E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য 'বায়োস্কোপ'

২০১৫ নভেম্বর ১২ ১১:৫৩:০১
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য 'বায়োস্কোপ'

নিউজ ডেস্ক : কালের বিবর্তনে অনেক কিছু বদলে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে স্বপ্ন । সেখানে স্থান করে নিচ্ছে প্রযুক্তির কৃত্রিমতা। তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্য বায়োস্কোপ। যা এক সময় ছিল গ্রাম বাংলার শিশুদের চিত্ত বিনোদনের মাধ্যম। কিন্তু ভেঁপু বাঁশি বাজিয়ে সবাইকে আহবান জানিয়ে দুলদুল ঘোড়া, মক্কা-মদিনা, আজমির শরীফ ও ক্ষুদিরামের ফাঁসির বায়োস্কোপ দেখিয়ে আজও শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষকে সমান তালে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন আতোয়ার রহমান (৪৫)।

আতোয়ারের বাড়ি মানিকগঞ্জ ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের বড়কুষ্টিয়া গ্রামে। ছোটবেলায় তার হাতেখড়ি বাবা পাষাণ পাগলার কাছ থেকে। তবে নিজ উদ্যোগে বায়োস্কোপ দেখানোর কাজ শুরু করেন ১৫ বছর আগে। এর আগে বাবার সঙ্গে কাজ করেছেন প্রায় ১০ বছর। মানিকগঞ্জ ও এর আশে পাশের বিভিন্ন অঞ্চলের মেলা, পূজা-পার্বণে তার বায়োস্কোপ প্রদর্শনী হয়ে থাকে।

আতোয়ার জানান, বায়োস্কোপে সর্বোচ্চ ৬ জন একটি প্রদর্শনী উপভোগ করতে পারেন। রিল হিসেবে টিকেট মূল্য নির্ধারিত হয়। প্রদর্শনীর সময়সীমা অনুযায়ী টিকেট মূল্য কম-বেশিও হয়ে থাকে। আবার শহর অঞ্চল-গ্রামাঞ্চল ভেদে প্রদর্শনী মূল্যের তারতম্য আছে। গ্রাম্যমেলাগুলোতে প্রতি শো ৩০ টাকা এবং বায়না শো তথা শহরাঞ্চলে শো প্রতি ৬০ টাকা নির্ধারিত হয়ে থাকে।


তার ভাষ্য মতে, মেলাকেন্দ্রিক এই পরিবেশনায় সাধারণত দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভিড় থাকে বেশি। ভিড়ের ওপর নির্ভর করে রিল টানার গতি। পেশায় রিকশাচালক আতোয়ার হোসেনের দিন শেষে যা থেকে যায়, তাতেই তিনি খুশি থাকেন।

বায়োস্কোপ প্রদর্শনীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তিনি আরও জানান, বায়োস্কোপ আমাদের দেশিয় সংস্কৃতির একটি ঐতিহ্য বহন করে। তবে আজ এর অবস্থা একেবারেই সংকটাপন্ন। বিশেষ করে স্যাটেলাইটের যুগে টিভি, মোবাইল, সিডি ও ভিসিডির সহজলভ্যতার কারণেই এর প্রচলন কমে গেছে। তবে বায়োস্কোপে নানা রং-ঢংয়ের মাধ্যমে বর্ণনা দিয়ে একটি দৃশ্যকে বাস্তবে রূপান্তর করতে হয়, যা একটি কষ্টসাধ্য কাজ। যদিও এলাকার ক’জন আগ্রহী তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু তার ভাষ্য মতে, কাছে আসতে হবে, হৃদয় দিয়ে নিতে হবে। নতুনরা সেই কষ্ট স্বীকার করার করতে তেমন আগ্রহী নন। এক্ষেত্রে নিজ পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষার্থে নিজ সন্তানকে বায়োস্কোপ পরিবেশনা শেখানোর বিষয়েও তিনি তেমন উৎসাহী নন। যদি কখনো তারা শেখার জন্য আগ্রহ দেখায়, তাহলে শেখাতে পারেন।

বাবা পাষাণ পাগলার হাত ধরে শেখা মো. আতোয়ার রহমানের ‘টুকি বায়োস্কোপ’ এর জনপ্রিয়তা শুধু মানিকগঞ্জ জেলার মধ্যেই আবদ্ধ থাকেননি। বিভিন্ন সময় আমন্ত্রণ রক্ষা করতে তিনি ঢাকার কয়েকটি জায়গায়, বগুড়া, টাঙ্গাইল জেলা থেকে ঘুরে এসেছেন। যতদিন বেঁচে থাকবেন, বায়োস্কোপ পরিবেশনের মাধ্যমে মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ আর আনন্দ ভাগ করে নেয়ার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করে যাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।


পাঠকের মতামত:

২৩ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test