E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাছ থেকে দেখা-বঙ্গবীর থেকে বঙ্গকীট 

২০১৮ নভেম্বর ২১ ১৪:৫২:৫২
কাছ থেকে দেখা-বঙ্গবীর থেকে বঙ্গকীট 

মানিক বৈরাগী


আমাদের কৈশোর তারুণ্যে যে নাম টি বাপ ভাই প্রতিবেশী চেনা জানা মানুষের কাছে শুনতে যাকে আমি ও আমরা বাংলার স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িক শক্তির আরাধ্য পুরুষ হিসাবে নেতাজী সুভাষ বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন সাহা, অনেকের আসনে আসনে মানস পটে স্থান দিয়েছিলাম। তাঁর নাম বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম।যাঁকে আবার অনেকেই বাঘা সিদ্দিকী বলেই ডাকে।

আপনার কয়েক ভলিউমে লেখা "স্বাধীনতা ৭১"বইটি আমাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আকর্শন করেছিল।সেই বই টি পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যেমত সেই তারূণ্যে।আবার পাঠ স্মৃতি গুলি রাতে স্বপ্ন দেখতাম। আমি ঘুমাতাম আমার মায়ের সাথে, একদিন স্বপ্ন চিৎকার করে উঠি, আমার ও সাথে ভাঙ্গাঘুমে ভেবাচেকা খেয়ে চিৎকার দেয়। মা ও আমি আমাদের কাছারি ঘরে একসাথে থাকতাম। বাড়ীর সবাই ঘুম থেকে উঠে আমাদের ডাকা ডাকি করে।পরে বুঝলাম পড়া বইয়ের পাঠ স্বপ্ন।এভাবেই আমি আপনার ভক্ত হয়েছিলাম। সেই ভক্ত থেকে আমি আমরা কাদের সিদ্দিকী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম কমিটি।

এই আন্দোলনের কেন্দ্রিয় নেতা ছিলেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগ সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, বরইতলি ইউনিয়ন পরিষদ এর সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দীন চৌধুরী জিয়া।
জিয়া ভাই দারুন সংঘটক, ভালো বক্তা ও চিত্রশিল্পী। তিনি চট্রগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ এর কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন, চট্রগ্রাম আর্ট কলেজ ও চবি চারুকলা বিভাগের ছাত্রলীগ এর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কে মুজিববাদী ছাত্রলীগ ডাকা হতো। প্রতিযোগিতায় ছিলো জাতীয় ছাত্রলীগ।

সেই জিয়া ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা চকরিয়া উপজেলায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম কমিটি গঠন করেছিলাম। আমাকে উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছিল। জামাল উদ্দিন জয়নাল কে আহবায়ক। জেলায় জিয়া ভাই সহ কারা কারা যেন ছিলো।জিয়া ভাই আবার কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও ছিলেন।

জিয়া ভাইয়ের মেজ ভাই কফিল উদ্দীন চৌধুরী চট্রগ্রাম মহানগর কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন।আহবায়ক ছিলেন প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী এনামুল হক দানু ভাই। দানু ভাই চট্রগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগ এর তখন সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি পরে আবার মহানগর আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক নির্ভাচিত হয়েছিলেন।

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে যাতে বেগম খালেদা জিয়া বাধা গ্রস্থ, গ্রেফতার করতে না পারে, আইনি জটিলতা ও মামলা তুলে নেয়ার জন্য সিদ্দিকীর সহ ধর্মীনি নাসরিন কাদের সিদ্দিকি কে আহবায়ক করে সারা দেশে সফর ও সমাবেশে উদ্যোগ নেয় এই সংগ্রাম কমিটি। তারই অংশ চট্রগ্রাম কক্সবাজার সফর ও সমাবেশের আয়োজন করি। নাসরিন কাদের সিদ্দিকি চট্রগ্রাম কক্সবাজার শফর সুচি ঘোষণা করলেন।

