E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

সাংবাদিকের শত্রু  কি সাংবাদিক?

২০২০ মে ২২ ১২:২০:১৬
সাংবাদিকের শত্রু  কি সাংবাদিক?

গোপাল অধিকারী


যে মাধ্যম জনগণের চাওয়া-পাওয়া জনগণের নিকট তুলে ধরে আমার কাছে তাই গণমাধ্যম। গণমাধ্যমের কারণেই আমরা মুহূর্তেই জানতে পারি দেশ-বিদেশে কখন কি ঘটছে? জানতে পারি কোথায় কি সমস্যা? একবার ভাবুনতো গণমাধ্যম বন্ধ দিনটি কেমন যাবে? শুধু জনগণই নয় রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে থাকা দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও এই মাধ্যমের মাধ্যমেই জানতে পারে দেশের কোনটা বড় সমস্যা, কোনটা করা জরুরী? এককথায় গণমাধ্যমের মাধ্যমেই সকলে সমস্যা চিহ্নিত করতে পারি এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিতে পারি। গণমাধ্যমে যারা কাজ করে তারা গণমাধ্যকর্মী বা সাংবাদিক। সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। একটি বিপদজ্জনক পেশাও বলা যায়। কারণ অন্যপেশায় কর্ম করলে অর্থ এ্র কোন প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু গণমাধ্যমে কোন সংবাদ প্রচার করলে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কাজ করে।

দেশে সকল সংকটময় মুূহূর্তে গণমাধ্যমকর্মীরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক করোনায় আক্রান্ত হয়ে দৈনিক সময়ের আলো'র প্রধান প্রতিবেদক হুমায়ন কবির খোকনসহ অনেক মেধাবী প্রাণের আকালে চলে যাওয়া। শুধু রোগ-ব্যাধিতেই না। প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট সকল দুর্যোগেই সাংবাদিকরা থাকে সামনের কাতারে। এছাড়া জনদুভোর্গ বিষয়েও সাংবাদিকদের ভ’মিকা অবিস্মরনীয়। যেমন সাম্প্রতিক সময়ে কারা করোনাকালীন চাউল চুরি করছে, প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ২৫০০ টাকা বরাদ্দ সঠিকভাবে সবাই পাচ্ছে কি না তা জানতে বা জানাতে পারছি।

আদালত বলেন, সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের চতুর্থ স্তম্ভ। এই চতুর্থ স্তম্ভ (সাংবাদিকরা) জেগে থাকলে, তারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে, তাহলে রাষ্ট্রের বাকি তিন স্তম্ভ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু বর্তমানে এই পেশাটি যেন কলঙ্কিত হয়ে পরেছে। এর জন্য দায়ী কিছু অসাধু সাংবাদিক। সত্য খবর সত্যভাবে তুলে ধরতে গিয়ে তৈরি হচ্ছে মতভেদ বা বৈরিতা। সাংবাদিকের শত্রু হচ্ছে সাংবাদিক। কিন্তু আসলে কি সাংবাদিকের শত্রু সাংবাদিক? সাংবাদিকের শত্রু কি সাংবাদিক হওয়া উচিত? কথায় আছে, ঘরের শত্রুকে নিয়ে সংসার করা যায় না। ফলে এই ঘরের শত্রুর কারণে পরের শত্রুরা হচ্ছে শক্তিশালী আর সাংবাদিকতা হচ্ছে কমদামি। সাংবাদিকদের দায়বদ্ধতা অনেক কিন্তু প্রাপ্তির জায়গাতে শূণ্য।

জনপ্রতিনিধির কথা ভাবুন। তারা বলবে আমাদের সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য তুলে ধরেন না। ঠিক পরের দিনই যদি তার কোন অপকর্ম তুলে ধরা যায় তখন তিনি বলবেন সাংবাদিকরা আমার সম্মানহানী করছে। আর হুমকি-ধামকি এটা সাংবাদিকদের জন্য সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২০ সালের জানয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ৮৫ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মখীন হয়েছেন। এই পরিসংখ্যান গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য অশনিসংকেত। এর অনেক উদাহরণ আমাদের দেশে সাম্প্রতিক ঘটেছে।

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিক নির্যাতনের এসব ঘটনা ঘটছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায়। সর্বশেষ আমার এমপি ডট কমের প্রতিষ্ঠাতা এবং দৈনিক আমার হবিগঞ্জের সম্পাদক প্রকাশক প্রকৌশলী সুশান্ত দাশগুপ্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে হবিগঞ্জ সদরের চিরাকান্দিস্থ দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার বাদী হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান জাহির। গ্রেফতারের পর সুশান্ত দাশগুপ্ত তার নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, আবু জাহির এমপির পক্ষে হবিগঞ্জ প্রেস ক্লাব আমার বিরুদ্ধে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার প্রকাশিত কিছু নিউজের কারণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে। আমাকে গ্রেফতার করে এসপি অফিসে আনা হয়েছে।

