E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শতবর্ষ উৎসবে মেমনগর বিডি হাই স্কুল

২০১৬ এপ্রিল ১৬ ১৯:৫৫:৩৮
শতবর্ষ উৎসবে মেমনগর বিডি হাই স্কুল

এম এ সামাদ : শেকড়ে ফেরার আনন্দের ভাষা নেই, নেই পরিসীমা, বাল্যবন্ধু জাহাঙ্গীর ও আমার পরিবারসহ ঢাকা ছাড়ি শেকড়ের টানে ১৫ই মার্চ। উদ্দেশ্য আমার হাই স্কুলের শতবর্ষ উৎসব উদযাপনে অংশগ্রহন। আমার একমাত্র মেয়ে সাফা সামাদ বরাবরই খুব আগ্রহী বাবার শৈশবের দিন, স্কুল, স্থান আর বন্ধুবান্ধবদের সর্ম্পকে জানতে। সেও দারুণ উত্তেজিত, একদিকে দাদু বাড়ি আর অন্যদিকে বাবার স্কুলের শতবর্ষ উৎযাপন।

ঢাকা থেকে দর্শনা পৌছাতে সময় লাগে ৬ ঘন্টা। পূর্বাশা পরিবহনের গাড়িতে ওঠার আগেই দেখা হয়ে গেল আমার স্কুল ও বাল্য বন্ধু মনিরুল ইসলাম প্রিন্স আর সৈয়দ রুমী আলম পলাশের সাথে। তারপর গাড়িতে চুটিয়ে আড্ডা আর গন্তব্যের দিকে ক্রমেই এগিয়ে চলা। বিকাল ৪টায় রওয়ানা করে গাড়ি রাত ১১টা নাগাদ দর্শনায় পৌছলো।

নিতান্তই বালিকা স্বভাবের আমার ছোট শালিকা ফারিজা বেগম লিলার বাসভবনে আমাদের ঠিকানা হলো এই কয়দিনের জন্য। দৃষ্টি নন্দন ও আকর্ষনীয় অন্দর সজ্জার দ্বিতলা বাড়িটি তাদের শিক্ষা, রুচি ও আভিজ্যাতের স্বাক্ষর বহন করে। ওদের আথিতিয়তা একবার যারা পেয়েছে তারা বারবার ফিরে আসে ভালবাসায় সিক্ত হয়ে। আরিফ লিলা দম্পতির সবকিছুতেই যেন প্রাণ আছে আর আছে উজাড় করা ভালবাসা। মনেই হয় না এই পান্থশালার অতিথি আমরা। অন্তরে ও বাহিরে সমান সমান তারা দুজনেই, আরিফ লিলা দম্পতির একমাত্র সন্তান আযানও বেজায় খুশি মেজ খালামনি ফারহান বেগম লিপিকে পেয়ে। আমার ছোট ভাইরা আরিফ অবশ্য আজ রাতে বাড়ী নেই, সে কলকাতায় অবস্থান করছে নচীকেতাকে আনার জন্য। আরিফ ৮০ দশকে দর্শনার শিল্প-সাহিত্য ও রাজনৈতিক অঙ্গনের এক উজ্জল তারা ছিল, ছিল ফ্যাশানেও দুরুন্ত ও অনুজদের আইডল ওকে সাবাস জানাই আজও তা ধরে রেখেছে সেই আগের মতোই। রাত যায় দিন আসে আমি দিনের আলোয় বুক ভরে নিশ্বাস নেই আমার শৈশবরে ফেলে আসা চটকাতলার বুকে দাড়িয়ে। চটকাতলা দর্শনার শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণ কেন্দ্র ছিল যেখান থেকেই রচিত হয়েছিল আমাদের শিল্পবোধের জমিনটা। এখনো তেমন আছে, আছে সেই লালু ভাই, মঈন ভাই, মোজাম্মেল চাচা, লিটন আর আবু সুফিয়ান। আবু সুফিয়ান এক অন্য আলো, যে আলো দেখার জন্য চোখ চায়, সে চোখ যেমন নেই আমার ঠিক তেমনি অনেকের। ওকে বাচিয়ে রাখলে আলোকিত হবে দর্শনা আলোকিত হবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। এ আলো নুরের আলো, এ আলো জ্ঞানের আলোর, এ আলো শিল্পের আলো, এ আলো জীবনের আলো, তুই বেছে বেচে থাক সুফিয়ান তোর কর্মে। দেখা হয় সকলের সাথে হয় আলাপচারিতা আমি ফিরে যায় ৩০ বছর আগের সেই দিনগুলোতে।

