E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অতলান্ত পিতৃস্মৃতি দ্বিতীয় অধ্যায়, পর্ব ২১

২০১৪ আগস্ট ০১ ১২:২৪:৩৭
অতলান্ত পিতৃস্মৃতি দ্বিতীয় অধ্যায়, পর্ব ২১

প্রবীর বিকাশ সরকার : [ভূমিকা : আমার ৫৫ বছরের জীবনে বাবার সঙ্গে কেটেছে মাত্র ২৪-২৫টি বছর! জ্ঞান হওয়ার পর থেকে যেভাবে বাবাকে দেখেছি, চিনেছি, জেনেছি এবং বুঝেছি তার মূল্যায়নই হচ্ছে এই আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস বা স্মৃতিকথা ‘অতলান্ত পিতৃস্মৃতি’---এমন করে খোলামেলা খুঁটিনাটি কোনো স্মৃতিকথা আর কোনো বাঙালি লিখেছেন তার জন্মদাতা পিতৃদেবকে নিয়ে আমার অন্তত জানা নেই।]

মাকে বললাম, ‘কয়েক দিনের জন্য সিলেটে যাবো। এবং গেলামও। ভেবেছিলাম সরমাকে গিয়ে পাবো। পিতৃহারা অসহায় মেয়েটি আমার হৃদয়ের একটি কোমল জায়গা দখল করে আছে সেই ছেলেবেলা থেকেই। গিয়ে তাকে না দেখে যতটা না মনোভঙ্গ হলাম তার চেয়ে বেশি আঘাত পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম নিদারুণ এক ঘটনার কথা শুনে! সরমার কথা জিজ্ঞেস করতে বাড়ির সবাই কেমন যেন মুখ কালো করে ফেললো। জেঠিমা বললো, ‘ওরা তো চলে গেছে এ বাড়ি ছেড়ে গত বছর।’ আমিও তাই বিশ্বাস করলাম সরল মনে। ভাবলাম কোনো আত্মীয়র কাছে চলে গেছে হয়তোবা।

কিন্তু না। এবার এসে বাড়ির সবাইকে কেমন নিস্তেজ মনে হচ্ছিল। জেঠুও কেমন যেন মনমরা। অবশ্য বয়সও হয়েছে তাঁর। আগের আনন্দফুর্তি নেই বাড়িতে। অবশ্য গ্রামেরও অবস্থা ভালো নয়। দারিদ্র, মহামারি, চুরিডাকাতির কারণে মানুষের মনে শান্তি নেই, নেই উচ্ছলতা। পরিবেশও বদলে গেছে অনেক। একদিন বাণীদের বাড়িতে গেলাম। এই মেয়েটিকে একটি শিশুসন্তানসহ জামাই ফেলে দিয়ে চলে গেছে। দরিদ্র বাবার কাছেই থাকে। আমাকে দেখে খুব খুশি হলো। বললো, ‘দাদাবাবু এখন আর আসো না যে তুমি! আমাদেরকে ভুলে গেছো।’ বারান্দায় বসে ওর দেয়া নাড়ু আর মুড়ি খেতে খেতে নানা কথা বলছিলাম। তখন সরমার কথা উঠলো। বললাম, ‘বাণী, তুমি জানো নাকি ওরা কোথায় গেছে?’ বাণী মুখ কালো করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তার চোখে জল। আমি বললাম, ‘কি হলো বাণী, তুমি কথা বলছো না কেন?’ তখন সে নিচু স্বরে সব খুলে বললো। সরমার মা রাঙ্গাপিসি গত বছর হঠাৎ করে আত্মহত্যা করেছেন। সরমা এখন প্রায় পাগল। জেঠিমার এক আত্মীয়র ছেলে আমাদের বাড়িতে থেকে বালাগঞ্জ থানার কলেজে পড়ালেখা করতো। পরে সিলেটে আইনজীবী হয়েছিল। সে সরমাকে খুব স্নেহ করতো। সরমা তাকে মামা ডাকতো। সে-ই সরমাকে নিয়ে গেছে নিজের কাছে। পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করছে। কেন আত্মহত্যা করলেন তার কারণ জানতে আর ইচ্ছে হলো না আমার বরং আত্মহত্যার কথাটি শুনেই আমি থর থর করে কেঁপে উঠলাম: হায়! আমার চারদিকে এত অন্ধকার কেন? কুমিল্লায় ফিরে আসার পর আরও কিছুদিন কাটলো। তারপর রেজাল্ট বেরোলো অনার্স পরীক্ষার। মানিক, আহাম্মদ আলী, আফজাল, টিপু, ফেরদৌস, আলম আগেই চলে গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। চিঠি দিয়ে জানালো আমি সেকেন্ড ক্লাস পেয়েছি। ফেল মারার চেয়ে কম নয় ভেবে কৃতার্থ হলাম। বাবা-মাও একেবারে অখুশি হয়নি। এবার ক্যাম্পাসে যাওয়া দরকার।

বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়ার আগের দিন রাতে স্বপন, বিষ্ণু, শঙ্কর, বাকের, শাহআলম মিলে খুব আড্ডা দিলাম পার্কে। শুকনো খেয়ে টালমাটাল সবাই একমাত্র আমি ও শঙ্কর ছাড়া। শঙ্কর এমনিতেই কম খায়। আমারও ইচ্ছে করছিল না। তবুও সঙ্গ দিলাম। যখন গভীর রাতে বাসায় ফিরে যাচ্ছিলাম শঙ্কর বললো, ‘পটু কালকে তো চলে যাবে আবার কবে আসো জানি না। চলো আর একটু বসি।’ এই বন্ধুটি আমার বড়ই সরল-সিধেসাদা মানুষ। বড়ই কোমল স্বভাবের ছেলে। বললো, ‘একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল। যদি কিছু মনে না করো তাহলে জানতে চাইতাম।’ আমি বললাম, ‘শঙ্কর, এতটা বছর এক সঙ্গে আছি। আমাকে চিনতে পারলি না তুই! কী জানতে চাস বল? কিছুই মনে করবো না। এখন আর মনে করার মতো মনের সাহসও নেই।’ শঙ্কর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো, ‘পটু তুমি অনেক দিন ধরেই ভালো না আমি জানি। মানিক, আহাম্মদ আলী, স্বপন আমাকে সব বলেছে। তুমি যে আমাদের বন্ধুমহলে কী সেটা তো আমরা ছাড়া কেউ জানে না। তোমার দুঃখ আমাদেরও দুঃখ। তুমি ভালো না থাকলে আমরাও ভালো থাকি না। .......একজনের জন্য তোমার আর ‘স’র সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে গেল! এটা কিছুতেই মানতে পারছি না। বিশ্বাস করতে পারছি না। ওই মেয়েটাও শুনে স্তব্ধ হয়ে গেছে! নিজেকে অপরাধী মনে করছে। সেও তোমাকে কী যে শ্রদ্ধা করে সে আমি জানি। যখন সে একদিন জানতে পারলো তোমার সঙ্গে ‘স’র সম্পর্ক সে গুটিয়ে নিয়েছিল নিজেকে। এখন যখন জানতে পারলো তার কারণে তোমাদের এত বড় ক্ষতিটা হলো কিছুতেই নিজেকে প্রবোধ দিতে পারছে না। অথচ তুমি তার সঙ্গে কোনোদিন কখনো একটি কথাও বলোনি!’ আমি তাকে বললাম, ‘সেই একজনটা কে ‘গ’?’ শঙ্কর মাথা নেড়ে সায় দিল। এতক্ষণ পার্কটা ছিল অন্ধকার। ধর্মসাগরের জলও দেখা যায়নি। একটু আগে চাঁদ উঠেছে। পূর্ণিমার পর ক্ষয়িষ্ণু চাঁদ। গাঢ়ো বটে কিন্তু তেমন উজ্জল আলো নয়। তবু অগাধ জলরাশির উপর আলো ফেলেছে। আমি একটি সিগারেট ধরিয়ে শঙ্করকে বললাম, ‘কাঁদিস না শঙ্কর। এসব এমন কোনো ঘটনাই নয়। মানুষের জীবন চলমান এবং ঘটনাবহুল। একজন মানুষের জীবনে লক্ষ-কোটি ঘটনা ঘটতেই থাকবে। কেউ আটকাতে পারবে না। ‘স’ আর ‘গ’র মনে হয়তো আমি চিরদিন অপরাধী হয়ে থাকবো। কিন্তু ওরা দুজন আমাকে মুক্তি দিয়ে গেছে। আমার অনেক কাজ বাকি শঙ্কর। অনেক কাজ। অনেক গুরু দায়িত্ব আমার মাথার উপর। আর দুবছর পর সমাজে নামতে হবে সামাজিক জীব হিসেবে। লড়াই করতে হবে বেঁচে থাকার জন্য। তুই যেমন তোর বাবার ব্যবসায় বসেছিস। আমাকেও তো দাঁড়াতে হবে। তা না হলে সহায়সম্বলহীন আমার বাবা-মা, চারটি ভাইবোন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। মানুষের অনেক আশা থাকে শঙ্কর---কিন্তু এক জীবনে সব আশা পূরণ হয় না। তাই জন্মান্তর ঘটে বার বার। এই জন্মে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি, ভালোবাসাবাসি খেলেছিও। আর প্রয়োজন নেই। আমি আর কাউকে ভালোবাসতে চাই না শঙ্কর, কেউ আমাকে ভালোবাসুক সেটাও আর চাই না। চাই না!’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এলাম। একটি চিঠি তুলে দিল আমার হাতে মিটন। ঢাকা থেকে আসা। অভিনন্দন জানিয়েছে ‘স’।