আমরা চকরিয়া উপজেলার উদ্যোগে চকরিয়া নিউমার্কেট চত্বরে সমাবেশের আয়োজন করলাম।দীর্ঘ গাড়ী যাত্রায় ভাবি ক্লান্ত, জিয়া ভাইয়ের বাড়ী বরই তলি, আবার ঘুর পথ, চিরিঙ্গায় হোটেল বা উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাবেক সভাপতি নুরুল কাদের ভাইয়ের বাসায় ও লোকে লোকারণ্য হবে ভেবে জিয়া আমাকে বললেন ভাবি কে একটু রেস্ট, জলখাবার এর ব্যবস্থা করতে হবে, কোথায় করব।

জিয়া ভাই তখোন উদিয়মান তুখোড় জননেতা, বাপের জমিদারির টাকা মাকে ভাইল দিয়ে নেয় একবার, আবার পিতা কে ভাইলদিয়ে নেয় একবার এভাবে জিয়া ভাই ওনার শ্রদ্ধেয় পিতা মুস্তাক আহমদ চৌধুরী কে ফতুর করে দেয়ার অবস্থা।তবে জিয়া ভাইয়ের পিতা অসাধারণ একজন মানুষ।পিতা যে সন্তানের সাথে বন্ধু হয় তা আমি দেখেছি জিয়া ভাই ও মুস্তাক চাচার আচরণে।আল্লাহ মুস্তাক মিয়াকে বেহেস্তে নসিব করুক।চাচার অনেক নুন খেয়েছি আমি নিজেও। তো টাকার কোন সমস্যা, আমি জিয়া ভাইকে বললাম, নো চিন্তা শিল্পী কাছারি ঘর আমি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখব, গাছের ডাব, দেশি মুরগি বিনি ভাত সব হবে। নাসরিন কাদের সিদ্দিকি কে নিয়ে জিয়া ভাই জয়নাল ভাই আমাদের কাছারি ঘরে এলেন। আমার মা ভাবি কে সহযোগিতা জন্য ভাইজি নেছারাও জুটে গেলো।নেছারা হলো মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর সহধর্মিণী ও বর্তমান লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি আমার নাতি রেজাউল করিম সেলিমের মা।

অনুষ্টান ঠিক বিকাল ৪টায় চকরিয়া নিউ মার্কেট চত্বরে।নাসরিন কাদের সিদ্দিকি আমাদের কাছারি ঘরে বিশ্রাম খাবার খেয়ে মিটিং স্থলে গেলেন, সিকল ঘাটা থেকে। জয়নাল ভাই না খেয়ে আগেই চলে গেলেন।জয়নাল আবার আমার ভাগনি জামাই হন পরে। এর অনেক দিন পর সারা দেশে ডিসেম্বর কে ঘিরে চট্রগ্রামের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুকী আজম বীর প্রতিক কে নিয়ে বিজয় মেলার সুচনা করেন। তার ঢেউ কক্সবাজার সহ সারাদেশে লাগে।তখোন কক্সবাজার বিজয় মেলায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কে অতিথি করা প্রশ্ন জেলা আওয়ামীলীগ বিভক্ত হয়ে যায়। পরে জেনে ছিলাম ওনি অনেক ডিমান্ড, রাজনৈতিক কোন্দল সৃষ্টি করে দিয়ে গেছেন। কারণ তাঁর আওয়ামীলীগ এর সামনের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হবার বাসনা জেগেছিল।তিমি অবশ্য আমাদের নেতা মোজাম্মেল হক ও নজরুল ইসলাম চৌধুরী কে মুটেও পছন্দ করতেন না। সেই বিভক্তি কাটতে অনেক বছর গড়িয়েছেন।