এখানেই আমাদের শৈশবে গড়ে উঠেছিল অর্নিবান থিয়েটার, এখনো তেমন আছে, এক টুকরো সবুজ ঘাসে টিনের দোচালা ঘরে আজও নাট্য ও সংগীত চর্চা চলছে আগের মতোই। শুধু আমরা নেই, আমাদের জায়গাগুলো পূরন করেছে বর্তমান প্রজন্মের মেধাবী সব তারুণ্য। ৮০র দশকে শুরু হওয়া অর্নিবান থিয়েটার আজও সমানভাবে উজ্বল তার কর্মে, শুরুতে যারা ছিলেন তাদের বেশিরভাগই আজ জীবন জীবিকায় ব্যস্ত ঠিকই কিন্তু অনির্বান থিয়েটার আজও স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। দর্শনার প্রতিশ্রুতিশীল সংস্কৃতি কর্মী ও নাট্যজন আনোয়ার হোসেন তার হাল ধরে আছেন আজ অবদি। ধন্যবাদ তোমাদেরকে।

অর্নিবানের আঙ্গিনা পেরিয়ে পৌছে গেলাম আমার কলেজ চত্বরে, তার পাশেই আছে আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বিশাল কলেজ মাঠে আমার শৈশবের নানান স্মৃতি একে একে ভেসে উঠলো দু'চোখে। ছোট বড় সকলে দলবেধে সকালে জগিং করা আর এক এক দিন এক একজনের বাসায় নাস্তা খাওয়া, জনি শাহ, এনামূল হক শাহ মুকুল (মুকুল আবার আমার জামাই হয়, যে কারণে ওর বাড়ীর খাওয়াই থাকতো একটু ভিন্নমাত্রা) বাবন, পল্টু ভাইয়ের বড় ছেলে শিপলু আর আমাদের কলেজের অধ্যাপক মোশারফ মামার বাড়ির নাস্তা আহা সেই দিনগুলি কই গো, ছুটির দিনে বড় ছোটদের ক্রিকেট ম্যাচ এ আজাদ ভাই, মফিদুল ভাই, মৃত্মজয় স্যার, ফজু ভাই, বাবুল ভাই আর আব্দুল হামিদ পিন্টুর দৃষ্টি নন্দন ব্যাটিং, যুদ্ধের বিধ্বংসি ফাস্ট বোলিং, মুনাজির স্যার ও মোশারফ মামার আম্পিয়ারিং আর বিশেষ করে নূর আলি স্যারের ধারাভাষ্য। ক্রিকেট ম্যাচগুলোতে লাঞ্চের বড় দাতা ছিল আমার বন্ধু জাহাংগির, আলি মুনছুর বাবু, আতিয়ার রহমান হাবু, মতি খোড়া, নেটা বাবু, আশরাফুলরা ওরা তখন সবাই কাস্টমস এ অকশন ব্যবসার সাথে সম্পর্কিত ছিল। সে এক মধুময় অতিত কি পরম স্নেহ মমতায় বড়রা ও বন্ধুরা সেই দিনগুলোতে আমাদের আগলে রেখেছিল। তাদের পাশে রেখে হাতে হাত ধরিয়ে শিখিয়েছিল মানুষ হওয়ার মন্ত্র। তাদের কথা ভাবলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে যায় আজও। সকালের আমেজটা কেটে দিনের আলো আসতেই একে একে দেখা হয় সকলের সাথে। হয় কুশল বিনিময়, স্কুল বন্ধু কাজল, লুল্লু, জাহাংগির, মনিরুল ইসলাম প্রিন্সসহ সকলে মিলে রওয়ানা দিই স্কুলের দিকে, পুরো রাস্তা জুড়ে বড় বড় বিলবোর্ড ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানো, চারিদিকে সাজসাজ রব এই বুঝি বেজে ওঠলো শতবর্ষ উৎযাপনের দামামা।

চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা পৌরসভার মাথাভাংগা নদীর তীরে ১৯১৬ সালে তৎকালিন সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগি বাবু বিপ্রদাস বড়–য়া গড়ে তোলেন এ স্কুলটি। দর্শনা শহর থেকে একটু দূরে মেমনগর আর পারকৃঞ্ পুর গ্রামের মধ্যে দিয়ে বয়েচলা নদীর তীরে বিশাল সবুজ ঘাসের বুকে হলুদ একতলা লম্বা স্কুল বিল্ডং আর চত্বরে বিশাল আকৃতির পুরাতন বট বৃক্ষ, স্কুলের দেওয়াল ঘেষে মাথাভাংগা নদীর পানি বয়ে যায়, নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক শোভা আমাদের এই স্কুলের। ব্রিটিশ শাসনামলে তৈরি হওয়া স্কুলটি পার করে পাকিস্তান আমল ও স্বাধীন বাংলাদেশ মিলিয়ে শতবর্ষ। দর্শনার আকাশে আলো ছড়িয়ে আসছে এ প্রতিষ্টানটি শতবর্ষ জুড়ে এ আলো জ্ঞানের আলো, এ আলো শিক্ষার আলো। কৈশরের পাঁচটি বছর যে আলোতে আমি নিজেকে গড়ে নিয়েছিলাম সে আমার হাই স্কুল। আমার প্রিয় স্কুল মেমনগর বিডি হাই স্কুল। ১৯৮২ সালে এই স্কুল থেকেই এসএসসি পাশ করি আমি।

১৭ তারিখ বিকালে স্কুল চত্বর মুখরিত হয় নতুন আর পুরাতনের মিলন মেলায়, রিকসা, ভ্যান, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট গাড়ি আর পায়ে হেটে নদীর স্রোতের মতো মানুষ আসছে স্কুলের পথে, জড়ো হচ্ছে স্কুলের ভেতরের সবুজ মাঠে যেখানে আমরা এ্যাসেম্বেলি করতাম, এখানে এখন আর সেই বটবৃক্ষ নেই। আয়োজকরা বিশাল সামিয়ানা টানিয়ে রেজিস্ট্রেশন কিটস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। দলবেধে সকলে সংগ্রহ করছে রেজিস্ট্রেশন কিটস। একে অন্যের সাথে দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ায় করছে গলাগলি ও কুশল বিনিময়। মনে হলো যেন ফিরে গেলাম ৩৪ বছর আগের সেই দিনগুলোতে। দেখা হতে লাগলো পুরাতন বন্ধুদের সাথে ও সিনিয়র জুনিয়র ভাইদের সাথে কোলাকুলি আর কুশল বিনিময়ের সাথে চলছে ফটোসেশন, আবেগে আর খুশিতে মাঝে মাঝে দু'চোখের কোনে জায়গা করে নিচ্ছে জল, গায়ে টি-সার্ট, মাথায় ক্যাপ আর গোলায় ব্যাজ ঝুলিয়ে দলে দলে চলছে কুশল বিনিময় আর হাসি থাট্টার ফোয়ারা।

আমাদের ৮২ ব্যাচের বন্ধুরা এক সাথে জড়ো হতে লাগলো জাহাঙ্গীর, প্রিন্স, লুল্লু, কাজল, সাজ্জাদ, সাইদ, ইমতিয়াজ, ইমরান, সিরাজ, শরিফ, মোবারক, রুহুল, নজরুল, সিদ্দিক, হালিম, জহিরসহ আরো অনেকে একসাথে সংগ্রহ করলো রেজিস্ট্রেশন কিটস। বন্ধু ইমতিয়াজ আমার কিটসগুলো বুঝিয়ে দিল আমাকে। ও আমার, আমার বউ আর মেয়ে তিনজনের রেজিট্রেশন করেছে। কয়েকজন মিলে বের হলাম চত্বর থেকে উদ্দেশ্য মূল মঞ্চের দিকে।