একটি জায়গায় লিখেছে: ‘ভালো রেজাল্ট করতে পারতে, ইতিহাস সম্পর্কে তোমার দৃষ্টিভঙ্গিটা ছিল খুবই আধুনিক, বস্তুনিষ্ঠ। তথাপি ভালো রেজাল্ট করতে পারলে না হয়তো আমার কারণে। আমি তোমার জীবনে এসে সব উলোট-পালোট করে দিলাম। ক্ষমা করে দিও।’ ‘স’র একটা অদ্ভুত ব্যাপার ছিল, চিঠি লেখার সময় সম্বোধন করতো ‘তুমি’ বলে, কিন্তু সামনে থাকলে কোনোদিন ‘আপনি’ ছাড়া বলতো না। বলতাম, ‘তুমি করে বলো।’ সে বলতো, ‘তুমি বললে আপনাকে অপমান করছি এমন মনে হয়।’ এটা যে ছিল গভীর দুর্বলতারই লক্ষণ তা আর না বললেও চলে। চিঠির শেষে লিখেছে, ‘কুমিল্লা কখনো এলে আগে আগে জানাবে। অনেক দিন তোমাকে দেখি না। দেখতে খুব ইচ্ছে করে। বিধাতার কাছে একটিই শুধু প্রার্থনা করি, তোমাকে দেখতে দেখতে যেন একদিন অন্ধ হয়ে যাই!’ মাথার ভিতরে হঠাৎ যেন প্রচন্ড রক্তের চাপ অনুভব করলাম। টেবিলে ছিল জলভর্তি গ্লাস। ‘নো, ননসেন্স’ চিৎকার দিয়ে গ্লাসটি তুলে খোলা দরজা দিয়ে ছুঁড়ে দিলাম বারান্দার দেয়ালে। ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল গ্লাসটি। সারা শরীর কাঁপছিল আমার। আহাম্মদ আলী দ্রুত আমাকে ঝাপটে ধরে বিছানায় বসিয়ে দিল। আশেপাশের ছাত্ররা এসে ভিড় করেছিল ওরা ভেবেছিল বুঝি মারামারি লেগে গেছে। ‘স’র ওই একটি লাইন আমার মাথা খারাপ করে দিয়েছিল অনেক-অনেক দিনের জন্য। এম এ ক্লাসে উঠলাম ঠিকই। কোনো প্রাণ বলতে কোথাও কিছু নেই। যা দেখি সবই দ্রুত হলুদ হয়ে যায়। যা ছুঁই বাদামের খোসার মতো ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে। ক্লাসও হয়ে উঠলো অনিয়মিত। সেমিনারে যাই না বললেই চলে।

