একাত্তরের স্মৃতিকথা বললেন জুঁই
‘সুরুজের চোখ দুটি আগে উপড়ে ফেলা হয়েছিল’
শ্রুতি লিখন : শঙ্করী দাস : ১৯৭১ সনের ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু। সে রাতে আমি ময়মনসিংহ শহরে ছিলাম। আমাদের বাসা ছিল জিলা স্কুলের গেটের সামনে। আমি তখন নতুন বৌ। মাত্র কয়েক মাস আগে আমার বিয়ে হয়েছে। এটা ছিল আমার শ্বশুরের বাসা। ২৬ মার্চ সকাল থেকে বাসার সবার কাজ ছিল রেডিওর খবর শোনা, বিভিন্ন জায়গার খবর সংগ্রহ করা আর পরিস্থিতির উপর নজর রাখা। ময়মনসিংহ শহর জুড়েই ছিল একই অবস্থা।
এভাবেই মার্চ শেষ হলো। ১ এপ্রিল ভোরে আমার ভাসুর আতংকে ছুটে বাসায় ঢুকলেন এবং হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, ‘পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী শহরে ঢুকছে। যে যেদিক সম্ভব বাসা ছেড়ে চলে যেতে হবে।’ আমরা তখন যেভাবে ছিলাম সে অবস্থাতেই বাসা ছাড়তে শুরু করলাম। আমাদের তখন মাত্র নাস্তা খাওয়া শেষ হয়েছে। আমার শাশুড়ি ঘরের কিছু জিনিষপত্র নিয়ে গফরগাঁও এর উদ্দেশে রওনা দিলেন। তিনি কিছু রুটিও সাথে নিলেন। আমি ও আমার স্বামী সুনীল বাবুর বাড়ির দিকে রওনা হই। সুনীল বাবু ছিলেন আমার স্বামীর সহকর্মী। সুনীল বাবুর বাড়ি ছিল শহর থেকে ১৮/১৯ মাইল দূরে ফুলবাড়ীয়া থানার রাধাকানাই গ্রামে। সুনীল বাবুর বাড়িতে আমরা এক সপ্তাহ ছিলাম। এরই মধ্যে খবর শোনা যায়, সুনীল বাবুর বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হবে। তখন আমরা সুনীল বাবুর বাড়ি ছেড়ে অন্য এক মুসলমান ভদ্রলোকের বাড়ি গিয়ে আশ্রয় নিই। রাধাকানাই গ্রামের এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি এভাবে আমরা একমাস লুকিয়ে রইলাম। স্বাধীনতার এত বছর পরও একবিন্দু ভুলিনি রাধাকানাই গ্রামের আশ্রয়দানকারীদের আদর-আপ্যায়ন।
রাধাকানাই গ্রামে একদিন হঠাৎ করে আমার ভাসুর এসে উপস্থিত হলেন। অনেক খোঁজের পর তিনি আমাদের সন্ধান পেয়ে ছিলেন। ভাসুর আমাদের নিয়ে রওনা হলেন আরও গ্রামের ভিতরে উনার শ্বশুরবাড়ি। পথে ঝড় বৃষ্টির মধ্যে রিক্সায় ভিজে যাচ্ছি। ভিজে কাপড়ে ভাসুরের শ্বশুর বাড়ি পৌঁছলাম। সেখানে একরাত থেকে গফরগাঁও আমার শ্বশুর বাড়ি চলে আসি। ভয়ভীতির মধ্যে থেকেও আমরা ভালো খাবার দাবার পাচ্ছিলাম। তখন মাছ, মাংস, দুধ, সবজি সব কিছু সস্তা। ক্রেতা নেই। নদীর মাছ তো লাশের কারণে মানুষ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। হাট-বাজার বন্ধ। খাবার আছে ঠিকই কিন্তু কারো পেটে খাবার ঢুকছে না। আতংঙ্কে সবাই দিশেহারা। কে কখন আর্মির হাতে পড়ে। এর মাঝে ইয়াহিয়া দেশের সমস্ত কর্মচারীকে কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেয়। আমার স্বামী ময়মনসিংহ শহরের রাধাসুন্দরী স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। চাকরিতে যোগদানের খবর নিয়ে আসে আমার দেবর। তখন আমাদের সিদ্ধান্ত হয় আমরা সবাই ময়মনসিংহে চলে আসব। শ্বশুর বাড়ির লোকজনসহ ময়মনসিংহে চলে আসি। আমার ও ননদের গায়ে ছিল বোরকা। আমার গায়ে নিরেট গাঁয়ের মেয়েদের মতন এক পেঁচে শাড়ি। মাথার চুল এলো করা। পায়ে জুতো নেই।
গফরগাঁও স্টেশনে ট্রেন পৌঁছলে দেখি বেশির ভাগ ট্রেনের কামরা পাকিস্তানি সেনাদের দখলে। আমার স্বামী ভুল করে সবাইকে নিয়ে পাকসেনাদের কামরায় উঠে পড়েন। কিছু বুঝে উঠার আগেই এক সেনা তার গালে প্রচণ্ড জোরে এক চড় বসিয়ে দেয়। আমরা তখন পড়ি তো মরি করে অন্য কামরায় গিয়ে উঠি। আমরা যে কামরায় উঠি সেখানে কয়েকজন বিহারী। আমাদের তখন হাত পা কাঁপছে। গলা শুকিয়ে কাঠ। বিহারীদের মধ্য থেকে একজন আমার স্বামীর হাতে পাখা তুলে দিল। আর আমার স্বামীকে গফরগাঁও থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত একটানা বাতাস করে যেতে হল তাদের। ময়মনসিংহের বাসায় এলাম। বাসার সামনের রাস্তা দিয়ে অনবরত পাক সৈন্যদের গাড়ি চলে। জীবন হাতে নিয়ে বসে থাকি। রাত কাটে তো দিন কাটে না। আমি তখন অন্তঃসত্ত্বা। আজকের দুই কন্যাকে পেটে ধরে আছি। এমতাবস্থায় জন্মদানের সময় এল। হাসপাতালে ভর্তি হই। একদিন দেখি অনেক আহত পাকিস্তানি সেনা ভর্তি করা হলো হাসপাতালে। হাসপাতালের সবাই বুঝতে পারলাম কাছে কোথাও আঘাত হেনেছে মুক্তিফৌজ।
