E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুমিল্লার স্মৃতি: রবীন্দ্র আলোকচিত্র প্রদর্শনী

২০১৫ জুলাই ১১ ২৩:৪৩:৫৭
কুমিল্লার স্মৃতি: রবীন্দ্র আলোকচিত্র প্রদর্শনী

প্রবীর বিকাশ সরকার : ২০১২ সালের মে মাসের ৮ তারিখ দিনটি আমার জীবনে একটি স্মরণীয় দিন।

 

স্মরণীয় একটি দিন সৃজনের আগে আমার বাবার বন্ধু, শুভাকাঙক্ষী, আমার লেখার একনিষ্ঠ পাঠক এবং নিরন্তর অনুপ্রেরণাদাতা ঠাকুর জিয়াউদ্দিন আহমদ তথা জিয়াকাকার সঙ্গে আলাপ করলাম। তাঁকে বললাম, সংস্কৃতিসমৃদ্ধ কুমিল্লা শহরটি কেমন যেন ঝিমিয়ে গেছে কাকা! একে উজ্জীবিত করা দরকার। এই শহরে জন্ম না নিলেও শৈশব থেকে জাপান প্রবাসী হওয়া পর্যন্ত ২২-২৩টি বছর এখানে বড় হয়েছি এর আলোবাতাস আর মানুষের স্নেহ-ভালোবাসায় তাই বারংবার ফিরে আসি। একসময় সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় জড়িত ছিলাম। কত স্মৃতি, কত ঘটনা! আবার সংস্কৃতিতে সেই তারুণ্যের আলোড়নটাকে ফিরিয়ে আনা যায় কিনা ভাবছি।

কাকা শুনে বললেন, খুব ভালো চিন্তা। কিছু কি করতে চাও আমি সহযোগিতা করবো। বললাম, গত বছর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশত জন্মবর্ষ গেল। এই উপলক্ষে টোকিওতে তিনদিনব্যাপী একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী করেছিলাম রবিঠাকুরের। জাপানে গৃহীত ৩৪টি ছবির প্রায় সবই দুর্লভ এবং অপ্রকাশিত। ব্যাপক সাড়া পড়েছিল। আয়োজক ছিল ইন্ডিয়া সেন্টার ফাউন্ডেশন টোকিও, জাপান। ছবিগুলো নিয়ে এসেছি একটা প্রদর্শনী করলে কেমন হয়।

কাকা লাফিয়ে উঠলেন, আরে বলো কী! এটা তো অসামান্য একটি ঘটনা হবে! এবছর রবীন্দ্রনাথের ১৫১তম জন্মবর্ষ টাউন হলে একটি অনুষ্ঠান হবে। চলো বারান্দায় প্রদর্শনীটি করি। এটা হবে ব্যতিক্রম একটি ঘটনা এই শহরে। আমি ব্যবস্থা করছি তুমি প্রস্তুতি নাও।

কাকার উৎসাহে, কবি ও চিত্রশিল্পী সৈয়দ আহমাদ তারেক ভাইয়ের সহযোগিতায় প্রদর্শনীটি কুমিল্লা বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো সারাদিনব্যাপী। প্রদর্শনীর গুরুত্ব বোঝাতে তারেকভাই একটি ফিচার লিখেছিলেন স্থানীয় জনপ্রিয় দৈনিক কুমিল্লার কাগজে।

দুপুরের পর থেকেই লোকে-লোকারণ্য হয়ে উঠলো প্রাঙ্গণ। একে তো রবীন্দ্রজন্মবর্ষ স্মরণ অনুষ্ঠান, হলের প্রবেশপথে জাপানে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী চিরাচরিত পরিবেশটাকেই পাল্টে দিল। শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিস্ময় আর কৌতূহলভরে ছবিগুলো দেখছিলেন, কেউ কেউ মন্তব্য লিখছিলেন মন্তব্য খাতায়।

প্রদর্শনীতে বসে একটি বিষয় আমাকে ভাবতে হলো এই যে, এই শহরের তরুণ প্রজন্ম বেড়ে উঠছে অসুস্থ এবং অনুৎসাহ-পরিবেশে। বাইরের ধ্যান-ধারণা, সংস্কৃতি, সৃজনশীলতার ঢেউ এই মফস্বল শহরে আসে না। বহির্বিশ্বকে না জানলে যে নিজের দেশ ও নিজের শহরকে চেনা যায় না, জানা যায় না এটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শেখায় বলে মনে হয় না। বিশ্বকে জানার একটি অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আলোকচিত্র, চলচ্চিত্র,শিল্পকলা এবং সমকালীন সময়ের ঘটনাবহুল পোস্টার প্রদর্শনী। জাপানে হরদম এইসব হচ্ছে।

আরও একটি বিষয় আমার দৃষ্টি খুলে দিল: রবীন্দ্রনাথ বিশ্বব্যাপী একজন সুপরিচিত কবি। কিন্তু এই দেশের শিক্ষিতসমাজই কতখানি তাঁকে জানে আমার সন্দেহ আছে। গ্রামের কথা বলে তো লাভ নেই। ক’জন গ্রামবাসী রবীন্দ্রনাথের নাম শুনেছে তার হিসেব নেই। শিক্ষিত লোকদের যদি রবীন্দ্রনাথে আগ্রহ থাকতো তাহলে শুধু তাঁর গান নয়, তাঁর জীবন ও কর্মকাণ্ডবিষয়ক নানা ধরনের অনুষ্ঠান এবং প্রদর্শনী হতে পারতো তাহলে সাধারণ, এমনকী প্রান্তিক মানুষজনও এত বড় একজন বাঙালি মনীষাকে বহুগুণে, বৈচিত্র্যময়তায় জানতে-বুঝতে সক্ষম হতো। নাজানা তথ্য এবং অজ্ঞতা মানুষের মধ্যে শত্রুতাই বৃদ্ধি করে না, ভুলবোঝাবুঝিরও সৃষ্টি করে। সমাজকে তো উন্নত করতে পারেই না! আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতির নমস্য ব্যক্তিদের জীবন ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রী যাতে সহজে জানতে ও অনুধাবন করতে পারে তার জন্য শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা না রাখলে নয়, যতই ব্যস্ততা থাকুক না কেন। সদিচ্ছাই জাতীয় দায়িত্ব-কর্তব্যের জননী।

জাপানের ওপর আরও কয়েকটি প্রদর্শনী করার ইচ্ছেতে অনেক পয়সা খরচ করে মালমশলা নিয়ে গিয়েছিলাম দেশে কিন্তু বিশেষ পারিবারিক কারণে চলে আসতে হলো। ইচ্ছে আছে অদূর ভবিষ্যতে সেই প্রদর্শনীগুলো করার।

লেখক : জাপান প্রবাসী

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test