মুসলিম স্থাপত্যশিল্প পড়াতেন ড.আসমা সিরাজ। একদিন ম্যাডামকে একটি প্রশ্ন করে বকা খেলাম। সকলের সামনে ভীষণ অপমানিত হলাম। সঙ্গে সঙ্গে সহপাঠী জুবায়ের উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিল, ‘ম্যাডাম, আমরা ছাত্র অনেক প্রশ্ন করতেই পারি, আমাদের কৌতূহল মেটাতে পারেন না বলেই প্রশ্ন করতে বাধ্য হই। সঠিক উত্তর না দিয়ে ‘নিজে নিজে জেনে নাও’ একথা বলতে পারেন না। আমরা বিষয়টি আলোচনাও করতে পারি। এ ধরনের জবাব শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট্টো নয়। নিজেরা জানলে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতাম না। প্রবীর জানতে চেয়েছে ‘মসজিদ কেন গম্বুজ আকৃতির হয় এবং এর তাৎপর্যটা কী?’ একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হিসেবে কৌতূহল থাকাটাই স্বাভাবিক। আমরা মুসলমানরাও অনেকেই এটা জানি না। ম্যাডাম, উত্তর জানা না থাকলে আপনি বলতেই পারেন, জানা নেই.......।’ ইত্যাদি ইত্যাদি আরও কী কী বলেছিল সে সেমিনারে। বড্ড রাগী, নীতিনিষ্ঠ, খাঁটি মুক্তিযোদ্ধা সিলেটে জন্ম আমার এই প্রিয় বন্ধু জুবায়ের। ম্যাডাম রাঙামুখ করে সেমিনার রুম থেকে গট গট করে চলে গিয়েছিলেন। সেই ছিল আমার শেষ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিকেল বেলা কাউকে কিছু না বলে এক কাপড়ে ক্যাম্পাস থেকে সোজা শহরে। বাবার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। দূর থেকে আমাকে দেখে বাবা হাত উঠালো। কাছে এসে বললো, ‘কখন এসেছো?’ ‘এইতো কিছুক্ষণ আগে।’ বললাম। ‘তোমাকে আজকে খুব বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। কিছু হয়েছে নাকি বাবা?’ আমি তাৎক্ষণিক উত্তর দিলাম, আমতা আমতা করে বললাম, ‘কই না তো। বাসে করে এসেছি তো, প্রচন্ড ভীড় আর ধুলোবালি। তোমাকেও খুব শুকনো দেখাচ্ছে বাবা। খাওয়াদাওয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না? প্রতিদিন উঁচু পাহাড়ে উঠে অফিস করো খুব কষ্ট হয় বুঝতে পারি।’ বাবাকে মিথ্যে বললাম। না বলে পারলাম না কারণ শার্টল ট্রেনে দুটো ভুইল্যা টেনেছি। মাথা স্বাভাবিক নেই। বাবা বললো, ‘কী আর করব বাবা চাকরি না করলে কি খাবো। আসো ঘরে আসো। একসঙ্গে খেয়ে নিই। তারপর তোমাকে তো আবার যেতে হবে ক্যাম্পাসে।’ বলেই ফেলতে চেয়েছিলাম, ‘না বাবা আমি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবো না। আমি অন্য কোথাও যাবো। অন্য কোথাও বাবা......।’

