E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

অনলাইনে তথ্য প্রকাশে চাই দায়িত্বশীলতা

২০১৪ আগস্ট ১৪ ১৪:৫৭:৫২
অনলাইনে তথ্য প্রকাশে চাই দায়িত্বশীলতা

মো. আতিকুর রহমান : একসময় ব্লগ ছিল কেবল ব্যক্তিগত অনুভূতি, আবেগ প্রকাশের মাধ্যম। কিন্তু বর্তমানে এর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় এখন এটি হয়ে উঠেছে মতপ্রকাশ, জনমত তৈরি ও বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তর আলোচনা, গবেষণার উন্মুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে। বর্তমানে এ ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীরা নিজ নিজ ভাবনা, ক্ষোভ, স্বপ্ন, আবেগ, প্রতিক্রিয়া, বিশ্লেষণধর্মী চিন্তাচেতনা, গবেষণা, ছবি, ভিডিও, অডিও সহজেই তুলে ধরতে এবং নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছে।

শুধু তাই নয়, সামাজিক আন্দোলন বা যেকোনো ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির লক্ষ্যে ওই ওয়েবসাইট বিশেষ ভূমিকা পালন করছে, যা ব্লগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, আরব বসন্ত, অকুপাই ওয়ালস্ট্রিটের মতো বড় বড় আন্দোলনে জনমত সৃষ্টিতে তরুণ প্রজন্ম বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে ব্লগের মাধ্যমে পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই আজ বিশ্বে নারী সাহসিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশেষ করে চিরায়ত গণমাধ্যমগুলো যে বিষয়গুলোকে সহজেই তুলে ধরতে পারে না, সেসব ঘটনা ওই ব্লগে তুলে ধরার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে, যা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের ব্লগাররা বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে নেমে সামাজিক অসঙ্গতি রোধে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। আমরা বলতে পারি সামাজিক যোগাযোগ ও সমাজ পরিবর্তনে নিঃসন্দেহে এই ধরনের ওয়েবসাইট বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। যা দ্বারা সমাজ, দেশ তথা জাতির সার্বিক মঙ্গল সাধন হতে পারে। তবে তথ্য প্রচার ও পরিবেশনের ক্ষেত্রে সবাইকে অধিক সজাগ ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবেশিত তথ্য যে দেশ, জাতি, সমাজ ও ব্যক্তিজীবনে কোনো ক্ষতি সাধন না করে। সে ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের সদিচ্ছা পাশাপাশি সাইবার অপরাধ বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি অধিক প্রয়োজন বলে মনে করি। মূলত সুস্থ ধারার যুক্তিসম্পূর্ণ মতামত প্রকাশকারী ও দেশপ্রেম সচেতন ব্লগারদের সার্বিক প্রচেষ্টায় পারে অসুস্থ ব্লগিং চর্চাকে প্রতিহত করে এর ব্যবহারকে আরো অধিক গ্রহণযোগ্য করে তুলতে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শুধু ব্লগারদের সদিচ্ছা।
তথ্য প্রাপ্তি ও প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা, গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার যে অঙ্গীকার, তাকে বিনষ্ট করতে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ব্লগকে বাধাগ্রস্ত করতে এর সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অসুস্থ ব্লগিং চর্চা করতে কিছু অসাধু ব্যক্তি এ ধরনের ওয়েবসাইটে এক বা একাধিক ছদ্ম নাম ও ভিন্ন পরিচয়ে অ্যাকাউন্ট খুলে অথবা কৌশলে অন্যের অ্যাকাউন্টের গোপন তথ্য জেনে অবৈধ ও অনৈতিক কার্যকলাপ ও অশ্লীলতার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সাইবার অপরাধ করে যাচ্ছে এবং এ ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্যবহারকারীদের করছে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। যথাযথ শাস্তি কার্যকর না হওয়ায় এর মাত্রা ক্রমেই বেড়ে চলছে। মূলত যথাযথ আইনি দুর্বলতা, সংশ্লিষ্টদের উদাসিনতা, যথাযথ শাস্তি বাস্তবায়ন না হওয়া, অপরাধ বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক অধিক কার্যক্রম গ্রহণ না করা, অপরাধীদের শনাক্তকরণে ব্যর্থতা, এক ব্যক্তি কর্তৃক ভিন্ন ভিন্ন নামে একাধিক অ্যাকাউন্ট করার সুবিধা পাওয়া; একদল অন্য দলকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার সুবিধা পাওয়া, মানুষের ইমেজ নষ্ট করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি ইত্যাদি কারণে এ ধরনের অপরাধ সমাজে বেড়েই চলছে। এখন প্রয়োজন অধিক নজরদারির বিষয়টি নিশ্চিতকরণ। পাশাপাশি এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সার্বিক সহযোগিতাও একান্ত জরুরি বলে মনে করি। এ ধরনের অপরাধ সম্পর্কে ব্যবহারকারীদের অধিক অজ্ঞতা এ ধরনের অপরাধের মাত্রা বাড়াচ্ছে বলে আমরা মনে করি। সে কারণে সাইবার অপরাধ ও অপরাধীদের ভয়াবহ শাস্তির বিষয়ে সজাগ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাকেও অনুরূপ প্রয়োজন বলে মনে করি। কেননা আইন করে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করা যাবে না; যত দিন না পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে অধিক সচেতনতা বৃদ্ধি, ব্যবহারকারীদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও সমাজে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা যাবে। সেসঙ্গে এসব ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের ওই অপরাধ থেকে বিরত থাকার মতো সদিচ্ছা ও মানসিকতা পরিবর্তন তৈরি করার না যাবে। যেহেতু ওই ওয়েবসাইটটি একটি ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম, তাই সেন্সর মেনে তথ্য পরিবেশন করতে সব ব্যবহারকারীর সচেতনতা বৃদ্ধি করাকে অধিক গুরুত্ব বলে মনে করি।
বর্তমান সাইবার আইন প্রয়োগের দুর্বলতায় এ দেশে এক প্রকার অসাধু ও অসুস্থ ধারার ব্লগাররা ব্লগে দলাদলি করে দেশে নানা রকমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, সম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরি, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে সমাজ ও দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। আবার অনেকে অশ্লীল বক্তব্য প্রকাশ করে অনেককে হেয় প্রতিপন্ন করছে। ব্লগে তথ্য সেবার নামে এ ধরনের আচরণ ও তথ্য প্রকাশ কখনই কাম্য হতে পারে না। বিশেষ করে আমাদের দেশের অধিকাংশ ব্লগাররা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কোনো না কোনো মত, দল, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির সঙ্গে জড়িত। তারা তাদের নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি, দলীয় লেজুড়বৃত্তিকে বজায়ে রাখতে এমন সব তথ্য পরিবেশন করে, যা দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে। তাই ব্লগারদের তথ্য পরিবেশনের সেন্সরশিপের ওপর যথাযথ জ্ঞান অর্জন এবং এর যথাযথ নিয়মগুলো মেনে তথ্য ও মতামত প্রকাশ করাকে গুরুত্ব বলে মনে করি। কেননা সেন্সর মেনে তথ্য পরিবেশিত হলে দেশ তথা জাতি অধিক উপকৃত হবে। পাশাপাশি বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। অপরাধীদের শনাক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের অধিক দক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে; অপরাধ সংগঠিক কম্পিউটার ও ব্যবহারকারীকে শনাক্তকরণে অধিক পারদর্শী হতে হবে; নজরদারি বাড়াতে হবে; আইনের যথাযথ প্রয়োগ বাস্তবায়ন করতে হবে; সাইবার ’ল প্রণয়ন করতে হবে; তথ্য ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা ও সচেতন ব্লগারদের অসুস্থ ব্লগচর্চা রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে এগিয়ে আসতে হবে; এক ব্যক্তি যেন একের অধিক ছদ্মনামে অ্যাকাউন্ট না খুলতে পারে, যে বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে; সাইবার অপরাধ ও এর শাস্তি সম্পর্কে ব্যবহারকারীকে সচেতন করতে বিশেষ বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে; প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোতে এ বিষয়ে অধিক প্রচারণা গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে; সর্বোপরি সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমটি যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে ও সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
(এএস/আগস্ট ১৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৫ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test