E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘আত্মহনন’ এবং সমাজ পরিবারের দায়

২০১৪ আগস্ট ১৪ ১৫:৩০:৫৫
‘আত্মহনন’ এবং সমাজ পরিবারের দায়

তৃপ্তি বালা : ‘আত্মহত্যা’ মানুষের মনের চরম হতাশাজনক এক অবস্থার তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া। একজন মানুষ যখন আত্মহত্যা করে, কাছে-দূরের সম্পার্কিত সব মানুষকেই তা নাড়িয়ে দিয়ে যায়।

বিরূপ বিশ্বের নিদারুন সব অসঙ্গতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারার যে গ্লানি মর্মযাতনা একজন দুর্বল চিত্তের মানুষকে তাড়িত করে, চূড়ান্ত হতাশায় আক্রান্ত একজন মানুষ যখন মানসিক বৈকল্যের কাছে পরাজিত হয়, ক্ষোভ ঘৃণা হিংসা-প্রতিহিংসা এবং জেদের বশবর্তী হয়েও মানুষ যখন আত্ম সংযম হারায়-আত্মহত্যার মতো গর্হিত কাজটি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠতে পারে। কারণ যা-ই হোক না কেন আত্মহত্যার একটি ঘটনা পরিবার-সমাজ সকলকেই স্পর্শ করে যায়, অপরাধী করে তোলে। আত্মহননকারী মানুষটি যদি ঘুণাক্ষরেও অনুমান করতে পারতেন-তার ঐ আত্মহনন গোটা পরিবার-পরিজনকে কতোখানি মর্ম যাতনার মধ্যে নিয়ে ফেলতে পারেÑতা হলে বোধকরি কোনদিনও তিনি তা করে উঠতে পারতেন না। কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যুক্তি-তর্ক বিচার-বুদ্ধি কোনো কিছুই তাকে তাৎক্ষণিক ঐ অবস্থা থেকে বিরত করতে পারে না। জগতের সমস্ত মানবিক বোধ চেতনা তার কাছে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। মনোগত অসহায়ত্বের কাছে আত্ম সমর্পনই অনিবার্য পরিণতি হয়ে দাঁড়ায়।

যে দুর্ঘটনা আজ পান্না বালার স্ত্রী’র জীবনে ঘটলো, সমস্ত পরিবার স্বজন-পরিজনের কাছে তা এক কথায় মর্মস্পর্শী দূর্ভাগ্যজনক। পরিবারের প্রতিটি সদস্য আত্মীয়-পরিজন-- কেউই আমরা এর দায় এড়াতে পারিনা। বার বছর আগে সামাজিক দেখাশুনার মাধ্যমে যে সম্পর্কটি স্থাপিত হয়েছিল দুটি পরিবারের মধ্যে সমাজ-পরিজনকে স্বাক্ষী রেখে, বার বছর পরে তারই এই নির্মম পরিণতি পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আত্মীয়-পরিজনের মনে এনে দিয়েছে নিদারুন হতাশা এবং গ্লানিবোধ।

পেশায় সাংবাদিক পান্না বালা সমাজে আত্মীয়-অনাত্মীয় মহলে অতীব আদৃত একজন মানুষ। মানুষের সহজাত সহজ প্রকাশের যে বিরল বৈশিষ্ট্য তাঁর মধ্যে-তাই দিয়েই বুঝি জয় করে নিয়েছে সে দশ জনের মন। অন্তরে-বাইরে উৎসারিত প্রকাশে মনের যে আকুতিটি ফুটে ওঠে পান্নার-স্বজন-পরিজন থেকে শুরু করে অনাত্মীয় অন্য মানুষ জন অতি অনায়াসেই তার অনুরক্ত হয়ে পড়েন। তার উপরে আছে মানুষের বিপদে ঝাপিয়ে পড়ার তীব্র মমত্ববোধ। সহপাঠি বন্ধু থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার খালাম্মা মাসিমা বোনের দল ছেলে বেলা থেকেই তার ভালবাসার মানুষ। শহরের অনেক মা খালা বোনের হৃদয়ে আছে তার অধিষ্ঠান।

বলা যায় যন্ত্রের এই বাজার বিশ্বে পান্না বালা অকৃত্রিম মানব মনের এক বিরল দৃষ্টান্তই। পান্নাকে নিয়ে যখন ভাবি আশ্চর্য হইÑআমারই পিঠোপিঠি ভাই স্বভাবে যে কি করে আমারই বিপরীত একেবারে। সেই যে ছেলে বেলায় এক বিছানায় মানুষ আমরা অথচ স্বভাবে কি আকাশ-পাতাল ব্যবধান! এই যে আমি এক মানুষÑবলা যায় একান্তই আত্মকেন্দ্রিক, নিজের ছাড়া অন্যের বিষয়ে কিছুই ভাবিনা-- সেই আমারই সহোদর অতখানি মানবিক বোধসম্পন্ন একজন মানুষ। বিধাতা হয়তো এক্ষেত্রে পিতার স্বভাবের প্রায় সবটাই ঢেলে দিয়েছেন ওঁর মধ্যে। আর আমি গড়ে বেড়ে উঠেছি-বলা যায় সময়েরই এক প্রতিভূ হিসেবে, তবে অবশ্য নৈতিক পথে-এইটুকু যা ভরসার।

মাতৃভক্ত পান্না বালা জীবন এবং জীবিকার কারণেও পিতা-মাতা থেকে দূরে সরে যায়নি। নিঃসঙ্গ পিতা-মাতার শেষ বয়সের মর্মোপলদ্ধি যে সন্তান করছেন-তিনি পান্না বালা। অর্থনীতিতে স্নাকত্তোর শ্রী গৌর চন্দ্র বালা এবং অঞ্জলি বালার কণিষ্ঠ পুত্র পান্না বালা তার জীবনের ধ্যান-জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটাতে সাংবাদিকতাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন পরম নিষ্ঠার সাথে। নিরপেক্ষ এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য এরই মধ্যে তিনি সবার কাছে একজন সৎ কর্তব্যপরায়ণ সাংবাদিক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। স্ত্রী’র আত্মহননের বিষয়টিকে কতিপয় মহল যেভাবে হনন হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছেন, পান্না বালার মতো একজন কর্তব্যপরায়ণ মানুষকে হত্যাকারী হিসেবে প্রচার করতে চাইছেন-তা গোটা পরিবারের জন্যই এক গ্লানির বিষয়। এমনিতেই ঘটনার আকম্মিকতায় আমরা পরিবারের প্রতিটি সদস্য একেবারে মাটির সাথে মিশে গেছি লজ্জায় অপমানে, তার উপর এই দুঃসময়ে কতিপয় মহলের অশুভ তৎপরতা আমাদের জীবনকে যার পর নেই দুর্বিষহ করে তুলছে।

আমরা শ্রী গৌর চন্দ্র বালার পরিবার স্বজন-পরিজন শুভানুধ্যায়ী-সকলে সমস্ত অশুভ কার্যকলাপের আশু অবসান এবং পান্না বালার নিরাপদ মুক্ত জীবন কামনা করি।

দেশ মানুষের জননী জায়া কন্যা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি দেখবেন কি? আমার প্রয়াত পিতা গৌর চন্দ্র বালা যে ছিলেন তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্দিনের (ঊনসত্তর সত্তর একাত্তরের দিনগুলোতে) একান্ত সহচর!

(ওএস/অ/আগস্ট ১৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test