বাবার সঙ্গে শিঙ্গি মাছের ঝোল, আলুভাজি আর ডাল দিয়ে ভাত খেলাম। দুধও খেলাম। প্রায় অন্ধকার ঘর। বাইরে রাত ঘন হচ্ছে। চারদিকে যানবাহনের উৎকট অবিরাম শব্দ। বাবা একটি সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় এসে বসলো। মাথার উপর জ্বলছে মৃদু আলোর একটি বাল্ব। আমিও একটি চেয়ার টেনে বসলাম মুখোমুখি। বললাম, ‘বাবা, একটা অনুরোধ করতে এলাম। আশা করি রাখবে। আমার কোনো আবদার, অনুরোধ, উপরোধ, চাওয়া-পাওয়া কোনোদিন অপূর্ণ রাখোনি। তুমি যে আমার জীবনে কী একমাত্র আমি আর আমার জীবনবিধাতাই শুধু জানি। তুমি আমার বাবা এবং বন্ধু এভাবেই চিরকাল দেখে এসেছি তোমাকে। আমার শিক্ষক যা শেখাতে পারে না আমি তোমার কাছ থেকে শিখেছি, জেনেছি। তোমার নির্দেশ, উপদেশ নিয়েই লিখে লিখে এ পর্যন্ত এসেছি। লেখক হয়ে উঠেছি সেটা বলার মতো ধৃষ্টতা আমার নেই। চেষ্টা করছি, করে যাবো। তার আগে আমি বদলাতে চাই বাবা। আমি এত ক্লান্ত হয়ে পড়েছি যে মাটি থেকে ক্রমশ আলগা হয়ে যাচ্ছি। আর এক দণ্ড দাঁড়াবার মতো শক্তি আমার নেই। শরীর নয় বাবা, আমি মানসিক যুদ্ধে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেছি। আমি পঙ্গু হয়ে যাবো। আমি এবার মুক্তি চাই, সম্পূর্ণ পাল্টে ফেলতে চাই নিজেকে। আমি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাবো না বাবা। আমি আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো না।’ বাবা তো সবই জানে আমার সম্পর্কে। কাজেই খুব একটা অবাক না হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো। তাকিয়ে থাকলো আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে। তারপর বললো, ‘কেনরে বাবা? কারো সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে নাকি?’ বললাম, ‘না বাবা। কারো সঙ্গেই আমার কোনো ঝগড়া নেই। তুমি জানো ঝগড়াঝাঁটি আমি একদম পছন্দ করি না।’ ‘তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে না কেন? তুমি কি তবে আর পড়ালেখা করতে চাও না?’ সাহস সঞ্চয় করে বললাম, ‘হ্যাঁ বাবা। আমার আর পড়ালেখার ইচ্ছে নেই। আমি এদেশে আর থাকতে চাই না বাবা। এখানে থাকলে আমি মরে যাবো। এদেশে আমাদের মতো তরুণদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই বাবা, সে তুমি নিজেও ভালো করে জানো। বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে বেকার হওয়ার আগেই আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। এটা আমার সিদ্ধান্ত। আমি আমার বর্তমান জীবনকে ভুলে যেতে যাই। নতুন জীবন গড়তে চাই। নিজে বাঁচতে চাই, তোমাদেরও বাঁচাতে চাই। হারিয়ে যেতে চাই না বাবা।’ …চলবে।

আলোকচিত্র : বামে, চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং বাবার সঙ্গে অনেক স্মৃতি বিজড়িত একটি জায়গা। আজকে বাবা নেই ভবনটি ঠিকই আছে। ডানে, বার্ধক্যে এসে বাবা মানুষজনকে খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করত, কিছু বলত না সহজে।

লেখক : জাপান প্রবাসী

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test