E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন ও বঙ্গবন্ধু-ভ্রাতা শেখ নাসেরের সঙ্গে কিছুক্ষণ

২০২০ জুন ১৮ ১৭:৫২:৪৬
কলকাতায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন ও বঙ্গবন্ধু-ভ্রাতা শেখ নাসেরের সঙ্গে কিছুক্ষণ

আবীর আহাদ


১৫ জুলাই । ১৯৭১। শনিবার । সকাল পৌনে এগারোটা । শিয়ালদহ রেল স্টেশন থেকে উঠে ট্রাম থেকে নেমে বাংলাদেশ মিশনের দিকে হাঁটছি । আরো অনেককেই আমার মতো হাঁটতে দেখি । তবে কাউকে চিনি না ।

চাকুলিয়া থেকে সামরিক প্রশিক্ষণ শেষে কল্যাণী হয়ে আমাদের বরিশাল গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুর সদর মহকুমার মুক্তিযোদ্ধাদের ৯ নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার টাকীতে পাঠিয়ে দেয়া হয় । আমরা অস্ত্রের অপেক্ষায় রয়েছি । সেক্টর প্রধান মেজর এমএ জলিল জানিয়েছেন, আমাদের দেশের ভেতর পাঠাতে আরো কয়েক দিন দেরী হবে । ফলে এ অবসরে আমি কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনের প্রেসবিভাগের কর্মকর্তা আলীমুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি । আলীমুজ্জামান আমার কাকা । প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের সাথে কাকার খুব ভাল সম্পর্ক । প্রধানমন্ত্রী আমাকেও চেনেন । তবে আলী কাকা সুপারিশ করলে আমরা ভালো অস্ত্রসমেত দ্রুত দেশে ঢুকতে পারবো ।

বারাসাত থেকে ট্রেনে আসার সময় বেশ বৃষ্টি হয়েছিল । বৃষ্টির সে-পরশ কলকাতার রাস্তায়ও লেগে আছে । তবে আকাশে এখন প্রখর সূর্য । দক্ষিণ আকাশে সজল মেঘের মাতামাতিও দেখি । মনে মনে ভাবি, এটা তো আষাঢ় মাস । আষাঢ়ের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, এই মেঘ, এই বৃষ্টি, এই রোদ । প্রকৃতিতে তারই আভাস ।

আলীমুজ্জামান কাকাকে অফিসে পেলাম না । তার সহকারীর কাছ থেকে জানলাম যে, তিনি অসুস্থ । বাসাতেই আছেন । মিশন প্রধান হোসেন আলীও কলকাতার বাইরে । পরিচিত আর কাউকে না পেয়ে তিনতলা থেকে নিচে নেমে আসি । আর নিচে নামতেই অবাক চোখে দেখি বঙ্গবন্ধুর ছোটভাই শেখ আবু নাসের ও গোপালগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম রইস একটা জীপ থেকে নামছেন । চোখাচোখি হতেই নাসের ভাই প্রায় চিৎকার করে বলে ওঠেন, আরে ছোটো বেয়াই, তুমি এখানে ?

রইস ভাইও আমার দিকে তাকিয়ে আছেন । হ্যা, ভাইজান ! ট্রেনিং শেষ । হয়তো ২/৪ দিনের মধ্যে দেশে চলে যাবো । ভাবলাম কাকার সাথে একটু দেখা করে যাই ।

নাসের ভাই আমার কাঁধে একটা হাত রেখে বললেন, তোমারে টাকীতে দূর থেকে দেখলাম, পরে আর খুঁজে পাইলাম না । তয় মেজর জলিলকে বলে এসেছি, তোমাদের যেনো তাড়াতাড়ি দেশে পাঠিয়ে দেয় ।

পাশ থেকে রইসভাই বলে উঠলেন, দেশে যেয়ে মুজিব বাহিনীর সঙ্গে যেনো কোনো সংঘাতে জড়িয়ে না পড়ো ! বনগাঁতে শেখ মণির সাথে মুজিব বাহিনী গঠন নিয়ে তুমি যে তর্ক বাঁধিয়েছিলে, এজন্য কথাটা বললাম ।

তখন নাসের ভাইও বললেন, কও তো রইস, মুক্তিবাহিনী থাকতে আবার আর কিসের কী বাহিনী ? মুক্তিযুদ্ধে যারাই এসেছে, তারা সবাই মুজিবের বাহিনী । মুজিব বাহিনী নামে আরেকটি বাহিনী করার অর্থ কিন্তু মুক্তিবাহিনীকে অবিশ্বাস করা; একটা বিভ্রান্তি ছড়ানো-----

