E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চুলের অপরাধ কি, সমনজারি করতে হবে

২০১৯ মার্চ ২১ ১৮:৪০:৪৫
চুলের অপরাধ কি, সমনজারি করতে হবে

মানিক বৈরাগী


আজ ভোরে বাংলা ট্রিবিউন এর একটি খবরে চোখ আটকে গেলো। সেই খবর পড়ে আমার মনে পড়ে মুক্তিযোদ্ধা ভাই এর টগবগে তারুণ্যে আমার শৈশবের স্মৃতি। তাই এটি আমাকে ভাবিয়ে তুলে। সেই ভাবনা থেকেই এ লেখা।

জিয়া এরশাদ বন্দুকের নলে ক্ষমতা দখলের পর তারা সাইকেল চালিয়ে অফিসে আসতেন ক'দিন।তারা বাউল শিল্পী ও তরুণ যবুক লম্বা চুল রাখলে জরিমানা সহ চুল কেটেদিতেন। আবার এসব খবর পত্রিকায় ফলাও ছাপাতেন।

বর্তমান দেশ রত্ন শেখ হাসিনা সরকারের এক ওসি নাকি জিয়া এরশাদ হতে চাচ্ছেন। স্কুল কলেজের ছাত্ররা ভিবিন্ন স্টাইলে চুলের ফ্যাশন করলে সেলুনের নাপিত কে ৪০হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হবে নোটিশ করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধে মুক্তি যোদ্ধারা চুল দাড়ি রাখতো লম্বা লম্বা। সংগ্রাম পরিষদ এর নেতারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো মুখে গোপ রাখতেন। মুক্তিযোদ্ধারা কাদের সিদ্দিকীর চুল দাড়ি কে অনুসরণ করতেন।

আমার বড় ভাইকেও দেখেছি তার চুলের স্টাইল ছিল কাদের সিদ্দিকীর মতো, গোপ ছিল বঙ্গবন্ধুর মতো।
এক ভাই রখেছিলেন আজম খান বা মেজর জলিলের মতো।তখন আমরা ছোটো। জিয়া যখন ক্ষমতায় এলো একদিন দেখি তাদের মুখে সেই গোপ নাই, মাথার সংগ্রামী উড়ো উড়ো লম্বা চুল নাই, আর একজনের মাথাই ন্যাড়া। আমি তাদের দেখে ভিন গ্রহের প্রাণী মনেকরে হাহা কি হাসি। তাদের গোমরা মুখ, ছল ছল চোখ।

এরশাদের সময়েও নাকি সংগ্রামী কবি মুক্তিযোদ্ধা কবি মোহাম্মদ রফিক Mohammad Rafiq এমন পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছেন।তিনি খুলনা থেকে ঢাকা আসছেন, গোয়ালন্দ ঘাটের ওখানে গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখে গাড়ি থেকে চা'দোকানে চা খাচ্ছেন,এমন সময় দোকানী তাঁকে জিজ্ঞাস করলেন আপনি কোন তরিকার লোক? তো রফিক ভাই বললেন আমি ওসব চিনি না। দোকানি আবার জিজ্ঞাসা করলেন আপনি কোন পীরের মুরিদ রফিক ভাই জানালেন আমি কোন পীরের মুরিদ না। দোকানীকে রফিক ভাই জিজ্ঞাসা করল কেন কি হয়েছে। দোকানী জানালো, আর্মিরা সবার চুল গোপ কেটে দিচ্ছে। তো রফিক ভাইয়ের মেজাজ গেলো বিগড়ে, তিনি মুক্তিযোদ্ধা কত আদর করে এই চুল গোপের যত্ন করেন। তো এমন সময়ে তিনি গড় গড় করে তাঁর বাসে উঠেগেলেন। আর আর্মিরা তাঁকে কিছু করতে না পেরে গাদ্দার বলে পেছন থেকে একটি সাউন্ড করে। এর আগের রাতে এরশাদ সাত্তার কে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে।

পাকিস্তানিরা মুক্তিযোদ্ধাদের গাদ্দার বলে গালি দিতেন। আর এরশাদ ও পাকিস্তান ফেরত পাকিস্তান ভাবাপন্ন সামরিক কর্মকর্তা। সুতরাং তার আর্মিরা বাঙ্গালিদের, মুক্তযোদ্ধাদের গাদ্দারই বলবে।৭৫র এর পর পাকিস্তান ফেরত সামরিক কর্তারা সবখানে ভালো ভাল অবস্থানে।জিয়া মুক্তিযোদ্ধা সামরিক কর্মকর্তাদের সামরিক আদালতে বিনাবিচারে হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা কে হত্যা করে।

এ চুলের উপর এই সামরিক সমনের বিষয় টি কবি মোহাম্মদ রফিকের মুখ থেকে শোনা।তবে রফিফ ভাই সেই বিখ্যাত খোলা কবিতায় ও উল্লেখ আছে। এই সামরিক কর্তারা নতুন ক্ষমতা দখলের পর কত রকমের যে ভণ্ডামি করতো তা লিখে শেষ করা যাবেনা।

