E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সোস্যাল মিডিয়াতে ছবির ব্যবহার  

২০২০ আগস্ট ০৭ ১৭:৪৭:৪১
সোস্যাল মিডিয়াতে ছবির ব্যবহার  

নীলকন্ঠ আইচ মজুমদার


একটি ধাঁ ধাঁ দিয়েই শুরু করতে চাই। আমি ও তুমি একই রকম। আমি কথা বলি তুমি কেন কথা বল না ? উত্তর দিয়েই বিস্তারিত বলতে চাই। এই ধাঁ ধাঁর উত্তর হলো ছবি। আজকে সেই ছবি নিয়েই কথা বলা। আলোচনায় ছবির একাল সেকাল। সত্যিকার অর্থে ছবি কথা বলে নাকি বলে না ? প্রশ্ন হাজার উত্তর এক। ছবি কখনও কথা বলে না। উত্তর সহজ ? আসলেই সহজ না । অন্তরের দৃষ্টি খোলে দেখা যাবে ছবি কথা বলে। কিন্তু আওয়াজ নেই তবে অনুধাবন করা যায়। মাইকেল অ্যাতঞ্জিার এর অংকনকৃত মানচিত্র লিও বেলজিকাস পরিচিত নাম। ১৬ শতকের ইতালির শিল্পী লিওনার্দো ভিঞ্চির আঁকা মোনালিসা নামক চিত্রকর্ম কার না মন কেড়েছে ? যা ফ্রান্সের ল্যুভে জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। জাদুঘরে আসা বেশিরভাগ দর্শকই একনজরে তাকায় মোনালিসার হাসি দেখার জন্য। যে ছবি শত শত বছর ধরে হাসছে। মানুষের হ্রদয়ের কথা বলছে। 

১৯৪৩ সালের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের দুর্ভিক্ষ চিত্রমালা কার না হ্রদয়ে নাড়া দিয়েছে। সম্প্রতিকালে হাতের আঁকা চিত্রকর্মকে ছাড়িয়ে গেছে বিভিন্ন ডিভাইসে তোলা ছবি। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে প্রায় অনেকেরই হাতে রয়েছে স্মার্ট ফোন। অবাধেই ছবি তোলতে পারছে সবাই। আবার একটু খারাপ হলে ডিলিটও করতে পারছে। কোনটা প্রয়োজনীয় আর কোনটা অপ্রয়োজনীয় তা জানার দরকার নেই। যত ইচ্ছে ছবি তোল সমস্যা কোথায় ? মানুষ তার স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা করবে।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছবি দেখবে হ্রদয়ের কথা বলবে তাতেতো কোন সমস্যা নেই বা থাকার কথাও নয়। তবে সমস্যা হলো ইদানিং কালের ছবির রাজনীতি। যা দিয়ে স্যোসাল মিডিয়াতে প্রায় সময়ই উঠছে ঝড়। যত দিন যাচ্ছে তত বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের সোস্যাল মিডিয়াতে ছবি পোস্ট করার মানসিকতা। এটা মনে হয় এখন রোগে পরিণত হয়েছে। মানুষ তার প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় ছবি গুলো পোস্ট করছে। ইত্যে সময়ে সবচেয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা এবং এইসব ছবি সোস্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে নিজেকে নেতা হিসেবে জাহির করা। নিজের ভেতরে নেতা হওয়ার বিন্দু মাত্র গুণ না থাকলেও ছবির নেতা হওয়ার অপচেষ্টা চলছে।

সম্প্রতি সময়ের আলোচিত নাম সাহেদ। পত্রিকান্তে জানা যায় এসএসসি পাস করেই রাজনৈতিক বিশ্লেষক সেজেছেন। টকশো আর নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলে সোস্যাল মিডিয়াতে ছবি ছড়িয়ে দিয়ে নিজেকে নেতা হিসেবে স্থাপন করেছেন। যারা নেতা আছেন তারা হয়তো জানেন না সাহেদ কে ? আবার অনেকে জানেনও এ কথা অস্বীকার করার সুযোগও নেই। কিন্তু সাহেদ কিন্তু ঠিকই জানে সে কে ? কি তার পরিচয় ? নেতাদের সাথে ছবি তোলে সেই সাহেদ আজ বড় নেতা সেজেছে ! যখন রিল ব্যবহার করে ছবি তোলা হতো তখন চিন্তা থাকতো আর কয়টা ছবি তোলা যাবে ? কিন্ত এখন সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ছবি তোলার আর হিসেব নেই।