আহাদ সেদিন মণির সামনে ঠিক একথাটিই তুলে ধরেছিল । শেখ কামালের সাথে আমার এ ব্যাপারে কথা হয়েছে । সেও ঠিক এধরনের কথা বলেছে । কামাল ওসমানী সাহেবের সাথেই রয়েছে । রইসভাই বললেন ।

এসব নিয়ে শেখ নাসের আর কোনো মন্তব্য না করে বললেন, উপর থেকে তো নামলা, তা আলীমুজ্জামান অফিসে আছে ?

না ভাইজান, তিনি অসুস্থ । ছুটিতে আছেন । আমি বলি । তাহলে রইস, চলো, আমরা একটু প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে যাই । শেখ নাসের বললেন । নাসের ভাইয়ের একথা শুনে আমি বায়না ধরি, ভাইজান, দেশে তো চলে যাচ্ছি, মরি কি বাঁচি তা জানি না, তো প্রধানমন্ত্রীকে শেষবারের মতো একটা স্যালুট দিয়ে যেতে চাই ।
যেতে চাও ? চলো । নাসের ভাই বললেন ।

বাংলাদেশ মিশন ছেড়ে জীপ বালিগঞ্জের দিকে না যেয়ে অন্য পথে থিয়েটার রোডের একটি বাড়ির সামনে থামতেই আমি বলে উঠি, একটা কি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ?

হ । প্রধানমন্ত্রী এখন থিয়েটার রোডে অফিস করেন এবং এখানেই থাকেন । এটা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বাসভবন । রইসভাই বললেন ।

আমরা জীপ থেকে নামলাম । বাড়ির চারদিকে কড়া পাহারা । তবে প্রহরীরা আমাদের কাউকে কিছু বললো না । উপরন্তু শেখ আবু নাসেরকে গান স্যাল্যুট দিলো ।

প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম ও মুজিবনগর সরকারের মুখ্য সচিব রুহুল কুদ্দুসসহ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কীসব বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করছেন । শেখ নাসেরসহ আমাদের দেখে প্রধানমন্ত্রী সপ্রতিভকণ্ঠে বলে ওঠেন, ফরিদপুরের ফুল কেবিনেট ! সবাই হো হো করে হেসে ওঠেন । আমরাও হাসি ।

বসতে বসতে শেখ নাসের বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যশোরের লোহাগড়া থানার পুলুম নামক গ্রামের মধ্য দিয়ে বরিশাল ও গোপালগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীরা আসা যাওয়া করে । খবর পেয়েছি, ঐ পুলুমে পূর্ব পাকিস্তান নামধারী কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) হক গ্রুপের লোকজন নিজেদের জয়বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু আর মুক্তিবাহিনীর পরিচয় দিয়ে আদর-যত্ন করার নামে শরণার্থী ও মুক্তিবাহিনীর সবকিছু লুঠ করে নিচ্ছে । এ ব্যাপারে একটা ড্রাস্টিং একশান চাচ্ছি ।------আর একটা বিষয় আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি । ৯ নং সেক্টর থেকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্ত নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য সুলতানউদ্দিন আহমদ, মুহম্মদ খুরশীদ ও নূর মোহাম্মদ বাবুলকে ক্যাপ্টেন পদমর্যাদা দেয়ায় আপনার আর্মী হেডকোয়ার্টার ও রেগুলার অফিসাররা নাকি প্রবল বিরোধিতা করছে ! --------তারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীসহ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বাপ্নিক । মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে তাদেরকে যথাযথ মর্যাদায় দায়িত্ব দেয়া নিশ্চয়ই কোনো অন্যায় নয়-----

শেখ নাসেরের কথা শেষ না হতেই প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বলেন, তাদেরকে তো সরকারিভাবে কনফার্ম করা হয়েছে ! এরপর কারা বিরোধিতা করছে, সে ব্যাপারে ৯ নং সেক্টর থেকে যেনো আমাকে নোট দেয়া হয় ।' তারপর তিনি মুখ্যসচিব রুহুল কুদ্দুসের দিকে তাকিয়ে বলেন, আপনিও তো তাদের সহযোগী ছিলেন, বিষয়টি জরুরীভিত্তিতে দেখুন ।-----আর হ্যাঁ, মেজর জলিল ও মেজর আবু ওসমানকে পুলুমের বিষয়ে কঠিন ব্যবস্থা নিতে বলুন ।-----পুলুম তো গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়ার অতি নিকটে । ভাটিয়াপাড়াতে পাকিস্তান বাহিনীর একটা শক্ত ঘাঁটি রয়েছে । ঐ এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ভারি ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দেয়ার ব্যবস্থা করুন ।