স্কুলের পাশে ছিল আমাদের বিরাট খেলার মাঠ, সেখানেই বসেছে মূল অনুষ্ঠানের মঞ্চ। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসার যায়গা আর বিশাল আকৃতির মঞ্চ তৈরি করেছে আয়োজকরা। পাশেই গাড়ি পার্কিং-টয়লেট আর পানির ব্যবস্থা। স্কুলের পিছনে ঠিক নদীর পাড় ঘেষে আয়োজন করা হয়েছে দুপুরের খাবার তৈরির জায়গা, দুইদিনে দশ হাজার প্যাকেট খাওয়া তৈরি হবে এখানে। এখন অপেক্ষা বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনাটা কেমন হয় দেখার।

বছরব্যাপি নানা আয়োজনের যেমন ফুটবল প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক সপ্তাহ, ঘুড়ি উৎসবের মধ্যেদিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রীরা আয়োজন করে শতবর্ষের মূল উৎসব ১৭ই মার্চ থেকে ১৯ই মার্চ। ৫০০০ হাজার বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্র/ছাত্রীদের উপস্থিতিতে পুরো স্কুল চত্বর ছিল মুখরিত। মূল ৩ দিনের উৎসবের ১ম দিনে ছিল রেজিট্রেশন, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, সিনেমা প্রদর্শন, ফানুশ উড়ানো ও আতশবাজি। ২য় দিন র‌্যালি ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, আড্ডা, স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র কত্থক নৃত্যগুরু সাজু আহমেদের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর নৃত্যানুষ্ঠান আর সান্ধ্যকালিন গানের আসরের দুই বাংলার জীবনমূখি গানের জনপ্রিয় শিল্পী নচীকেতার গান। ৩য় দিনের সকালটা শুরু হয় শিক্ষা উন্নয়নে করনীয় সেমিনারের মধ্যে দিয়ে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মলয় ভৈৗমিক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন, সঞ্চলনায় ছিল এ আর এম এম কামাল আহমেদ। স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র, শিক্ষক ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের প্রানবন্ত আলোচনায় ওঠে আসে বিভিন্ন দিকনিদের্শনা। আয়োজকরা তা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ হোন। সন্ধ্যায় শুরু হয় গানের অনুষ্ঠান রিংকু, কনক চাপা আর সুবির নন্দীর গানের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় মূলপর্ব।

সত্যিকার অর্থে এটা বিরাট আয়োজন। অনুষ্ঠান সূচিও তেমন জাকজমকপূর্ণ। তবে ১২ দিনে এত বড় একটা আয়োজন সফল করা বেশ কষ্টকর ও দুঃসাধ্য কাজ তবুও আশা আছে প্রানের টান বলে কথা তাই হয়তো উত্রে যাবে সবকিছু অল্প কিছু অসংগতি রেখে। হয়েছেও তাই আর এ কাজটুকু যারা করেছেন তাদের সত্যিকার অর্থেই অন্তর থেকে সাধুবাদ জানাই। এমপি আলি আজগর টগর, মহসিন ভাই, ফজু ভাই, জাহাঙ্গীর ভাই, ফিট্টু ভাই, নজু ভাই, সরোয়ার ভাই, আরিফ, বাবু, লুল্লুসহ আরো অনেকে সাথে ছিল ঢাকার আব্দুল হামিদ পিন্টু, কামাল আহম্মেদ, এনামূল হক মুকুল শাহ, আনোয়ার হোসেন, ড: ফিরোজ, তারিফ, রাকু, রফিকসহ অন্যান্যরা।

