃতিকেই দায়ী করি আমাদের বিচ্ছিন্নতার জন্য।

‘গ’ সম্পর্কে তার মনে যে গভীর সন্দেহের ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে এটা কোনোদিন নিরাময় হওয়ার নয়। নরনারীর হৃদয়ঘটিত সম্পর্কের ক্ষেত্রে এরকম সন্দেহ এক কথায় মানসিক ক্যান্সার। যে ক্যান্সারের কোনো চিকিৎসা নেই। দুজনেই ধ্বংস হয়ে যেতাম আমরা এক সময়। অসম সম্পর্কের চেয়েও এই ক্যান্সার আরও বেশি ধ্বংসাত্মক। এই ‘সন্দেহ’ কোনোদিন আমাদের শান্তি দিত না বলাই বাহুল্য। অবশ্য অসম সম্পর্ক নিয়ে আমরা দুজনেই যথেষ্ট সচেতন ছিলাম। থার্ড ইয়ারের মাঝামাঝি এসে হঠাৎ আমার মনে হলো, এই অসম সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী? আমরা তো কোনোদিন শিমুল-পলাশ ফোটা সুখী-সুখী গোলাপি বসন্তের কাছাকাছি যেতে পারবো না। হয়তো আর দু’বছর হাসি-আনন্দে কেটে যাবে তারপর কী হবে? এই সমাজ এই দেশ তো পাশ্চাত্য নয়, এটা রক্ষণশীল, পশ্চাৎপদ বাংলাদেশ।

যেখানে সাধারণ মানুষের কোনো মানসিক স্বাধীনতা নেই, উন্নয়ন ঘটে না মেধাবুদ্ধির, ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নেই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। আমরা তো মঞ্চের লোকপ্রিয় নট-নটী নই, চলচ্চিত্র কিংবা সঙ্গীত-তারকা জগতের বাসিন্দা নই---আমরা প্রতিবাদহীন লবনের মতো মধ্যবিত্ত। যেভাবেই ব্যবহৃত হই না কেন লবনই থেকে যাই। আমরা সমাজের সিঁড়িও বটে। আমাদের ধরে ঝুলে থাকে দরিদ্র শ্রেণী আর সুবিধাবাদীরা ঘাড়ের উপর ভর করে উপরের দিকে উঠে যায়। আমাদের কোনো সাহসী ভাষ্যকার নেই, দরদী নেতা নেই, নিঃস্বার্থবাদী উদ্ধারকারী নেই, আমাদের সমস্যা নিয়ে ঘরে-বাইরে কেউ সোচ্চার নয়। ‘স’কে একটি চিঠিতে আমি সেই গভীর হতাশার কথা জানালাম।

সে এমনই শকড হলো যে, ছুটে এলো কুমিল্লায়। নিভৃতে আমাকে বললো, ‘আমি আপনার মতো কবি নই, লেখক নই আমি বাস্তববাদী। আমি কী কিছুই ভাবি না মনে করেন? আমাদেরকে লড়াই করতে হবে। আপনি সঙ্গে থাকলে আমি মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করে যাবো। আমরা তো অপরাধী নই, পাপী নই। আমাদের সম্পর্ক অসম হতে পারে, সিনেমার কাহিনী কিংবা গল্প উপন্যাসের মতো জলো মনে হতে পারে---তাই বলে আমরা থেমে যাবো কেন। আপনি ভালো করে পড়ালেখা করুন। শুধু ভালো রেজাল্ট করুন। বাকিটা ছেড়ে দিন আমার উপর।’ আমি বললাম, ‘দ্যাখো, আমাদের পরিবারও রক্ষণশীল নয়, বাস্তবতাটা চিন্তা করতে হবে। আমি সংসারের বড় ছেলে, আমার আরও চার ভাইবোন আছে।

বাবার বয়স বাড়ছে, তাঁর কপালের ভাঁজগুলো গভীর হচ্ছে। মায়ের দুচিন্তাগ্রস্ত মুখ। তুমি তো জানো, আমার বাবা আদর্শ, নীতিকে জলাঞ্জলি দিয়ে সম্পদ বলতে কিছুই করেনি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও। এই দেশে পরিবারের বড় ছেলে হওয়া আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ। আমি একাধিক লোককে দেখেছি নিজের সংসার পাতা তো দূরের কথা, পিতার বিশাল সংসার টানতে গিয়ে ধসে পড়েছেন মধ্য বয়সের আগেই। আমার সামনেই তো আছেন কমলদা। আর এই দেশে অসম বিয়েও তেমন কোনো সুফল বয়ে আনেনি। জানি না কোন দূর ভবিষ্যতে বাঙালি সমাজের কুসংস্কার, গোঁড়ামির শেষ হবে। আপাতত আমি কোনো আলো দেখতে পাচ্ছি না।’