সবাইকে বলবো ধৈর্য ধরতে। যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় মুক্ত হয়ে আসবো। এই যে সাংবাদিকদের দৈন্যদসা এর থেকে মুক্তি কিভাবে? সাংবাদিক নিউজ করবে, মামলা হবে এইটা স্বাভাবিক। কথায় বলে যে পথে দুর্ঘটনা নেই সেই পথ পথ নয়। তাই হবিগঞ্জের সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়াটা অস্বাভাবিক না। কিন্তু আমার কাছে অবাক লাগলো সেই মামলাটা না কি করছেন ঐ স্থানের প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু কেন? যদি কোন নিউজ করার জন্য মামলা করতে হয় তবে সেই ভুক্তভোগী করবে সাংবাদিক কেন? বরং তিনিতো আরও তথ্য যোগার করে সাংবাদিক সমাজকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসবেন। তাহলে তিনি কি মূলধারার সাংবাদিক না? আমার জানা মতে তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক তবে কেন এমন সিদ্ধান্ত নিল আমার বোধগম্য নয়। শুধু হবিগঞ্জেই নয় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তেই এমন ঘটনা ইদানিং শুনতে পাই।

তবে এটা আমাদের জন্য চরম দুঃখজনক। সাথে এই মহান পেশার জন্য হুমকিস্বরূপও। আজ আপনি করবেন, কালকে আপনি ভুক্তভোগী হবেন। এভাবেই চলবে আপনাদের নোংড়ামু খেলা আর অন্যরা হাসবে বলবে দিনের বেলা। আমি যতদূর জানতে পারলাম সরকারি অনুদানে একই নম্বর একাধিক স্থানে ব্যবহার করার সংবাদটি করার জন্য সুশান্ত দাসগুপ্তকে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু কেন? প্রধানমন্ত্রী নিজে যেখানে বলেছেন সরকারি অনুদান প্রদানে স্বচ্ছতা রাখতে হবে। সুশান্ত দাসগুপ্ততো সরকারের নির্দেশই পালন করছে তবে কেন তার বিরুদ্ধে মামলা হবে? আইন আর সরকার কি আলাদা? আমি দৈনিক আমার হবিগঞ্জের সম্পাদক প্রকাশক প্রকৌশলী সুশান্ত দাশগুপ্তকে গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার মুক্তি কামনা করছি। আমার জানা মতে স্থানীয় সংসদ সদস্যও বতর্মান সরকার দলীয় তিনি নিশ্চই সরকারের বাইরে নির্দেশ পালন করেন না। তিনি নিশ্চই সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জল করতে কাজ করছেন।

প্রধানমন্ত্রী যদি দেশের ষোল কোটি মানুষে দায়িত্ব নিতে পারে তাহলে স্থানীয় সংসদ সদস্য কেন একজন সাংবাদিকের সুষ্ঠু বিচারে এগিয়ে আসবেন না? আমি স্থানীয় সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলব আপনি দায়িত্ব নিন সঠিক বিচার করবেন। সুশান্ত দাসগুপ্ত তথ্য প্রমান ছাড়া সংবাদ করলে ব্যবস্থা নিন আর না করলে তথ্য-প্রমাণ থাকলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। তবে আপনার লক্ষ্য হবে মসৃণ আর আপনার একটি সুন্দর সিদ্ধান্ত পরবর্তী সরকার গঠনে রাখবে অপরিসীম ভ’মিকা।

একজন সাংবাদিকই পারে সমাজের সকল অসঙ্গতি দূর করে একটি দক্ষ, সশিক্ষিত ও দূরদর্শী নেতা তৈরি করতে। পারে একটি সমাজের দুষ্কৃতিকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে সমাজে সুশৃঙ্খলতা ফিরিয়ে আনতে। তাই আসুন সকলে মিলে হলুদ সাংবাদিকতা দূর করি। দায়বদ্ধতার জায়গা মজবুত করি। গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতার ক্ষেত্র সমৃদ্ধ করি। আর অবিলম্বে সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত সব হামলা-নির্যাতনের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করে এই মহান পেশাকে নিরাপদ করতে, কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে সরকারকে আবেদন করি।

লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test