মুখ্যসচিব প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনামা নোট করেন । এ সময় আমি বলি, স্যার, আমরা চাকুলিয়া সিইনসি স্পেশাল থেকে ৯ নং সেক্টরে গোপালগঞ্জ ফরিদপুর ও বরিশালের দেড়শত মুক্তিযোদ্ধা এসেছি । সেক্টরে প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ নেই । আমাদের বসিয়ে রাখা হয়েছে ।

প্রধানমন্ত্রী এবার উপস্থিত আরেকজনের উদ্দেশ্য বলেন, সামাদ, এসব তো তোমার ডিফেন্স মিনিস্ট্রির ব্যাপার । বিষয়টা জরুরীভিত্তিতে দেখো । প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের এভাবে বসিয়ে রাখা ঠিক হচ্ছে না ।

প্রতিরক্ষা সচিব আবদুস সামাদ বলেন, স্যার, আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি । তবে আপনি যদি----

ঠিক আছে । বিষয়টি নিয়ে আজই আমি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কথা বলবো । এ কে খন্দকারকে বলো, তিনি যেনো ফোর্ট উইলিয়ামে জেনারেল জ্যাকবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ।' তারপর আমার দিকে তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের প্রশিক্ষণ কেমন হলো ?

খুবই ভালো হয়েছে, স্যার । ভারতীয় সৈন্যরা আন্তরিকতার সাথে আমাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ।

হুম ! আমাদের টার্গেট কিন্তু আগামী ডিসেম্বর । সেভাবেই অস্ত্র ধরতে হবে ।

আমরাও প্রস্তুত স্যার ! অস্ত্র গোলা বারুদ সাপ্লাই ঠিক থাকলে আমরা বিচ্ছুরাই পাকিস্তান হানাদারদের কূপোকাত করতে যথেষ্ট-----

আমার এ কথায় কক্ষশুদ্ধ সবার দৃষ্টি এসে নিবদ্ধ হয় আমার দিকে । আমার তখন ভীষণ লজ্জা লাগে ।

প্রধানমন্ত্রী বুঝি আমার অবস্থা বুঝতে পারেন । বিষয়টিকে হালকা করার জন্য তিনি হাসি হাসি মুখে বললেন, আমরা তোমাদের মতো বিচ্ছুদের উপরই বেশি নির্ভরশীল । প্রফেশনাল আর্মী থেকে তোমরা গণবাহিনীর সদস্যরা অনেক বেশি চেতনাতৃপ্ত, অনেক বেশি ক্ষিপ্র ।-----আরেকটা বিষয় আমাদের গোচরে এসেছে । মুজিববাহিনী নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই । তারাও সম্মিলিত মুক্তিবাহিনীর অংশ । মুক্তিবাহিনী ও মুজিববাহিনী----সবাই বঙ্গবন্ধুর অনুসারী----বঙ্গবন্ধুর বাহিনী । এসব নিয়ে তোমরা কোনোপ্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগবে না । সবাই মিলে হানাদারদের খতম করতে হবে, এটাই মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা ।------আরো কিছু কিছু বিষয়ে যেসব বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে তা আমরা সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠেছি । পরিষ্কার কথা, আমরা বঙ্গবন্ধুকেও চাই, স্বাধীনতাও চাই----

এসময় আমি হঠাত্ বলে উঠি, স্যার, ভারত আমাদের জন্য সবকিছুই করছে, তো স্বাধীন দেশ হিশেবে আমাদের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না কেনো ?