ঋজু চরিত্রের ‘স’ অভয় দিয়ে বললো, ‘এসব নিয়ে চিন্তা করে এখন লাভ নেই, হতাশ হবেন না। আমি তো হতাশ নই।’ তথাপি দারুণ এক হতাশায় আমি নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিলাম। অনার্স পরীক্ষা পর্যন্ত কী যে এক ঝড় আর প্লাবনের মধ্যে ডুবে ছিলাম আজও ভাবলে কষ্ট হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তো পড়ালেখা ছিলই না, ছিল না ভবিষ্যতের আলো, রাজনৈতিক সংহিসতা, বন্ধুদের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ, পারিবারিক দুশ্চিন্তা সব মিলিয়ে একদম ভালো ছিলাম না আমি, অন্যরকম হয়ে গিয়েছিলাম। এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়লাম যে স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়লো। অনিয়ম, নির্ঘুম, শারীরিক অত্যাচারের ফলে জন্ডিজ রোগে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লায় চলে এলাম।

খবর পেয়ে ‘স’ এসে পড়েছিল কুমিল্লায় আমাকে দেখতে। যখন কিছুটা সুস্থ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরব ভাবছিলাম তখনই ঘটনাটি ঘটলো। ‘স’ এক সকালবেলা আমার ঘরে ঝড়ের বেগে এসে ঢুকলো। সেকি বিষণ্ন মূর্তি তার! মনে হলো ঘুমহারা সে বহুদিন! চোখ দুটো লাল, মাথার চুল উসকোখুসকো, এলোমেলো শাড়ি। প্রসাধনহীন মুখটা শুষ্ক-বিবর্ণ। আমি চমকে গেলাম! দুর্বল শরীর নিয়েই বিছানা ছেড়ে উঠে তাকে ধরে চেয়ারে বসালাম। কোমল কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, ‘‘স’ কী হয়েছে তোমার? একি চেহারা হয়েছে! বাসায় কেউ কিছু বলেছে বুঝি।’ ‘স’ নিঃশব্দে নিচের ঠোঁট দাঁত দিয়ে কামড়াতে কামড়াতে এপাশ ওপাশ মাথা নাড়লো। তারপর বললো, ‘আপনিও আমার বিশ্বাসটাকে হত্যা করলেন! স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি! এই নিয়ে আমি দু’বার নিহত হলাম। এবার আমি সত্যি সত্যি মৃত। .......আপনারা ভালো থাকুন।’ আমি আকাশ থেকে পড়লাম! বিস্ফারিত হয়ে গেল আমার দুচোখ! বললাম, ‘কী হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি তোমার বিশ্বাস ভঙ্গ করতে যাবো কেন? কী আশ্চর্য! এটা তুমি কী করে বলতে পারো? কেউ তোমাকে ভুল কিছু বলেছে, সেটা তুমি বিশ্বাস করেছো। কী হয়েছে বলো।’

‘আপনি কী অস্বীকার করতে পারেন আমারও আগে একটি মেয়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ছিল না? এবং এখনো নেই? বলুন আমি মিথ্যে বলছি! মেয়েটি এখন আপনাদের আগের বাসায় থাকে।.....সেটাই ভালো হলো। তাই সেদিন মনে হয়েছিল, দেখা না হলেই ভালো ছিল। অনেক ভালো ছিল। আপনারা ভালো থাকুন।’ বলেই ধীরে ধীরে উঠে চলে গেল। আমি পাথরের মতো বোধহীন স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম। পরে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে অসহায়ের মতো মাথার চুল ছেঁড়া ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিল না সেদিন। হয়তো আমাদেরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু কেউ কোনো না কোনো কারণে ‘স’কে বলেছে ‘গ’র প্রতি আমার দুর্বলতার কথা। কিন্তু সেই দুর্বলতা অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছিল ‘স’র প্রভাবেই।