শতবর্ষের এ আয়োজনে বাড়তি পাওয়া ছিল আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষক ইলিয়াস স্যারের বড়ছেলে ইমতিয়াজ ও তার সহধর্মিণী মাহাতনের আয়োজনে ১৯৮২ সালের এসএসসি ব্যাচের ঘরোয়া অনুষ্ঠান। প্রায় ৩৪ বছর আগের ৭০ জন বন্ধুদের গোটা পরিবারের সদস্যদের প্রায় ১৮৭ জনের অংশগ্রহন ছিল সত্যিকার অর্থেই অর্থবহ ও আন্দদায়ক। মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮২ সালের এসএসসি ব্যাচ ছিল মেধাবী। শুধু মেমনগর নয় দর্শনার সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন কেরু হাই স্কুল ও দর্শনা গালর্স হাই স্কুলসহ এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের ৮২ সালের এসএসসি পরিক্ষার্থীরা ছিল এ যাবৎকালে সবচেয়ে মেধাবি ছাত্র/ছাত্রী। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ জন ছাত্র/ছাত্রী প্রথম শ্রেনীতে উত্তীর্ণ হয়। আর যশোর বোর্ডে সেসময় মেধা তালিকায় স্থান পায় তিন জন, যারা হলেন কেরু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিবলী, মমিনুল ও মেজবাউল, দর্শনা গার্লস স্কুল থেকে স্টার মার্কস নিয়ে পাশ করেন হাসিনা, মানবিক এ বেলি প্রথম শ্রেনী পায় আর মেমনগর থেকে সিদ্দিক, মতিন, নুরুজ্জামান খলিলসহ অনেকে প্রথম শ্রেনী লাভ করে। যারা সকলেই আজ সমাজে সুপ্রতিষ্ঠত ও স্ব স্ব ক্ষেত্রে সফল ব্যাক্তি।

মেমনগর বিডি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮২ সালের এসএসসি ব্যাচের উদ্যেগে স্কুলের শিক্ষা উন্নয়নে বেশ ক বছর ধরে কাজ আসছে ৮২ ব্যাচ আর এর মূলচালিকা শক্তি হলো আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষক ইলিয়াস আলির প্রথম পুত্র ইমতিয়াজ হোসেনসহ অন্যরা। যারা প্রায় কয়েক বছর ধরে এসএসসি পরিক্ষার্থীদের বিশেষ কোচিং এর জন্য অর্থ সহয়তা করে আসছে। এ বছরও তা অব্যাহত ছিল। যদিও এর আগে আমার কোন সম্পৃক্ততা ছিল না ওদের সাথে। আমি জানতামও না আর ওরা আমাকে জানাওনি কখনও। ইমতিয়াজের এর সহধর্মিণী আবার আমাদের ইয়ারমেট ও ভাল বন্ধু, খুব কাছের বন্ধু মাহাতন আমাকে জানাই শতবর্ষ পূর্তী উৎসব উপলক্ষে ওরা ৮২ ব্যাচের একটা গেট টুগেদার করতে চায়, শুনে লোভ সামলাতে পারিনী ওকে বলেছি সব আয়োজন করা আমি আছি তোদের সাথে। ক্লাসমেট, স্কুল বন্ধু বা বাল্য বন্ধু সবগুলো এক একটা অর্থবহন করে শৈশবের। আমাদের ক্লাসমেটদের এতবড় একটা প্লাটফর্ম যে কবে কখন তৈরি হলো আমি বুঝতেই পারিনি, ইমতিয়াজ এর কাছ থেকে ওদের কর্মকান্ড সর্ম্পকে শুনার পর সত্যি আমি অভিভূত। ৩৪ পরও ওরা এতো কাছাকাছি এতো আপন ভাবতেই অবাক হলাম। ৮২ ব্যাচের প্রায় ৭০ জন এখনও সক্রিয় আছে স্কুলের উন্নয়নে ভাবতেই ভালো লাগে। ওদের কর্মকান্ড দেখে শুণে আজ আমার মনে পরছে আমার প্রাণ প্রিয় শিক্ষকদের কথা, শুধু লেখাপড়া করে ডিগ্রী অর্জন নয়, শিক্ষত হও, হও মানুষের মতো মানুষ, যে শিক্ষা মানুষকে মানুষ করে তুলতে পারে না সে শিক্ষা শিক্ষা নয়, যে শিক্ষা তার অতিতকে ভালবাসতে ও অতিত থেকে শিক্ষা নিতে শেখায় না সে শিক্ষা শিক্ষা নয়।

শিক্ষা আসলে মানুষের মনের জমিনে ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর মানবকল্যানে নিয়োজিত হতে শেখায় ৮২ ব্যাচের এ কর্মকান্ড তাই প্রমান করে, আর এর জন্য আমি আবারও আমার শিক্ষা গুরুদের স্মরণ করি।

প্রথম দিনের বিকালে ১৮ই মার্চ ইমতিয়াজ আর তার সহধর্মিণী মাহাতনের আয়োজনে ও লুল্লু, সাজ্জাদ, রুহুল, কাজল এর তত্বাবধানে বিশাল এক অনুষ্ঠানের আসর বসে ইমতিয়াজদের বাড়ীর বাগানে আর ওঠান জুড়ে। এ যেন প্রাণের মেলা, কি দারুন আয়োজন, সত্যি আমাকে মুগ্ধ করেছে, করেছে অভিভুত। একে একে ৮২ ব্যাচের বন্ধুরা আসতে থাকে স্বপরিবারে, ওঠান জুড়ে বসার আয়োজন আর বাগানে চলছে লাইভ রান্না, জিলাপি ভাজা হচ্ছে এককোনে, অন্যদিকে পাপড় ভাজা হচ্ছে আর একটু দুরে লুচি ভাজছে, আরেক পাশে গরম গরম রুটি বানাচ্ছে। চারিদিকে মৌ মৌ ভাজা ভাজির গন্ধ, বাচ্চা বুড়ো সকলে হুই হুই করে খাচ্ছে আর ফিরে পাচ্ছে তার শৈশব আর তারুণ্য। বাড়ির ওঠানে থরে থরে সাজানো আছে গুরুর মাংস, খাশির মাংস, মুরগির মাংস, সবজি। সত্যিকার অর্থেই এ এক বিশাল আয়োজন। প্রাণের আয়োজন, ভালবাসার আয়োজন, এর প্রতিটি পরতে পরতে আছে শৈশবের ভালবাসা আর ভাললাগা সেই সাথে ইমতিয়াজ-মাহাতন দম্পতির ভালবাসা। আমার সেই ছোটবেলার বন্ধুরা এসেছে তার পরিবারসহ আমিও আমার পরিবারসহ, সবাই কেমন জানি এক নস্টালজিক জগতে প্রবেশ করি। হারিয়ে ফেলি আজকের অবস্থান, তুই, তুমি, তুইতোকারি আর গালা গালিতে ফিরে পায় হারিয়ে যাওয়া সেইদিনগুলি। আজ আমরা সবাই ৫০ ঊর্ধ্ব, কারো চুল একেবারে সাদা হয়েছে কারো বা সাদা কালো মিশে, কারো এখনও কালো। এদের মধ্যে কেউ আবার নানা, কেউবা শশুর, কেউবা দাদা হয়েছে। ইমতিয়াজ আমাদের সকলের জন্য সবুজ টি-শার্ট এর ব্যবস্থা করেছে। ঘুরে ঘুরে আমাদের বন্ধু ও তার সহধর্মিণী মাহাতন সকলের খোঁজ খবর নিচ্ছে। নিচ্ছে বাচ্চাদের খবরও, এতটুকু যেন কষ্ট বা অবহেলা না হয় কারো, ইতোমধ্যে প্রায় সবাই এসেছে।

ইমতিয়াজদের বাড়ির দাওয়াই বসে সবাই ফটোসেশনে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। প্রথমে দল বেধে আমরা বন্ধুরা ছবি তুলি পরে আমাদের বউ ও বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে ছবি তুলি, প্রিন্স বড় একটা বক্তৃতা করে। সিদ্দিক ও কিছু বলে সবার উদ্দেশে। সবাই আমাদের স্কুল বন্ধু ইমতিয়াজ ও তার সুযোগ্য সহধর্মিণী মাহাতনকে ধন্যবাদ জানাই। আমি মনে করি যে আনন্দ ওরা আমাদেরকে দিয়েছে, যে কস্ট ওরা আমাদের জন্য করেছে সত্যিকার অর্থেই তা শোধ করার কোন উপায় নেই, আমি আমার অনন্তর থেকে তোদের জন্য ভালবাসা দিলাম মাহাতন ও ইমতিয়াজ। তোরা বেঁচে থাক আমাদের অন্তরে।

(অ/এপ্রিল ১৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test