ইচ্ছা মতো ছবি তোল আর মিডিয়াতে ছেড়ে দাও। মানুষ এখন খুব দ্রুত নেতা হতে চায়। কারন নেতা হলেই বাড়বে প্রভাব প্রতিপত্তি। কোনো প্রকারে ছবি তোলে এলাকায় প্রচার করে নিজেকে বড় নেতা জাহির করে কিন্তু আসলে যার সাথে ছবি তোলে তাকে হয়তো সে চিনেই না। রাতারাতি নেতা হওয়ার পথ বন্ধ না হলে নেতাদের সাথে ছবি বা তা মিডিয়াতে প্রচার করাও বন্ধ হবে না। সময় পাল্টেছে তাই মানুষের চিন্তা চেতনা শক্তিরও ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই পরিবর্তনটা হয়েছে খারাপ পথে। আর বিশেষ কথা হলো দেশে এত পরিমাণে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ও এত পরিমাণে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া চালু হয়েছে তাতে শুধু ছবি আর ছবির প্রয়োজন।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের সময় যারা বঙ্গবন্ধুর সাথে দাঁড়িয়ে ছিল তারা কি জানতো এ ছবি বাঙালির হৃদয়ে ধারণ করবে ? আর যদি জানতো তাহলে হয়তো মঞ্চের অবস্থা হতো ভিন্ন তবে আজকের মতো নয়। ছবির তোলার সময় সবাই ব্যানারের সামনে আসতে চায় নেতার সাথে থাকতে চায়। আবার নেতা নাই কর্মীও নাই কাজও নাই। যেদিন থেকে ছবির রাজনীতি শুরু হয়েছে সেদিন থেকে বেশিরভাগ তথাকথিত নেতারা মূল কাজ বাদ দিয়ে ছবি তোলাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি সরকারের বেশির ভাগ কাজও স্থানীয়ভাবে এখন ছবি নির্ভর হয়ে পড়েছে। কোথায় আছেন বা কোথায় যাচ্ছেন ছবি দিচ্ছেন সোস্যাল মিডিয়াতে। সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা।

অপরাধীরা খুব সহজেই আপনার অবস্থান নিশ্চিত হতে পারছেন। যেখানে যাবেন শুধু ছবি তোলার হিড়িক। রাষ্ট্রীয়, সামাজিক বা পারিবারিক যে অনুষ্ঠানই হউক না কেন ? আজ কি রান্না করলেন সেটাও সোস্যাল মিডিয়াতে দিয়ে জানাতে হবে এটা কোন ধরনের মন মানসিকতা ? ছবি তোলা যাবে না এ কথা বলা যাবে না। আবার সোস্যাল মিডিয়াতে দেয়া যাবে না এটাও নিষেধ করা যাবে না। ছবি তোলা কিংবা মিডিয়াতে দেয়া সেগুলি হতে হবে যৌক্তিক। ছবি তোলে ছড়িয়ে দিয়ে রাতারাতি নেতা সাজা যায়। কিন্তু নেতা হওয়া যায় না। ক্যাসিনো কান্ড, পাপিয়ার সা¤্রজ্য কিংবা সাহেদের উত্থানের ক্ষেত্রে ছবির অবদান রয়েছে অনেক। অনেক ক্ষেত্রে সেই ছবিই আজ সাক্ষী হয়ে দাড়িঁয়েছে।

ছবির ব্যবহার হতে হবে প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে। অতিরিক্ত সব কিছুই বিপর্যয় ডেকে আনছে সমাজ ব্যবস্থায়। প্রযুক্তি নির্ভর সমাজ ব্যবস্থায় তথ্য আদান প্রদান হবে খুব দ্রুত এটাই স্বাভাবিক তাই তথ্য আদান প্রদানের বেলায় হতে হবে সচেতন। ছবি তোলা কিংবা মিডিয়াতে পোস্ট করা ব্যক্তিত্বেরও পরিচয় বহন করে। তাই ছবির ধরণ দেখে আপনার ব্যক্তিত্বও অতি সহজেই বুঝবে সাধারণ জনগণ।

রাজনৈতিক নেতার পিছনে দাঁড়িয়ে, সাথে বসে কিংবা করমর্দন করে ছবি তোলে সোস্যাল মিডিয়াতে দেয়া আবার দেয়ালে টানিয়ে রাখা মনের ব্যাপার কিন্তু আজকাল উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে নেতা হয়ে জাতে উঠা। যার কারনে প্রকৃতরা হারিয়ে যাচ্ছে এই তথাকথিত ছবির নেতাদের কাছে। তাই আমাদের অনুধাবন করতে হবে পজেটিভ এবং নেগেটিভ দিকগুলো। সময়রের স্রোতে পাল্টে গিয়ে নেগেটিভ পন্থায় অগ্রসর হলে ঘটবে ভয়াবহ বিপর্যয়। ছবি উঠছে আরো উঠবে মিডিয়াতে প্রকাশিত হচ্ছে আরো হবে কিন্তু তা হতে হবে পজেটিভ বিচেনায় । কারন মনে রাখতে হবে ছবি হচ্ছে মনের হাতিয়ার এবং স্মৃতি ধরে রাখার একটি প্রক্রিয়া।


লেখক : শিক্ষক ও গণমাধ্যমকর্মী।

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test