একসময় মুছে যেতো বলেই আমার বিশ্বাস। সে দুর্বলতা ছিল ‘গ’র প্রতি ক্ষণিকের অনুরাগ মাত্র। বুঝে গেলাম শতকোটি বার ‘স’র পায়ে মাথা কুটে মরলেও তার মনের সন্দেহের বিষ শুষে ফেলা আর সম্ভব হবে না। কিছুতেই না। সে এমন এক কঠিন পাথরের মূর্তিতে পরিণত হয়েছে আর ভাঙা যাবে না বলেই আমার মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস জন্ম নিল। মানসচক্ষে দেখতে পেলাম, সদ্য বেড়ে ওঠা একটি পুষ্পশাখা হটাৎ ঝড়ের আঘাতে ভেঙ্গে আলগা হয়ে ধীরে ধীরে মাতৃবৃক্ষের পদতলে ঝরে পড়লো।’ তারপরও বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে ‘স’র সঙ্গে। খোঁচা দিয়ে কথা বলতো দেখা হলেই। এত সুন্দর করে সাজতো যে মেয়েটি পরে যখনই কুমিল্লায় এসেছে বড্ড নিরাভরণ দেখেছি।

সেই তেজী, চঞ্চল, হাসিমুখ মেয়েটির আর দেখাই পেলাম না! কোথায় সে হারিয়ে গেল! আমার কোনো কথাতেই তার আর কোনো বিশ্বাস ছিল না। বিশ্বাস হারানো মানুষ মূল্যহীন। আর ওদিকে অনার্স পরীক্ষতেও ভালো রেজাল্ট করতে কেবল ব্যর্থই হলাম না আমি সবদিক দিয়েই মনটা ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেল। অনার্স পরীক্ষার পর সব বন্ধুরা যখন এক এক করে চলে গেল ক্যাম্পাস ছেড়ে, আমি কুমিল্লায় ফিরলাম না। চিঠি পেয়েছিলাম ‘স’র, পরীক্ষা কেমন হয়েছে জানতে চেয়েছে। সেই চিঠি ছিঁড়ে ছিঁড়ে উত্তরের জানালা দিয়ে ঝড়ো বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছি। তখন একটি বড় গল্প লিখেছিলাম। ‘ভালোবেসে বদলে যাবো’ সেটা জাপানে আসার পর যখন ‘মানচিত্র’ কাগজ প্রকাশ করি তখন ছাপিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে শহরে গিয়ে বাবার সঙ্গে গিয়ে সময় কাটিয়েছি। বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয়েছে।

রাজনীতির প্রসঙ্গে একদিন বললো, ‘দেশটাকে এরশাদ শেষপর্যন্ত রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘ইসলামিক কান্ট্রি’ বানিয়ে ফেলবেন মনে হচ্ছে। এটা হবে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানদের জন্য এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় অপমান!’ বাবাকে খুব হতাশ দেখেছিলাম। পরীক্ষা ভালো হয়নি সেটা নিয়ে দুঃখবোধ থাকলেও বাবা মুখে প্রকাশ করেনি কিছুই। করেইবা কী হবে! কী অবস্থা তখন তরুণ সমাজের! লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-লাগামহীন কে কার কথা শোনে! সন্ত্রাস, মারামারি, খুনাখুনি, মাদকাসক্তি চরম আকার ধারণ করেছিল সমগ্র দেশে। আমিও সেই সময়েরই শিকার ছিলাম। তাই সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করলাম, দেশ ছেড়ে অন্য কোনো দেশে চলে যাবো। এমন একটি দেশ যেখানে গেলে পরে নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে ফেলতে সক্ষম হবো। জীবনটাকে গড়তে পারবো। নিজের দেশে যখন শান্তি নেই তাহলে সেই শান্তি বিদেশের মাটিতেই খুঁজতে হবে। ছুটির দিন নির্জন ক্যাম্পাসে একা একা ঘুরতে বেশ লাগতো। অ্যাপ্রোচে ভুইল্যা না থাকলে হাটহাজারি চলে যেতাম সেখানে পাওয়া যেতো। মানিকরা যে বাসাটিতে থাকতো দেখে বুকের ভেতরটা কেমন করতো।