আমার পাশের সিটে ভর্তি হল সুরুজের বৌ। সুরুজ আমার স্বামীর বন্ধু। সুরুজ মিঞা উকিলের ছেলে। আমার কন্যাদের জন্মের পরদিন সুরুজের বৌয়ের ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। সুরুজ মিঞা প্রতিদিন ছেলের জন্যে দুধ নিয়ে আসত বাইরে থেকে। একদিন দুধ আনতে যে গেল আর ফিরল না। রাজাকার ধরে নিয়ে গেছে। লাশটিও স্বজনরা খুঁজে বের করতে পারল না। শোনা গেলো হত্যার আগে সুরুজের চোখ দুটি আগে উপড়ে ফেলা হয়েছিল। সুরুজের অপরাধ কি ছিল আজ অবধি কেউ জানে না।
তখন জুন মাস। আরো খবর এল আমার নিকট আত্মীয় যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। এই সব মৃত্যু সংবাদের মধ্য দিয়ে কেটে যাচ্ছিল আমাদের দিনগুলো। প্রতিদিন অগণিত মানুষের মৃত্যু ঘটতে লাগল। যারা বেঁচে রইল তারা মানসিক দিক থেকে অর্ধমৃত হয়ে। আমরা কেউ বেঁচে থাকব বা পাকিস্তানি সেনাদের হাত থেকে রক্ষা পাব এ ভরসা কেউ সেদিন রাখতে পারিনি। পুরো নয় মাস ধরে যে বর্বরতা আর নিষ্ঠুরতা চলছিল তার বর্ণনা করা সম্ভব নয়। পুরো দেশ ছিল যেন আগুনের কুণ্ড। আগুনে হাত দিয়ে যেন আমরা বসে আছি। কখন পুড়ে ছাই হব শুধু তারই অপেক্ষা। অবশেষে ডিসেম্বর এল। এল আমাদের স্বাধীনতা। মুক্তির সেই আনন্দ ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব না।
লেখক : শিক্ষক ।
পাঠকের মতামত:
- ডুমাইনের ঘটনার দোষীদের বিচারের দাবিতে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের শান্তি মিছিল
- ‘লাল কার্ড প্রদর্শনের মাধ্যমে বেইমানদের শিক্ষা দেবে জনগণ’
- ৩ দিনব্যাপী জালাল মেলার উদ্বোধন, দর্শক ও ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়
- নড়াইলে মাদক মামলায় ৪ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
- অনির্দিষ্টকালের জন্য চুয়েট বন্ধ ঘোষণা
- ২৮ এপ্রিল খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারও চলবে ক্লাস
- ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রফিকুল আলম রকেট আর নেই
- বাগেরহাটে ডায়রিয়ার প্রকোপ, স্কুল শিক্ষকের মৃত্যু
- নড়াইলে নবগঙ্গা নদী থেকে প্রতিবন্ধী যুবকের মরদেহ উদ্ধার
- গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সাব স্টেশনে অগ্নিকাণ্ড
- টাঙ্গাইলে পচা মাংস বিক্রি করায় জরিমানা
- ‘এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি নয়’
- টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ মাঠে ইস্তিকার নামাজ আদায়
- ‘মানবাধিকার নিয়ে বাংলাদেশের অর্জন স্বীকার করেনি যুক্তরাষ্ট্র’
- টাঙ্গাইলে আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উদযাপন
- বাগেরহাটে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়
- মহম্মদপুরে সড়কে দুর্ঘটনায় প্রধান শিক্ষকের মৃত্যু
- বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে অঝোরে কাঁদলেন মুসুল্লীরা
- সার্বজনীন পেনশন স্কিমের রেজিস্ট্রেশন বুথ উদ্বোধন গৌরনদীতে
- মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ভিপি মিজান সহ ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে
- সাজেকে নিহত ঈশ্বরগঞ্জের ৫ শ্রমিকের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম
- গৌরীপুরে ৩ দফা দাবীতে কৃষক সমিতির স্মারকলিপি প্রদান
- গাইবান্ধায় বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের নামাজ আদায়
