E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অতি উৎসাহীদের এখনই মিষ্টি বিতরণ কেন?

২০১৮ নভেম্বর ২০ ১৮:৩৬:৩৮
অতি উৎসাহীদের এখনই মিষ্টি বিতরণ কেন?

সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা 


বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল আওয়ামীলীগের নতুন মুখের তালিকায় মনোনয়ন পাবেন, এমন খবর সোমবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রচারিত হয়েছে। তিনি মনোনয়ন পেলেও এটা অবান্তর অবাস্তব কিছুই না। কারণ শিল্পপতি ও সাবেক কেন্দুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু যদি ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি আওয়ামীলীগের মনোয়ন পেয়ে এম.পি হতে পারেন সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পদক ৯০’র গণ আন্দোলনের অন্যতম ছাত্র নেতা অসীম কুমার উকিল দলের একটি মনোনয়ন পাওয়া  খুব একটা আশ্চর্যের বিষয় নয়। 

তবে আশ্চর্যের বিষয় হল। একটি সংবাদপত্রের খবর প্রকাশ হয়েছে আর সেই খবরে নতুন মুখের তালিকায় তার নামটি রয়েছে, আর সেই সংবাদ দেখে চলছে নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ। এই মিষ্টি বিতরণকে কেন্দ্র করে পাশাপাশি এ নিয়ে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া যা তৃতীয় নয়নে না দেখলে এবং না শুনলে বুঝার কোন উপায় নেই।

আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই নির্বাচন কমিশনের তফছিল ঘোষনা মতে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ খ্রি. অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচনের ভোট। সেই ভোট্রে আগে আছে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল আছে যাচাই বাচাই, প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দ এবং সর্বশেষ নির্বাচন।

এই নির্বাচনে অসীম কুমার উকিল যদি মনোনয়ন পেয়েই যান সে মনোনয়নের ফল ঘোষণা করবেন মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী আওয়ামীলীগের পার্লামেন্টারী বোর্ডের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কণ্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা। তিনি কিন্তু এখনও সে মনোনয়ন ঘোষণা করেননি বলেই দেশ বাসী জানি। সংবাদপত্রের প্রকাশিক এই খবরটির তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সোমবার সন্ধ্যার পর প্রচার মাধ্যমে বলেছেন পার্লামেন্টারি বোর্ডের পক্ষ থেকে কোন মনোনয়ন প্রাপ্ত ব্যক্তির নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে যে খবরটি প্রকাশি হয়েছে তা মিডিয়ার সৃষ্টি। তিনি এ গুজব খবরে কান না দেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

অপরদিকে আমি বলতে চাই নেত্রকোনা-৩ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাও বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে নতুন মুখের তালিকায় অসীম কুমার উকিল সহ বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো: সাইদুর রহমান মানিক, আওয়ামীলীগ নেতা সামসুল কবীর খান, এডভোকেট আব্দুল মতিন, কৃষকলীগ নেতা কেশব রঞ্জন সরকার সহ আরো অনেকেই রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নৌকার ভোট বাড়াতে এতদিন মাঠে গণ সংযোগ পথসভা উঠান বৈঠক করে কেন্দুয়া আটপাড়া নির্বাচনী এলাকার মাঠ অনেক উর্বর করেছেন। তারাও বুক ভরা আশা নিয়ে এখনও মনোনয়ন পাওয়ার আশা করছেন। কারণ যেহেতু পার্লামেন্টারী বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা এখনও মনোনয়ন ঘোষনা করেন নি তাদের সে আশাও কিন্তু অমূলক নয়। কিন্তু এরই মধ্যে অসীম কুমার উকিলের নামে যারা অতি উৎসাহী হয়ে মিষ্টি বিতরণ করছেন বিভিন্ন স্থানে এর ফলে বিভিন্ন স্থানে এমনই মন্তব্য হচ্ছে যেন “পুরা শরীরে লেবুর রস ছিটিয়ে দেয়ার মতো” অসীম কুমার উকিল মনোনয়ন পেলে তার উচিত হবে সকল মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে দাখিলের আগে এক টেবিলে বসা। তাদের সুখ দুঃখের ভাগিদার হওয়া এবং তাদেরকে সান্তনা দেয়া।

সর্বোপরি সকলকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনার দেয়া নৌকা মার্কার বিজয় নিশ্চিত করা। এখানে মনে রাখতে হবে ড. কামাল হোসেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকির মত লোক ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে মাঠে নেমেছেন, তাদের উদ্দেশ্য একটাই নৌকা ঠেকাও, মানে উন্নয়ন ঠেকাও। এই নৌকা ঠেকাতে পাড়লে তারা বিজয়ী হয়ে অসম্ভব হাসিতে হাসতে থাকবে। আর আমরা মুক্ত চিন্তার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা হব পরাজিত, তখন কিন্তু মিষ্টি বিতরণের বিষয়টি তিতো হয়ে যাবে।

আমি আগামী নির্বাচনে খুব সহজেই নৌকা প্রতীক নিয়ে পরাজিত চাইনা। আমি চাই আবারো বিশ্বমানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী হবেন মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের আবারো প্রধানমন্ত্রী। আমি সহ অনেকেরই জানা আছে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগে তৃণমূলে ভোট অসীম কুমার উকিল প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। প্রথম হওয়ার পর সেদিন অনেকেই অতি উৎসাহী হয়ে মিষ্টি বিতরণ করেছিলেন, বিজয় মিছিল করেছিলেন অর্থাৎ উল্লাসে ফেঁটে পড়েছিলেন। কিন্তু সে আনন্দ উল্লাস অবশেষে নিরানন্দে পতিত হল। সে সময় তৃণমূলের ভোটে যার নাম সবার শেষে ছিল সেই মঞ্জুর কাদের কোরাইশী এম.পি নির্বাচিত হলেন, আবার তার কৃতকর্মের ফলে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী থেকে বাদও পড়লেন।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতো যদি শেখ হাসিনা অসীম কুমার উকিলকে মনোনয়ন দেন সেই মনোনয়ন নিয়ে তিনি যদি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বি.এন.পি ঐক্য ফ্রন্টের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতা করে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হতে পারেন তখনই উল্লাস করা দরকার এবং ঘরে ঘরে মিষ্টি বিতরণ করা দরকার। নতুবা অসময়ে মিষ্টি বিতরণের আনন্দ যদি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নের মতো হয় তখন কী দাঁড়াবে? তাই বলছি যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রত্যেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামীলীগ পরিবারের সদস্য।

সুতরাং অতি উৎসাহীদের এই মিষ্টি বিতরণ করা অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিদ্রুপ করার নামান্তর বলে আমি মনে করি। তাই পথ চলতে হবে খুব সাবধানে সতর্কতার সঙ্গে। মনে রাখতে হবে আগামী নির্বাচন অনেকের মতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে এবং বিপক্ষে। এই নির্বাচন অস্তিত্বের নির্বাচন, গণতন্ত্রের নির্বাচন এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীর সুন্দর বাংলাদেশের নির্বাচন।

লেখক : গণমাধ্যমকর্মী ।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test