মানিকের বাবা অনার্স পরীক্ষার আগেই সাতকানিয়া বদলি হয়ে চলে গিয়েছিলেন। পরিবারকে নিয়ে যাননি অত প্রত্যন্ত শহরে। কুমিল্লায় পাঠিয়ে দিলেন। মানিকের সঙ্গে একবার গিয়েছিলাম সাতকানিয়া। পরে মানিকও এফ রহমান হলে তার এক বন্ধুর রুমে এসে ডাবলিং করতো। মাঝে মাঝে খারাপ লাগলে শহরে আরিফ ওরফে বাদলের ওখানে চলে যেতাম। রেলওয়ের অফিসার কোয়ার্টারে থাকতো। মারামারিতে ছিল ওস্তাদ। কোনো পার্টি করতো না। ওরা এক সময় কুমিল্লায় ছিল, তখন থেকেই পরিচয়। শুকনো আর তরল খাওয়ারও ওস্তাদ ছিল সে। ওর সঙ্গে শহরের এখাসে সেখানে আড্ডা মেরে সাপ্তাহিক ‘দেশ’ কিনে হলে চলে আসতাম শার্টলে চড়ে। অন্ধকার শার্টলের ভিতরে একা একা নেশায় বুঁদ হয়ে ভাবতাম, মনে হতো এই ট্রেনটা যদি আর না থামতো তাহলে বেশ হতো.....! একদিন বাবা বললো, ‘হলে একা কি করছো? কুমিল্লা যাও।

ছোট ভাইবোনদেরকে এই ফাঁকে একটু গাইড করো। ওদের প্রতিও তো তোমার ‘ভালোবাসা’ থাকা দরকার। চমকে উঠলাম! সত্যি ভয়ানক চমকে উঠলাম! বললাম, ‘হ্যাঁ, যাবো। ভুলেই ছিলাম বিষয়টা। মাস খানেক ছিলাম আলাওল হলে তারপর কুমিল্লায় গেলাম। যেতে যেতে বাবার কথাটির মধ্যে একটি উষ্মা আছে বলে মনে হলো। ভাইবোনদের প্রতি ‘দায়িত্ব’ কথাটি ব্যবহার না করে ‘ভালোবাসা’ বলার কারণ কী? স্বল্পভাষী বাবা খুব চিন্তা করেই কথা বলে। ‘স’র ঘটনাটি নিয়েই যে বাবা কটাক্ষ করেছে তা বুঝতে পারলাম। এবং এর পেছনে যুক্তিও অবশ্য আছে। শিখার ব্যাপারটি নিয়েও বাবা আমাকে একবার সচেতন করে দিয়েছিল।’

কুমিল্লায় এলাম, এলেও খুব একটা প্রাণ খুঁজে পেলাম না। আটপৌরে আড্ডা চলে। ভাইবোনদের দিকে নজর দিলাম। সন্ধেবেলায় ওদের পড়ালেখাগুলো দেখি। হাসিঠাট্টা, দুষ্টুমি করি। পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাই ছুটির দিনে। ফুটফুটে তিনটে বোন আমার। ছোটটা অনেকটা জাপানি মেয়ের মতো। বাবা মাঝে মাঝে ‘জাপানি’ বলে ডাকে। ফুলের জন্য সে পাগল। যখন তার কথা ফুটেছে তখন জানালার ধারে বসে থাকতো, যে কাউকেই যেতে আসতে দেখলে বলতো, ‘তোমাদের বাসায় ফুল আছে? কী ফুল আছে? তুমি আবার এলে আমার জন্য ফুল নিয়ে এসো কিন্তু! ভুলবে না তো?’ এখান সেখান থেকে কত ফুল যে তাকে এনে দিয়েছি।

ছোট ভাইটি লম্বা, তাগড়া হয়েছে, কিন্তু পড়ালেখায় একদম মন নেই। ওদের দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, এদের মানুষ করতে হবে। তিনটি বোনকে বিয়ে দিতে হবে। মায়ের স্বপ্ন একটি বাড়ি। সেটা করে দিতে হবে। ভীষণভাবে অনুভব করলাম আমার দুই কাঁধে প্রচণ্ড ভারী কিছু নেমে এসে ভর করছে যা দেখা যায় না কেবলি অনুভূত হয়।.... চলবে।

আলোকচিত্র: উপরে, সেইসময় আমার একমাত্র ছোটভাই, মাঝখানে, মা ও দুবোন। নিচে, বাবার সঙ্গে ছোটবোন

লেখক : জাপান প্রবাসী

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test