৮০ দশকে ছাত্র যুবকেরা পায়ের দিকে ঢোলা ও উপরে টাইট ও চুজ প্যান্ট পড়তো। এটি কে তখন ট্যাড়ি প্যান্ট বলতো।এই প্যান্টের উপরও সামরিকেরা সমন জারি করেছিল। আজ ভোরে অনলাইন পত্রিকা বাংলা ট্রিবিউনে এমন একটি খবর পড়ে অতিত সামরিক স্বৈরাচার জিয়া এরশাদিয় সমন জনতার উপর মানসিক অত্যাচারের কথা মনে পড়েগেলো।

টাঙ্গাইলের এক থানার ওসি এমন লিখিত নির্দেশিত নোটিশ টি আমাকে ভাবায়।কারন ওসি সাহেব এমন নির্দেশ দিতে পারে কিনা? এ বিষয়ে আমার পরিচিত বিজ্ঞ আইনজীবীর সাথে মোবাইলে জানতে চাইলাম তিনি জানালেন ওসি সাংবিধানিক ভাবে ওসি এমন নোটিশ প্রদান করতে পারেনা। তাহলে তিনি অনেয়ায্য হস্তক্ষেপ করেছেন।তো তিনি এমন হস্তক্ষেপের মনস্তত্ত্ব কি হতে পারে। রফিক ভাইরের মুখ থেকে শুনা কথাটি আবার ঝালাই করার জন্য তাঁকে রিং দিলাম। তিনি আমাকে জানালেন যা তাহলো হয়ত ঐ ওসি মানসিক ভাবে সুফি দরবেশ বিরোধী। তার বেড়ে ওঠা জামাত বিএনপি পরিবারে।

টাঙ্গাইলে লালন ভক্তদের সে কিছু করতে পারবে না, তাই এদের কে অগ্রিম সতর্কতা জারি করা। আমি রফিক ভাইকে এবার অন্যরকম প্রশ্ন করলাম আপনারা কেন লম্বা চুল ও মোটা করে গোপ রাখতেন
তিনি বললেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে আমাদের আইকন ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আর চে।আমদের মনে ওনারা বাস করতো। বর্তমান তরুণ কিশোরের মাঝে তেমন জীবন্ত আইকন না থাকায় তারা ফুটবল, ক্রিকেট স্টার কে আইকন মনে করে। অনেকে বোম্বাই ফ্লিমের স্টারদের আইকন হিসাবে নিজেকেই সাজায়। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। এটা দমানো যায়না।

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহে সাম্প্রচারিক সাম্রাজ্যবাদী আকাশ সংস্কৃতি আগ্রাসনের বিকল্প দিতে না পারলে শুধু তরুণ কিশোর নয় বুডা বুড়িও এতে প্রভাবিত হবেই।এটাকে দমিয়ে নয়, বাঙ্গালি সাহিত্য সাংস্কৃতিক পুণঃজাগরণ সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই।

জিয়া, এরশাদ, খালেদা, খালেদা -নিজামীদের সময়ে কত বাউল সন্যাসীর বাড়ি ঘরে হামলা,চুল ন্যাড়া করে দেয়া সহ কত অপকর্ম করেছে। এমনকি আওয়ামিলীগ এর সময়েও কত আওয়ামিলীগ এর নেতা এমপি চেয়ারম্যান এমন কাজ করেছে। যা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় খবর প্রচার হয়েছে।

সর্বোপরি বাংলাদেশের সর্ব সেক্টরের মানবিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে মানুষের মনোবাসনা উপর এমন নোটিশ জারি হবে। শুধু অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি মানুষের মনোসামাজিক উন্নয়ন ঘটাতে না পারলে মানুষ কাটামোগত উন্নয়নও ধ্বংস করে দিবে। যেমন ধ্বংস হয়েছে লিবিয়ায়, তারা তেলের বিনিময়ে কাটামোগত উন্নয়ন ও বিলাসী সুবিধায় ডুবে ছিল। সাম্রাজ্যবাদের প্রয়োজনে সব শেষ করে দিয়েছে। সাম্রজ্যবাদ জনগণ কে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে খুব সহজেই ব্যবহার করেছে। যেমন বাংলাদেশে ৫জানুয়ারী নির্বাচনের পুর্বে ও পরে যে ধ্বংস লিলা হয়েছে দেশে তা পুরন হবার মতো নয়। কত রেল কত গাড়ি মানুষ পুড়েছে, কত স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। ওসব ক্ষত এখনো শুকায়নি। তো মানুশ এই দেশ বিরোধী জঙ্গি অবস্থানের কারন হচ্ছে মানুষের মনোসামাজিক সামাজিক সাংস্কৃতিক উন্নয় না হওয়ার কারনে।

আমি বর্তমান বাংলাদেশ দেশ সরকার কে আকুল আবেদন জানাবো এসব বিশ্রি কাজ যেনো কোন পুলিশ কেন কেউ এমন ঘটাতে না পারে তার জন্য শেখ হাসিনার রুপকল্পের সাংস্কৃতিক বলয় তৈরি ঘোষণা ও বাস্তবায়ন জরুরি।

লেখক : কবি ও নব্বইয়ের সাবেক ছাত্রনেতা, কক্সবাজার।

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test