কাদের সিদ্দিকী বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর কেন্দ্রিয় কার্যকরি সংসদ এর ১ম সদ্যস্য ছিলেন। তিনি আরো কয়েকবার কক্সবাজার একান্ত সফরে এসেছিলেন। তখোন বরইতলি জিয়া ভাইয়ের বাসায় একবেলার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতেন।আমরা যারা কাদের সিদ্দিকির ভক্তকুল ছিলাম তারা জিয়া ভাইয়ের জমিদার বাড়ীতে যেতাম, খেতাম, আড্ডা দিতাম। সে অনেক কথা। আমি দেখেছি সেই সময় কাদের সিদ্দিকী কি রকম অহংকারী ও দাম্বিক।মনের ভেতর কি রকম ধর্মান্ধতা লালন করেন। ওনার সংসদ সংদস্য নির্বাচনে আমাদের চকরিয়া থেকে জিয়া ভাই, জয়নাল ভাই এর নেতৃত্বে একটি বিশাল ছাত্র কর্মী মাট পর্যায়ে নির্বাচনি কাজ করতে যায় টাঙ্গাইলের সখিপুরে। আমি যেতে পারিনি বা ওনারা আমাকে নেয়নি, তখোন আমি শিবির কাটা পা নিয়ে সম্ভবত অসুস্থ।

২১ বছর পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলো। দেহরত্ন শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাসিন এমপি। শুরু হলো তাকে নিয়ে নানা বিতর্ক। প্রথম বিতর্ক ও একগুয়ে আচরণের শিকার হলেন তাঁর স্ত্রীর আবদার রক্ষা করতে গিয়ে। নাসরিন কাদের সিদ্দিকী তিনি কলেজ জীবনে কলেজের যে টিচার্স কলোনিতে থাকতেন সেই বাসার দখল নিয়ে। টাঙ্গাইল করটিয়া সাদাত কলেজের বাসা দখল নিয়ে সেই সময়ের পত্রিকা ঘাটলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। তারপর তাঁর ছোট ভাইদের আওয়ামীলীগ এর প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংঘটনের পদের অংশিদারিত্ব নিয়ে। টাঙ্গাইলের টেন্ডার ও অন্যান্য উন্নয়ন কাজের ভাগ ও ঠিকাদারি নিয়ে। গাড়ী ব্যবসার কমিটি নিয়ে। এভাবে বিতর্কিত হতে হতে বিরোধবাধালো দেশরত্ন শেখ হাসিনার সাথে।অতঃপর আওয়ামীলীগ ছাড়লেন।

এরপর কৃষক শ্রমিক জনতালীগ গঠন করলেন।তাঁর জন্য কাদের সিদ্দিকী স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রান কমিটি গঠন করেছিলেন, তাদের অনুমতি না নিয়ে প্রত্যেক কে তাঁর দলের কমিটি ঘোষণা দিলো। ওখানে নব্বই ভাগ যোগদান করেনি বরং বিবৃতি দিয়ে জনতালীগ কে প্রত্যাখন করলো। এভাবে পাঁচবছর পর জোট সরকার ক্ষমতায় আসলো। বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়ার সাথে গোপন আঁতাতের ফলে তিনি এমপি নির্বাচম করলেন। খালেদা তারেক থেকে সব সুযোগ সুবিধা নিলেন। হাওয়া ভবনের ফোন লিস্ট চেককরলে দেখা যাবে দিনে কতবার তিনি তারেকের সাথে কথা বলতেন।

তাঁর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান "সোনার বাংলা কনস্ট্রাকশন"এর নামে একচেটিয়া কিভাবে ঠিকাদারি ব্যবসা করেছেন, তার রিপোর্ট পাওয়া যাবে দৈনিক প্রথম আলোর ব্রিজ সংখ্যাটি পুণপাঠ করলে।
এ গেলো বিগত জোট সরকার পর্ব। ওয়ান ইলাভেনের পর থেকে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে নিজের আদর্শ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কে পদদলিত করে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী জামাত নেতা মীর কাসেম আলীর পত্রিকা দৈনিক নয়া দিগন্তে কলাম লিখতেন, কিভাবে তিনি কাসেম আলীর টেলিভিশন দ্বিগন্ত টিভি মতে টকশো পরিচালনা করতেন।

এই হলো বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম থেকে বঙ্গকীট কাদের সিদ্দিকী বীর অর্থলোভী। এখন এই বঙ্গকীটের জন্য আমার করুণা হয়। নোট-এই লেখাটি জীবনের রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম স্মৃতি থেকে।তাই সন তারিখ দেয়া হয়নি, মনে নাই।

লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা, কবি।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test