E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রায় বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি

২০১৬ ফেব্রুয়ারি ১২ ১৭:০৭:০২
প্রায় বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি

নওগাঁ প্রতিনিধি : “চিড়া কুটে খুকু মনি, ছিটকে ওঠে ধান, শোভা বলে ওরে খুকু আস্তে ঢেঁকি ভান। মুরগি গুলো জ্বালায় বড় আসে বারে বারে, এইবার তাড়িয়ে দেব সাত সমুদ্র পাড়ে”। ঢেঁকি নিয়ে এমন কোন কবিতা বা ছড়া শিশুদের পাঠ্য বইয়ে আর দেখা যায়না। এই ঢেঁকি নিয়ে সে সময় অনেক জনপ্রিয় গান, কবিতা, ছড়া ও প্রবাদ বাক্য রচিত হয়েছিল। যেমন ‘ধান ভাঙ্গিরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া- দুলিয়া ও ধান ভাঙ্গিরে’ । এই গানটি এক সময় গ্রাম বাংলায় খুবই জনপ্রিয় ছিল।

এই ঢেঁকি নিয়ে এখনও অনেকেই বলে থাকেন, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই ঢেঁকিকে নিয়ে কবিতা, ছড়া, গান ও প্রবাদ বাক্য প্রচলিত থাকলেও ঐতিহ্যবাহী সেই ঢেঁকি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে এক সময় ঢেঁকিতে ধান ভানা, চিড়া কুটা আর আটা কুটার দৃশ্য সবসময়ই চোখে পড়তো। এক সময়ে গ্রাম বাংলার বহুল ব্যবহৃত এই উপকরণটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

কালের বিবর্তনে যান্ত্রিক আবির্ভাবের কারনে ঢেঁকি আজ প্রায় বিলুপ্ত অবস্থায় । এখন আর গ্রাম বাংলায় ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য চোখেই পড়ে না। শোনা যায়না ঢেঁকির ধুপধাপ শব্দ। শহরে তো বটেই, আজকাল গ্রামের ছেলে মেয়েরাও ঢেঁকি শব্দটির কথা জানলেও বাস্তবে দেখেনি। অনেকের কৌতুহল কেমন করে মেশিন ছাড়া ধান থেকে চাল বের করা হতো। কেমন করেই বা ঢেঁকিতে চিড়া এবং আটা কুটা হতো। ঢেঁকি হচ্ছে কাঠের তৈরি কল বিশেষ। প্রায় ৬ ফুট লম্বা ও ৯ ইঞ্চি ব্যাস বিশিষ্ট একটি ধড় থাকে ঢেঁকিতে। মেঝে থেকে ১৮ ইঞ্চি উচ্চতায় ধড়ের একেবারে সামনে দুই ফুট লম্বা একটি গোল কাঠ থাকে। এটাকে মৌনা বলা হয়। দু’টি বড় কাঠের দন্ডের ভেতর দিয়ে একটি ছোট হুকড়া হিসেবে কাঠের গোলাকার খিল থাকে। এভাবেই তৈরি ঢেঁকি দিয়ে এক সময় ধান ভাঙ্গানোর কাজ করা হতো ব্যাপক ভাবে।

ঢেঁকি দিয়ে শুধু ধান থেকে চালই নয়, পিঠে-পুলি তৈরির জন্য চালের গুড়াও (আটা) তৈরি করা হতো। এক সময় গ্রামে গ্রামে অগ্রহায়ন মাসে নতুন ধান ঘরে তোলার পর এবং পৌঁষ সংক্রান্তিতে ঢেঁকির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠতো গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি। গ্রামের সম্ভ্রান্ত বাড়ি গুলোতে ঢেঁকিঘর হিসেবে আলাদা ঘর থাকত। সেসময় গ্রামের বিত্তবান পরিবারের ঢেঁকি ছাঁটা পুষ্টিকর চালের কদর ছিল। ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত ছিল পুষ্টি গুনে ভরা।

গৃহস্থ বাড়ির মহিলারা ঢেঁকির মাধ্যমে চাল তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতেন। দরিদ্র পরিবারের মহিলারা ঢেঁকিতে শ্রম দিয়ে আয়-রোজগারের পথ বেছে নিতেন। সেই সময় ঢেঁকিতে কাজ করাই ছিল দরিদ্র পরিবারের মহিলাদের আয়ের প্রধান উৎস। কালের বিবর্তনে আধুনিক যুগে সেই ঢেঁকির জায়গা দখল করে নিয়ে বিদ্যুৎ চালিত মেশিন (ধান ভাঙ্গার চাল কল)। এর মাধ্যমে মানুষ এখন অতি সহজেই অল্প সময়ে ধান থেকে চাল পাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে বসছে চাল তৈরির কল। মেশিনে আটা কুটা, চিড়া তৈরি করার কাজ চলছে সর্বত্র। হাতের কাছে বিভিন্ন যন্ত্র আর প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় ঢেঁকির মত ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় হয়তো সে সবের দেখা মিলবে কেবল যাদুঘরে।

(বিএম/এএস/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

১৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test