- দিনাজপুরে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে পরিকল্পনা কর্মশালা
- কুষ্টিয়ায় নারী চিকিৎসককে হয়রানি, যুবকের কারাদণ্ড
- ঝিনাইদহে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১
- বঙ্গোপসাগরে কার্গো জাহাজডুবি, ভাসছেন ১২ নাবিক
- পার্বত্য জেলার এনজিওর বাজেট জানাতে হবে জেলা পরিষদকে
- মন্ত্রী-এমপির আত্মীয়ের কারণে জনগণ জিম্মি: রিজভী
- টিসিবির জন্য কেনা হবে সাড়ে ৬১ কোটি টাকার মসুর ডাল
- মাগুরায় বৃষ্টির জন্য নামাজ ও দোয়া প্রার্থনা
- নড়াইলে বৃষ্টির জন্য ইস্তিস্কার নামাজ
- শয্যা সংকটে ফ্লোরসহ এক বেডে থাকছে দুই থেকে তিন শিশু
- বেনজীর ও তার পরিবারের নগদ অর্থের তথ্য চেয়ে বিএফআইইউতে দুদকের চিঠি
- প্রমাণে ব্যর্থ রাষ্ট্রপক্ষ, অস্ত্র মামলায় খালাস ‘গোল্ডেন মনির’
- জিআই স্বীকৃতির সঙ্গে পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে হবে: শিল্পমন্ত্রী
- যশোর পৌরসভায় তাপদাহে চাহিদার তুলনায় কমেছে পানি সরবরাহ
- বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন
- নড়াইলে খুনের ঘটনার ৫ মাস পরেও থামছে না বাড়িঘর ভাঙচুর-লুটপাট, আতঙ্কে গ্রামছাড়া মানুষ
- পাংশায় মাদক ব্যবসায়ীসহ পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেফতার
- সোনার দাম আরও কমলো, ভরি ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা
- চলতি বছর থাইল্যান্ডে হিটস্ট্রোকে ৩০ জনের মৃত্যু
- নিরাপদ সড়কের প্রয়োজনীয়তা
- তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তির আশায় সরিষাবাড়ীতে বিশেষ নামাজ আদায়
- ফরিদপুরে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়
- টঙ্গীবাড়িতে ভাই-ভাতিজার হাতে ভাই খুন
- পুতুল পোড়াতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ শিশু রিয়ার মৃত্যু
- বড়াইগ্রামে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ভ্যান চালকের মৃত্যু
- বহিস্কার করেও ভোটমুখী নেতাদের বাগে আনতে পারছে না বিএনপি
- ফুলপুরে ট্রাক চাপায় নিহত ১
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- জেনে নিন কে এই 'প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের' !
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- এবারও মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের ফাঁদে শিক্ষার্থীরা
- সিলেটের ভ্রমণ কাহিনী
- শুধু প্রভাবশালীদের পক্ষেই আইন!
- অম্ল-মধুর যন্ত্রণায় অপু বিশ্বাস
- লাইন ধরে খেতে হয় লিখনের জগা খিচুড়ি !
- আমার বোন শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি : চিনে নিন কে এই বরকত!
- 'ইতিহাসের ইতিহাস'
- ধনী হওয়ার আট কার্যকর উপায়
- মেয়ে পটানোর কৌশল!
- লক্ষাধিক রাখাইন জনগোষ্ঠী আড়াই হাজারে নেমে এসেছে
- উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের নতুন যাত্রা ১ বৈশাখ
- লোভী মানুষ চেনার সহজ উপায়
- আমায় ক্ষমা কর পিতা : পর্ব ১৪'তোমার সহজাত উদারতা তোমাকে আকাশের সীমানায় উন্নীত করলেও তোমার ঘনিষ্ঠ অনেকের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ তোমার নৃশংস মৃত্যুর পথে কোনই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি'
- বাংলা বই পড়ার ওয়েবসাইট
- শাকিবের নায়িকা শ্রাবন্তী, অপুর নায়ক জিৎ
- মঠবাড়িয়ায় ৯ বছরের শিশুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা
- হুমায়ূনের মৃত্যুর কারণ মদের পার্টি !
- দেশে ফিরছেন তারেকস্ত্রী জোবায়দা রহমান
- বোরকা পরা মেয়ের গণধর্ষণের ভিডিও নিয়ে সিলেটে তোলপাড়
- ইউটিউবে নায়লার আত্মপ্রকাশ
- নেপালের ভূমিকম্প প্রাকৃতিক নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি !
- বিএনপির আন্দোলন হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে !