E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সুশাসনের কাঠগড়ায় খালেদা জিয়া

২০১৮ মার্চ ২৩ ১৬:০২:৪৮
সুশাসনের কাঠগড়ায় খালেদা জিয়া

কবীর চৌধুরী তন্ময়


আইনের সুশাসনের কাঠগড়ায় খালেদা জিয়া-একথাটি ভাবতেই বিএনপির নেতাকর্মীর সাথে খোদ খালেদা জিয়াও আজ অবাক, বিস্মিত! কারণ তিঁনি নিজেও আইনের সুশাসনের বিপরীতমুখী অবস্থান তৈরি করেছে। খুন করা যাবে, লুটপাট করা যাবে, ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ করা যাবে, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন করা যাবে, জাতির জনককে নিষ্প্রাণ করা যাবে, শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার জন্য গ্রেনেড ছোড়া যাবে; কিন্তু অপরাধের বিচার করা যাবে না! অপরাধীর শাস্তি হবে না-এই মনোবৃত্তির মাঝে আজ দেশে বিচার হচ্ছে, বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি থেকে জাতি মুক্তি পাচ্ছে, তাই অপরাধবোধ না হলেও খালেদা জিয়ার মাঝে আশ্চার্যবোধ সৃষ্টি হয়েছে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

কারণ জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও বিচারহীনতার সেই ‘ইনডেমনিটি’ ধরে রাখতে পারেনি তারা। আর এ-রায়কে ঘিরে খোদ খালেদা জিয়াসহ বিএনপি সিনিয়র নেতাদের নানান ধরনের বক্তব্য অনেকটা আদালতকে চ্যালেঞ্জ বা হুমকি-ধমকির মত হলেও আদালত স্বাধীনভাবে মামলার সাথে সম্পৃক্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অবশেষে ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ে ফৌজদারি দন্ডবিধির ৪০৯ ধারায়, ক্ষমতায় থেকে অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে ‘অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের’ কারণে বিএনপির চেয়ারপার্সন ‘বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড’ শোনাতে সফল হয়েছেন। শুধু তাই নয়, খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবেও সাব্যস্ত করেছে।

এখানে জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা পরিচালনার সাথে সম্পৃক্ত বিএনপির সিনিয়র নেতা-আইনজীবী ও দলীয় নীতিনির্ধারনী ফোরাম মামলার মোটিভ, তথ্য-উপাত্ত এবং ঠিকানাবিহীন এতিমখানার সকল বিষয়াদির চুলচেড়া বিশ্লেষণ করে রায়ের আগেই বুঝতে সক্ষম হয়েছে-এতিমখানা দুর্নীতি মামলা থেকে তিঁনি রেহায় পাচ্ছেন না। খালেদা জিয়া একজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে প্রমাণীত হতে যাচ্ছে। তাই সুকৌশলে রায়ে আগেই বিএনপির গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে তার দলীয় সদস্যপদ রাখার ব্যবস্থা করল।

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় দলের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্যতার বিষয়ে বলা ছিল, ‘কেউ দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি দলের সদস্য থাকতে পারবেন না।’ ওই ধারার (ক)-তে আছে, ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতি আদেশ নং ৯-এর বলে দন্ডিত ব্যক্তি, (খ) দেউলিয়া, (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি, (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি দলের সদস্য হতে পারবে না।

শুধু বিএনপির গঠনতন্ত্রই নয়, বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় দাঁড়াইল মৌজায় প্রায় ৯ বিঘা জমির উপর পঁচিশ বছরের পুরনো মরিচা ধরা সাইনবোর্ডটি রাতারাতি সরিয়ে নতুন সাইনবোর্ড পর্যন্ত সুকৌশলে সাটানো কাজও করেছে!

জিয়ার অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রেও জেনারেল জিয়াউর রহমানের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ ও পরবর্তী বেগম খালেদার বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি অব্যাহত রাখার জন্য খোদ খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতাকর্মী হেন চেষ্টাা নেই যে করেনি। আর এটি যে বিএনপির নতুন কৌশল তা কিন্তু নয়।

একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বা বিচারহীনার অপসংস্কৃতির সূচনা করেছে। জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা; ইতিহাসের এক জঘন্যতম অধ্যায়। আর সে হত্যাকান্ডের বিচার করা যাবে না মর্মে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারির মাধ্যমে আইনের শাসনকে নিষিদ্ধ করেছিল। খুন করা যাবে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা যাবে, সপরিবারে নির্মমভাবে জাতির জনকে হত্যার কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা করা যাবে কিন্তু অপরাধের বিচার করা যাবে না-এই অপসংস্কৃতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের সৃষ্টি।

এখানেই জেনারেল জিয়াউর রহমান বসে থাকেনি। এই ধরনের হত্যাযজ্ঞের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত খুনীদের পরিকল্পিতভাবে পৃষ্ঠপোষক করেছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী বানিয়ে দেশ ও জাতির সামনে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশে ও দেশের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করে রাষ্ট্রীয়ভাবেও খুনীদের পুরস্কৃত করেছে। শুধু তাই নয়, জেনারেল জিয়াউর রহমান হাজার-হাজার সেনাকর্মকর্তা খুন করে খুনীর তালিকায় নিজের নামও লিখিয়েছে। ১৯৭৬ সালে ২১ জুলাই বিচারের নামে প্রহসন করে একজন যুদ্ধাহত (এক পা হারানো) মুক্তিযোদ্ধাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার কলঙ্কিত ইতিহাসও গড়েছে। আবার ১৯৭৭ সালে শুধুমাত্র সেনাবাহিনীতে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষে ব্যর্থ ক্যু-চেষ্টার অভিযোগ এনে বিমানবাহিনীর ৩৯৭ জন সদস্যকে হত্যা করেছে।

এমনি করে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে ছোট বড় ২২টি সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান কায়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা, সেনাকর্মকর্তা ও সিপাহীকে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করেছে। ১৯৮২ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জিয়া খুন হওয়ার সময় ৫০ জন ব্রিগেডিয়ার এবং মেজর জেনারেলের মধ্যে মাত্র ৩ জন ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধার পোশাক, স্বাধীন বাংলাদেশের অন্তড়ালে জিয়াউর রহমান প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের আদর্শ ধারণ করে পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ করেছে।

পাঠক! একটু চিন্তা করলে দেখবেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের আদর্শ এবং তার বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির ধারক-বাহক হন তাঁর স্ত্রী বেগম খালেদা। বিএনপির চেয়ারপার্সন হয়েও বেগম খালেদা তাঁর স্বামী জেনারেল জিয়াউর রহমানের হত্যার বিচার করেনি। শুধু তাই নয়, জেনারেল জিয়াউর রহমানকে কারা এবং কেন হত্যা করা হয়েছে এই ধরনের কোনও বক্তব্য-বিবৃতি পর্যন্ত দিতে দেখা যায়নি। বরং তিঁনিও তাঁর স্বামীর মত মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, সেসব রাজাকার, আলবদর, আলসামস, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধীদের সাথে আতাঁত করে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। সংসদকে অপবিত্র করেছে। পাকিস্তানী এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষে বেগম খালেদাও তাঁর স্বামী জেনারেল জিয়াউর রহমানের মতন কাজ করেছে। কখনো-কখনো ত্রিশ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষ ধর্ষিতা নারী ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে মিথ্যাচার করেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছে। তলাবিহীন ঝুড়ি বাস্তবায়ন, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অকার্যকর করার ষড়যন্ত্রে পাঁচ-পাঁচবারের মত দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করে দেশ ও জনগণের মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এমনি করে- বাংলাভাইদের উত্থান, গাছের ডালে উল্টো ঝুলিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা, ধর্মীয় মতবাদের নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, আওয়ামী রাজনীতিকে নিশ্চিহ্ন করতে ঘরে-ঘরে ঢুকে লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ; জেনারেল জিয়াউর রহমানের বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির ধারাবাহিকতা।

২০০১ সালের নির্বাচনের পরবর্তী সময়- সবাইকে অবাক করে দিয়ে চারদলীয় নির্বাচনী জোট (বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় পার্টি) বিজয়ী হলে দেশব্যাপী নেমে আসে এক অমানিশার ঘোর অন্ধকার! হিংস্রতা, বর্বরতা কত নির্মম হতে পারে বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতাকর্মীদের পরিচালিত তান্ডবের মাধ্যমে গোটা জাতি তখন অবলোকন করেছে। তারা নেমে পড়ল প্রতিশোধ নিতে। খুঁজে-খুঁজে বের করা হল হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান জনগোষ্ঠী। সংখ্যালঘুসহ আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন, নীপিড়ন শুরু করে। নিহত, আহত করেছে অসংখ্যা সংখ্যালঘু জনগণসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে সংখ্যালঘুর ঘরবাড়ি। আওয়ামী নেতাকর্মীদের ভিটে-বাড়ি ছাড়া করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগসহ লুটপাট করা হয়েছে মাঠ ভরা ফসল, গবাদি পশু-পাখি ও অর্থ-সম্পদ। বিষ ঢেলে দেওয়া হয়েছিল মাছ ভরা পুকুরের পানিতে।

শুধু এখানেই নয়, সবচেয়ে যন্ত্রনাদায়ক ছিল কিশোর, যুবতী ও মায়ের বয়সী নারীর জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি। বাড়ি-বাড়ি গিয়ে জোর করে ধরে নিয়ে নারীদের ধর্ষণের পৈচাশিক অত্যাচার-নির্যাতন; ভাই’র সামনে বোন, বাবা’র সামনে মেয়ে, স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণযজ্ঞ আবার সেই ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বর্বর পাকিস্তানীদের কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে।

পাঠক! এমনি করে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া হিন্দু অধ্যুসিত এলাকার পূর্ণিমা রানীর কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। সদ্য কৈশোরে পড়াপূর্ণিমারানীর বাড়িতে রাতের অন্ধকারে হানা দেয় বিএনপি-জামায়াতের একদল হায়না। নৌকা মার্কায় ভোট দানের অভিযোগ এনে তারা প্রতিশোধ নিতে ঝাপিয়ে পড়ে কিশোরী পূর্ণিমারানীর উপর। পূর্ণিমার বাবা-মা শংকিত। অসহায় অভিভাবক নিরব-নিথর হয়ে পড়ে। বিএনপি-জামায়াতের একদল কুকুরের হিংস মুর্তি দেখে পুর্নিমার মা তখন তাদের বাধ্য হয়ে অনুরোধ করে বলেছিল, ‘বাবা আমার মেয়েটা ছোট। তোমরা একজন-একজন করে এসো, মরে যাবে।’

সেদিনপূর্ণিমানা মরলেও মরে গিয়েছিল তার বিশ্বাস। মরে গিয়েছিল তার কৈশোর। মরে গিয়েছিল রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান।

বিএনপি-জামায়াত জোটের তখনকার শাসনামলে বেগম খালেদা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিল। স্বাধীন-সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। জনগণকে জিম্মি করার জন্য ২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা বেছে নিয়েছে। ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠন করে জেএমবি দেশের ৬৩ জেলায় (মুন্সীগঞ্জ বাদে) যুগপৎ বোমা হামলা চালিয়েছে।

দেশের ৩০০ স্থানে মাত্র আধাঘণ্টার ব্যবধানে একযোগে ৫০০ বোমার বিস্ফোরণে তখন ২ জন নিহত ও দুই শতাধিক লোককে আহত করা হয়। হামলা চালানো হয় হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে থাকা মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেস ক্লাব ও সরকারি-আধাসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে। সেসময় নিহত মানুষের স্বজনদের আর্তনাদ ও আহত মানুষের কান্নায় দেশের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। জন-মানুষের ভিতর ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করেছে।

আইনের শাসনের বিপরীত ধারাবাহিকতায় ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা হামলায় ছয়জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত করে। ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ উৎসবে সংঘটিত বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ১১ জন। ৩ জুন গোপালগঞ্জের বানিয়ারচর খ্রীষ্টানদের গির্জায় সকালের প্রার্থনার সময় বোমা হামলায় নিহত করে ১০ জন; আহত করে ১৫ জন। সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক বোমা হামলা করা হয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে গ্রেনেড ছুড়ে হত্যা করা হয়। ২০০৪ সালের ২১ মে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার পরিদর্শনে গেলে গ্রেনেড হামলায় আহত করে তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার হোসেন। এ ছাড়া বিরোধী রাজনৈতিক সমাবেশে, অফিসে, নেতার গাড়িতে, সিনেমা হলে হত্যার উদ্দেশ্যে একাধিক বোমা হামলা চালানো হয়।

অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের পরিকল্পিত গ্রেনেড হামলা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনাকে হত্যার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ভয়ংকর কলঙ্কিত অধ্যায়। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাস বোমা হামলার বিরুদ্ধে সমাবেশে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড ছুড়ে আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পাঁচ’শ-এর বেশি নেতাকর্মীকে আহত করা হয়। সেদিনের বর্বর হত্যাযজ্ঞের দৃশ্য দেখে থমকে উঠেছিল বাঙালিসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।

পাঠক! এখানেও বিচারহীনতার অপসংস্কৃতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখে। রক্তস্নাত ভয়াল-ভিভীষিকাময় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার নীল নকশা তৈরি করে। এমনকি শেখ হাসিনার ব্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে এসেছে বলেও অপপ্রচার করতে দ্বিধা করেনি বিএনপি-জামায়াত জোট। বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি বাস্তবায়নের লক্ষে ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলার বীরকোট গ্রামের বাড়ি থেকে জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে সিআইডিকে দিয়ে আটক করা হয়। ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে জজ মিয়াকে হত্যার ভয় ও দরিদ্র পরিবারের আজীবন ভরণপোষনের দায়িত্ব নেয়ার লোভ দেখিয়ে গ্রেনেড হামলার সাথে সম্পৃক্ততা ছিল মর্মে মিথ্যা স্বীকারোক্তিও আদায় করে। একইভাবে ওই বছরের নভেম্বরে আবুল হাসেম রানা ও শফিক নামের আরও দুই যুবকের কাছ থেকে প্রায় একই রকম সাজানো জবানবন্দী দিতে বাধ্য করে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া!

সেসময় সরকার সমর্থক কিছু পত্রিকা ও তাদের বুদ্ধিজীবীরা ওই সাজানো জবানবন্দী ফলাও করে প্রচার করে হামলার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার প্রাণপণ চেষ্টাও করেছিল। আবার বিভাগীয় তদন্তের নামে বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের প্রতিবেদনেও ওই একই কথা বলা হয়। শুধু তাই নয়, প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতকে জড়িয়ে নানা ধরনের কল্প-কাহিনী সাজানো হয়েছিল।

পাঠক! বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার প্রধান খালেদা জিয়া গ্রেনেড হামলার ঘটনার মুল হোতাদের প্রথম থেকেই আড়াল করতে তদন্তের গতি ভিন্নখাতে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। তদন্তের নামে বিভিন্ন সময় নানা ‘আষাঢ়ের গল্প’ হাজির করেছে। প্রথম থেকে সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বিষয়টিকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র করে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে হামলার শিকার আওয়ামী লীগের দিকেই আগুল তুলে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার হেন চেষ্টা নেই যা করা হয়নি।

আর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি বাস্তবায়নে বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে। তাদের চেয়ারপারসনের মামলায় ‘নেতিবাচক’ কোনো রায় হলে তার পরিণতি ‘ভয়াবহ’ হবে বলেও আদালত এবং রাষ্ট্রসহ জনগণকে চ্যালেঞ্জ করছে। কারণ বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে দুর্নীতি অভিযোগ প্রমাণীত হলে জেল-জরিমানা হতে পারেন বলেই দলের সিনিয়র নেতাকর্মী আইনের সুশাসনের বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছে। এটাই বিএনপির জন্মলগ্ন ইতিহাস। এটাই তাদের রাজনৈতিক আদর্শ।

খালেদা জিয়ার কারাগারে থাকার মামলা নিয়ে পর্যবেষণ করলে দেখবেন, বাংলাদেশের এতিমদের কল্যাণের কথা বলে ১৯৯১-৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় খালেদা জিয়ার পক্ষে ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়। যার চলতি হিসাব নম্বর ৫৪১৬। ওই অ্যাকাউন্টে ১৯৯১ সালের ৯ জুন ইউনাইটেড সৌদি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের ডিডি নম্বর ১৫৩৩৬৭৯৭০ মূলে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ডলার যার মূল্য ততকালীন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে বাংলাদেশি টাকায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা অনুদান হিসেবে জমা হয়।

১৯৯১ সালের ৯ জুন থেকে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া এই অর্থ কোনো এতিমখানায় প্রদান করেননি। এই সময়ের মধ্যে তার পুত্র তারেক রহমান, আরাফাত রহমান ও ভাগ্নে মমিনুর রহমানের নামে ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ গঠন করেন। যদিও এই ট্রাস্ট গঠনের প্রক্রিয়ায় আরাফাত রহমানের কোন সাক্ষর ছিল না। তাই তাকে এ মামলায় আসামী করা হয়নি।

১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গুলশান সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ট্রাস্টের নামে নিবন্ধন করা হয়। যার ঠিকানা হিসেবে তখনকার সেনানিবাসের ৩নং শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। এ সময় তারেক রহমানকে ‘দি অথর অব দি ট্রাস্ট’ তথা ‘দি সেটেলর’ নিয়োগ করা হয়।

১৯৯৩ সালের ১৩ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখার তৎকালীন হিসাব নম্বর ৫৪১৬ এর (খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল) অনুদানের টাকা গুলশানের নিউনর্থ সার্কেল শাখায় (এসটিডি হিসাব নম্বর-৭) মূলে ১৫ নভেম্বর বর্তমান হিসাব নম্বর ৭১০৫৪১৬৪ এ ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা ট্রান্সফার করা হয়।

১৯৯৩ সালের ৪ ডিসেম্বর (চেক নম্বর ৪৮৮২৪০১) ৪ লাখ টাকা তুলে বগুড়া জেলার গাবতলী থানার দাড়াইল মৌজায় ১৭টি দলিল মূলে ২ দশমিক ৭৯ একর জমি ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকায় ক্রয় করা হয়। এরপর ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অনুদানের বাকি টাকা অন্য কোনো স্থাপনা বা দুস্থদের কল্যাণে অর্থ ব্যয় না করায় ওই হিসাবে ২০০৬ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সুদসহ জমা পড়ে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৭৫৭ টাকা।

খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান ও ভাগ্নে মমিনুর রহমানের যৌথ স্বাক্ষরে ২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল, ১৫ জুন এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে সর্বমোট ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখায় এফডিআর খোলার জন্য হস্তান্তর করা হয়।

এখানে একটি ব্যাপার লক্ষণীয়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের আসামী মাগুরার সাংসদ ও ব্যবসায়ী কাজী সলিমুল হক ট্রাস্টের সাথে কোনোভাবে সংযুক্ত না থাকার পরেও ২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল ৫০ লাখ টাকার একটি এফডিআর খোলেন। যা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করা হয়। এরপর এই শাখায় কাজী সলিমুল হকের নামেই পরবর্তীতে ২ কোটি টাকার আরো দু’টি এফডিআর খোলা হয়। যা তিনি নিজ নামেই ট্রান্সফার করেন।

এছাড়াও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের ছেলে সৈয়দ আহমেদের নামে একটি ১ কোটি টাকা এবং দুজনের যৌথ নামে আরেকটি ১ কোটি টাকার এফডিআর খোলেন কাজী সলিমুল হক। এদের মধ্যে সৈয়দ আহমেদ এখন মৃত। এই দুই এফডিআর থেকে গিয়াস উদ্দিন আহমেদের এফডিআর-এ ট্রান্সফার হয়। এর-কিছুদিন পরই গিয়াস উদ্দিন আহমেদ তার এফডিআর থেকে এক কোটি টাকা ভেঙে ৫০ লাখ টাকার ২টি এফডিআর করেন। এরপর আবার সেই এফডিআর ভেঙ্গে শরফুদ্দিনের অ্যাকাউন্টে ৬টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার করেন। শরফুদ্দিন ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা তুলেন। কাজী সলিমুল হকের কাছে সরফুদ্দিন আহমেদ এই পরিমাণ অর্থ পেত। মূলত এরপরই এই টাকা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের তহবিল থেকে বেরিয়ে যায়।

পাঠক! নিয়ম হলো, ট্রাস্টের টাকা শুধুমাত্র ট্রাস্টের কল্যানেই ব্যয় করতে হবে। কিন্তু এখানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সেই নিয়ম ভঙ্গ করেছেন যা আইনত অবৈধ। তারা এতিমের জন্য টাকা ব্যয় না করে উল্টো নিজেদের জন্য ব্যয় করেছে যা সত্যিই লজ্জাজনক। একজন প্রধানমন্ত্রীর যেখানে রাষ্ট্রে সকল নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার কথা সেখানে খালেদা জিয়া দেশের অহসায় এতিমের টাকা নিজের কাজের ব্যয় করেছে।

আর এটাকে বৈধ করার জন্য, বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি অব্যাহত রাখার জন্য বিচারিক আদালতে মামলা চলার সময় নানান অজুহাত তৈরি করে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মামলার আসামি বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

মামলার ব্যাপারেও লক্ষ্য করলে দেখবেন, ২০০৯ সালের ১৫ অক্টোবর খালেদা জিয়া মামলা বাতিলের জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পরে ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মামলা বাতিলের রুলের ওপর শুনানিতে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ওপর অনাস্থা জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে আদালত এ অনাস্থার আবেদন খারিজ করে এর বিরুদ্ধে আপিলের পর আপিল বিভাগে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শেষে বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার-উল-হক ও বিচারপতি মো. মুজিবর রহমান মিয়ার বেঞ্চ পরিবর্তন করে বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদের বেঞ্চের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এ আদেশের পর ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মামলাটি বাতিলের আবেদন খারিজ করে দেন বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদ ও বিচারপতি এসএইচ মো. নূরুল হুদা জায়গীরদারের হাইকোর্ট বেঞ্চ। পরবর্তীতে আপিল বিভাগেও এ আবেদন খারিজ হয়ে যায়।

আবার ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের পর এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। যেটা ২৩ এপ্রিল বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ খারিজ করা হলে এর বিরুদ্ধে আপিলের পর একই বছরের ২৪ নভেম্বর আপিলেও তা খারিজ হয়ে যায়।

অন্যদিকে অভিযোগ গঠনের আদেশদানকারী বিচারক বাসুদেব রায়ের নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জের পর ২০১৪ সালে ২৫ মে খালেদা জিয়ার এ রিট আবেদনের বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ।

তখন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ফারাহ্ মাহবুব বিচারিক আদালতে মামলা দু’টির কার্যক্রমের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন ও পাশাপাশি রুল জারি করেন। অপরদিকে কনিষ্ঠ বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ খালেদা জিয়ার রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন।

বিভক্ত আদেশ দেয়ায় তখনকার প্রধান বিচারপতি তৃতীয় বেঞ্চ হিসেবে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্ধারণ করেন রিট নিষ্পত্তি করতে। ১৯ জুন একক বেঞ্চ তৃতীয় বেঞ্চ হিসেবে তা খারিজ করে এর বিরুদ্ধে আপিলের পর আপিল বিভাগও তা খারিজ করে দেন।

পরবর্তীতে ন্যায় বিচার না পাওয়ার অভিযোগ তুলে ওই আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আবেদন করে খালেদা জিয়া। এরপর ২০১৭ সালের ০৮ মার্চ ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের আদালত থেকে মামলাটি ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর করে ৬০দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এ আদেশ অনুসারে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লার আদালতে চলছিল। দেড় মাস না যেতেই এই বিচারকের প্রতিও অনাস্থা দেন বিএনপির খালেদা জিয়া। ওই বছরের ১৪ মে কামরুল হোসেন মোল্লার আদালত থেকে পরিবর্তন করে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামানের আদালতে চালানোর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট এবং পরবর্তীতে একই বছরের আগস্টেও বিচারকের প্রতি অনাস্থা দেন খালেদা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০ আগস্ট হাইকোর্ট মামলাটি যে আদালতে বিচারাধীন সেখানে চলবে বলে কিছু পর্যবেক্ষণসহ খালেদার আবেদনের নিষ্পত্তি করে দেন।

পাঠক! নানা অজুহাতের মধ্যে ওই সব আবেদনের ফাঁকে ফাঁকে সাক্ষীদের জেরা বাতিল, পুনঃজেরাসহ মামলার অংশ বিশেষ পুনঃতদন্তের জন্য আবেদন করেছিলেন খালেদা জিয়া। এই মামলায় অর্থের উৎস সম্পর্কিত অংশ পুনঃতদন্তের আবেদনে কিছু পর্যবেক্ষণসহ আপিল বিভাগ ২০১৭ সালের ২ জুলাই খারিজ করে দেন। এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের ১১ সাক্ষীর জেরা চেয়ে খালেদা জিয়ার আবেদন গত বছরের ২২ আগস্ট পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেন হাইকোর্ট। পরবর্তীতে আপিল বিভাগে আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
অবাক হলেও সত্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার শেষ করতে মোট ২৬১ কার্যদিবস আদালত বসেছে। এর মধ্যে ২৩৬ কার্য দিবসে রাষ্ট্রপক্ষে ৩২ জন সাক্ষ্য দেন। আর আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেন ২৮ কার্য দিবস। যা এই মামলা প্রায় ১০ বছর ধরে চলেছে।

দীর্ঘ এই বিচার প্রক্রিয়ায় মামলা থেকে রেহাই পেতে খালেদা জিয়া উচ্চ আদালতে গেছেন বার বার। তার অনাস্থার কারণে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনবার এ মামলার বিচারক বদল হয়। শুনানিতে হাজির না হওয়ায় তিনবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে আদালত।

এতো কিছু করেও আইনের সুশাসনের কাঠগড়া থেকে বাইর হতে পারেনি খালেদা জিয়া। বিদেশ থেকে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের নামে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়েছে। বিচারিক আদালত বেগম খালেদা ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ অন্যান্য আসামীদের দুর্নীতিবাজ হিসেবে রায় প্রদান করেছে।

ইতোমধ্যেই হাই কোর্টের চার মাস জামিনের আদেশ স্থগিত করে এর মধ্যে লিভ টু আপিল করতে বলেন আপিল বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে, বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিন আগামী ৮ মে, ২০১৮ পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। আইনের সুশাসন থেকে খালেদা জিয়া যে খুব তাড়াতাড়ি মুক্ত হতে পারছেন না, তা নাশকতার আরেক মামলায় কুমিল্লার একটি আদালত তাকে গ্রেপ্তারের আবেদন গ্রহণ করায় স্পষ্ট হয়ে উঠে।

এতিমদের টাকা নিয়ে বিস্তারিত জানার পর এখন প্রশ্ন আসতেই পারে- সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক বিরোধীদলীয় বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতে দেশের অসহায় এতিমের টাকা যেখানে নিরাপদ নয়, সেখানে দেশ ও জাতি কীভাবে নিরাপদ থাকবে? এটা জাতির জন্য সত্যিই লজ্জাজনক। এই লজ্জাজনক ও রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক অপরাধীর দৃষ্টান্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে ঔদ্ধত্য সৃষ্টি হবে। কারণ অপরাধ সংঘঠিত ব্যক্তির পরিচয় অপরাধী হিসেবে এবং আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সকল অপরাধীর অপরাধের দন্ডিত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট ফোরাম (বোয়াফ)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test