প্রধানমন্ত্রী একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলেন, আমরা যেমন আমাদের দেশ, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক নিয়ে ভাবি, ভারতকেও ভাবতে হয় । বিশ্বরাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গি, তার গতিপ্রকৃতিসহ ভারতকে তার দেশের অখণ্ডতা, বিশেষ করে তার মূল ভূখণ্ড থেকে প্রত্যন্ত সরু অঞ্চল পেরিয়ে তার পূর্বাঞ্চলীয় বিশাল পাহাড়ি অঞ্চলের নিরাপত্তা প্রশ্নে বাংলাদেশ পরিস্থিতি জড়িত ।------সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ভারতের একটা সমঝোতা চলছে । ভারতকে তাদের মতো করে ভাবতে দাও । সময় হলেই বুঝবে, ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা সম্পর্কে কতোখানি আন্তরিক ।-----তবে তোমরাও জানো, আমরাও জানি, আমাদেরকে তার মাটিতে সরকার পরিচালনা ও মুক্তিযুদ্ধের সামরিক প্রশিক্ষণসহ তার অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে । এটা তার আন্তরিকতার বড়ো প্রমাণ । সময় মতো স্বীকৃতি দিয়েই সে সর্বাত্মক শক্তি দিয়ে আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মহাসমরে ঝাঁপিয়ে পড়বে মিত্রবাহিনী----বন্ধু বাহিনীরূপে-----

এক গ্লাস পানি পান করে প্রধানমন্ত্রী এবার বেশ দৃঢ়তার সাথে বললেন, বঙ্গবন্ধুর বাঙালি মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানকে তাড়িয়ে ভারতকে তার মাটিতে বসতে দেবে না । আমাদের আহ্বানে ভারতীয় মিত্রবাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করবে, আবার আমাদের আহ্বানে তারা বাংলাদেশ ছেড়ে যাবে ।-----এটা আমার কথা নয়, এটা বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধীর অঙ্গীকার । তোমরা হয়তো জানো না, বহুদিন আগে লণ্ডনে মুজিবভাই ও ইন্দিরা গান্ধীর এক বৈঠকে এ সমঝোতা হয়েছিলো ।----দ্বিতীয়বার একাত্তরের প্রথমদিকে সাধারণ নির্বাচনে যখন ইন্দিরা গান্ধী বিজয়ী হন, তখন তার প্রধানমন্ত্রী হিশেবে শপথ নেয়ার কথা ছিলো এগারো মার্চ । সেটিকে পিছিয়ে তিনি সতেরো মার্চ শপথ নেন । এদিন সকাল বেলা ঢাকায় বঙ্গবন্ধু তার একান্নতম জন্মদিনে কর্মী ও ভক্তদের দেয় মাল্য গলে নিচ্ছেন, ওদিকে দিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হিশেবে শপথ নিচ্ছেন । এটা ছিলো বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর অঙ্গীকার পূরণ করার ইংগিত যা মুজিবভাইও বুঝেছিলেন-----

শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে আমার কথা হয়েছে । এসব কথা তিনি আমাকেও বলেছেন । তাঁর সাথে কথা বলে এবং বাস্তব ফল পেয়ে আমার এ বদ্ধমূল ধারণা হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধুর প্রতি ইন্দিরা গান্ধীর অগাধ আস্থাসহ আমাদের বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামী চেতনা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতি বিপুল শ্রদ্ধাবোধ রয়েছে ।-----তোমরা ইন্দিরা গান্ধী ও আমার উপর আস্থা রাখতে পারো, বিশেষ করে আমি আমার প্রাণপ্রিয় নেতা মুজিবভাইকে অসম্মান করবো না, করতে পারি না ।-----কোনো কারণে ভারত যদি আমাদের সরাসরি সহযোগিতা করতে না পারে, তারপরও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতি হবে না, হয়তো তা প্রলম্বিত হবে । ভিয়েতনামের মতোই আমরা যুগ যুগ ধরে লড়াই চালিয়ে যাবো-----

প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনের এহেন আবেগঘন ও প্রত্যয়দৃপ্ত দৃঢ় বক্তব্য শুনে আমার চোখ ফেটে ক'ফোটা অশ্রু ঝরে পড়ে । শেখ আবু নাসেরকেও রুমালে চোখ মুছতে দেখি । অন্যান্য সবার মুখ থমথমে । কামরুল ইসলাম রইস শেখ নাসেরভাইকে ইশারা দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন ।

প্রধানমন্ত্রী গম্ভীর কণ্ঠ বললেন, নাসের, আর কিছু বলবে, ভাই ?

না তাজভাই, আপনি আপনার কাজ করেন । আমি তো প্রায়ই এসে আপনাকে বিরক্ত করে যাই ।

তাজউদ্দিন আহমদ উঠে দাঁড়িয়ে শেখ নাসেরের একটা হাত ধরে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, তোমার মুখেই তো মুজিবভাইয়ের মুখ খুঁজে পাই।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test